কি কি ফিচার দেখে একটি ডিজিটাল ক্যামেরা কেনা উচিৎ সেই ব্যাপারে নানা ধরনের মতামত পাওয়া যায়। সেইসব মতামতের অধিকাংশই যার যার নিজস্ব পছন্দ ও ইচ্ছার উপরে ভিত্তি করেই বলা হয়ে থাকে। কিন্তু আপনার জন্য কোন কোন ফিচার প্রয়োজনীয় তা আপনাকেই ঠিক করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ক্যামেরা কিনবেন। আজ থেকে ১০ বছর আগে সাধারন একটি ক্যামেরার সর্বাধিক রিজল্যুশান ছিল ৮০০x৬০০। সাধারন একটি মেমোরি কার্ড ছিল ৮ মেগাবাইট। এই পেলেই খুশীর অন্ত ছিলোনা তখন। কিন্তু আজ বিজ্ঞানের প্রসারের সাথে সাথে ফিচার এবং দাম দুইই বেড়েছে। প্রচুর নির্মাতার প্রচুর মডেল। কোনটি আপনার জন্য উপযোগী?
প্রথমেই যেটা বিচার্য বিষয় তা হচ্ছে আপনি কোন উদ্দেশ্যে ক্যামেরা কিনছেন। আপনি কি শখের ফটোগ্রাফার হতে চাইছেন, ঘরে ও বাইরে এবং ভ্রমণে গিয়ে ছবি তুলবেন? নাকি আপনি প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার, বানিজ্যিকভাবে উচ্চমানের ছবি তুলতে চান? নাকি এই দুইয়ের মাঝামাঝি আছেন আপনি? এইসবের উপরে ভিত্তি করে প্রথমেই বিচার করে নিন আপনি point-and-shoot ক্যামেরা নেবেন, নাকি professional ক্যামেরা নেবেন, নাকি এই দুইয়ের মাঝামাঝি professional/consumer (prosumer) মডেল নেবেন।
Point-and-shoot ক্যামেরাগুলি ছোটর উপরে সাধারনত কমপ্যাক্ট মডেল। দামেও খুব বেশি হয়না। যেকোনো ক্যামেরার দোকানে, ইলেক্ট্রনিক্স শোরুমে, এমনকি কমপিউটার সামগ্রী পাওয়া যার এমন দোকানেও এইসব ক্যামেরা পাবেন। দেখতে ছোটখাটো হলেও এইগুলি খেলনা নয়, তাই ব্যবহার করতেও লজ্জা পাওয়ার কোনোই কারন নেই। অনেক প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারও এইগুলির একটি তাদের সাথে রাখেন।
Prosumer (professional/consumer) মডেলগুলি হচ্ছে কমপ্যাক্ট এবং প্রফেশনাল মডেলের মাঝমাঝি জিনিস। এতে ফিচার সামান্য বেশি পাবেন, দামেও কমপ্যাক্ট ক্যামেরার থেকে বেশি হবে। আপনি যদি serious amateur হন, তাহলে এই মডেল নিতে পারেন। অনেকদিন ধরে শখের ফটোগ্রাফি যারা করে যাচ্ছেন, তাদের জন্য এইগুলি ভালো হবে।
যাদের পেশা ফটোগ্রাফি, তাদের জন্য চাই প্রফেশনাল মডেলের ক্যামেরা। যাবতীয় ফিচার ঢেলে সাজানো এক একটি মডেল, দামেও রাজা। প্রফেশনাল মডেল নিয়ে বেশি লিখছিনা কারন যারা এইগুলি ব্যবহার করবেন তাদের জন্য আমার এই লেখা নয়, তারা আমার থেকেও অনেক বেশি জানেন, উলটে আমাকেই অনেক কিছু শেখাতে পারবেন, অনেক বছরের অভিজ্ঞতা তাদের। যারা নতুন শুরু করছেন, আসুন বাকিটুকু জেনে নিই।
ডিজিটাল ক্যামেরা খুব সস্তায় পাওয়া যায়না, আমাদের প্রত্যেকেরই টাকার মূল্য আমরা বুঝি, তাই সঠিক দামে নিজের জন্য সঠিক ক্যামেরা বেছে নেওয়ার সহজ উপায় নিয়েই এই লেখা। ইন্টারনেটে প্রচুর রিভিউ লেখা পাওয়া যায়, সব পড়তে বসলে সমাধান বেরোনোর চেয়ে সব তালগোল পাকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।
কোন ধরনের ক্যামেরা নেবেন সেটি ঠিক করা হলেই অবশ্যম্ভাবী যে প্রশ্নটি মনে আসবে সেটি হল কতো মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা নেবেন। আজকাল 'মেগাপিক্সেল' কথাটা আমরা খুব শুনি। যেকোনো ডিজিটাল ছবি তৈরী হয় অসংখ্য ছোট ছোট রঙীন চতুষ্কোন আকারের পার্টিকেল দিয়ে। এইগুলিকেই পিক্সেল বলা হয়। হাতের কাছে যেকোনো ডিজিটাল ছবিকে বড় করতে থাকলে এই চতুষ্কোনগুলিকে দেখতে পাবেন। যে ক্যামেরার ছবিতে যতো সংখ্যক পিক্সেল ধারন করার ক্ষমতা রাখবে, সেই ক্যামেরার ছবি ততোই উন্নতমানের হবে। এমন ১ মিলিয়ন পিক্সেল দিয়ে হয় ১ মেগাপিক্সেল। ১ মিলিয়ন = ১০ লাখ। ৫ মিলিয়ন পিক্সেল হচ্ছে ৫ মেগাপিক্সেল। বাকিটা অনেকেই আমরা জানি/শুনি, যেমন মোবাইল ফোনের ক্যামেরা কতো মেগাপিক্সেল, ডিজিটাল ক্যামেরা কতো পিক্সেল এইসব আমরা শুনি/দেখি বিজ্ঞাপণে। গ্রহণযোগ্য মানের এবং পরিষ্কার ছবি পাবেন ২/৩ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দিয়ে। কিন্তু আপনি কতো মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা নেবেন? এটা নির্ভর করবে ছবি প্রিন্ট করবেন, নাকি স্ক্রিনেই দেখার জন্য এবং ইমেইলে অন্যান্যদেরকে পাঠানোর জন্য।
১ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার ছবি ইমেইল, ব্লগ, ওয়েবসাইট ও সিডি/ডিভিডি'তে ছবির কালেকশানের জন্য যথেষ্ট। ৪"x৬" প্রিন্ট নেওয়ার জন্য ২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা ভালো হবে। ৫"x৭" ছবি প্রিন্টের জন্য ৩/৪ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা উপযুক্ত হবে। এইভাবে ৮x১০ ছবির জন্য ৫ মেগাপিক্সেল, ১১x১৪ ছবির জন্য ৬ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা নেওয়াই ভালো। এর চেয়ে বেশি ব্যবহার করা যাবেনা তা নয়, তবে দামের দিক দিয়ে বেড়ে চলবে। (বেশি মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা নিলে তাতে কম মেগাপিক্সেলে ছবি তোলার সেটিংস পাবেন) ব্যক্তিগত ভাবে আমি ব্যবহার করি একটি ১০ মেগাপিক্সেল point-and-shoot ক্যামেরা। এছাড়া আমার N95 মোবাইলে আছে ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। এই দুই দিয়েই ঘরে ও বাইরে এবং ভ্রমণের ছবি তোলার কাজ হয়ে যায় আমার। ১০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার সর্বোচ্চ প্রিন্ট আমি করিয়েছিলাম ৩৬"x৪০" সাইজের, চমৎকার প্রিন্ট পেয়েছি।
এর পরেই যে প্রধান বিষয়টি সকলের মনে এসে যাবে সেটা হচ্ছে কতোখানি ধারনক্ষমতার মেমোরী কার্ড কিনবেন। সাধারনত ক্যামেরার সাথেই একটি কার্ড দেয়। আমার ১০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার সাথে ১'টি 1GB কার্ড পেয়েছিলাম, নিজে একটি 2GB কার্ড কিনে নিয়েছিলাম। ১০ মেগাপিক্সেল সেটিংসে 2GB কার্ডে আমি ৬৯৩'টি ছবি রাখতে পারি কার্ডে। এই অনুপাতে আন্দাজ করে নিন বাকিটা। বেশি ধারনক্ষমতার কার্ড কিনে টাকা অযথা ব্যায় না করাই ভালো কারন একসাথে এতো ছবি রাখার দরকার পড়েনা কার্ডে, আমরা সেগুলিকে হার্ড ডিস্কেই এনে ফেলি পুরো ভর্তি হওয়ার আগে। বাইরে কোথাও ঘুরতে গেলেও কতোদিনের জন্যই বা যাবেন? ৭০০ ছবি নিশ্চয় তুলবেন না? ৭০০ ছবি একসাথে কার্ডে রাখার অর্থ সেই পরিমানে সময় লাগবে সেগুলিকে হার্ড ডিস্কে আনার সময়ে। সুতরাং, স্বাভাবিক ধারনক্ষমতার কার্ড 1GB নিয়েই কাজ চালান, একান্ত প্রয়োজন নাহলে এর বেশি ক্ষমতার কার্ড না নেওয়াই ভালো। বরং, বেশি টাকা মেমোরী কার্ডে খরচ নাকরে ক্যামেরায় সেই টাকা যুক্ত করে দিন।
ক্যামেরা কেনার ক্ষেত্রে আরেকটি জিনিস যা উল্লেখ্য - মেমোরী কার্ড চার প্রকারের হয়। Secure Digital (SD Card), Extreme Digital (xD Card), Memory Stick এবং CompactFlash (CF Card); কোডাক, ক্যানন, নিকন, ক্যাসিও এইসব ক্যামেরাতে SD Card ব্যবহার হয়। এইগুলিতে থাকে Write Protect Switch, এর ডেটা ট্র্যান্সফার স্পিড অন্যগুলির থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি। xD Card সাধারনত ব্যবহার হয় Olympus ও FujiFilm ক্যামেরাগুলিতে। আকারে ছোট। ডেটা ট্র্যান্সফার স্পিড SD Card'এর চেয়ে কম। Memory Stick ব্যবহার হয় Sony cybershot / handycam এইসবে। টেকিরা বলেন এই কার্ডের ডেটা ট্র্যান্সফার স্পিড অনেক কম, কিন্তু, Sony'র প্রচুর প্রডাক্টে ছবি ট্র্যান্সফার করা যায়। CF Card প্রধানত ব্যবহার হয় দামী ক্যামেরাগুলিতে। এইগুলির মধ্যেই থাকে মাইক্রোপ্রসেসর যার সাহায্যে অনেক দ্রুতগতিতে ছবি/ভিডিও ট্র্যান্সফার করা যায় (অন্তত থিওরী তাই বলে)। সুতরাং দেখতেই পাচ্ছেন সব কার্ড সমস্ত ক্যামেরার সাথে কাজ করবেনা। ডেটা ট্র্যান্সফারের গতি কম/বেশির ব্যাপারও আছে। এই গতি আপনার কাছে জরুরী হলে সেই বুঝে ক্যামেরা কিনবেন।
সাধারন ইউজারের জন্য সর্বশেষ যে বিষয়টি আসতে পারে সেটি হল ছবি ট্র্যান্সফারের পদ্ধতি কোন ক্যামেরা কেমন। USB দিয়ে সব ক্যামেরার ছবি কমপিউটারে নিতে পারবেন। যারা বাড়তি কিছু চাইছেন তাদের জন্য FireWire, Bluetooth & WiFi connectivity জরুরী হতে পারে। FireWire port দিয়ে সাধারনত অডিও/ভিডিও ট্র্যান্সফারের কাজ চলে। যেহেতু আজকালের ডিজিটাল ক্যামেরায় ভিডিও তোলা যায়, অনেকের এটি প্রয়োজন হতে পারে। খুব প্রয়োজনীয় নাহলে এটি ছেড়েই দিন। Bluetooth লাগে যদি ক্যামেরা থেকে সরাসরি কারো মোবাইল ফোনে ছবি পাঠাতে চান। কিন্তু যেটা অনেকেই চাইতে পারেন তা হল WiFi, এর মাধ্যমে USB cable ছাড়াই ছবি নিতে পারবেন কমপিউটারে/ল্যাপটপে।
এর পরেই সরাসরিভাবে ক্যামেরার টেকনিক্যাল বিষয় চলে আসে। কতোখানি জুম ক্ষমতা থাকা উচিৎ? কতোখানি ডিজিটাল জুম, কতোখানি অপটিক্যাল জুম। এই দুইয়ের তফাৎ কি? আলোচনা করবো পরবর্তী টিউনে।
-
ছবি - Shutter Stock by Rawpixel.com
আমি রিয়া। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 96 টি টিউন ও 362 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
জীবনের সব ভুল, যদি ফুল হয়ে যায়... জীবনের সব কালো, যদি আলো হয়ে যায়...
হুম ……… অনেকদিন পর ক্যামেরা নিয়ে কেউ লিখল …….. আমিও শখের ফটোগ্রাফার ….. ১০ মেগাপিক্সেল ব্যবহার করি ….. তবে খুব শিঘ্রই এসেলার এ সুইচ করার চিন্তা করছি।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপনার ইনফরমেশানগুলোর জন্যে……….