আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন সবাই, আশা করছি ভাল আছেন। বরাবরের মত হাজির হলাম নতুন একটি টিউন নিয়ে।
বর্তমান সময়ে পোর্টেবল ডিভাইস অনেক বেশি এভেইলেবল। স্মার্ট-ফোন ট্যাবলেটের এই যুগে বেশিরভাগ কাজই এই সমস্ত পোর্টেবল ডিভাইস দিয়ে করে ফেলা যায়। পোর্টেবল ডিভাইস হিসেবে স্মার্ট-ফোন এবং ট্যাবলেট যতই অগ্রগতি সাধন করুক না কেন এগুলো কখনো পিসির জায়গা দখল করতে পারবেনা। গেমিং হোক, গ্রাফিক্স ডিজাইন বা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট হোক পিসির বিকল্প নেই।
আপনার চাহিদামত কনফিগারেশনের একটি পিসি বিল্ড করে যেকোনো কাজ করে ফেলতে পারবেন পিসি দিয়ে নিমিষেই। তবে পিসি কেমন হবে কেমন কাজ করবে এটা অনেকাংশে নির্ভর করবে এর বিল্ডিং এর উপর। সঠিক হার্ডওয়্যার দিয়ে পিসি বিল্ড করে নিশ্চিন্তে আপনি দৈনন্দিন কাজ করতে পারবেন। তো আজকের এই টিউনটি পিসি বিল্ড নিয়ে। আজকের এই টিউনটিতে আমরা সেরা কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করব যা নতুনদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে চলুন মূল আলোচনায় চলে যাওয়া যাক,
আপনি যদি উইন্ডোজ বা লিনাক্স পিসি তৈরি করতে চান তাহলে আপনাকে স্ক্যাচ থেকে শুরু করতে হবে। যদিও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এবং দোকানে আপনি প্রি-বিল্ড পিসি পাবেন তবে সেরা পারফরম্যান্স পেতে নিজের পছন্দমতো হার্ডওয়্যার দিয়ে পিসি বিল্ড করার বিকল্প নেই।
আপনি যখন নিজে একটি পিসি বানাবেন তখন নিজের ইচ্ছেমতো সেরা মাদারবোর্ড, র্যাম, GPU সিলেক্ট করতে পারবেন। অর্থ তো বাঁচবেই সাথে সাথে তৈরি করতে পারবেন আপনার সেরা কম্পিউটার। নতুনদের জন্য এই জার্নিটা একটি জটিল কারণ তারা অনেক কিছু সম্পর্কে আগে থেকে অবগত থাকে না। কোন কাজে কোন হার্ডওয়্যার ব্যবহার করবে এটা নিয়ে কনফিউশনে থাকতে হয়। আর তাজ আপনার জন্য এই টিউনে আমরা রেখেছি ২০ টিপস যেগুলো আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করবে।
আপনাকে সর্বপ্রথম নির্ধারণ করতে হবে কোন উদ্দেশ্যে আপনি পিসি বিল্ড করতে চাচ্ছেন। আপনার হার্ডওয়্যার কেমন হবে এটা নির্ধারণ করবে এই পিসি দিয়ে ধরনের কাজ করবেন। যেমন হালকা ব্রাউজিং এবং মিডিয়া ইউজের জন্য এত দামী হার্ডওয়্যার প্রয়োজন হবে না অন্যদিকে গেমিং এর জন্য এবং ডিজাইনিং এর মত কাজের জন্য দরকার হবে প্রিমিয়াম সব হার্ডওয়্যারের।
পিসি বিল্ডিং এর CPU নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে আপনাকে মাদারবোর্ড, কোলিং সলিউশন ইত্যাদি নির্বাচন করতে হবে। সুতরাং শুরুতেই CPU এর ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্তে আসা জরুরী।
দুইটি ব্র্যান্ড থেকে একটি ব্র্যান্ড নিলে আপনি ঠকে যাবেন বা পিসি খারাপ হবে এমনটি ভাবলে ভুল করবেন। AMD, Intel উভয়েরই সুবিধা অসুবিধা রয়েছে। তবে বেস্ট ভ্যালু এবং পারফরম্যান্স পেতে AMD সেরা অন্যদিকে Intel আপনাকে হতাশ করবে এমনটি নয়। সবচেয়ে ভাল হয় আপনার কাজ অনুযায়ী একটু রিসার্চ করে নিন কোনটি আপনাকে সেরা ভ্যালু দেবে।
আপনি যখন CPU নির্বাচন করে ফেলবেন তখন কাজ হবে ভাল একটু কোলিং সলিউশন নির্বাচন করা। নতুন হিসেবে আপনার জন্য পরামর্শ থাকবে এমন একটি কোলার সিলেক্ট করুন যার সাথে থার্মাল পেস্ট থাকবে। প্রথম দিকে আপনি বুঝবেন না কি পরিমাণ থার্মাল পেস্ট প্রয়োজন বা কতটুকু আপনার জন্য বেস্ট। সুতরাং আগে থাকে থার্মাল পেস্ট ইনক্লুড কোলার সিলেক্ট করুন। তাছাড়া কিছু CPU তে কোলিং সলিউশন আগে থেকে দেয়া থাকে সেটা আরও ভাল।
পিসির একেকটি কম্পোনেন্ট বিভিন্ন ভেরিয়েন্টের হয়ে থাকে। হার্ডওয়্যার এবং ম্যানুফেকচার অনুযায়ী আলাদা আলাদা হয়। সব হার্ডওয়্যার এক সাথে ঠিক মত কাজ করবে না যদি একে অপরের সাথে কম্পিটিবল না হয়। যেমন আপনি একটি মাদারবোর্ড সিলেক্ট করবেন যেখানে ফাস্ট SSD ব্যবহার করবেন তাহলে আগে নিশ্চিত হতে হবে এই মাদারবোর্ডটিতে M.2 স্লট আছে কিনা, আপনি যতগুলো RAM স্লট চান ততগুলো আছে কিনা। নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার নির্বাচন করা কম্পোনেন্ট গুলো একে অপরকে সাপোর্ট করবে কিনা।
মনে রাখবেন পিসির বেশিরভাগ হার্ডওয়্যার খুবই সেনসিটিভ হয় এবং সামান্য আঘাতে ভেঙ্গে যেতে পারে বা অকেজো হয়ে যেতে পারে। এজন্য একটা আরেকটার সাথে যুক্ত করতে সতর্কতা অবলম্বন করুন। CPU এবং মাদারবোর্ড এটাচের সময় বেশি সতর্ক থাকুন। প্রতিটি পার্টের এরো ইন্ডিকেশন থাকে, কোন দিকে ঘুরাতে হবে বা এটাচ করতে হবে। তারাহুরো বা জোরাজোরি করবেন না এতে বিভিন্ন পিন ভেঙ্গে যেতে পারে। প্রয়োজনে ইউটিউবের ভিডিও দেখুন।
স্থির বিদ্যুৎ সম্পর্কে হয়তো আমরা সবাই জানি। দুটি অবজেক্ট ঘষা বা নাড়াচাড়ার ফলে সাময়িক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। আপনার হাতে উৎপন্ন এমন বিদ্যুৎ আপনার পিসির কম্পোনেন্ট অকেজো করে দিতে পারে। সবচেয়ে ভাল হয় যদি আপনার কাছে anti-static wrist strap থাকে। না থাকলেও সমস্যা নাই, কাজ শুরু করার আগে লোহার কোন অবজেক্টে হাত দিয়ে স্পর্শ করুন। এতে করে সেই বিদ্যুৎ সেখানে চলে যাবে আপনার যন্ত্রাংশের কোন ক্ষতি হবে না।
যেহেতু ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করবেন সেহেতু আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। তাছাড়া খেয়াল রাখুন পিসির কেস বা ধারালো কোন কিছু দিয়ে যেন হাত পা না কাটে। শক থেকে বাঁচতে প্লাস্টিকের গ্লাবস ব্যবহার করতে পারেন। চোখকে নিরাপদ রাখতে চোখে গ্লাস ব্যবহার করতে পারেন।
বিভিন্ন স্ক্রু খুলার জন্য বা লাগানোর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বা টুল-বক্স সাথে রাখুন। 3-pronged parts retriever (টুলের নামটি ইংরেজিতে দেয়ার কারণ সহজেই গুগলে সার্চ দিয়ে চিনে নিতে পারবেন) টুলটি অবশ্যই রাখুন কারণ কেসের ভেতর স্ক্রু পড়ে গেলে সহজে তুলতে পারবেন।
নীরবে এবং ডিসক্রাকশন ফ্রি হয়ে কাজ করতে একটি উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করুন। সব কিছু সহজে বহন করা যায় এবং রাখা যায় এমন কিছু একটা ফলে ভাল হয়। বড় কোন টেবিলে রেখে আপনি সেটআপ করতে পারেন।
এমন একটি রুম নির্বাচন করুন যেখানে কোন শিশু আপনাকে ডিস্টার্ব করবে না। হার্ডওয়্যার গুলো যেহেতু ভঙ্গুর সেহেতু শিশুদের লাগালে আসলে ভেঙে যেতে পারে।
শুনতে অদ্ভুত শুনালেও এটা প্রয়োজনে কাজে আসে। বিভিন্ন পিন বা স্ক্রিন তুলতে বা ধরতে বড় নখ আপনাকে সাহায্য করতে পারে। মনিটরের স্ক্রিন, পিসির কেসের পাতলা পলি তুলতে এটি আপনাকে সাহায্য করবে আবার র্যাম লাগানো বা অন্যান্য হার্ডওয়্যার এটাচ করতে সহজ হবে।
এটাও শুনতে অদ্ভুত লাগতে পারে তবে সতর্কতার অংশ হিসেবে এসব কাজ করার সময় আপনার চুলের দিকে খেয়াল রাখুন। আপনার চুল লম্বা হলে কিছু সময়ের জন্য সেটা বেধে রাখুন।
আমরা সবাই এই জিনিসটা এড়িয়ে চলি তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটা পড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু আপনি নতুন এবং অনেক কিছু সম্পর্কে ধারণা রাখেন না তাই ইউজার ম্যানুয়ালটি পড়ে তার নির্দেশনা ফলো করুন। ঝুঁকি এড়াতে এটা বেশ কাজে আসবে।
আপনি যখন কোন হার্ডওয়্যার কোন স্লটে বসাবেন তখন খেয়াল করুন এটা বসানোর পর ক্লিক সাউন্ড করছে কিনা। যেমন র্যাম যখন বসাবেন তখন ছোট একটা সাউন্ড শুনবেন না এবং দেখবেন পাশাপাশি সুন্দর করে বসে গেছে। SATA ক্যাবল বা অন্যান্য যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রেও বিষয়টি এক।
যখন দেখবেন ঠিক ভাবে কোন হার্ডওয়্যার বসতে চাচ্ছে না তখন সেখানে জোর করবেন না এতে সেটা ভেঙে যেতে পারে। ঠিক মত ফিট হচ্ছে না মানে কোথাও আপনার ভুল আছে, ম্যানুয়াল ফলো করুন, সঠিক ডিরেকশন কোনটা আগে বুঝুন অথবা ইউটিউবিং করুন।
পিসির ভেতরের ক্যাবল গুলো এলোমেলো রাখবেন না, সুন্দর করে গুছিয়ে রাখুন। এলোমেলো রাখলে সেটা জায়গা দখল করে রাখতে পারে বাতাস চলাচল পর্যন্ত বিঘ্নিত হতে পারে। পাওয়ার সাপ্লাইয়ের জন্য কেসের অপজিট সাইড ব্যবহার করুন, সব গুলো ক্যাবল জিপ দিয়ে বেধে রাখুন।
পিসি বিল্ডিং এর এই পার্টটা অনেকের কাছেই বিরক্তিকর। সাবধানে কেসের সাথে I/O ব্যাকপ্ল্যাট লাগান, র্যামের মত এটাও ঠিক মত লাগলে ক্লিক সাউন্ড শুনতে পাবেন৷ তারাহুরো করার দরকার নেই সময় নিয়ে এই অংশ এটাচ করুন।
বিষয়টি সবারই জানা তবুও বলা উচিৎ। হয়তো সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে সেট করার পর কাজ করছে না পিসি অন হচ্ছে না, হতে পারে আপনি পাওয়ার সাপ্লাই বাটন চেপে অন করেন নি।
পিসিতে এটাচ করা প্যারিফেরাল ডিভাইস ঠিক আছে কিনা সেটা আগে নিশ্চিত হয়ে নিন। পিসি সেট করার পর দেখলেন অন হচ্ছে না। আগেই সেটআপ খুলে চেক করার আগে দেখুন মনিটর বা অন্যান্য প্যারিফেরাল ঠিক আছে কিনা।
পিসির সেটআপ এর কারণে সমস্যা নাকি প্যারিফেরালে সমস্যা এটা আগে থেকে নিশ্চিত হোন।
পিসি বিল্ড করা হয়ে গেলে এই পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিন পিসিতে কোন OS রান করাবেন। যদি পিসি দিয়ে গেমিং, এডিটিং, অ্যাপ রান ইত্যাদি কাজ করতে চান তাহলে উইন্ডোজ হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ। যদি কোডিং করতে চান তাহলে বেছে নিতে পারেন লিন্যাক্স। তাছাড়া উইন্ডোজ কেনা লাগলেও লিনাক্স ফ্রিতে ব্যবহার করতে পারবেন।
পুরো পিসি বিল্ডিং প্রক্রিয়াটি পরিশ্রম না ভেবে উপভোগ করুন। ভেবে দেখুন নিজের হাতে সব গুলো হার্ডওয়্যার আপনি এটাচ করেছেন এবং যখন অন হবে তখন কি পরিমাণ আনন্দ হবে। সাথে নতুন কিছু আপনার অভিজ্ঞতায় যুক্ত হল।
নতুন অবস্থায় পিসি বিল্ড করা আপনাকে নিঃসন্দেহে একটি সেরা অভিজ্ঞতা দেবে। নতুন কিছু শিখতে পারবেন অন্যকেও সাহায্য করতে পারবেন। আশা করছি পিসি বিল্ডিং এর ক্ষেত্রে এই টিপস গুলো আপনাকে বেশ সাহায্য করবে। তাহলে আর দেরি কেন এখনি কাজ শুরু করে দিন।
তো কেমন হল এই টিউনটি জানাতে টিউমেন্ট করুন। আজকে এ পর্যন্তই শীঘ্রই দেখা হবে নতুন কোন টিউনের সাথে ততদিন ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।