পেপাল হলো আন্তর্জাতিকভাবে অর্থ স্থানান্তরের একটা জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। বাংলাদেশে পেপাল বৈধ না। কেননা বাংলাদেশ পেপাল ব্যবহারকারী দেশের তালিকাভুক্ত নয়। তাই এখান থেকে যাঁরা পেপাল ব্যবহার করেন তাঁরা ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করেন। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এবং ঝুঁকি নিয়ে তা ব্যবহার করেন। যে কোন সময় সেই অ্যাকাউন্ট অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। আর তা অকার্যকর হলে ১৮০ দিনের জন্য অর্থ আটকে যেতে পারে। অনেক সময় প্রয়োজনীয় তথ্য এবং ডকুমেন্ট দিতে না পারার কারণে সেই অর্থ আর ফেরত পাওয়া যায় না। এখন কথা হল আমরা ঝুঁকি নিয়ে কেন পেপাল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করি। এর সহজ উত্তর হল কিছুটা বাধ্য হয়ে, আবার কিছু সুবিধা নেবার জন্য। বিভিন্ন কেস স্টাডি করে নিচের কারণ গুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
১। বাংলদেশ থেকে লখ লক্ষ তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতি ভাই বোনেরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ফ্রিল্যান্সিং করেন। তাঁদের কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বায়ারদের নিকট থেকে পেপালে পেমেন্ট গ্রহণ করেন। কেননা তাঁদের বায়ার সুবিধার জন্য পেপালে পেমেন্ট দিয়ে থাকেন। অন্য কোন অপশন হাতে থাকে না।
২। বাংলাদেশ থেকে বৈধ ভাবে যে সকল পেমেন্ট মেথড ব্যবহার করা যায় সে গুলো হলো মাস্টার কার্ড, ভিসা কার্ড, আমেক্স কার্ড। এই সকল কার্ড দিয়ে শুধু পে করা যায়। অর্থ গ্রহণ করার অপশন নেই।
৩। বাংলাদেশ ব্যাংক এর আইনগত জটিলতা, সীমাবধ্যতা এবং দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেকেই পেপাল ব্যবহার করেন।
৪। বাংলদেশ ব্যাংক এর নিয়ম অনুযায়ী কার্ড দিয়ে প্রতি লেনদেনে ৩০০ ডলারের বেশি খরচ করা যায় না। আবার কার্ড এর কিছু লিমিট আছে। যেমন বছরে সার্কভুক্ত দেশের জন্য ৫০০০ ডলার এবং নন সার্কভুক্ত দেশের জন্য ৭০০০ এর বেশি ডলার এনডোর্স করা যায় না। তাই যাঁরা বেশি অর্থ লেনদেন করতে চান বা বেশি অর্থ খরচ করতে চান তাঁরা পেপাল এর সাহায্য নেন।
৫। যাঁরা ডিজিটাল প্রোডাক্ট নিয়ে ব্যবসা করেন অথবা সার্ভিস প্রদান করেন যেমন ডোমেইন, হোস্টিং, আপস, গেমস, গিফট কার্ড তাঁদের জন্য পেপাল অনেক বেশি সুবিধাজনক। খুব দ্রুত লেনদেন করতে পারেন। তাই তাঁরা পেপাল ব্যবহার করেন।
৬। বিদেশে বসবাসরত অনেকের আত্মীয় স্বজনের নিকট জরুরিভিত্তিতে অর্থ পাঠাতে হয়। সেই সব ক্ষেত্রে পেপাল ব্যবহার করা হয়। কেননা আইনগত জটিলতার কারণে দেশের বাইরে অনেক সময় বৈধভাবে টাকা পাঠানো যায় না। তেমনিভাব এখানে অনেকই তাঁদের আত্মীয় স্বজনের নিকট থেকে পেপালে অর্থ গ্রহণ করেন।
৭। বিদেশে চিকিৎসার জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করতে হয়। তা ছাড়া বিভিন্ন ভর্তি ফি, টিউশন ফি এইসব নানা কারণে পেপাল ব্যবহার করা হয়।
৮। বাংলদেশ থেকে অনেক ফটোগ্রাফার সুনামের সঙ্গে প্রতি বছর আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কার নিয়ে আসছেন নিয়মিতভাবে। অনেকক্ষেত্রে তাঁদর এন্ট্রি ফি পেপাল এর মাধ্যমে প্রদান করতে হয়।
৯। আমাদের অনেকের পাসপোর্ট নেই। তাই তাঁরা ব্যাংক থেকে বৈধভাবে কার্ড কিনতে পারেন না। তাই তাঁরা বাধ্য হয়ে পেপাল ব্যবহার করেন।
১০। ফ্রিল্যান্সাররা যে ডলার আয় করেন তা বৈধভাবে এখানে ক্যাশ আউট করতে পারেন না। তাই তাঁদেরকে কম দামে অনাভাবে ডলার গুলো বিক্রি করে দিতে হয়। এ সুযোগকে কজে লাগিয়ে অনেকেই বৈধ পেমেন্ট মেথড থাকা সত্ত্বেও কমদামে ডলার কিনে পেপাল ব্যবহার করেন।
১১। কার্ড এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুব দুর্বল। হ্যাক হবার সম্ভাবনা থাকে। কার্ড এর ফি দিতে হয়। ব্যবহারের ভ্যালিডিটি থাকে। পেপালে এই ঝামেলা গুলো নেই।
১২। অনেকেই বড় বড় ই-কমার্স সাইট যেমন অ্যামাজন, ইবে, আলি এক্সপ্রেস থেকে প্রোডাক্ট কিনেন নিজেদের ব্যবহারের জন্য অথবা ব্যবসা করার জন্য। সেই সব ক্ষেত্রে তাঁরা পেপাল ব্যবহার করেন।
১৩। অনেকেই পেপাল ডলার কেনাবেচা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাই তাঁরা পেপাল ব্যবহার করেন।
১৪। কেউ কেউ ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ করেন। যেমন ফেসবুক অ্যাড, গুগল অ্যাডওয়ার্ডস, লিংকডইন তাঁদের পেমেন্ট মেথড হিসেবে পেপাল ব্যবহার করা হয়।
আমি শুরুতেই বলেছি পেপাল ব্যবহারে যেমন ঝুঁকি আছে তেমনি সুবিধাও আছে। বাংলাদেশে পেপাল বৈধ না হবার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ফ্রিল্যান্সাররা। তাঁরা ডলার এর উপযুক্ত দাম পান না। আবার বিক্রি করার সময় অনেক সময় প্রতারণার স্বীকার হন। অথচ তাঁরাই আমাদের দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বড় ভূমিকা পালন করতে পারতেন। সরকার তাঁদের নিকট থেকে রাজস্ব হারাচ্ছে।
পেপাল ব্যবসা করতে না পারলে বাংলাদেশে আসবে না যেমন সত্য। তেমনি সরকারের দিক থেকে নানা পলিসির বিষয় গুলো ভেবে দেখতে হচ্ছে। তার মধ্যে বড় একটা ইস্যু হল মানি লন্ডারিং। আমরা এখন এই দো-টানা ইস্যুর মধ্যেই আছি। আমরা কেউ জানিনা পেপাল কবে বাংলদেশে আসবে।
আমি আব্দুল্লাহ আল ফারুক। Digital Marketer, Self Employed, Bogura। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 34 টি টিউন ও 20 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 23 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ভুলে যান ভাই, বাংলাদেশে পেপাল আসবে না। এগুলা সব ই স্বপ্ন। এর থেকে ভালো হয় যে দেশে পেপাল বৈধ, সেই দেশের পরিচত কাউকে দিয়ে পেপাল একাউন্ট বানিয়ে+ভেরিফাই করে নিয়ে ব্যাবহার করা। যদিও সবার পরিচিত, আত্বীয় ত আর বিদেশে থাকে না, তাও যেভাবে হোক এভাবে ইউজ করাটাই ভালো।