অনলাইনে অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে PayPalএর গুরুত্ব কতটুকু সেটা আমরা যারা অনলাইন প্রফেশনাল আছি তারা খুব ভালভাবেই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। PayPal বিশ্বে সর্বাধিক ব্যবহৃত পেমেন্ট মেথড হলেও এবং এর বিশ্বব্যাপী আকাশ ছোঁয়া চাহিদা থাকলেও তারা আজ পর্যন্ত আমাদের দেশে তাদের সেবা চালু করেনি। PayPal এর সেবা আমাদের দেশে না থাকলেও আমাদেরকে ভিন্ন ওয়েতে সেটা ব্যবহার করতে হচ্ছে, যেমন ফ্রিলাঞ্চিং এ ক্লাইন্টদের পেমেন্ট নেয়া,অ্যাফিলিয়েট কমিশন নেয়া, কেনাকাটা ইত্যাদি সহ আরো অনেক ক্ষেত্রে। তাই আমরা অনেকেই USA PayPal অ্যাকাউন্ট খুলে Payoneer দিয়ে ভেরিফাই করে সেটা ব্যবহার করছি। কিন্তু অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করার পরও দেখা যাই অনেক সময় আমাদের অ্যাকাউন্ট লিমিট অথবা ব্যান হয়ে গেছে। তাই আজ আমি আপনাদের সাথে কিছু টিপস শেয়ার করবো, এবং আশা করি এই টিপস গুলো ফলো করার মাধ্যমে হয়তো আপানার PayPal অ্যাকাউন্টিকে লিমিট অথবা ব্যান হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন।
টিপস সুমহ....
১. USA PayPal অ্যাকাউন্ট খোলার সময় যতদূর সম্ভব USA এর ভ্যালিড অ্যাড্রেস ব্যবহার করুন। ফেক অ্যাড্রেস ব্যবহার না করাই ভাল, সেই ক্ষেত্রে আপনি আপনার ক্লাইন্টের রিয়্যাল অ্যাড্রেস ব্যবহার করতে পারেন। এই ক্ষেত্রে সুবিধা হল অ্যাড্রেসটি যদি ভ্যালিড হয় তাহলে PayPal সেটিকে অটোমেটিক ভেরিফাই করে নিবে এবং আপনার অ্যাকাউন্ট এ সেটি ভেরিফাইড হিসেবে দেখাবে। ফলে PayPal এর সন্দেহ থেকে কিছুটা রেহাই পাবেন।
২. আপনি যখন অনলাইনে কেনা কাটা করবেন অথবা কোন পেমেন্ট পরিশোধ করবেন,তখন খেয়াল রাখবেন আপনার PayPal Balance কত আছে। আপনার পরিশোধ যোগ্য টাকার পরিমান যদি আপনার বর্তমান ব্যালেন্স থেকে বেশি হয় তাহলে PayPal আপনার লিঙ্ক করা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অথবা মাস্টার কার্ড থেকে ডলার ডিপোজিট করার চেষ্টা করবে পেমেন্ট প্রসেস করার জন্য। কিন্তু আসলে যেটা হবে সেটা হচ্ছে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অথবা মাস্টার কার্ড থেকে ডলার PayPal এর ডিপোজিট হবে না, ফলে PayPal সিস্টেম বিষয়টাকে ধরে ফেলবে এবং অ্যাকাউন্ট লিমিট অথবা ব্যান করে দেবে।
৩. PayPal এ কখনো "Add Money" অপশন ব্যবহার করে ডলার ডিপোজিট করার চেষ্টা করবেন না। ক্লাইন্ট অথবা ফ্রিলাঞ্চিং/অ্যাফিলিয়েট মার্কেট থেকে যেই পেমেন্ট গুলো পাবেন শুধু সেই গুলোই ব্যবহার করবেন।
৪. আপনার অ্যাড্রেস যদি ভেরিফাইড হয়ে যাই তাহলে আপনি কোন কিছু কেনার সময় অর্থাৎ Check out করার সময় "Bill Me Later" আথবা "Pay after delivery" অপশন পাবেন, কিন্তু সেই অপশন গুলো লোভে পড়ে ব্যবহার করবেন না। সবসময় PayPal ব্যালেন্স দিয়ে পেমেন্ট করবেন। কারন আপনি USA অ্যাড্রেস দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুললেও বসে আছেন বাংলাদেশে। ফলে প্রডাক্ট শিপিং এবং পেমেন্ট নিয়ে প্রবলেম হওয়াটা খুবি স্বাভাবিক।
উপরের ছবির মত "Bill Me Later" ব্যবহার করবেন না
৫. Check Out করার সময় "Pay with a Credit or Debit Card" সিলেক্ট করবেন না।
.
উপরের ছবির মত "Pay with a Credit or Debit Card" অপশন ব্যবহার করবেন না
৬. PayPal অ্যাকাউন্ট প্রোফাইলে আপনার ইমেজ অ্যাড করবেন না। আমার মতে এটা না করাই ভাল।
উপরের ছবির মত Profile ইমেজ হবে, অর্থাৎ কোন নিজের ছবি অ্যাড করবেন না
৭. কখনো ফেক Social Security Number (SSN), TAX Identification Number, Passport Number, Permanent Residential Card Number ব্যবহার করবেন না। এই ফিল্ড গুলোতে হাত না দেয়াই বুদ্দিমানের কাজ।
উপরের ছবির মত এই সমস্ত ফিল্ডে কোন তথ্য অ্যাড করবেন না
৮. আমারা যখন কোন ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে কোন রিকারিং সার্ভিস বা প্রডাক্ট কিনি তখন ওই সাইটগুলো আমাদের PayPal অ্যাকাউন্ট এ অটোমেটিক রিকারিং বিলিং অপশন চালু করে দেয়, যার ফলে নির্দিষ্ট সময় পর আমাদের PayPal অ্যাকাউন্ট থেকে ঐ প্রডাক্ট বা সার্ভিস জন্য প্রয়োজন মত চার্জ কেটে নেই। যেমন- ডোমেইন/ হোস্টিং এর বাৎসরিক চার্জ। এছাড়াও ইদানিং অনেক ওয়েবসাইট এই কাজটি করছে, যাতে নেক্সট পেমেন্টে ইউজারকে নতুন করে প্যেপালে লগইন করে চেক আউট করতে না হয়। এটাকে PayPal এ "Pre-approved Payment" বলে। এই Pre-approved Payment পেজ থেকে Listed Active Service গুলোকে inactive or cancel করে দিবেন। কারন অটোমেটিক পেমেন্ট করার সময় যদি ব্যালন্সে টাকা না থাকে তাহলে লিঙ্ক করা ব্যাংক বা কার্ড থেকে চার্জ কাটার চেষ্টা করবে, যার ফলে যা হবার তাই হবে।
উপরের ছবির মত Pre-active Payment কে inactive or cancel করে দিবেন
৯. সব সময় একই IP আথবা একই ইন্টারনেট কানেকশান থেকে লগইন করার চেষ্টা করবেন। সবচাইতে ভাল হয় যদি USA IP থেকে লগইন করতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে CyberGhost ব্যবহার করতে পারেন IP চেঞ্জার হিসেবে, এবং CyberGhost কানেক্ট করার সময় প্রতিবার একই IP সিলেক্ট করবেন।
(১)উপরের ছবির মত Cyber Ghost এ Country USA সিলেক্ট করুন
(২)উপরের ছবির মত লিস্ট থেকে প্রত্যেক বার একই IP select করে ব্যবহার করুন। Automatic সিলেক্ট করবেন না
১০. এই ধাপটি খুব গুরুত্ব পূর্ণ এবং সেন্সেতিভ, সেটা হচ্ছে মোবাইল নাম্বার ভেরিফিকেশান যা আপনাকে নিজ দায়িত্তে করতে হবে। PayPal সবসময় ফিজিক্যাল নাম্বার দিয়ে অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করাকে সাজেস্ট/সাপোর্ট করে, অর্থাৎ সেই সমস্ত নাম্বার যা ফিজিক্যালি সিম কার্ডের মাধ্যমে মোবাইলে ব্যবহার করা হয়। USA তে এমন মোবাইল অপারেটররা হল Verizon Wireless, AT&T Mobility, T-Mobile US, Sprint Corporation ইত্যাদি। এখন সমস্যা হল কিভাবে আপনি সেই নাম্বার দিয়ে ভেরিফাই করবেন। এখানে দুটি কাজ করা যেতে পারে (১) যদি আপনার কোন অনেক পুরাতন USA ক্লাইন্ট, কোন বন্ধু, কোন আত্মীয় থাকে এবং তার সাথে যদি সম্পর্ক খুবি...খুবি....খুবি ভাল হয় তাহলে আপনি তার সাথে কথা বলে তার মোবাইল নাম্বার দিয়ে ভেরিফাই করে নিতে পারেন।
(২)যদি কোন ক্লাইন্ট,বন্ধু অথবা আত্মীয় ভেরিফাই করে দেই তাহলে আপনি আর একটি নতুন USA Virtual নাম্বার আপনার অ্যাকাউন্টে অ্যাড করবেন এবং Virtual নাম্বারটি কেই প্রাইমারী ফন/মোবাইল নাম্বার হিসেবে সিলেক্ট করবেন। সেই ক্ষেত্রে আপনি USA Virtual নাম্বার কিনতে পারেন অথবা বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশান যেমন Google Voice অথবা Android বিভিন্ন Apps থেকে পেতে পারেন। তবে কখনই আপনি আপনার মোবাইল পিন কোড কারো সাথে শেয়ার করবেন না।
১১. বিনা প্রয়োজনে কখনো অ্যাকাউন্ট এ লগইন করবেন না, এবং না জেনে না বুঝে অযথাই কোন বিষয় নিয়ে গুঁতো গুঁতি করবেন না।
উপরোক্ত বিষয় গুলো যদি মেনে PayPal অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন তাহলে আশা করি, কোন প্রবলেম ছাড়াই আমার মতো ব্যবহার করতে পারবে 😀 ভাল লাগলে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
আমি আবদুল্লাহ আল মামুন ( পলাশ )। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 46 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
বর্তমানে PayPal অ্যাকাউন্ট এ Payoneer দিয়ে ভেরিফাই করা যায় ? ভেরিফাই করা নাগেলে কিভাবে PayPal খুলব এবং অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করব ?