নেটওয়ার্ক নিসন্দেহে বর্তমান দুনিয়ায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আধুনিক দুনিয়া নেটওয়ার্ক ছাড়া একটি দিন অকল্পনীয়। এর ওপর নির্ভরকরে লক্ষ লক্ষ ফ্রিল্যান্সার এর আয় আবার ব্যাংকের হাজার কোটি টাকার ট্রানজ্যাকশন, সরকারি বিভিন্ন কার্যাদি। নেটওয়ার্ক কতটা গুরুত্ব পূর্ণ তা আমরা সাম্প্রতিক উদাহরণ এর মাধ্যমে বুঝতে পারি। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য ৭২ ঘন্টা ইন্টারনেট বন্ধ রেখে পাকিস্তান সরকারের ক্ষতি হয় ৩০০০ কোটি রূপির ও বেশি। আজ আমরা জানবো কি এই বহুল আলোচিত কম্পিউটার নেটওয়ার্ক। এটি কত প্রকার কি কি এবং এর সুবিধা অসুবিধা
যখন দুই বা ততোধিক কম্পিউটার পরস্পরের সাথে কোনো তার বা বেতার মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে তখন তাকেই নেটওয়ার্ক বলা হয়।
নেটওয়ার্কের ইতিহাস :
মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ ARPANET (Advance Research Project Agency Network) নামে বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করে। JCR Licklider এর ধারণার উপর ভিত্তি করে, বব টেলর 1966 সালে দূরবর্তী কম্পিউটারের মধ্যে সম্পদ ভাগাভাগি সক্ষম করার জন্য ARPANET প্রকল্পের সূচনা করেন। ARPANET এর মাধ্যমে তারের সাহায্যে 4টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার পরস্পর সংযুক্ত ছিল, যার মধ্যে UCLA, SRI, UCSB এবং Utah বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রথম বার্তাটি ARPANET এর মাধ্যমে 29 অক্টোবর 1969 সালে পাঠানো হয়েছিল। ধীরে ধীরে এই নেটওয়ার্কে আরও উন্নতি হয়েছে এবং এটি আরও উন্নত হয়েছে। পরবর্তীতে এটি বিশ্বের বৃহত্তম নেটওয়ার্কে পরিণত হয়, যাকে আমরা আজ ইন্টারনেট নামে চিনি।
অনেক ধরনের নেটওয়ার্ক হতে পারে এবং প্রতিটি নেটওয়ার্কের গঠন প্রকৃতি এবং কার্যকারিতা বিভিন্ন। আমরা প্রধানত নেটওয়ার্ককে চার ভাগে ভাগ করতে পারি-
পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক হল সবচেয়ে ছোট নেটওয়ার্ক। এর সাহায্যে একটি বাড়ি বা ভবনের দুই বা ততোধিক কম্পিউটারকে একত্রে সংযুক্ত করে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায়। PAN-এর সাহায্যে একজন ব্যক্তি একটি ডিভাইস থেকে তার স্মার্টফোন, কম্পিউটার ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক হল এমন একটি নেটওয়ার্ক যা স্থানীয় পর্যায়ে কাজ করে। বাড়ি, স্কুল, অফিস ইত্যাদি জায়গায় LAN ব্যবহার করা হয়। ল্যান সবচেয়ে জনপ্রিয় কম্পিউটার নেটওয়ার্কগুলির মধ্যে একটি। আপনি একটি নির্দিষ্ট এলাকায় এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারেন. আপনি প্রায় 10 কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত কম্পিউটার সংযোগ করে ডেটা বিনিময় করতে পারেন। একটি LAN-এ, আমরা কমপক্ষে 2টি কম্পিউটারকে 1000টি কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করে সহজেই একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারি। বেশিরভাগ ল্যান-এ ওয়্যার ব্যবহার করা হয়, তবে বর্তমান সময়ে, ল্যানগুলিও তারবিহীনভাবে তৈরি করা যায়। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের গতি খুবই ভালো এবং এটি তৈরিতে খরচও কম। এছাড়াও, ল্যানের নিরাপত্তাও ভালো। এতে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে একটি হাব, সুইচ, ইথারনেট কেবল, রাউটার এবং নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টারের প্রয়োজন হয়।
একটি মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক হল একটি নেটওয়ার্ক যা সারা শহরে কম্পিউটারকে সংযুক্ত করে। একটি শহরের সমস্ত কলেজ, স্কুল, সরকারী অফিস, MAN তাদের সকলের নেটওয়ার্ক সংযুক্ত রাখে। মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক LAN এর চেয়ে বড়।
MAN এর সাহায্যে, আপনি 10 থেকে 1000 কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত কম্পিউটার সংযোগ করতে পারেন। MAN এর সেরা উদাহরণ হল ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক। দুই বা ততোধিক LAN একসাথে সংযোগ করতে MAN ব্যবহার করা হয়।
ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক হল এলাকাভেদে সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্ক সারা বিশ্বের কম্পিউটারকে সংযুক্ত করে। WAN এর সাহায্যে, আপনি সারা বিশ্বের কম্পিউটারের সাথে সংযোগ করে সহজেই ডেটা বিনিময় করতে পারেন। WAN-এ ডেটা রেট কম কারণ এটি একটি খুব বড় এলাকা জুড়ে।
LAN এবং MAN সংযোগ করে WAN তৈরি করা হয়। ইন্টারনেট হল WAN এর সেরা উদাহরণ। ইন্টারনেট ছাড়াও অনেক ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক রয়েছে যেমন ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক, রেলওয়ে নেটওয়ার্ক, এয়ারলাইন্স নেটওয়ার্ক ইত্যাদি।
নেটওয়ার্ক টপোলজি
আমরা জানি প্রত্যেকটি নেটওয়ার্ক কিছু কম্পিউটার বা হোস্ট এর সমন্বয়ে গঠিত হয়ে থাকে যারা একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে তথ্য আদান প্রদান করে। নেটওয়ার্ক টপোলজি হল এমন একটি বিষয়, যাতে নেটওয়ার্ক প্রত্যেকটি হোস্ট বা ডিভাইস সমুহ কিভাবে একে অপরের সাথে যুক্ত থাকবে সেই সিস্টেমকে বুঝায়। টপোলজিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় যথা:
বাস টপোলজিতে একটি ব্যাকবোন ক্যাবল থাকে এবং এই ব্যাকবোন ক্যাবল এর সাথে সকল হোস্ট সমুহ যুক্ত থাকে। এই প্রকার নেটওয়ার্ক গঠন করা থুব সহজ এবং এত থরচ কম হয়। এই প্রকার নেটওয়ার্কএ যখন কোন কম্পিউটার ডাটা পাঠায় তখন, যে কম্পিউটার এর কাছে ডাটা পাঠানো হয়েছে, সে ডাটা গ্রহন করবে। এই সময় অন্য কোন কম্পিউটার ডাটা আদান প্রদান করতে পারবে না। এই ব্যাকবোন ক্যাবল এর দুই পাশে দুটি টারমিনেশন ব্যবহার করা হয় যাতে করে ডাটা কলিশন না ঘটে।
স্টার টপোলজিতে একটি কেন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রয়ন অংশ থাকে যাকে বলা হয় হাব বা সুইচ। এ্রর সাথে সকল হোস্ট সমুহ যুক্ত। স্টার টপোলজিতে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ বা বর্ধিত করা সহজ কিন্তু কেন্দ্রিয় ডিভাইসটি নষ্ট হয়ে হয়ে গেলে সমস্ত নেটওয়ার্কটি অচল হয়ে পড়ে।
রিং টপোলজিতে প্রত্যেকটি কম্পিউটার একটি বৃত্তের ন্যায় একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে। এখানে প্রত্যেকটি কম্পিউটার একে অপরের সাথে এমন ভাবে যুক্ত থাকে যে তারা একটি রিং বা লুপের সৃষ্টি করে। এই টপোলজিতে কোন শুরু বা শেষ প্রান্ত থাকে না। এই নেটওয়ার্কএ হোস্ট সমুহ একটি বৃত্তকার পথে পরস্পর এর সাথে যুক্ত হয়ে নেটওয়ার্ক গঠন করে। এখানে কোন হোস্ট অন্য কোন হোস্ট এর কাছে ডাটা পাঠালে পরের হোস্ট এর কাছে যাবে, ডাটাটি যদি তার কাছে না পাঠানে হয় তবে সে ডাটাটিকে পরের হোস্ট এর কাছে পাঠায়ে দিবে। এভাবে ডাটাটি প্রত্যেকটি হোস্ট এর কাছে যেতে খাকবে যতক্ষন না তা নির্ধারিত হোস্ট এর কাছে না যায়।
মেষ টপোলজিতে নেটওয়ার্কএ যুক্ত প্রত্যেকটি হোস্ট একে অপরের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে। যেকোন হোস্ট সরাসরি যে কোন হোস্ট এর কাছে ডাটা পাঠাতে পারে। এই ধরনের টপোলজি ইন্সটলেশন ও কনফিগারেশন বেশ জটিল। ব্যস্তবে এই ধরনের টপোলজি থাকে না বললেই চলে।
স্টার টপোলজির সম্প্রসারিত রূপ হচ্ছে ট্রি টপোলজি। এই টপোলজিতে একাধিক কানেক্টিং ডিভাইস হিসেবে হাব বা সুইচ ব্যবহার করে নেটওয়ার্কভুক্ত সকল কম্পিউটারকে একটি বিশেষ স্থানে সংযুক্ত করা হয়। একে বলা হয় সার্ভার ভা রুট। ট্রি সংগঠনে এক বা একাধিক স্তরে নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারগুলো রুট এর সাথে যুক্ত থাকে।
হাইব্রিড টপোলজি হল বিভিন্ন ধরনের টপোলজির সংমিশ্রন। এই টপোলজি স্টার, রিং, বাস ইত্যাদি নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত হয় বলে একে হাইব্রিড টপোলজি বলে। ইন্টারনেট একটি হাইব্রিড নেটওয়ার্ক, কেননা এতে প্রায় সব ধরনের নেটওয়ার্কই সংযুক্ত আছে।
একটি নেটওয়ার্ক গঠন করতে অনেক ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। এ সকল ডিভাইস একসাথে সংযুক্ত হয়ে নেটওয়ার্ক গঠন করে। নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত কিছু প্রধান ডিভাইস নিম্নরূপ-
বর্তমান সময়ে নেটওয়ার্ক এর ব্যবহার অনেক বৃস্তিত। তবে সাধারণত নিম্নলিখিত কাজের জন্য নেটওয়ার্ক এর ব্যবহার করা হয়-
আমি সামি উজ্জামান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।