লোকচক্ষুর অন্তরালে আটলান্টিস

আটলান্টিস বর্তমানে এক কল্পনার রাজ্য ছাড়া আর কিছুই নয়। যার উপর তৈরি হয়েছে অসংখ্য মুভি, লেখা হয়েছে অসংখ্য বই। যীশু খ্রীষ্টের জন্মের প্রায় ৩৬০ বছর আগে প্লেটো (Plato) তাঁর টাইমাউস (Timaeus) এবং ক্রিটিয়াস (Critius) রচনা দুটিতে প্রথম ”আটলান্টিস” নামের এক শহরের কথা উল্লেখ করেন। প্লেটোর মতে শহরটির অস্তিত্ব ছিল তাঁর সময়ের থেকেও অন্তত ৯ হাজার বছর আগে। সে সময়ের এ শহরটি ছিল  তৎকালীন গোটা পৃথিবীর সবথেকে উন্নত রাষ্ট্র, যা গড়ে উঠেছিল অসাধারণ স্থাপত্যকলা, প্রযুক্তিবিদ্যা, প্রাচূর্যের সমন্বয়ে।
প্লেটো ছাড়া আর কোনো দার্শনিক বা ঐতিহাসিক থেকে সেভাবে লিখিত আকারে আটলান্টিসের বর্ণনা পাওয়া যায় না।

শহরটি এতোই সমৃদ্ধ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলো যে তাদেরকে বাইরের কোন সভ্যতার সাথে যোগাযোগ করার কোনো প্রয়োজন ছিলো না। সুবিশাল এই রাজ্যে চারিদিকে সাগর ছাড়াও এর অধিবাসীরা খনন করেছিল অনেক খাল, আর পানির উপর দিয়ে তৈরি করেছিল বিরাট সেতু। গাছপালা আর ফলে ফুলে ভরা ছিল পুরো দ্বীপ। পশুপাখিরও ছিল না কোনো কমতি। এমনকি আটলান্টিসে হাতি ছিল বলেও প্লেটো দাবী করেন। এখানকার মাটি ছিল খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। আধুনিক ঐতিহাসিকেরা অরিক্যালকামকে ব্রোঞ্জের মতো কোনো সংকর ধাতু মনে করেন, কিন্তু সংকর ধাতু কীভাবে তারা আহরন করত তা নিয়ে বিতর্ক আছে। এছাড়া স্বর্ণ, রৌপ্য, আর ব্রোঞ্জের প্রচুর ব্যবহার ছিল। অস্ট্রিয়ার দার্শনিক রুডলফ স্টাইনারও বলেছেন আটলান্টিসের কথা। তিনি গবেষণা করে দেখান যে আটলান্টিসবাসীরা উড়তেও শিখেছিল। তবে ওদের আকাশযানগুলো এখনকার পৃথিবীতে ওড়ার উপযোগী নয়। কারণ, তখনকার দিনে বাতাস ছিল অনেক ঘন আর ভারি।

আটলান্টিসকে নিয়ে লিখেছেন উইলিয়াম স্কট-এলিয়ট-ও। আর তার বর্ণনা প্লেটোর চেয়েও নিখুঁত। ১৮৯৬ সালে প্রকাশিত হয় তার বই ‘দ্য স্টোরি অফ আটলান্টিস’। ওই বইয়ের তিনি লিখেছেন, আটলান্টিসের শাসনকর্তারা তাদের সমাজ ছিল সর্বগ্রাসী, সর্বনাশা। সব কিছুকেই নিজেদের আয়ত্তে নিতে চাইত তারা।

দ্বীপের মধ্যবর্তী পর্বত তারা পরিণত করে পসেইডনের মন্দিরে। এর দেয়াল ছিল স্বর্ণ ও রৌপ্য পদার্থে নির্মিত আর অরিক্যালকামের কারুকার্যশোভিত। মন্দিরের সীমানা প্রাচীর পুরোটাই স্বর্ণের। মন্দিরের ভেতর দেবতা পসেইডনের স্বর্ণনির্মিত মূর্তি অধিষ্ঠিত ছয়টি ডানাওয়ালা ঘোড়ায় টানা এক রথের উপদীপ। দ্বীপবাসীরা প্রতি পঞ্চম অথবা ষষ্ঠ বছরে অর্ঘ্য নিয়ে হাজির হতো পসেইডনের মন্দিরে। প্রাসাদ চত্বরের একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত ছিল একটি মন্দির।

এই মন্দিরে নিয়মিত বসতেন আটলান্টিসের মহাক্ষমতাধর রাজা অ্যাটলাস আর তার নয় ভাই। পাঁচ-ছয় বছর পর পর তারা আসতেন এখানে। তাদের গায়ে থাকতো কালো রংয়ের পবিত্র পোশাক। প্রথমে দেবতাদের উদ্দেশ্যে বুনো ষাঁড় বলি দিতেন তারা। দেবতাদের তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করতেন ষাঁড়ের রক্ত। আর তারপর শুরু হত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় আলোচনা। সবশেষে আলোচনার সারসংক্ষেপ লিখে নেওয়া হত সোনার ফলকে আর তা সংরক্ষণ করা হত পরের বৈঠকের জন্য।

দ্বীপের প্রতিটি অংশের রাজা ছিলেন স্বাধীন। প্রজাদের উপর ছিল তাদের একচ্ছত্র ক্ষমতা। আটলান্টিসের ছিল শক্তিশালী সেনাবাহিনী। আটলান্টিসবাসীদের গড় আয়ু ছিলো প্রায় ৮০০ বছরের মতো আর তাদের স্বাস্থ্য এবং শক্তি ছিলো অবিশ্বাস্য। তাই বলা যায় আটলান্টিসবাসীরা ছিলো মানুষের আদি নমুনা। মুহূর্তের মধ্যে তারা হাজির করতে পারত দশ হাজার যুদ্ধরথ। সামরিক শক্তি আর প্রযুক্তির দিক থেকে আটলান্টিয়ানরা ছিল সমসাময়িক যেকোন সভ্যতার থেকে যোজন যোজন এগিয়ে।

তবে গোটা বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও উন্নত আটলান্টিস শহরটিই হঠাৎ দেবতাদের ক্রোধের মুখে পড়ল। ক্রোধান্বিত দেবতা জিউসের অভিশাপে আটলান্টিস নামের শহরটি পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে গেল চিরতরে। যার হদিস আজ অবধি পাওয়া যায়নি।

কোথায় সেই আটলান্টিসঃ গবেষকরা যুগের পর যুগ ধরে এই সভ্যতা খুঁজে চলেছে। তবে আজও তার প্রমাণ মিলেনি। বহু বিজ্ঞানীরাই আটলান্টিস পাওয়ার দাবি করেছে। যা অধিকাংশই সাগরের নিচে। এমনকি সাহারা মরুভূমিতে পাওয়ার দাবিও করা হয়েছে। তবে আজও সবার চক্ষুর অন্তরালে নিজেকে ১১, ০০০ বছর ধরে গোপন রেখেছে আটলান্টিস।

Level 1

আমি Sk Shakib। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 8 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস