বই: আশিয়ানী
জনরা: ফ্যান্টাসি, ড্রামা, অ্যাডভেঞ্চার
লেখক: জুলিয়ান
বইটা সমন্ধে পছন্দের কিছুঃ
পাঠকঃ বাংলা ভাষায় লিখা সেকেন্ডারী ওয়ার্ড ফ্যান্টাসী বইকটি'র মধ্যে অন্যতম একটি.
*রুপকথা, অলীক কাহিনী, বাচ্চাদের কাহিনী কোনটাই নয়.
*বিশাল পরিসরে, ২ জগৎের মেলবন্ধনে দারুন এক ইসেকাই-ফ্যান্টাসী উপন্যাস. আশ্চর্য কিন্তু যেন খুবচেনা এক জগতের ক্রিয়েটর তিনি. লেখকের ৭ বছরের পরিশ্রমের চমৎকার এক ফসল এটি।
*লেখক এখানে বাস্তব রুঢ় দুনিয়া থেকে, নিজের কমফোর্ট জোন থেকে একটুখানী বেরোনোর, এস্কিপিজমের সুযোগ করে দিয়েছেন আপনাকে।
*লেখকঃ আশীয়ানীকে আমার জীবনদর্শন বললেও অত্যুক্তি হবে না. একটা ড্রিম প্রজেক্ট।
*সম্পাদকঃ কিছু বই আপনি পড়বেন। মজা নেবেন। এরপর ভুলে যাবেন।
কিছু বই আপনি পড়বেন। মজা নেবেন। এরপর সারা জীবন মনে রাখবেন।
আশিয়ানী দ্বিতীয় ধরনের বই।
বই সংক্ষেপঃ
আশিয়ানী আরনোমিয়েল একজন রাজকুমারী। সেভিদোনিয়া তার রাজ্য। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, সিংহাসনে প্রথম নারী উত্তরাধীকারী যে সে'ই হবে, তা একরকম নিশ্চিত'ই। কিন্তু তার রহস্যসন্ধানী ব্যক্তিত্ব কি এতে কোনভাবে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে? নিষিদ্ধ এক রহস্যের প্রতি প্রচন্ড আকর্ষনে, ক্রমে ক্রমে সে পৌছে গেল এমন এক জায়গায় যা তার পুরো জীবনাচরণকে বদলে দিল চিরদিনের জন্য! নিজেও বদলে দিল আর একজনের জীবন, যার সাথে পাবেন আপনার-আমার অনেক মিল!
এদিকে সেভিদোনিয়ায় যে একের পর এক অনাকাঙখীত, অযাচিত ঘটনা ঘটে চলছে তা কি নিছক'ই কাকতালীয়? উদ্বিগ্ন রাজা আরসালান আরনোমিয়েল, সেনাধ্যক্ষ আরহাম মেনদারকে নিয়ে সমস্যা সমাধানের যে চেষ্টা করে যাচ্ছেন, কিন্তু তা কি আসলেই যথেষ্ট? দায়ীত্ব-কর্তব্য পালন, রাজকুমারীর যোগ্যতার প্রমাণ দেয়ার সময় কি এসে গেছে? আর, অভিজাতদের সাথে তার যে দূরত্ব তৈরী হয়ে গেছে, তা কি আদৌ কমিয়ে আনতে পারবে আশিয়ানী?
ইলদারাম পর্বতমালার উত্তরাংশ কেন হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠলো? রাজধানীতে ব্যবসায়ী কাফেলা আসা কমে গেল কেন? রাজকীয় সড়কে হামলা, পশ্চিমাঞ্চলে গোত্রদের মধ্যে ঝামেলা, খনিতে শ্রমিক বিদ্রোহ সবই কি কাকতাল? এমনকি খোদ রাজধানী সোভিয়ানে, এমন অযাচীত ঘটনা ঘটানোর মত সাহস কার থাকতে পারে? প্রাচীন জাদুকর সংঘের একজন প্রকৃতিসাধিকা ঠিক কিসের আশংকা করছে? আরনোমিয়েল সেনাবাহিনী এবং রাখশামান (বিশেষ) সেনাদলকে কেন হঠাৎ করে তলব করার প্রয়োজন পড়লো? হরিৎসেনারাই বা কী নিয়ে কাজ করছে? রাজবৃক্ষ আরনীমিশিল এর কী ভূমিকা রয়েছে আরনোমিয়েল রাজবংশের উত্থানের পেছনে?
আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, এসব ঘটনা আশিয়ানীর সাথেই বা কতটুকু জড়িত?
এসব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে প্রাচীন রহস্য, রাজনৈতিক কূটকৌশল, সমরকৌশল এবং বিশ্বাসঘাতকতার মিশেলে গঠিত বিশাল প্রেক্ষাপটের ফ্যান্টাসি উপন্যাস আশিয়ানী তে।
পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ
অনেকটা সময় নিয়ে বইটা শেষ করেছি। আসলে, উত্তপ্ত, অতিসক্রিয় এক মনন আমার যা সর্বদাই ক্ষুধার্থ থাকে। ইদানিং আমি একে বিভিন্ন ধরনের 'পপ কালচার' খাওয়াই। উপন্যাস কম হয়, টিভি সিরিজ, ইসেকাই অ্যানিমে'ই বেশী, এমনকি মিড এক্সামের আগেরদিনও। মনস্তত্বগতভাবে আমি নিশ্চয়ই একজন এস্কেপিস্ট। নয়তো ইসেকাই, ফ্যান্টাসী মুভি, সিরিজ, উপন্যাস আমার এত পছন্দ কেন?! প্রায় সবগুলোই দেখা শেষ।
ইসেকাই এ গল্পের নায়ক (এইক্ষেত্রে আশিয়ানী নায়ক) যখন অদেখা একদম নতুন কোন জগৎে একদম নতুন কোন পরিস্থিতির মুখোমুখী হয় সেটা আমার খুবই ভাল লাগে। অজ্ঞাতসারে সেই জাদু, তরবারীর জগৎে আমিও যেন তার অ্যাডভেঞ্চারে সামীল হই। তবে আশিয়ানীকে রিভার্স ইসেকাই বলতে পারেন। পড়লেই বুঝবেন।
সত্য বলতে, এক্সামের এই সময়টাতে এই উপন্যাসটা বাদ দিয়ে আর কিছু'ই লাগেনি আমার। আমি তখন আশিয়ানীর মাঝামাঝি, দারুন সব ইন্টারেস্টিং ঘটনার একদম মধ্যেখানে। এদিকে লেখক প্রতি অধ্যায়ের শেষে আমাকে ক্লিফহ্যাঙ্গারে দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখেন 😔। কয়েকবার এমন হয়েছে, আমি অ্যারে, লিংক লিস্টের অ্যালগরিদম মুখস্ত করতে করতে, কখন যে. আশিয়ানী এরপর কি করবে তার সাম্ভব্যতা কষতে শুরু করে দিয়েছি. 😁। একদিন তো বিছানায় শোয়ার দেড় ঘন্টা পর উঠে আরও কয়েকপাতা শেষ করলাম 😅। বা রে. অন্বয় আর এথেনা'র কি ঘটলো, তা না জেনে শান্তি পাচ্ছিলাম না যে!
যা যা ভাল লেগেছেঃ
না। এটা কোন গড়পড়তা মানের ফর্মুলা'র ছাঁচে ফেলা উপন্যাস নয়। না। আপনি অনুমান করে বলে ফেলতে পারবেন না পরের অধ্যায়ে কি ঘটবে। চ্যালেঞ্জ করছি, এমনকি অর্ধেক বই শেষ করার পরও বলতে পারবেন না যে শেষটা কিভাবে টানা হবে! ঠিক এই উপাদানটাই, কৌতুহলটাই আপনাকে পাতারপর পাতা উল্টাতে বাধ্য করবে। প্রতি অধ্যায়ের শেষের ক্লিফহ্যাঙ্গার আপনাকে আশিয়ানীতে আটকে রাখবে। এরপর কি হল, তা জানার জন্য মন উশখুশ করবেন। তবে এটা কোন থ্রিলার নয়। প্রতি পাতাতেই যদি থ্রিল চান, তাহলে এই উপন্যাস আপনার জন্য নয়। মোটা দাগে বললে, বইয়ের প্রথম ২ ভাগে আপনি বেশ প্রফুল্ল মনে আশিয়ানী, এথেনা, অন্বয়ের সাথে অ্যাডভেঞ্চারে যোগ দেবেন। কাহিনী, ঘটনা, মোমেন্টগুলো আপনাকে আনন্দ দেবে, অবাক করাবে, মুচকি হাসাবে আবার কখনো অট্টহাঁসিও করাবে।
শেষের অংশটা প্রথমেই আপনাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে, একদম চমকে উঠবেন। ভাববেন আহা. কি থেকে কি হয়ে গেল! অবশেষে অনাকাঙ্ক্ষিত সুন্দর রকমের সমাপ্তি টানা দেখে লেখকের মুন্সিয়ানার প্রশংসা করতে বাধ্য হবেন।
সম্পাদকের ভাষায় ". আপনি যদি বই মানেই টানটান উত্তেজনা, রোমাঞ্চ ইত্যাদি ভাবেন, একটানা দৌড়ে শেষ পৃষ্ঠায় যেতে চান, তবে এই বইটা হাতে নেওয়ার আগে ভাবার অনুরোধ করবো। আর আপনি যদি শান্ত নদীর পাড়ে বসে মৃদুমন্দ হাওয়ায় ভাবাবেগে আক্রান্ত হতে চান, তাতে নৌকা ভাসিয়ে নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য মাথায় না নিয়ে স্রেফ নৌকাটাকে বিশ্বাস করে চারপাশের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ভ্রমণ উপভোগ করতে চান, তবে আপনিই এই বইটির টার্গেট অডিয়েন্স। বইটি হাতে নিন, আপনার ভাল লাগবে."
অন্বয়, এথেনা খুবই ভাল লাগার দু'টি চরিত্র। কিন্তু আশিয়ানী আমার কাছে বিশেষ কেউ। পুরুষ-নারী যেই হোন না কেন, হলফ করে বলতে পারি আশিয়ানীর মধ্যে নিজের ছাঁয়া দেখতে পাবেন আপনি। তার দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে কোথাও না কোথাও গিয়ে নিজের মিল পাবেন। কারনটা হল এই যে, আশিয়ানীর কথায়, কর্মে লেখক তার ব্যক্তিগত সমসাময়ীক জীবন দর্শন নিয়ে এনেছেন যা আপনার-আমার দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে অনেকদিকদিয়েই মেলে।
সে'ও মানুষের সাথে মন খুলে মিশতে চায়। সুযোগ পেলেই রাজকীয় নিয়মের বেঁড়াজাল এড়িয়ে স্বাধীনচেতা জীবন উপভোগের চেষ্টা সে করে। বন্ধবীদের সাথে খেলো, মেয়েলী আড্ডায় মেতে ওঠে। নিষিদ্ধ, রহস্যময় সব বিষয়ের প্রতি তার খুবই আগ্রহ। রহস্যসন্ধানী, সাহসী, উপস্থিতবুদ্ধিসম্পন্ন যেন রক্তমাংসের'ই এক মেয়ে সে।
আশিয়ানীর মুখনিসৃত বক্তব্য, চিন্তায় লেখকের গভীর জীবনবোধের খোঁজ পাবেন। কিছু দার্শনিক লাইন কয়েকবার করে পড়েছি, যাতে গভীর অর্থটা অনুধাবন করতে পারি। হ্যা। জীবন সমন্ধে আমার দৃষ্টিভংঙ্গির কিছু জায়গায় হালনাগাদের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি।
বইয়ে আমার পছন্দের দু'টো মুহূর্তঃ
লেখক এত চমৎকারভাবে মুহুর্তগুলো বর্ননা করেন, মনে হবে আপনি যেন নিজের চোঁখেই দেখতে পাচ্ছেন। আসলে, নিজে আগ্রহ না দেখানোয়, অভিজাত সম্প্রদায়ের সাথে আশিয়ানীর কিছুটা দূরত্ব তৈরী হয়েছিল। সে এটাকে কমাতে চাচ্ছিলো। বড় একটা অনুষ্ঠানে সুযোগ পেয়েও গেল। বাবাকে নাচের আমন্ত্রন জানালো। নিজের দক্ষতার উপর যে যথেষ্ট আত্নবিশ্বাস আছে রাজকুমারী আশিয়ানীর, তা দেখে মজা পেয়েছি। .
অথিতিদের মধ্য দিয়ে ধীরপায়ে হেঁটে হেঁটে মঞ্চের দিকে এগোতে লাগলো। ইচ্ছে করেই ওর চলনের মধ্যে একটা আকর্ষনীয় ভাব ফুটিয়ে তুলেছে। ভালো করেই জানে যে ওকে রানির পছন্দ করে দেওয়া আনুষ্ঠানিক পোশাকে এমনিতেই আজ অনেক সুন্দর লাগছে, তারপরও এটার সাথে বাড়তি কিছু যুক্ত করা মন্দ নয়। মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠলো ওর ঠোঁটে। বেশীদূর এগোতে হলো না, এর ভেতরেই অতিথিদের অনেকে ওর দিকে অবাক নজরে তাকাতে শুরু করেছে.
শেষবারের মুদ্রা হিসেবে এবার ছুটে ঘুরতে শুরু করলো আশিয়ানী। পোশাকের নিচের দিকের গোলাকার অংশ মেঝে ছেড়ে ওর চতুর্দিক জুড়ে খানিকটা শুন্যে উঠে পড়লো। সেটার নিচে দ্রুতগতীতে ঘূর্ণায়মান নিজের দুটো পা ও আর দেখতে পাচ্ছে না। এক হাত কোমর বরাবর আর অন্য হাত শূন্যে তুলে পাকের পর পাক ঘুরে চলেছে আশিয়ানী। প্রতিটা পাক আগেরটার তুলনায় আরেকটু দ্রুত হয়ে উঠছে.
পছন্দের দ্বিতীয় মোমেন্ট টা হল, বাৎসরিক 'যেমন খুশী তেমন পোষাক' অনুষ্ঠান'টা। যেই জগৎে কেউ কখনো 'শাঁড়ি' দ্যাখেনি, সেখানে চমৎকার একটা শাঁড়ি কিভাবে চলে এল? রাজকুমারী আশিয়ানী ঠিক কিভাবে শাঁড়ি পরা শিখল? অনুষ্ঠানে সমস্ত নারীরা এই চমৎকার পোষাক'টা প্রথমবার দেখতে পেয়ে ঠিক কতটা চমকে উঠলো? কি এক্সপ্রেশন দিল, সেটাই হল ভাল লাগার এই মোমেন্ট'টি।
.অবশেষে যেন অনন্তকাল পর বাইরে থেকে ওর নাম ধরে ডাকলো কেউ। একবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না তা দেখে নিয়ে আশিয়ানী দরজা খুললো। ওকে দেখার সাথে সাথে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দলটার সবার চোয়াল একবারে ঝুলে পড়লো। চোঁখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে রাজসেবক-সেবিকাদের ছোট দলটা। এমনকি অনুভূতিহীন হিসেবে বিবেচিত ওর ব্যক্তিগত নারী নিরাপত্তারক্ষীদের চোখেও বিষ্ময়ের উজ্জ্বল আলো দেখা যাচ্ছে। বিনাবাক্যব্যয়ে ও হাঁটতে শুরু করলে বাঁকিরা পিছু নিল দ্রুত। দরজায় পাহারারত নিরাপত্তারক্ষী সৈন্যদের অবাক করে দিয়ে দরজা পার হয়ে রাজা-রানী যে কক্ষে অপেক্ষা করছিলো সেখানে ঢুকলো আশিয়ানী। রাজা আরসালান এবং রানী জেহেনিয়া অদ্ভুত নকশার পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছেন ভেতরে। ওর উপর চোখ পড়ামাত্র দুইজনের চোখের দৃষ্টিই একদম স্থির হয়ে গেল। বাবা-মায়ের কাছ থেকে আকাঙ্ক্ষিত প্রতিক্রিয়া পেয়ে মনে মনে খুব খুশি হয়ে উঠতে সময় লাগলো না বেশি। শাড়ি তো ভালই খেল দেখাচ্ছে সেভিদোনিয়ায়। মুচকি হাঁসলো ও।
.বেশীরভাগ অতিথির চোখ ওর উপর আঠার মত সেঁটে আছে। নিজের উপর সকলের দৃষ্টির ভার আক্ষরিক অর্থেই অনুভব করতে পারছিল যেন আশিয়ানী। নীল শাড়ি আর নীল গহনার সাথে কানের গোড়ায় তাজা ফুল গোঁজা কোন রাজকুমারী বা অন্য কোন মেয়েকে সেভিদোনিয়ার কেউ কখনো দেখেছে বলে মনে হয় না। যা আশা করেছিলো সেরকম প্রতিক্রিয়া দেখতে পেয়ে মনে মনে খুব আনন্দিত হয়ে উঠলো ও
.ইতোমধ্যেই বেশ তোলপাড় ফেলে দিয়েছে পোষাকটা। অনুষ্ঠানের শেষে রানির কাছেই সেই ফিরিস্তি একবার শোনা হয়ে গেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে রাজপরিবারের একটা নতুন ব্যবসা বুঝি চালু হয়ে যাবে এই পোশাক ঘিরে! যে পরিমাণ অভিজাত মহিলা রানীর কাছে এই পোষাকের ব্যাপারে নিজেদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে তাতে এটা নিয়ে ব্যবসার চিন্তার সুযোগ আছে বৈকি.
কষ্টের মুহূর্ত ও আকাঙখাঃ
পূর্বে যেমনটা বলেছি, বইয়ের তৃতীয় অংশের ঘটনাপ্রবাহ আপনাকে নাড়িয়ে দিয়ে যাবে। শেষ দু'অধ্যায়ে, আশিয়ানীর ব্যাথায় আপনিও ব্যাথিত হবেন, তা নিশ্চিত। একখন্ডে যেভাবে সমাপ্তি যেভাবে টানা হয়েছি তাতে আমি সন্তুষ্ট।
শুধু পূর্বের সেই রাজকুমারীর পরিচয় জানতে আগ্রহী হয়ে আছি। উপত্যকায় যেতে পথের পাশে যার মুর্তিটি দেখা যায়। বিনিতভাবে অনুরোধরত সে মূর্তি। কি ঘটেছিল তার আমলে, সেভিদোনিয়ায়? সমস্যা সমাধানে সে কতটুকু কৃতকার্য হয়েছিল? কেন সে ব্যার্থ হয়েছিল, তা আর জানা হল না। বইটি একখন্ডে সুন্দরভাবেই সমাপ্ত করা হয়েছে। তারপরও মন চায়, সেভিদোনিয়া সমন্ধে যদি সবকিছু জানতে পারতাম। রাজা গেমরান, জ্ঞানী রাজা দারিয়েনের আমল সমন্ধে জানতে মন চায়। প্রথম পাতার মানচিত্রের অন্যান্য মহাদেশ, দ্বীপ সমন্ধে তো কিছুই জানতে পারলাম না, সেই আক্ষেপ রয়ে গেছে। ভারদান মহাসাগরের নিকটে 'ড্রাগন' সদৃশ প্রানীটির ছবি দেখে তাদের সমন্ধেও বিরাট জুগুপ্সা জেগে উঠেছে। লেখকের নিকট বিনীত অনুরোধ থাকবে, পরবর্তী কোন সাক্ষাতে, চুপে চুপে হলেও আমাকে এসব জানিয়ে আমার আক্ষেপ'টা দূর করবেন।
সেভিদোনিয়া'য় তোমাকে স্বাগত জানাই।
~
ফ্যান্টাসী সাহিত্য নিয়ে কিছু কথাবার্তাঃ
ফ্যান্টাসী সাহিত্য, এস্কেপিজম নিয়ে লর্ড অব দ্যা রিং, দ্য হবিট এর লেখক J. R. R. Tolkien এর বক্তব্য আর আশিয়ানীর লেখকের দৃষ্টিভঙ্গী আমার এতটাই পছন্দ হয়েছে, মনের সাথে মিল পেয়েছি যে সেগুলো এখানে কোট করার লোভটা সামলাতে পারলাম না।
'অন ফেইরী-স্টোরীজ' এর একটা অনুচ্ছেদে Tolkien বলেছেনঃ
"ফ্যান্টাসী গল্প নিজেই এক এস্কেপিস্ট, বাস্তব রুঢ় দুনিয়া থেকে কিছুক্ষনের জন্য হলেও পালানোর একটা সুযোগ। সাহিত্যের এই ধারাটার, গর্ব করার যায়গাটা কিন্তু এখানেই। আচ্ছা ধরো, নায়কের সৈন্য যখন শত্রুর হাতে ধরা পড়ে, তখন আমাদের কাছে কি এটাই মনে হয়না যে, পালানোটা এখন তার একটা কর্তব্য? ভেবে দ্যাখো, আমরা'ও কিন্তু অনেকভাবেই একটা জেলখানার মধ্যে আছি। সুদখোর মহাজন, মূর্খ সমাজপতি'রা আমাদেরকে মানষিক জেলে পুরে রেখেছে। মন ও আত্মা'র মুক্ত থাকার গুরুত্বটা যদি আমরা বুঝে উঠতে পারি, মুক্তচিন্তার প্রতি নিবেদিতপ্রান হই, তখন কিন্তু আমাদের উপর একটা কর্তব্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসে পড়ে। সেটা হল, নিজে পালাও এবং যতজন'কে সম্ভব, সাথে নিয়ে পালাও। "
তো, এই এস্কেপিজমের দরকারটা আসলে কি? এটা কেন প্রয়োজন? এব্যাপারে আশিয়ানীর লেখকের দৃষ্টিভঙ্গী জানতে পেরে একটা আত্নীক সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছি।
".সমস্যা হলো, মানুষ, বেশিরভাগ মানুষ আর কি, নতুন কিছু সহজে নিতে পারে না। অনেক রকম ভয় বলি, আর অবিশ্বাস বা স্বাচ্ছন্দ্যবোধের সীমানা বলি, এরকম কিছু ফ্যাক্ট আমাদের নতুন কিছু গ্রহণ করতে বাঁধা দেয়। গন্ডিতে রাখে। স্বাচ্ছন্দ্যসীমার ভেতরে ঘুরপাক খেতে উদ্দীপনা দেয়। আর এভাবেই বেশিরভাগ মানুষ একটা 'আপন বলয়' তৈরি করে ফেলে নিজের অজান্তেই। টেরই পেতে চায় না যে তার নতুন নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত বা নতুন কোনো চয়েজ আসলে তার পুরানো অনেক সিদ্ধান্ত বা চয়েজ এর পুনঃপ্রকাশ! আমরা একসময় গিয়ে নিজের থেকেই আর এস্কেপ পাই না। আমাদের বাহ্যিক পরিসর হয়ত ব্যাপক হয়ে যায়, but in the inside, আমরা ক্রমশ ক্ষুদ্রাকৃতি হতে থাকি।
হয়তো বন্ধু হারিয়ে, হয়তো পরিচিত স্থান ছেড়ে গিয়ে, হয়তো অপছন্দ কিছুর সাথে দিনের পর দিন বসবাস করতে করতে, হয়তো ব্যস্ততায়, হয়তো অস্থিরতায়, হয়তো হতাশায়. আমাদের মস্তিষ্কে কারাগার তৈরি হয় ক্রমশ.
আর এই কারণেই মাঝে মাঝে এস্কেপ খোঁজা জরুরি। হোক তা কাল্পনিক কিছুতে, বা হোক সেটা পছন্দ বেছে নিয়ে বা মাঝে মাঝে পছন্দকে কিছুটা পরিবর্তন করেও.
আমার ক্ষেত্রে এবং অনেকের ক্ষেত্রেই এই এস্কেপিজম নিয়ে আসে ফ্যান্টাসি। না, যারা এগুলোকে না বুঝে বাচ্চাদের কাহিনী বলে, যারা রূপকথা বলে একে ক্যান্সেল করতে চায়, বা অলীক কাহিনী ভেবে নাক সিটকায়; এদের প্রতি আমার রাগ লাগে না, বরং মাঝে মাঝে করুনা হয়। করুনা হয় এই কারণে যে, এরা হয়তো এস্কেপিজম এর আনন্দটা কোনোদিন উপভোগ করতে পারবে না। "
~ ছবি কৃতজ্ঞতাঃ রেনে, জামিল, মনি, মাসুম। লেখাটি পুর্বে goodreads এ প্রকাশিত ~
আমি মহামতি মাসুম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 28 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Wikim(p)edian, Product Reviewer at Medium.com | কম্পিউটার বিজ্ঞান এ স্নাতক সম্পন্ন করেছি। ইংরেজী ভাষা হতে অনুবাদ ও রুপান্তরে আমার দক্ষতা রয়েছে। প্রযুক্তি এবং তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব বিষয়াবলীতে যথেষ্ট জানাশোনা আছে। পপ সংস্কৃতি ও নার্ড বিষয়াবলীতে আগ্রহ ও নেশা রয়েছে। সমমনা ব্যক্তিদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দিতে পারি।https://s.id/masum