রেবেকা প্রথম ভাগ

টিউন বিভাগ অন্যান্য
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

দীর্ঘ দশ বছর পর মামা বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছি। মনে আনন্দ এসেছে।
তবে ছোটোবেলার সেই আনন্দটা এখন আর খুঁজে পাই না। শৈশবে মামা বাড়িতে যাওয়ার কথা শুনলেই মনে আনন্দের ঝড় বইতো। খুশিতে ভরে যেতো হৃদয়ের আনাচকানাচ। এখনও আনন্দ আছে কিন্তু শৈশবের মতো তেমন গাঢ় ভাবে নয়।

দীর্ঘ দশ বছর পর আবার মামা, মামি, মামাতো বোন, ভাই সবাইকে দেখে ভিষণ ভালো লাগছে। সকলেই কেমন পরিবর্তন হয়ে গেছে। মামাবাড়ির জায়গাগুলোও অনেকটা পরিবর্তিত হয়ে গেছে। ছোটবেলায় যে ফাঁকা জায়গাগুলো দেখেছিলাম এখন সেখানে বড় বড় বাড়ি হয়েছে। খালগুলোতে এখন আর মৃদু শব্দে জোয়ার ভাঁটা আসে না। খালগুলো এখন মৃত। খালগুলোর কবরের উপর দোকানপাট হয়েছে। হয়েছে সরকারি লোকেদের সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আড্ডা দেওয়ার অফিস।
শৈশবে দেখা সেই ভাঙাচুরা মাটির রাস্তাগুলোও এখন আর নেই। পিচ ঢালা কালো রাস্তাতে রূপান্তরিত হয়েছে সব। বাহারী রঙের টিনের ঘরগুলো এখন ইট-পাথরের দৃঢ় আবরণে বন্দী। ছোটবেলায় যাদের সাথে এসে খেলা করতাম তারাও এখন আর নেই। কেউ পড়াশোনা করতে শহরে চলে গেছে কেউবা কাজের সন্ধানে। সকল কিছুতেই যেনো পরিবর্তন।

এ সকল পরিবর্তনের মাঝে আরও একটি অদ্ভুত পরিবর্তন আমার চোখে আটকালো। সেটা হচ্ছে আমার মামাতো বোন রেবেকা। রেবেকার মাঝে অনেক পরিবর্তন। সে আগে যেমন প্রাণবন্ত ছিলো এখন আর তেমন নেই। সে গম্ভীর, ভীষণ গম্ভীর। মনমরা হয়ে বারান্দায় বসে একটি নির্দিষ্ট দিকেই দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকে পুরো বিকেল।
কথাতে পূর্বের ন্যায় জোর নেই এখন আর। আগের মতো অতিরিক্ত কথাও বলে না এখন আর, , , মাঝে মাঝে হু, হা, হুম এই বলেই এড়িয়ে যায়।

এক বিকেলে রেবেকা বারান্দায় বসে আছে, , , ,
রেবেকা, এই রেবেকা! কি হয়েছে তোর? মনমরা হয়ে সারাদিন বসে থাকিস কেনো?
কোনো উওর করলো না রেবেকা। বুঝতে পারলাম সে আমার কথা শোনেনি। তাই তার কাছে গিয়ে তার মাথায় আস্তে করে একটা থাপ্পড় দিলাম। তার হুঁশ ফিরেছে এবার। সে আমায় বললো-

কিরে কিছু বলবি?

তোকে কখন ধরে ডাকছি। তোর তো দেখি কোনো হুঁশ ই নেই।

আরে না হুঁশ আছে, , , বাহিরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম তো তাই তোর কথা খেয়াল করিনি। তা কি খবর তোর? দিনকাল কেমন চলছে? অনেক বছর পরে আসলি। তোকে তো চেনাই যাচ্ছে না।

এত প্রশ্ন একসাথে করলে কোনটার উওর দিবো। একটা একটা করে প্রশ্ন কর।

আচ্ছা বল কেমন আছিস তুই?

এইতো আছি ভালোই। আলহামদুলিল্লাহ।

দিনকাল কেমন চলছে?

চলছে কিছুটা স্থবির ভাবে। কিছুটা আনন্দ আর কিছুটা বিষাদ জড়িয়ে।

তুই অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছিস। তোর কথাবার্তা, তোর চালচলন কিছুই আর আগের মতো নেই। আমি যেনো এক নতুন "আসাদকে" দেখছি।

বয়সের পরিবর্তনের সাথে সাথে সবকিছুর পরিবর্তন হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। বয়সের সাথে সাথে পরিবর্তন না হওয়াটা হয়তো অস্বাভাবিক।
তাই না?

হ্যাঁ তাই। তবে তুই অনেক বদলেছিস।

আমিও কিন্তু এক নতুন রেবেকা'কে দেখছি। যে রেবেকা মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলতো সে এখন নিতান্তই নির্জীব। যে রেবেকা সারাক্ষণ হাসি তামাশা করতো সে এখন স্তব্ধ এক বারান্দায় নিঃসঙ্গতার সঙ্গী। কেনো এত পরিবর্তন?

ওই যে বললি না বয়স। বয়সই সকল পরিবর্তনের কারণ। আমারও বয়স হয়েছে, তাই পরিপক্বতা এসেছে। যেটাকে তুই পরিবর্তন বলছিস।

রেবেকা আমি তোর পরিবর্তন টা বুঝতে পারছি। তোর এই পরিবর্তন টা বয়সের দোষে হয়নি। হয়েছে ব্যাথার কারণে। তুই কারও কাছ থেকে আঘাত পেয়েছিস, ভীষণ আঘাত।

রেবেকা কোনো কথা বললো না আর। তাই আমি আরও নিশ্চিত হলাম যে আমার ধারনাই ঠিক। কেউ তাকে কষ্ট দিয়েছে। তাই সে এতোটা উদাসীন। আমি তার মুখ থেকে সব শুনতে চাই, তাই তাকে বললাম-

রেবেকা, এই রেবেকা। আমাকে বলবি কি হয়েছে তোর? কেনো তুই এতোটা উদাসীন? কেনো তোর চোখজুড়ে এতো বিষন্নতার ছড়াছড়ি?
আমি শুনতে চাই। বলবি আমায়?

তখনও রেবেকা চুপ। আমি ভাবলাম তার মন আরও খারাপ হয়ে গেছে। হয়তো আমাকে কিছুই বলনে না, তাই আমি চলে আসার জন্য ঘুরে দাড়ালাম। ঠিক তখনই রেবেকা বলে উঠলো -

দু'বছর আগের কথা। বেশ সহজ সরল ভাবেই আমার দিন অতিবাহিত হচ্ছিল। কলেজ শেষ করে সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করি। নতুন পরিবেশ, নতুন শিক্ষক শিক্ষিকা, নতুন সহপাঠী। বেশ আনন্দেই কাটতে থাকে আমার সময়। মনে কোনো ভয় ছিলো না। একটু একটু করে আমি আমার স্বপ্নের দিকে আগাতে শুরু করি। রঙিন আর বিলাসী পৃথিবীতে আমি খুব সাদামাটা জীবন যাপন করতে চেয়েছি। তাই আধুনিকতার ছোঁয়াও গায়ে লাগাইনি। তেমন কোনো বন্ধুও ছিলোনা আমার। আমি যে রুমে থাকতাম সেখানে আমার সাথে আমার ভার্সিটির এক বড় বোন থাকতো। নাম নিতু! সময় পেলেই নিতু আপুর সাথে গল্প করতাম।
নিতু আপু একদিন আমায় প্রশ্ন করলো -

রেবেকা কখনো প্রেম করেছো?

না- না নিতু আপু এসব প্রেম টেম আমার ভালো লাগেনা। হঠাৎ এই প্রশ্ন করলে যে আপু।

আসলে আমি একটা প্রেম করেছিলাম তাই জানতে ইচ্ছে করলো তুমি কখনো প্রেম করেছো কিনা?

তুমি প্রেম করেছো? কই আগে তো কখনো কিছু বলোনি।

হ্যাঁ কলেজে পড়া কালিন প্রেম করেছিলাম। ভালোবেসেছিলাম একজনকে। তারপর একটি দুর্ঘটনা আমার জীবনটা এলোমেলো করে দিলো।

কি হয়েছিলো আপু?

নিতু আপু নিশ্চুপ হয়ে রইলো, , , , আমি আবারও বললাম, ,
কি হয়েছে আপু? বলোনা।

কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে মৃদু শব্দে নিতু আপু বলতে শুরু করলো -

একদিন কলেজে সে আমায় বললো আমায় নিয়ে কোথায় যেনো ঘুরতে যাবে। আমি যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেলাম। কলেজের ক্লাস শেষ হওয়ার আগেই কলেজ থেকে বেরিয়ে গেলাম দুজনে। কিছুটা পথ হেটে একটা রিক্সাতে উঠলাম। দু'জনে মিলে বেশ সুখের সময় কাটাচ্ছিলাম আর গল্প করছিলাম। একটা জায়গায় যেতেই সে রিক্সাওয়ালাকে বললো মামা রাখো এখানে। আমরা রিক্সা থেকে নামলাম। রিক্সা ভাড়া দিয়ে সে আমার হাত ধরে আমায় নিয়ে আবার হাটা শুরু করলো। কিছুটা পথ হাঁটার পর খুব সুন্দর একটি জায়গা আমার চোখে পড়লো, , ,
একটি নদীর কাছাকাছি এসেছি আমরা। আসেপাশে কোনো মানুষ দেখলাম না, খানিকটা ভয় পেলাম। তাই আমি আর সামনে যেতে চাইলাম না। সে আমায় অভয় দিলো। আমি আবারও হাঁটা শুরু করলাম। নদীর পাশে গিয়ে বসলাম। আমরা কথা বলছিলাম। কিছুটা সময় যাওয়ার পর তিনটি ছেলে এলো, যাদের আমি এর আগে আর কখনোই দেখিনি। আমি আর রাসেল কথা বলছি এর মাঝেই ওই তিনজনের একজন বলে উঠলো। রাসেল কে ও?রাসেল বললো আমার প্রেমিকা। আমি তখন রাসেলকে বললাম কে এরা রাসেল? আগে তো কখনো দেখিনি এদের, , ,

এরা আমার বন্ধু।

এর আগেতো এদের কখনোই দেখিনি।

হ্যাঁ এদের বাড়ি এখানেই।

এতটুকু বলেই নিতু আপু চুপ করলো। আর কোনো কথা না বলেই অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো আনমনে। বুঝতে পারলাম নিতু আপুর পরের গল্পটা হয়তো নিকষ কালো। আমার আগ্রহটা অনেকগুণ বেড়ে গেলো। আমি নিতু আপুকে বললাম

থেমে গেলো কেনো আপু।

একটি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে, খুব কষ্টে কষ্টেই নিতু আপু আবার বলা শুরু করলো-

আমার ভয় ভয় লাগছিলো তাই রাসেল কে বললাম, , চলো রাসেল চলে যাই। এতোক্ষনে হয়তো কলেজও ছুটি হয়ে গেছে। বাড়িতে যেতে হবে, নাহলে সবাই চিন্তা করবে।

রাসেল একটু অন্যরকম দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো। আমি বললাম -

চলো যাই!

সে কোনো কথা বললো না। তার সেই তিন বন্ধুও আমার ঠিক পাশেই এসে বসলো। আমি বুঝতে পারলাম আমার সাথে খুব খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। হৃদয়ের কোনো এক কোনে একটি কালো ভয় জেগে উঠলো। আমার শরীরের লোম গুলো এক এক করে কোনো অদৃশ্য শক্তির কারণে দাড়াতে শুরু করলো। ঠিক তখনই একটি অপ্রতিরোধ্য হাত আমার শরীর স্পর্শ করলো। বুঝতে পারলাম হাতটা রাসেলের নয়। অন্য কারও! আমার বন্ধ চোখের দুকোনায় কয়েক ফোঁটা অশ্রু এসে বেয়ে পড়ার অপেক্ষা করছিলো। একে একে আটটি হাত আমায় স্পর্শ করলো। আমার বাঁধা দেওয়ার শক্তি ছিলোনা। একে একে চারজন আমায় সস্তা কোনো পন্যের ন্যায় ভোগ করলো। একটা সময় সব স্থির হলো। চোখ খোলার শক্তি আর সাহস কোনোটাই আমার ছিলো না। সেই অপেক্ষারত অশ্রু ফোঁটাগুলো তাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নিঃসংকোচে মাটি স্পর্শ করলো। অনেকটা সময় মৃতের মতো পড়ে রইলাম। আসেপাশে কোনো শব্দ নেই, হাহাকার নেই, ধীরে ধীরে চোখ খুললাম। চারিপাশটা অন্ধকার, ঝাপসা দেখতে পেলাম আমার ঠিক সোজাসুজি ঝলসানো চাঁদটা আমায় নিয়ে হাসছে। যেনো এক অপরিচিত কোনো স্থানে আমি শুয়ে আছি। এখানে আমার পরিচিত কিছু নেই, ওই বিশাল আকাশ আর চাঁদটা ছাড়া।

এতটুকু বলে নিতু আপু চোখ মুছতে মুছতে উঠে চলে গেলো। আমিও আর ডাক দিলাম না। খানিকক্ষণ চুপ করে বসে রইলাম। কিছু করার শক্তি পাচ্ছিলাম না, নিতু আপুকে কি বলবো তাও বুঝতে পারছিলাম না।
রেবেকা এবার থামলো।

সবই তো বুঝলাম কিন্তু।
এতটুকু বলার সাথে সাথেই রেবেকা আমায় থামিয়ে দিলো। সে বললো তুই কি বলবি তা আমি বুঝতে পারছি। তুই বলবি - নিতু আপুর এই ঘটনার সাথে আমার কি সম্পর্ক। তাই না? সম্পর্ক আছে। অনেক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

কি সেটা?

খানিকক্ষণ চুপ থেকে রেবেকা বললো -
নিতু আপুর সাথে যা হয়েছে ঠির তারই আবার পুনরাবৃত্তি হয়েছে আমার সাথে। অন্য কোনো জায়গায়, অন্য কারও ভোগের পন্য হয়েছি আমি।

আমি নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছু বলার ভাষা নেই আমার, মামা মামি কখনোই এ কথা আমাদের জানায়নি। শুধু আমাদের না, হয়তো আর কাউকেই জানায়নি। এ জন্যই রেবেকা এভাবে নিশ্চুপ হয়ে গেছে। হারিয়ে ফেলেছে তার বেঁচে থাকার কারণ। এখন রেবেকাকে কি বলবো তা বুঝতে পারছি না। আমার মনে হলো পুরো বিষয়টি আমার জানা দরকার তাই রেবেকাকে সবকিছু বলার জন্য বললাম। রেবেকা বলতে চাইলো না। আমি জোর করলাম আবারও। অনেক জোর করলাম, , ,
অবশেষে রেবেকা বলা শুরু করলো, , , ।

নিতু আপুর ওই ঘটনাটা শোনার পর থেকেই আমি অনেক ভয়ে ভয়ে থাকতাম। সবসময় মনে হতো যদি আমার সাথে কখনো এমন কিছু হয়ে যায়। এই ভয়ে কোনো ছেলের সাথেই কোনো ধরনের কথা আমি বলতাম না। সব ছেলেকেই এরিয়ে যেতাম। সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকতাম। একদিন আমি আর নিতু আপু ভার্সিটি থেকে বের হচ্ছিলাম। ঠিক তখনই ভার্সিটির এক বড় ভাইয়া মোটরসাইকেল নিয়ে এসে আমাদের সামনে থামলো। নিতু আপুকে বললো কেমন আছো নিতু। আপু বললো ভালো।
তারপর নিতু আপুকে জিজ্ঞেস করলো আমি কে? নিতু আপু বললো আমার ছোটো বোন। এতটুকু বলেই নিতু আপু আমার হাত ধরে আমায় নিয়ে হাটা শুরু করলে। আমরা চলে গেলাম, রাতে নিতু আপু খাটে বসে ল্যাপটপ চালাচ্ছিল আর আমি চেয়ারে বসে পড়ছিলাম, ঠিক তখনই নিতু আপুর ফোনে একটি কল আসলো অপরিচিত নম্বর থেকে। আপু ফোন ধরে বললো -

কে?

তারপর খানিকক্ষণ চুপ থেকে ফোন কেটে দিলো। নিতু আপু অনেকটা অস্থির হয়ে গেলো, আমি বুঝতে পারলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে আপু? কোনো উওর পেলাম না। চেয়ার থেকে উঠে খাটে গিয়ে বসলাম, আবারও জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? আপু বললো-

রনি ফোন করেছে।

কোন রনি?

আজ ভার্সিটি থেকে আসার সময় মোটরসাইকেল থামিয়ে যে আমাদের সাথে কথা বলতে চেয়েছে সে রনি।

সে তোমায় কেনো কল করেছে? সে কি তোমায় পছন্দ করে।

নিতু আপু কিছু সময় চুপ থেকে বললো -
সে আমায় না তোমায় পছন্দ করে। তোমার নম্বর চেয়েছে আমার কাছে।

আমি বেশ অবাক হয়েই বললাম। আপু আমি তো তাকে এর আগে আর দেখিওনি, এক দেখাতেই সে আমায় পছন্দ করে ফেললো। নিতু আপু কোনো কথা বললো না। আমিও আর কথা না বলে খাট থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে বসলাম। আকাশের চির একলা জ্বলজ্বলে চাঁদটার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছু সময়। মৃদু বাতাস বইছিলো। আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম চাঁদটার দিকে। কিছু সময় তাকিয়ে থাকার পর ধীরে ধীরে কালো মেঘ এসে সুন্দর জ্বলজ্বলে চাঁদটাকে ঢেকে দিলো। আমার মনটা আরও খারাপ হয়ে গেলো। বাসার ভেতর চলে আসলাম।
রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন সকালে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। ফজরের নামাজ পড়ে পড়তে বসলাম। তারপর ভার্সিটিতে গেলাম। সকালটা বেশ ভালোই ছিলো। কিন্তু ভার্সিটি থেকে আসার পথে সেই রনি আবারও আমাদের সামনে আসলো, সে কোনো কিছু না ভেবে হুট করে এসেই বলে ফেললো আই লাভ ইউ। আমার খুব রাগ হয়েছিলো, আমি কোনো কিছু না ভেবেই রনিকে একটা থাপ্পড় মেরে দেই সকলের সামনে। তারপর আর কোনো কথা না বলেই হাটা শুরু করি।
আমি অন্য কোনোকিছুতেই কোনো মনোযোগ বসাতে পারছিলাম না। নিতু আপু আমায় অনেক সান্ত্বনা দিয়েছে সে সময়ে। আনমনে আনমনে সাতটি দিন চলে যায়। ভার্সিটিও যাওয়া হয়নি এই সাত দিন। সাতদিন পর ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি। ঠিক তখনই কলিং বেল বেজে উঠলো। নিতু আপু বললো দেখতো রেবেকা কে এসেছে। আমি রুম থেকে গিয়ে দরজা খুললাম। আর অবাক গেলাম, রনি এসেছে। আমি কিছু বলতে যাবো এর আগেই ও একটি রুমাল দিয়ে আমার মুখ চাপ দিয়ে ধরে। এরপর দু তিন সেকেন্ড আমি ছুটার চেষ্টা করেছি। তারপর আর আমার কিছু মনে নেই।

এতটুকু বলে রেবেকা থামলো। আমার দিকে করুন চোখে তাকালো। আমি কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমিও খানিকক্ষণ চুপ করে রইলাম৷ তারপর উঠে দাঁড়ালাম আর রেবেকাকে বললাম -
চল ছাঁদে যাই, , , !

এখন, , , !এখন তো সন্ধ্যা হয়ে গেছে।

হ্যাঁ এখনই চল।

রেবেকা আর কথা না বলেই উঠে দাঁড়ালো। তারপর আমার সাথে ছাঁদের দিকে যাওয়া শুরু করলো। ছাঁদে উঠে রেবেকা কে বললাম তারপর তোর সাথে আর কি হয়েছে তোর কিছুই মনে নেই?

রেবেকা বিশাল কংক্রিটের শহরের দিকে তাকিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো। আমি কতক্ষন বেহুঁশ ছিলাম আমি জানিনা। যখন আমার হুঁশ
ফিরেছে তখন আমি আমার পুরো শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলাম।
আমি উঠে দাঁড়ানোর শক্তি পাচ্ছিলাম না। নড়াচড়া করারও শক্তি ছিলো না। ধীরে ধীরে চোখ খুললাম, আমি আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম আমি কোনো রুমের মধ্যে আছি। খুব কষ্ট করে একদিকে ফিরে তাকালাম দেখলাম একটু দূরেই নিতু আপুও পড়ে আছে মেঝেতে বেহুঁশ হয়ে। আস্তে আস্তে আপুকে ডাক দিলাম, কিন্তু আপু নড়াচড়া করছে না। আমার শরীরটাও কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ছে আবার। প্রচন্ড ব্যাথায় আমি আবারও হুঁশ হারিয়ে ফেলি।

আমি দেখতে পেলাম রেবেকা কাঁদছে। আমার খুব খারাপ লাগছে ওর কান্না দেখে। আমি বললাম -
রেবেকা আকাশের চাঁদটার দিকে একবার তাকিয়ে দেখ চাঁদটা কতো একা। তবুও চাঁদটা তোকে আনন্দ দেওয়ার জন্য কি সুন্দর তার মিষ্টি আলো পৃথিবীতে দিচ্ছে। আমি তোর মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছি। কিন্তু এভাবে ভেঙে পড়লে তো হবেনা। সামনে তো একটি বড় জীবন তোর জন্য অপেক্ষা করছে। তুই নিজেকে আবার গুছিয়ে নে।

কি করে নিজেকে গোছাবো আসাদ। প্রতিটা মূহুর্তে সেই কালো ভয়ংকর অতীতটা আমার সামনে ভাসে। আর ভয়ংকর রনি যেনো প্রতিটা মূহুর্তে আমায় ভোগ করার জন্য আসে। আমি আর পারছি না। আমি প্রতি রাতে আল্লাহকে বলি - আমায় মৃত্যু দাও। আমার মনে হচ্ছে মৃত্যুতেই আমি শান্তি পাবো।

আমি বলি কি মৃত্যু কোনো সমাধান নয়। মৃত্যু হলো একটি জীবনের শেষ পরিনতি। সবাইকেই মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হবে। মৃত্যু আসবে। তবে তোর আর আমার আহ্বানে না, , , আল্লাহর নিয়মেই সময় হলে মৃত্যু
আসবে। তোর ভেতরের যন্ত্রণাটার অবসান ঘটাতে হবে।

হ্যাঁ আমিও চাই আমার যন্ত্রণাটার অবসান হোক। আমি ভালো থাকতে চাই।

আচ্ছা এখন নিচে চল। রাতে খেয়ে বারান্দায় বসে এ নিয়ে আবারও কথা হবে।

খাবার টেবিলে বসে আমি মামা মামিকে বললাম রেবেকাকে এবার আমাদের সাথে বাড়িতে নিয়ে যাবো। মামা মামি প্রথমে রাজি হচ্ছিল না। তারপর অনেক জোরাজোরি করার পর রাজি হলো।

Level 0

আমি মেহেদি হাসান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 1 টি টিউন ও 2 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস