চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় এই সমস্যাকে বলা হয় স্লিপ প্যারালাইসিস, বা ঘুমের মধ্যে পক্ষাঘাত। স্লিপ প্যারালাইসিস হলে একজন ব্যক্তি কিছু সময়ের জন্য কথা বলা বা নাড়াচাড়া করার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। এটি সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে এক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে ওই সময়টায় রোগী ভীষণ ঘাবড়ে যান, ভয় পেয়ে যান।
সম্পূর্ণ টিউনটি ভিডিও আকারে দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
বাংলায় ‘বোবায় ধরা’ নামকরণটি মূলত এসেছে লোকাচারীয় কুসংস্কার হতে। বলা হয়, বোবা নামের ভূত ঘুমের ভেতর মুখ চেপে ধরে, তাই চোখ খুলেও মানুষ তখন কথা বলতে পারে না। একেই ‘বোবায় ধরা’ বলে। তবে সেই ভূতটির নাম কেন ‘বোবা’, সেটিও বোঝা কঠিন নয়। বোবা বানিয়ে দেয়, তাই ‘বোবা’। যা হোক, ‘বোবা ধরা’ পরিভাষাটি বহুল প্রচলিত একটি বাগধারা মাত্র, কোনো বৈজ্ঞানিক পরিভাষা নয়। বোবা ধরার বাংলা পরিভাষাটি ‘নিদ্রি পক্ষাঘাত’, ইংরেজিতে ‘Sleep/Sleeping Paralysis’। বোবায় ধরলে ব্যক্তি যেহেতু তাৎক্ষণিকভাবে অতি-অল্প সময়ের জন্য বাক ও চলনশক্তি হারিয়ে ফেলেন, সেহেতু এটিকে ঘুমের পক্ষাঘাত বা প্যারালাইসিস বলা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস স্রেফ ইন্দ্রিয়ঘটিত ব্যাপার। যখন শরীর গভীর ঘুমের একটি পর্যায় থেকে আরেকটি পর্যায়ে প্রবেশ করে, তখনই এটি ঘটে থাকে। বোবা ধরলে একেকজনের একেক রকম অনুভূতি হয়। কেউ ঘরের ভেতর ভৌতিক কিছুর উপস্থিতি টের পান, কেউ দুর্গন্ধ পান, কেউ বা আবার ভয়ানক কোনো প্রাণী দেখতে পান।
মোট কথা তখন হ্যালুসিনেশনের মতো একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়। গভীর ঘুমের একটি পর্যায় থেকে আরেকটি পর্যায়ে যাওয়ার সময় মস্তিষ্ক সতর্ক হয়ে ঘুম ভেঙে গেলেও শরীর আসলে তখন ঘুমেই থাকে। ফলে অনুভূতিটা অন্যরকম থাকে। বিশেষ করে ইন্দ্রিয় তখন আচ্ছন্ন থাকায় মানুষ অদ্ভুত কিছু দেখে এবং শ্বাসকষ্ট অনুভব করে। সাধারণত যাদের ঘুমের সমস্যা থাকে, তারাই বেশি স্লিপিং প্যারালাইসিসে ভোগে। অনেকেই বিশ্বাস করে যে অতিলৌকিক কোনো কিছু এর জন্য দায়ী। আসলে এটি স্রেফ একটি শারীরবৃত্তীয় ব্যাপার। অন্য কিছু নয়।
তবে, যতই বোবায় ধরুক না কেন কিছু নিয়ম মেনে চললে এই বিদঘুটে অবস্থা থেকে রেহাই পেতে পারেন। যা কিছু করনীয়-
সঠিক সময় খাবার গ্রহণ :
ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা পূর্বে খাবার গ্রহণ করতে হবে আপনাকে। এ নিয়ম ব্যাহত হলে শারীরবৃত্তীয় সমস্যা হতে পারে যার বিরূপ প্রভাব পড়বে মনের ওপর। এর ফলে স্লিপ প্যারালাইসিস বা বোবা-য় ধরা-এ আক্রান্ত হতে পারেন আপনি।
ঘুমের অনিয়ম পরিহার :
ঘুমের অনিয়ম হলে কিংবা নিয়মিত ঘুমানোর অভ্যাস না থাকলে স্লিপ প্যারালাইসিস-র সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই, অনিদ্রা পরিহার করতে হবে। চিত কিংবা উপুড় হয়ে না শুয়ে কাত হয়ে শোওয়া উত্তম।
মানসিক চাপ বর্জন :
মানসিক চাপজনিত কারণে এই সমস্যা হতে পারে। তাই, অবশ্যই দুশ্চিন্তা পরিহার করতে হবে। এর ফলে, শুধু স্লিপ প্যারালাইসিস নয় আরো অনেক জটিল সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন আপনি।
স্লিপিং পিল পরিহার :
স্লিপিং পিল বা ঘুমের ওষুধ বোবায় ধরা'র অন্যতম কারণ। তাই স্লিপিং পিল পরিহার করতে হবে। আর ঘন-ঘন বোবায় ধরা'য় আক্রান্ত হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না যেন।
আমি nahidchayan। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 10 টি টিউন ও 35 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ধন্যবাদ