“করোনা ও বিশ্বমহামারী”

টিউন বিভাগ অন্যান্য
প্রকাশিত
জোসস করেছেন
  • আজ আমি যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো, তা বর্তমানে গণমাধ্যমের শিরোনামে স্থান পেয়েছে, একটি বহুল চর্চিত ভাইরাস Covid-19, যা মানবজীবনে সাম্প্রতিক কালের একটি ভয়ালতম হুমকি। এই Covid-19 হলো Corona Virus পরিবার ভুক্ত একটি RNA Virus। এই Covid-19 এর পুরো অর্থ হলো Corona Virus Identified in 2019. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(W.H.O) এর নামকরণ করেছে নোবেল করোনা ভাইরাস বা 2019-n Cov. Corona শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ Crown থেকে, যার অর্থ মুকুট, কারণ এই ভাইরাসটি দেখতে অনেকটাই মুকুটের মতো। এই ভাইরাসের ত্রিমাত্রিক চিত্রতে দেখা যায় ভাইরাসটির উপরিতলটি অনেক মুকুটের মতো জিনিস দ্বারা আবৃত, যেগুলি প্রকৃতপক্ষে প্রোটিন স্পাইক, আর এই স্পাইক গুলোর সাহায্যেই জীবদেহে কোষের সাথে সহজেই আটকে থাকে।

      করোনা ভাইরাস মূলত চার প্রকার -

        1. আলফা
        2. বিটা
        3. গামা
        4. ডেল্টা
        এই করোনা ভাইরাস গুলি মানব শরীর তো বটেই, এমনকি বিভিন্ন পশুর দেহকে ও পাখির শরীরকে আক্রান্ত করতে পারে। তবে এই আলফা ও বিটা করোনা ভাইরাসই প্রধানত মানব দেহে সংক্রমণ ঘটিয়ে থাকে। এখন দেখা যাক এই করোনা ভাইরাস কিভাবে সাম্প্রতিক কালে এক বিশ্ব মহামারীর রূপ নিয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে করোনা ভাইরাস দ্বারা সাধারণত পাখি ও স্তন্যপায়ীরা সংক্রামিত হয়ে থাকে। কিন্তু যখন এই ভাইরাসটি সংক্রমিত প্রাণীদেহ থেকে মানবদেহে ট্রান্সমিট হয়ে যায় কোনো কারণে তখন তা অভিযোজিত হয়ে, হয়ে উঠে বেশ শক্তিশালী যা পরবর্তীতে রূপ নেয় এক মারাত্মক মহামারীর। যেমনটি আমরা অতি সাম্প্রতিককালে দেখে এসেছি SARS, MARS এবং EBLOA এর ক্ষেত্রে। এই ভয়াল মরণ রোগগুলিও বিভিন্ন প্রাণী দেহ থেকে মানব শরীরে প্রবেশ করেছিল। যেমন SARS ও EBOLA বাদুড়ের দেহ থেকে মানব দেহে ছড়িয়ে পরে এবং MARS ছড়ায় উটের দেহ থেকে মানব দেহে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালের এই মহামারীটি অর্থাৎ Covid-19 ঠিক কোন প্রাণী থেকে মানবদেহে ছড়িয়ে পড়েছে তার কোনো নির্দিষ্ট প্রমান এখন পর্যন্ত মেলেনি। অনেকের ধারণা এটি একটি Bio Engineering এর দ্বারা গঠিত Bio Weapon যা মূলত মানবজাতিকে ধ্বংস করার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু আমরা আজ এই বিতর্কে যাবোনা, কেননা এটা একটি ধারণা মাত্র, যার কোনো সঠিক প্রমান এখনো আমাদের হাতে নেই। যায় হোক মূল বিষয়ে ফিরে আসা যাক, আমাদের কম বেশি সবার জানা এই মহামারীর উৎপত্তি স্থল হল চীন। আরও একটু নিখুঁত ভাবে বলতে গেলে চীনের উহান শহরের কোনো একটি Animal Market থেকে এই রোগের উৎপত্তি। এই Animal Market এ মানুষের খাবার যোগান দেওয়ার জন্য যেসব জীবকে হত্যা করা হয় তাদের মধ্যে কোনো একটি প্রাণীর দেহ থেকে এই ভাইরাস মানবদেহে ট্রান্সমিট হয়েছে মনে করা হচ্ছে। অনেকের ধারণা এই রোগ সাপ বা বাদুড় থেকে এসেছে। তবে পৃথিবীর তাবড় বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন বাদুরে উপস্থিত করোনা ভাইরাস ও Covid-19 এর জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল প্রায় 96% মিল রয়েছে। ভয়াবহ এই রোগের লক্ষণগুলি হলো নিম্নরূপ-
        1. সাধারণ জ্বর
        2. কাশি
        3. গলা ব্যথা
        4. শ্বাসকষ্ট
        এই রোগের মারণ ক্ষমতা কম হলেও এর সংক্রমণ ক্ষমতা অনেকটাই বেশি, তা আমরা বিশ্বে সংক্রমণের সংখ্যা দেখেই আন্দাজ করতে পারি। আজ এই বিশ্বমহামারীর ফলে মানবজাতি ভীত ও সন্ত্রস্ত। এখন পর্যন্ত এর কোনো চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি, যার দ্বারা এই মহামারীকে পুরোপুরি ভাবে আটকানো যায়। তবে বর্তমানে Hydroxychloroquine ব্যবহার করে কিঞ্চিৎ আশার আলো দেখছেন চিকিৎসক মহল। যদিও মার্কিন মুলুকের একদল চিকিৎসক Hydroxychloroquine ব্যবহার নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন, তারা বলেছেন এই ঔষধ প্রয়োগে নাকি মানব শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে যার ফল স্বরূপ বহু মানুষ মৃত্যূ মুখে পতিত হচ্ছেন।
        তবে একটি স্বস্তির খবর শোনা যাচ্ছে, ডক্টর সারা গিলবার্ট নামে এক প্রবাদপ্রতিম ভাইরাস বিশেষজ্ঞ এর নেতৃত্বে Oxford University এর একদল বিজ্ঞানী ইতিমধ্যেই বানিয়ে ফেলেছেন Chadox-1 নামে একটি ভ্যাকসিন, যা এই রোগের মোক্ষম দাবাই। বিজ্ঞানী মহল এই Chadox-1 ভ্যাকসিন নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী এবং আশাবাদী। হবে নাই বা কেন ডক্টর সারা গিলবার্ট ই তো ভয়াভয় Ebola ভাইরাস এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের যুগান্তরকারী দিশা দেখিয়েছিলেন। ইতি মধ্যেই এই ভ্যাকসিন এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়ে গেছে। সব ঠিকঠাক হলে আগামী September থেকেই এই ভ্যাকসিন মিলবে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, শুরু হতে পারে Mass Vaccination এর কাজও।
        তবে আমরা সবাই এই কথাটা জানি "প্রিভেনশন ইস বেটার দ্যান কিউর"। তাই আমরা সরকারি নির্দেশাবলী যথাযথ ভাবে মান্য করে, নিজেদের Self Quarantine এ রেখে, বিভিন্ন সতর্কতা অবলম্বন করে (যেমন Sanitizer, Mask, Gloves ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে) নিজেদের ভিড় বা বিভিন্ন জমায়েত থেকে দূরে সরিয়ে রাখা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি অনুশাসন মেনে চলার মাধ্যমে এই মহামারীকে অনেকাংশে প্রতিহত করতে পারবো। এমন একটি সকাল আর খুব বেশি দূরে নেই যেদিন আমরা এই Covid-19 কে পরাজিত করে মানব জাতিকে করোনা মুক্ত করতে পারবো। এই Chadox-1 ভ্যাকসিন মানব দেহে সফল ভাবে কাজ করলেই মানবজাতির করোনা মুক্ত হওয়ার পথের সূচনা হবে। সেই দিনটির আশায় আজ পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষ অধির আগ্রহে দিন গুনছেন যেদিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের ধরিত্রী মাতাকে করোনা মুক্ত বিশ্ব হিসাবে হিসাবে ঘোষণা করবে।
        সকলে ভালো থাকবেন। নিজের শরীর ও মনের প্রতি যত্নশীল হবেন।

      Level 0

      আমি সৌরভ চৌধুরী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 5 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 2 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।


      টিউনস


      আরও টিউনস


      টিউনারের আরও টিউনস


      টিউমেন্টস