কমদামে একটি পরিপূর্ণ ফোনের জন্য প্রিমো জি সিরিজ বরাবর জনপ্রিয়। সম্প্রতি গ্লসি লুক এবং হালের ট্রেন্ড গ্র্যডিয়েন্ট রিয়ার প্যানেল এবং ৪জি কানেক্টিভিটি সমৃদ্ধ জি সিরিজের আরেকটি সাক্সেসর বাজারে এসেছে, আর এটি হল প্রিমো জি৯। ব্লু, পারপেল এবং রেড দারুন তিনটি গ্র্যাডিয়েন্ট কালার নিয়ে স্মার্টফোনটি বাজারে পাওয়া যাবে ৬৩৯৯ টাকায়। স্মার্টফোনটির আকর্ষণীয় বেশ কিছু দিক হচ্ছে ২ জিবি র্যাম, দারুন স্লিক ডিজাইন, অ্যান্ড্রয়েড ৯ পাই সহ আরো অনেক কিছু। এই আর্টিকেলে জানব স্মার্টফোনটি সম্পর্কে বিস্তারিত।
বক্সের ভেতর যা যা পাবেনঃ প্রিমো জি৯ ডিভাইস, একটি ইয়ারফোন, একটি ট্রান্সপারেন্ট ব্যাক কভার, চার্জিং অ্যাডাপ্টার, ইউএসবি কেবল, প্রোটেকশন ফিল্ম(পেপার) এবং কিছু পেপার ওয়ার্কস।
স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় একটি বিষয় হচ্ছে গ্র্যাডিয়েন্ট কালার প্যাটার্ন। আর ৬৩৯৯ টাকা বাজেটে জি৯ স্মার্টফোনটিতেও ওয়ালটন ব্যাকগ্রাউন্ড গ্র্যাডিয়েন্ট কালার অফার করছে। এর ব্লু, পারপেল এবং রেড তিনটি মডেলই দেখতে অনেক সুন্দর এবং বাজেট হিসেবে প্রিমিয়াম দেখাবে। হাতে নিলে কারো কাছেই স্মার্টফোনটি চিপ ফিল দিবে না। এর পারপেল কালার ভার্সন অবশ্যই ছেলেদের জন্য নয়। ৯.২ মিলিমিটার পুরু স্মার্টফোনটি অনেক স্লিক এবং একহাতে খুব দারুন গ্রিপের সাথে ব্যবহার করা যাবে এমন একটি ফোন। ফোনটি বেশ হালকাও বটে ব্যাটারি সহ এর ওজন মাত্র ১৫৭ গ্রাম।
সম্পূর্ণ ডিভাইসকে পাওয়ার ব্যকআপ দিবে একটি ২৫০০ এমএএইচ ক্ষমতাসম্পন্ন লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারি। হেভী ইউজে পুরো দিন ব্যকআপ পেতে সমস্যা হলেও, নরমাল ইউজে সারাদিন অনায়াসে পাওয়ার ব্যাকআপ পাওয়া যাবে। আর এতে পাওয়া যাবে এআই পাওয়ার সেভিং মোড।
স্মার্টফোনটির ডিসপ্লের পাশ দিয়ে থাকবে দারুন রাউন্ড ফিনিস, আর সাইড দিক দিয়ে বেজেলও খুব মিনিমাম তেমন একটা বেশি নয়। ফোনটিতে পাওয়া যাবে ১৪৪০*৭২০ পিক্সেল এর ৫.৪৫ ইঞ্চি আইপিএস ডিসপ্লে। ফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে আইপিএস ডিসপ্লে প্রযুক্তি। আইপিএস প্রযুক্তির ডিসপ্লেতে যে কালার দেখতে পাওয়া যায় তা একদম আসল হয়ে থাকে। আপনি যদি স্ক্রীনে একটি নীল ফুল দেখেন তো সেই ফুলটির রং বাস্তবে দেখতে যে রকম লাগবে ঠিক সেরকমই আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লেতেও লাগবে। আর ভিউইং এঙ্গেল নিয়েও আপনার কোন সমস্যা হবেনা, যদিও ১৮০ ডিগ্রিতে আপনি দেখতে পাবেন না (লজিক্যালি দেখতে যাবেনবাই কেনো…?) তবে ১৭৬ বা ১৭৮ ডিগ্রিতেও ভালোভাবে দেখতে পারবেন। আর ১৮ঃ৯ রেসিও সমৃদ্ধ হওয়ার কারনে আপনার গেমিং এবং মাল্টিমিডিয়া এক্সপেরিয়েন্স হবে একদম স্মুথ।
প্রিমো জি৯ ফোনটিতে রিয়ার প্যানেলে পাবেন একটি দারুন অটোফোকাস ক্যাপাবিলিটির ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা সেন্সর। যেটি এপারচার f/2.0 সমৃদ্ধ। f/1.8, f/2.0, f/2.2 ইত্যাদি নম্বর দিয়ে ক্যামেরার অ্যাপারচার প্রকাশ করা হয়ে থাকে। অ্যাপারচার এর মানে হচ্ছে লেন্সের ফোকাল লেন্থ। অ্যাপারচার নাম্বারে f ভগ্নাংশের পরে যে সংখ্যা থাকে সেটি যত ছোট হবে আপনার ক্যামেরার ওপেনিং ততই বড় হবে এবং ওপেনিং যত বড় হবে ক্যামেরা তত ভালো ভাবে লো লাইট ছবি উঠাতে পারবে। এবং যে শ্যালো ডেফত অফ ফিল্ড ইফেক্ট থাকে তাও ভালোভাবে দেখতে পাওয়া যাবে। শ্যালো ডেফত অফ ফিল্ড ইফেক্ট মানে, আপনি দেখেছেন যে ছবি উঠানোর সময় আপনার সামনে থাকা সাবজেক্ট এর ছবি পরিষ্কার হয় এবং সাবজেক্ট এর পেছনে ঘোলা ইফেক্ট থাকে, তো আপনার ক্যামেরার অ্যাপারচার নাম্বার যতো কম হবে এই ইফেক্ট ততো ভালো দেখতে পাওয়া যাবে। প্রিমো জি৯ দিয়ে আপনি তুলনামুলক ভালো মানের শ্যালো ডেফত অফ ফিল্ড ইফেক্ট সমৃদ্ধ ছবি ক্যাপচার করতে পারবেন।
স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে সাধারণত দু’প্রকার ক্যামেরা সেন্সর হয়, সিমোস এবং বিএসআই। আর বিএসআই সেন্সর যুক্ত ক্যামেরার লো লাইট পারফর্মেন্স অনেক বেশি ভালো হয় সিমোস এর তুলনায়। আর এই প্রিমো জি৯ এর রিয়ার এবং ফ্রন্ট দু’পাশেই থাকছে বিএসআই ক্যামেরা সেন্সর। সুতরাং অন্ধকারে ছবি কেমন আসবে না আসবে এই বিষয়ে চিন্তা নাও করতে পারেন। রিয়ার এবং ফ্রন্ট দু’পাশেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ফেস ডিটেক্ট ফিচারটি থাকবে।
প্রিমো জি৯ এর ফ্রন্ট প্যানেলে পাবেন ৮ মেগাপিক্সেল সেলফি ক্যামেরা। রিয়ার ক্যামেরা ১০৮০ পিক্সেলে ভিডিও রেকর্ড করতে পারলেও ফ্রন্ট ক্যামেরা ৭২০ পিক্সেলে ভিডিও রেকর্ড করতে পারবে। আর এতে থাকছে বেশ কিছু ফিচারস, এগুলো হলঃ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ফেস ডিটেক্ট, মিরর সেলফি, ডিজিটাল জুম, সেলফ টাইমার ইত্যাদি। রিয়ার ক্যামেরায় ফ্ল্যাশ থাকলেও ফ্রন্ট ক্যামেরায় কোনও ফ্ল্যাশ পাওয়া যাবেনা। রিয়ার এবং ফ্রন্ট দুটো ক্যামেরা দিয়েই বিউটি মোডে ভিডিও রেকর্ড করা যাবে।
ফেসকিউট এর মাধ্যমে আপনি এই ফোনের রিয়ার এবং ফ্রন্ট ক্যামেরা দিয়ে আপনার বা অন্যকারো চেহারায় দারুন সব আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স লাইভ স্টিকার ইফেক্ট দিতে পারবেন। যা এই ক্যামেরার অন্যতম আকর্ষণীয় একটি ফিচার।
ডিভাইসটিতে আপনি পাচ্ছেন, লেটেস্ট অ্যান্ড্রয়েডের পাই এডিশন।
এর ইউজার ইন্টারফেস এর স্যাম্পল নিচে দেয়া হল। এর ইউজার ইন্টারফেস অনেকটা কাস্টমাইজেবল, আর আপনি এর ভেতর অনলাইন থিম ব্যবহার এর সুযোগ পাবেন।
প্রিমো জি৯ ফোনটিতে থাকছে করটেক্স-এ৫৫ অক্টাকোর ১.৬ গিগাহার্জ প্রসেসর। করটেক্স-এ৫৫ এর আগের একটি ভেরিয়েন্ট করটেক্স-এ৫৩ এর চাইতে ২০% বেশি কর্মদক্ষতা সম্পন্ন। এটি অক্টাকোর হওয়ার দরুন আপনারা এর সাথে পাচ্ছেন ৮টি কোর।
আর এই অক্টাকোর প্রসেসর এর সাথে এতে গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট হিসেবে পাবেন পাওয়ারভিআর জিই৮৩২২ জিপিইউ। এই দামে এর একটি ভালোদিক হচ্ছে, এর ২ জিবি র্যাম। ইন্টারনাল স্টোরেজ হিসেবে এতে পাওয়া যাবে ১৬ জিবি জায়গা, যার ভেতর ১১ জিবি এর মতন ফাঁকা পাওয়া যাবে। তাছাড়াও ডিভাইসটিতে ৬৪ জিবি পর্যন্ত এসডি কার্ড সাপোর্ট করবে।
আর পাবজি লাভারদের দের জন্য যদি বাজেট একদম মিনিমাম হয়, তাদের জন্য এই প্রিমো জি৯ একটি পছন্দ হতে পারে। ফোনটির এনটুটু বেঞ্চমারক স্কোর এসেছে ৯৫২৪২। গিক বেঞ্চ অ্যাপে সিঙ্গেল কোরে ১৫০ এবং মাল্টি কোরে এসেছে ৭৯৮।
ফোনটিতে কোন ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর পাওয়া যাবেনা, তবে এতে প্যাটার্ন, পিন, পাসওয়ার্ড সিকিউরিটির পাশাপাশি আরেকটি বিশেষ সিকিউরিটি অপশন পাওয়া যাবে, যা হচ্ছে ফেস লক। আর এর ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার সাথে ফেস লক সিকিউরিটি সুবিধাটি বেশ ভালই কাজ করে, এবং ফেসলকের মাধ্যমে ফোনের আনলকিং স্পিডও তুলনামূলক ফাস্ট।
আমাদের সবার হয়ত ১০-১২ হাজার বা ওরকম বাজেট থাকে না স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে। তাদের জন্য নরমাল বাজেটে ভালো স্মার্টফোন বাছাই করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা কম বাজেটে আমরা অনেকসময় এমন সব স্মার্টফোন কিনে ফেলি যাকে অনেকসময় আদর্শ স্মার্টফোন বলা যায়না। তবে ৬৩৯৯ টাকায় সব দিক দিয়ে আমার কাছে প্রিমো জি৯ স্মার্টফোনটি চলনসই। আর এই বাজেটে আপনাদের যদি স্মার্টফোন কিনতে হয়, তবে একবার জি৯ স্মার্টফোনটি দেখতে পারেন।
আমি Touhidur Rahman Mahin। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 326 টি টিউন ও 88 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
ভালোবাসি প্রযুক্তি নিয়ে লিখতে, ভালবাসি প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে।