পরিবেশ বাঁচাতে ঘাসের তৈরী কাগজ

‘পেপারলেস’ বা কাগজহীন জীবনযাত্রার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেছে। চারিদিকে কাগজের ব্যবহার যেন কমার বদলে বেড়েই চলেছে। পরিবেশের এই ক্ষতি এড়াতে জার্মানির এক উদ্ভাবক অভিনব পদ্ধতিতে ঘাস দিয়ে কাগজ সৃষ্টি করছেন। উভে দাগনোন নামের ওই উদ্ভাবক কাগজ তৈরিতে কাঠের বিকল্প হিসেবে খড় ব্যবহার করছেন! এর সুবিধা হলো, জঙ্গলে কাঠের তুলনায় মাঠে অনেক দ্রুত ঘাস জন্মায়। তা থেকে ফাইবার বা তন্তু বার করতে হলে অনেক কম পরিমাণ পানি, জ্বালানি ও রাসায়নিকের প্রয়োজন হয়।
উভে বলেন, ‘‘কিছুকাল আগে আমি কাগজ নিয়ে অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করে ভাবলাম, কীভাবে কম কার্বন-ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে আরও টেকসইপদ্ধতিতে কাগজ তৈরি করা যায়? লক্ষ্য করলাম, উপর দিকে বাড়ার কারণে গাছের মধ্যে অনেক আঠার প্রয়োজন হয়। লিগনিন নামের সেই আঠা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় আলাদা করতে হয়। অন্যদিকে যে সব গাছপালা সমতলেই বেড়ে উঠে, তাদের অনেক কম লিগনিন লাগে। তাদের তন্তু অনেক দ্রুত আলাদা করা যায়। তার ফলে কাগজের ক্ষেত্রে টনপ্রতি প্রায় ৬ হাজার লিটার পানির সাশ্রয় হয়। শুকনো ঘাস ভালোভাবে পেষা হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী তার মান স্থির করা হয়। তারপর সাধারণ কাগজ তৈরির প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা হয়। ’’
উভে দাগনোন বিশেষ ভাবে তৈরি এই কাগজ দিয়ে নানা ধরনের মোড়ক তৈরি করেছেন। ডাকে পাঠানোর জন্য সহজ ও হালকা মোড়ক থেকে শুরু করে শক্ত ও মজবুত পিচবোর্ডের বাক্সও তার মধ্যে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সাধারণত উপকরণের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ঘাসের তন্তু ব্যবহার করি। বাকিটা হয় পুরানো কাগজ অথবা কাঠের তাজা তন্তু। এই মুহূর্তে বড় আকারে আমরা উৎপাদন করতে পারছি। আমাদের ধারণা, ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ঘাসের তন্তু ব্যবহার করা সম্ভব। কিন্তু সেটি প্রস্তুত করতে আরো সময় লাগবে। ’’ এরই মধ্যে বাজার করার ব্যাগ, ফল ও ডিম রাখার বাক্স তৈরি হয়ে গেছে। উভে বেশ কয়েকটি বড় সুপারমার্কেট কোম্পানিকে তাঁর আইডিয়া বেচতে পেরেছেন।
ঠিক কোন ধরনের ঘাস এমন তন্তুর জন্য উপযুক্ত?
কোলন শহরের কাছে একটি খামার সেই ঘাস সরবরাহ করছে। অরগ্যানিক খাদ্যের চাষী গেয়র্গ হ্যোলারের গরুগুলি যে খড় খায় না, সেগুলি পেপার মিলে পাঠানো হয়।
গেয়র্গ বলেন, ‘‘চাষের মৌসুমের শেষে যে খড় তৈরি হয়, অনেক সময়ে প্রাণীদের সেটি চিবোতে বেগ পেতে হয়। সেই খড় কাগজ তৈরির কাজে লাগাতে পেরে আমরা খুশি। ঘাসের কাগজ উৎপাদনের লক্ষ্যে এই সহযোগিতা আমাদের কাছে দারুণ ব্যাপার। ’’ প্রাণীরা না খেলেও সেই খড় যত্ন করে বাছাই করে গুদামে রেখে শুকাতে হয়। উভে দাগনোন নিজে খড়ের মান পরখ করছেন। ১২ থেকে ১৩ শতাংশ আর্দ্রতা থেকে গেলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। এই ফসল পরীক্ষা পাস করেছে। তন্তুর মানও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঘাস যতদিন মাঠে থাকে, তত বেশি তন্তু সৃষ্টি হয় এবং সেটি তত সহজে প্রক্রিয়াজাত করা যায়। তাছাড়া কাঠ সাধারণত দূর থেকে আনাতে হয়। অথচ ঘাস কম খরচে কাছাকাছি পাওয়া যায়।
উভে বলেন, ‘‘বড়জোর ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে কাঁচামাল সংগ্রহ করাই আমাদের লক্ষ্য। সেই কাঁচামাল কাছাকাছি প্রক্রিয়াজাত করতে হবে। আঞ্চলিক স্তরে উৎপাদনের এই নীতির আওতায় আমরা বিকেন্দ্রীকরণ করছি। মাঠ থেকে কাগজ তৈরির চূড়ান্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে যত কম সম্ভব দূরত্ব রাখতে চাই। ’’ উভে-র সর্বশেষ উদ্ভাবন হলো ঘাসের কাগজ দিয়ে তৈরি কফির কাপ। সাধারণ কাগজের কাপের তুলনায় কফি পান করার পর এই পেয়ালা পুরোপুরি রিসাইকেল করা যায়। তার কাগজ যে মাঠে গজায়!

Collected From: Ajker Prosongo

Level 0

আমি আতোয়ার রহমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 9 টি টিউন ও 4 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস