প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণে রয়েছে ৬৪ বর্গমাইল জুড়ে বিস্তৃত একটি অভূতপূর্ব রহস্যে ঘেরা দ্বীপ ‘ইস্টার দ্বীপ’, এই দ্বীপে থাকা মোয়াই মূর্তিগুলো যা আপনাকে একটাবার ভাবতে বাধ্য করবে। এ সম্পর্কে চিন্তা করবেন কারণ কেউই জানে না কিভাবে এই দ্বীপে ওজনে ২০ টন প্রায় মূর্তিগুলো প্রায় ১৮ কিঃমিঃ পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়েছে, তাও কোন ধরনের চাকা চালিত বাহন, ক্রেন বা বৃহদাকার পশুর সাহায্য ব্যতীত…!
ইস্টার আইল্যান্ড বা রাপা নুই নামে পরিচিত এই দ্বীপটির বুকে রয়েছে কিছু স্ট্যাচু যাকে ডাকা হয় মোয়াই নামে। ধারণা করা হয়, ১২৫০ সাল হতে ১৫০০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে রাপা নুই গোষ্ঠী দ্বারা সৃষ্টি হয় মোয়াই স্ট্যাচুগুলো।
চিলির ২০০ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত ইস্টার আইল্যান্ডের রহস্যে ঘেরা এই মূর্তিগুলো মাটিতে অবস্থান করছে খুব আশ্চর্য রকমভাবে। মূর্তিগুলোর মাথার অবস্থান মাটির উপরে এবং বাকি অংশটুকু মাটির নিচে। বেশ হতচকিয়ে উঠার মতো ব্যাপার এবং এর কারণ জানতে উৎসাহ বোধ হয় ক্ষণেক্ষণে।
যদিও প্রথমে ৮৮৭ টি মোয়াই (মূর্তি) সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেলেও বর্তমানে এখানে রয়েছে ৩৯৪ টি। ওজনেও বেশ খানদানী মূর্তিগুলো। প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার প্রতিটি মূর্তির ওজন প্রায় ২০ টনের কাছাকাছি। তবে অস্বাভাবিক হিসেবে একটি অসম্পূর্ণ মূর্তি পাওয়া যায় যার উচ্চতা ছিলো প্রায় ৬৯ ফুট এবং ওজন ২৭০ টন।
প্রথম দেখায় উপরের অংশটুকু দেখা গেলেও গবেষণার পর জানা যায় এর বেশ কিছু অংশ মাটির নিচেও রয়েছে।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের সাইক্রিয়াটিক বিভাগের প্রফেসর ডা. এনেলিসে পন্টিয়াস মূর্তিগুলো নির্মাণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু ধারণা দেন। তার মতে তখনকার যুগে কুষ্ঠ রোগ হতে বাঁচতে তারা এসব মূর্তি বানাত। তার এই মতবাদের পিছে যুক্তি হিসেবে বলেন,
“বিদঘুটে আকৃতির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এর বিপরীতে সংশোধিত এই মূর্তিগুলো বানানোর মাধ্যমে দেশ হতে রোগের প্রাদুর্ভাব এড়ানো সম্ভব। এরমধ্যে লক্ষণীয় হলো কুষ্ঠব্যাধির ফলে নাকের তরুণাস্থি ভেঙ্গে যায় এবং দ্বীপবাসীরা মোয়াই মূর্তিতে সেসব কিছুর সংশোধন করে নাকের একটা ভালো আকৃতি দান করে। ”
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে কেনো মূর্তিগুলো দেশের অভ্যন্তরে মুখ করে বানানো হয়েছে?
এ সম্পর্কে গবেষকরা বলছেন, তখনকার অধিবাসীরা মনে করতো তারা বাদে এই পুরো জগতে আর কোন মানুষ নেই যার কারণে আক্রমণকারীরা সমুদ্র পথে আসবে না বরং তারা হবে ভেতরে অবস্থানরতদের মধ্যেই কেউ যার কারণে মূর্তিগুলোকে ভেতরে মুখ দিয়ে রাখা হয়েছিলো দ্বীপ রক্ষার জন্যে।
ইস্টার দ্বীপের নিশ্চুপ মূর্তিগুলো একটি নিদর্শন তৎকালীন সভ্যতার দক্ষ, সুনিপুণ করুকাজের এবং পলেসিয়ান জাতির চমকপ্রদ ঐতিহ্যের। ১৭ হাজার একরের এই দ্বীপটিতে বছরে প্রায় ৫২ হাজার পর্যটক আসে ঘুরতে। ১৯৯৫ সালে ইউনেস্কো এই দ্বীপকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা দেয়।
বিশ্ব অত্যাধুনিক হচ্ছে, সাথে বদলাচ্ছে কাজের ধরন তবে কথায় আছে “ওল্ড ইজ গোল্ড” আর হ্যাঁ, ইস্টার দ্বীপ এদিকে কথাটির স্বকীয়তা বহন করে কারণ আজও এখানকার অবস্থিত মূর্তি নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে, চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ কিন্তু তবুও অজানা থেকে যাচ্ছে সভ্যতার “স” অক্ষর না থাকা ওই জমানায় কেমনে তারা এসব শিলাখন্ড থেকে আস্ত মূর্তিতে রূপ দিলো? কেমনে তারা এর সুক্ষ্ণ নকশা আঁকলো? কেমনেই বা তারা কোন কিছু ছাড়াই মূর্তিগুলো প্রতিস্থাপন করলো.?
আমি মার্স টেক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 35 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।