একদিন এমন যদি আবিষ্কার করেন, আপনি ঠিক আগের মত আর হাঁটতে পারছেন না? কিংবা হঠাৎ যদি আপনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন? অথবা যদি এমন হয়, আপনি জানতে পারলেন আপনি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত, আর মাত্র ২ বছর বেঁচে আছেন? - এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়া আমাদের জন্য খুবই কঠিন। শুধু কঠিনই নয়, আমরা এগুলো কল্পনাও করতে চাই না
কিন্তু বিষয়গুলো সত্যিকারে একজন মানুষের জীবনে ঘটেছে যার নাম স্টিফেন হকিং। শুধুমাত্র মানুষ বললে ভুল হবে কারন তারপরিচয় একটু বেশি – সর্বকালের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী।
গ্যালিলিও গ্যালিলাই-এর মৃত্যুর ঠিক তিনশত বছর পরে, ১৯৪২ সালের ৮ই জানুয়ারি স্টিভেন হকিংয়ের জন্ম, বাবা ড. ফ্রাঙ্ক হকিং একজন জীববিজ্ঞান গবেষক ও মা ইসোবেল হকিং একজন রাজনৈতিক কর্মী। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত হকিং সেন্ট অ্যালবার মেয়েদের স্কুলে পড়েন (সে সময় ১০ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেরা মেয়েদের স্কুলে পড়তে পারতো)। পরে সেখান থেকে ছেলেদের স্কুলে চলে যান। স্কুলে তার রেজাল্ট ভাল ছিল বটে তবে অসাধারণ ছিল না। বিজ্ঞানে হকিংয়ের সহজাত আগ্রহ ছিল। হকিংয়ের বাবার ইচ্ছে ছিল হকিং যেন তার মতো ডাক্তার হয়। কিন্তু হকিং গণিত পড়ার জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু যেহেতু সেখানে গণিতের কোর্স পড়ানো হতো না, সেজন্য হকিং পদার্থবিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়া শুরু করেন। অক্সফোর্ডে থাকাকালীন সময়ে মার্ক মোটামুটি পেলেও বিজ্ঞানের প্রতি ব্যাপক কৌতূহলের জন্য সহপাঠীরা তাকে আইনস্টাইন বলে ডাকত।
অক্সফোর্ড হতে পিএইচডি করার শেষ বৎসরগুলোতে হকিং প্রথম অসুস্থতা অনুভব করেন। তিনি ঝাপসা দেখতে শুরু করেন ও একবার সিঁড়ি থেকে নিচেও পরে যান। মাত্র একুশ বছর বয়সে তিনি জানতে পারেন তিনি মোটর নিউরন নামক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। তাকে এটাও জানিয়ে দেয়া হয় যে তিনি আর বেশি হলে ২ বছর বেঁচে থাকবেন। কিন্তু হকিং ডাক্তারদের কথায় কান দেন নি। যদি দিতেন, তাহলে হয়ত তখনই তার মানসিক মৃত্যু ঘটত – এটা তারই ধারণা। মানসিকভাবে ব্যাপক আঘাতপ্রাপ্ত হলেও তিনি স্বাভাবিক পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং গবেষণার দিকে মনোনিবেশ করেন। ১৯৬০ সাল থেকে তাকে হুইল চেয়ার ব্যবহার করা শুরু করেন। ১৯৮৫ সালে ফ্রাঞ্ছে একটি সম্মেলনে যোগ দেয়ার সময় তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, ডাক্তাররা তার কষ্ট দেখে শ্বাসনালী খুলে দেয়ার জন্য পরামর্শ দেন। কিন্তু তার স্ত্রীর অস্বীকৃতিতে তা করা হয়নি। এ যাত্রায় হকিং বেঁচে যান, কিন্তু তিনি তার বাকশক্তি হারান। এরপর কিছুদিন তাকে ইংরেজি শব্দ যুক্ত বোর্ডের মাদ্ধমে চোখের ইশারায় ভাব প্রকাশ করতে হয়। পরে একটি স্পীচ জেনারেটিং ডিভাইস যুক্ত স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটারের মাদ্ধমে তিনি ভাব প্রকাশ করার সুযোগ পান। এভাবে জীবনের বহু প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে পৃথিবীর অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
ব্ল্যাক হোল নিয়েই তিনি কাজ করতে থাকেন এবং ১৯৭৪ সালে কোয়ান্টাম থিওরি ব্যবহার করে জানান, ব্ল্যাক হোল তাপ নিঃসরণ করে এবং একটা সময় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। মহাবিশ্বজুড়ে প্রচুর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ব্ল্যাক হোল আছে, তাদের ভর কয়েক বিলিয়ন টন অথচ আকারে একটি পরমাণুর চাইতেও ছোট। এর পাশাপাশি থিওরি অব কজমিক ইনফ্লেশন, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশন নিয়ে তার গবেষণা চলতে থাকে।
তবে তার সবচাইতে জনপ্রিয় কাজ ছিল ‘অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত এই বইটি ২৩৭ সপ্তাহ ধরে সানডে টাইমস বেস্ট সেলার থাকার কারণে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে ঠাঁই পায়। এখনো পদার্থবিদ্যার অন্যতম জনপ্রিয় একটি বই তার এই রচনা।
১৯৮৩ সালে জিম হার্টলের সাথে আবিষ্কার করেন মহাবিশ্বের আকার আকৃতি সর্ম্পকে অজানা তথ্য। আইনস্টাইনের পর হকিংকে বিখ্যাত পদার্থবিদ হিসেবে গণ্য করা হয়। হকিংয়ের নামানুসারে এক কণাস্রোতের নাম দেওয়া হয়েছে হকিং বিকিরণ। ২৫ বছরের বিবাহিত জীবনে তিন সন্তানের জনক হকিং। জেন হকিংয়ের সঙ্গে ১৯৯৫ সালে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তাঁর। পরে নার্স এলাইন মেসনকে বিয়ে করেন। হকিং ও তাঁর মেয়ে লুসি হকিং মিলে ২০০৭ সালে শিশুদের জন্য জনপ্রিয় বই ‘জর্জ’স সিক্রেট কি টু দ্য ইউনিভার্স’ লেখেন। এর তিনটি সিক্যুয়াল রয়েছে। ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁকে প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম পুরস্কারে ভূষিত করেন।
বিশ্বখ্যাত এই বিজ্ঞানীর লেখা আ ব্রিফ হিস্টোরি অব টাইম অবলম্বনে নির্মিত দা থিওরি অব এভরিথিং ২০১৪ সালে অস্কার পুরস্কার লাভ করে।
২০১৮ সালের ১৪ মার্চ বুধবার সকালে ৭৬ বছর বয়সে ক্যামব্রিজে নিজ বাসভবনে মৃত্যু হয় তার।
আমি মার্স টেক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 35 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।