আশাকরি সবাই ভাল আছেন। অবশ্য একদিক দিয়ে সবার ভালো থাকার কথা এবং অন্য দিক দিয়ে ভালো না থাকার কথা।
তো আজকে ভালো না থাকার একটা কারন নিয়ে আলোচনা করবো আপনাদের সাথে। আমরা ফেসবুকে, গুগলে কিংবা অনেক সময় সামনাসামনি ভয়ানক দুর্ঘটনা দেখে থাকি। আমি মুলত ফোর-হুইল কিংবা চার চাকার গাড়ির কথা বলছি না, আমি মোটরবাইক এর কথা বলছি।
বাইরের দেশগুলোর কথা বাদ দিলাম, আমাদের বাংলাদেশে এমন কোন ব্যক্তি নেই (মহিলা, শিশু ছাড়া) যার মোটরবাইকের প্রতি আকর্ষন নেই। আর আমাদের তরুন সমাজেরতো একটা মোটরবাইক না হলেই নয়, আমি নিজেও একটা পালসার চালায়। কিন্তু সাম্প্রতিক দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশে মোটর বাইক দুর্ঘটনা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই ফেসবুকে দেখছি মানুষ ছবি তুলে দিচ্ছে। আজকেও চট্টগ্রামের আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে ভয়ানক দুর্ঘটনা হয়েছে।
বেশিরভাগ মোটরবাইক দুর্ঘটনায় দেখা যায় যে আরোহী মাথায় আঘাত পায় এবং স্পটেই মারা যায়। সুতরাং মোটরবাইক চালানোর ক্ষেত্রে সবার আগে অবশ্যই হেলমেট পরবেন।
অনেক সময় দেখা যায় একজন ভালভাবে সাবধনতার সাথেই বাইক চালাচ্ছে কিন্তু অন্যদিক থেকে একটা গাড়ি কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলে এসে লাগিয়ে দিয়েছে। এটা হয়তো ভাগ্যের ব্যাপার, কিংবা অপর দিকের চালক সাবধান ছিলনা।
কিন্তু বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে নিজের খামখেয়ালীপনার কারনে।
যখন দেখতে পাচ্ছেন যে আপনি কোন চৌ-রাস্তাতে কিংবা এমন কোন যায়গায় এসে পড়েছেন যেখানে অন্যদিক থেকেও রাস্তা এসেছে। তখন কিন্তু আপনার বাইক স্লো করে ফেলা উচিত। কারন আপনি হয়তো দেখতে পাচ্ছেন রাস্তা ফাঁকা, কিন্তু আপনার ডান অথবা বাম দিক থেকে আসা কোন গাড়ির সাথে আপনার সংঘর্ষ হয়ে যেতেই পারে।
কোন ছোট রাস্তা থেকে হাই-ওয়ে তে উঠার আগে অবশ্যই বাইক দাড় করিয়ে ভালভাবে একবার দেখে নেবেন যে কোন গাড়ি আসছে কিনা। যদি ধারে কাছে গাড়ি দেখতে পান তাহলে অপেক্ষা করুন, আর না থাকলে আস্তে আস্তে রাস্তায় উঠুন।
ছোট আর বড় যাই হোক, কখনো কোন গাড়ির বামপাশ দিয়ে ওভারটেক করতে যাবেননা। বাম দিকে থেকে ওভারটেক করতে গিয়েই বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে।
মনে রাখবেন, বাংলাদেশের রাস্তা কোন স্পোর্ট ট্র্যাক না যে আপনি সম্পুর্ন গতীতে বাইক চালাবেন। বিশেষ করে যে কোন রাস্তায় মোড় ঘোরার সময় স্পীড একদম কমিয়ে ফেলুন।
বেপরয়া ওভারটেক : তরুন ভাইদের মধ্যে এ সমস্যাটা বেশি দেখা যায়। যদিও এ বয়সটায় এমন, এই বয়সে কমবেশি সব তরুনেরই রক্ত গরম থাকে। তাইতো কবি “সুকান্ত ভট্টাচার্য” তার ”আঠারো বছর বয়স” কবিতায় লিখেছিলেন
আঠারো বছর বয়স যে দুর্বার
পথে প্রান্তরে ছোটায় বহু তুফান,
দুর্যোগে হাল ঠিক মতো রাখা ভার
ক্ষত-বিক্ষত হয় সহস্র প্রাণ।
এই বয়সেই যেমন আগ্রহ থাকে মোটরবাইকের প্রতি তেমনই ভালবাসা থাকে বাইকের স্পীড, রেডী পিক-আপ এর প্রতি। যার কারনে কোন গাড়ি যদি একটু আগে চলে যায় তখন তরুনদের মাথায় যাগে ওভারটেক করার ভয়ানক নেশা। এই নেশা কমবেশি সবারই থাকে, এমনকি মধ্য বয়সীদেরও থাকে। কিন্তু তরুনেরা বেপরয়া হয়ে ওঠে। আর এই বেপরয়া ওভারটেকিং ই অকালে কেড়ে নিচ্ছে শত শত প্রাণ।
রাস্তায় বের হলেই এরকম ওভারটেক অনেক দেখা যায়। আর এটায় সবচেয়ে বিপজ্জনক ওভারটেক। ছবি দেখে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন আমি কিরকম ওভারটেকিং এর কথা বলছি।
তরুন ভাইদের শহুরে ব্যাস্ত রাস্তায় এরকম কর্নারীং করে করে ওভারটেক করতে দেখা যায়। আপনার যারা এভাবে কর্নারীং বরছেন তারা একটা কথা মনে রাখবেন যে বাইক চালাতে আপনি অনেক বেশি পারদর্শী হতে পারেন কিন্তু আপনার পেছনে কিংবা পাশে যে ট্রাক কিংবা বাস চলছে তার ড্রাইভার কিন্তু পারদর্শী নাও হতে পারে। আপনার ভুল না থাকলেও তার ভুল থাকতে পারে। সুতরাং ব্যাস্ত রাস্তায় এরকম কর্নারীং এবং খামখেয়ালীপনা বন্ধ করুন।
এক লেইনের রোড গুলোতে অনেক সময় দেখা যায় কোন গাড়িকে ওভারটেক করার সময় সামনের দিক থেকে কোন গাড়ি আসছে কিনা তা ভালো করে লক্ষ না করেই ওভারটেক করার চেষ্টা করে অনেকেই। এ কারনেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিবছর। এটা শুধু বাইকই নয়, সবধরনের যানবহনের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটে। সুতরাং ওভারটেকের সময় যথেষ্ট সাবধান থাকুন। রাতে ওভারটেক করার সময় অবশ্যই হেড লাইটে হাই-বীম জ্বেলে সামনের গাড়িকে সীগন্যল দিন। তারপর ইন্ডিকেটর এর মাধ্যমে পেছনের গাড়িকে বুঝিয়ে দেন যে আপনি ডান দিক থেকে ওভারটেক করতে যাচ্ছেন এবং এসময় সে যেন আপনাকে ওভারটেক করার চেষ্টা না করে।
ইউ-টার্ন এর সময় লুকিং গ্লাস না দেখা : অনেক বাইক চালককে দেখা যায় পেছন কোন গাড়ি আছে কিনা তা না দেখেই এক লেইন থেকে অন্য লেইনে ঘুরে যাওয়ার চেষ্টা করে। আর দুর্ঘটনা ঘটে ঠিক এমন সময়েই। কারন পেছনের গাড়িটাও তখন ব্রেক করার মতন সময় পায় না।
সুতরাং রাস্তায় এভাবে না দেখে কখনই ইউ-টার্ন নেবেননা। রাস্তায় চলন্ত অবস্থায় কখনও এভাবে গাড়ি ঘোরাবেন না। ইউ-টার্ন নেওয়ার আগে অবশ্যই লুকিং গ্লাসে আপনার পেছনে কোন গাড়ি আছে কিনা তা দেখে নেবেন।
মনে রাখবেন- আল্লাহ না করুক, আপনার একটা দুর্ঘটনা ঘটলে তা আপনার পরিবারের লোকজনদের সারাজীবন কাদাবে।
আর তরুন ভাইদের উদ্দেশ্যে বলছি। আপনারা এতটা বেপরাভাবে বাইক চালাবেননা। কারন একটা কথা মাথায় রাখবেন যে “বাইচান্স এর কোন লাইসেন্স নাই”। আপনি যতই বাইকে পারদর্শী হোন না কেন তারপরেও আপনারও ভুল হতে পারে। আপনার ভুল না হলেও আপনার পেছনে যে গাড়িটি চলছে তার চালকের ভুল হতে পারে। ভুল যারই হােক, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে কিন্তু আপনার ” মা বাবার “ যা কোন ভাবেই পূরন করা সম্ভব নয়।
পোস্টটি জনতা ব্লগ'এ পূর্ব প্রকাশিত হয়েছে।
আমি মোস্তাফিজ আর রহমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 7 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 13 টি টিউন ও 12 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।