আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি?
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর অভিধানিক অর্থ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সহজ কথাই বলতে গেলে মানুষ যে ভাবে চিন্তা ভাবনা করে কোনো একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেই, কৃত্রিম উপায়ে কম্পিউটারে সেভাবে চিন্তা ভাবনার রূপ দান করাকে বলা হয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের এই শাখা কিভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন এজেন্ট তৈরি করা যায় সেই লক্ষে কাজ করে। এখানে এজেন্ট বলতে মূলত বুঝানো হচ্ছে সেই সিস্টেম যা পারিপার্শ্বিক অবস্থা চিন্তা করে সর্বোচ্চ সফলতা লাভের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেই। ২ টা উদাহরন দিয়ে জিনিস টা বুঝা যাক, কখনো কি ভেবে দেখেছেন কিভাবে ফেইসবুক আপনাকে আপনার বন্ধুদের আইডি সাজেস্ট করে? কিংবা কিভাবে ই-মেইল সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো আপনার আইডিতে আশা মেইল সমুহের মধ্য থেকে স্প্যাম মেইল খুজে বের করে? খুজলে এই রকম আরও শত শত উদাহরণ দেওয়া যায়।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স'র ইতিহাসঃ
২য় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কাজ শুরু হয়। বিখ্যাত গণিতবিদ Alan Turing ১৯৪৭ সালে সর্বপ্রথম আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে বক্তব্য দেন এবং তখন থেকে বিজ্ঞানীরা এই বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু করেন যার ফসল আজকের সোফিয়া। এলান টিউরিংকে বলা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স'র প্রকারভেদ
বিভিন্ন এক্সপার্ট এর মতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তিনটা ক্যাটেগরি রয়েছে।
(১)ANI বা Artificial Narrow Intelligence: ANI হচ্ছে কোনোএকটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এক্সপার্ট। যেমন যে মেশিন দাবা খেলতে পারবে, সে শুধু দাবাই ভালো পারবে। দাবা খেলা থেকে লুডু খেলা সহজ হওয়া সত্ত্বেও তাকে দাবা খেলার পরিবর্তে যদি লুডু খেলতে দেয়, সে পারবে না। ANI কে Weak AI ও বলা হয়। একে বলা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রথম ধাপ।
(২) AGI বা Artificial General Intelligence: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে AGI। এটাকে Strong AI, বা Human-Level AI ও বলা হয়। এ ধাপে কম্পিউটার মানুষের মত চিন্তা করতে পারবে, মানুষের মত প্ল্যান করা, সমস্যা সমাধান করা, হঠাৎ নতুন কোন পরিবেশে আসলে চারপাশ দেখে সে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার মত ক্ষমতা অর্জা করবে।
(৩)ASI বা Artificial Super Intelligence: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তৃতীয় ধাপ। কম্পিউটার যখন মানুষ থেকেও বুদ্ধিমান হবে তখন তাকে আমরা বলব আর্টিফিশিয়াল সুপার ইন্টেলিজেন্স। আর্টিফিশিয়াল সুপার ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম তৈরি হলে কি হবে, মানুষের ভালো হবে না খারাপ হবে, তা নিয়ে গবেষকরা এখনই চিন্তিত।
(আগামী পর্বে আমরা যখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ভয়াবহতা নিয়ে আলোচনা করব তখন ASI বা Artificial Super Intelligence সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করব।)
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স 'র কাঠামোঃ
উদ্দেশ্য ও কাজের প্রণালীর ভিত্তিতে এই ধরনের প্রোগ্রামকে ৫ টি বিশেষ ভাগে ভাগ করা যায়।
Ø সূত্রের প্রতিপাদন ও সমস্যা সমাধান (Deduction and problem solving)
Ø জ্ঞানের উপস্থাপন (Knowledge Representation)
Ø পরিকল্পনা(Planning)
Ø যন্ত্রের শিক্ষা (Machine learning)
Ø স্পিচ ও প্যাটার্ন শনাক্তকরণ(Speech and pattern recognaization)
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রোগ্রামের কাজে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করা হয় যেমনঃ LISP, CLISP, PROLOG, C, C++, JAVA ইত্যাদি।
উপসংহার
ইতিমধ্যে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন আসলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানে অনেকটাই মানুষের হাতে মানুষ সৃষ্টি হওয়ার মতই।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর পরিচিতি পর্ব আজ এতটুকুই থাক। আগামী পর্বে এর ভবিষ্যৎ ও ভয়াবহতা নিয়ে আলোচনা করব।
ধন্যবাদ।
আমি প্রান্ত চৌধুুরী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 7 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 44 টি টিউন ও 6 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।