মাঝে মাঝেই দেখা যায় যে, আমরা অনেক ভাল প্রস্তুতি নেয়ার পরও পরীক্ষা আশানুরূপ হয় না। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে পরীক্ষার হলে করা কিছু ছোট ছোট ভুল। আমরা সবাই যেকোনো পরীক্ষাতে অবশ্যই আমাদের সেরাটা দিতে চাই কিন্তু এই কিছু ভুলের কারণে সেরাটা দিয়েও সেরা ফলাফলটা পেতে পারি না আমরা। চলো দেখে নেয়া যাক এমন ১০টি সাধারণ ভুল।
এই ভুলটা হচ্ছে অনেকটা “বিসমিল্লায় গলদ” এর মত। আমরা যত উপরের ক্লাসে উঠি, তত বড় বড় প্রশ্নের উত্তর আমাদের লিখতে হয়, আর এত বড় বড় উত্তর কিন্তু কোনোরকমে না বোঝার মত করে প্রশ্ন পড়ে লেখা অসম্ভব। এছাড়াও অনেক সময় পরিক্ষার্থীদের বিচলিত করার জন্যও কনফিউজিং প্রশ্ন করা হয়। সেক্ষেত্রেও শুধুমাত্র তারাই ঠিকমত উত্তর করতে পারে, যারা প্রশ্নটা ঠিকমত পড়ে।
একাডেমিক হোক আর অ্যাডমিশন টেস্ট, সকল প্রশ্নেই সাধারণত হুবহু না আসলেও বিগত বছরের কিছুটা ছোঁয়া থাকে। তাই পরীক্ষার আগে একটু সময় করে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো দেখে নিলে, প্রশ্ন কেমন হবে সে বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায় আর পড়ার সময় ছুটে গেছে এমন অনেক টপিকও বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করলে একবার দেখা হয়ে যায়।
একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা অনেক ভাল করেই জানি যে, পরীক্ষার আগের রাত ছাড়া কখনো পড়া হয় না কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, প্রত্যেক মানুষেরই নির্দিষ্ট সহ্যসীমা রয়েছে যার বাইরে যাওয়া উচিত না।
যতটুকু সম্ভব, শুধুমাত্র ততটুকু পড়েই ঘুমাতে চলে যান। পরীক্ষার আগের রাতে ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে শেষের দিকে যা পড়বেন, সেই পড়াটুকু থেকে আপনি পরীক্ষা দিতে দিয়ে যে উপকার পাবেন, এর থেকে অনেক বেশি উপকার পাবেন পড়া বাদ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে।
আমাদের মাঝে একটা ভুল ধারণা আছে যে, শিক্ষকরা পৃষ্ঠা গুণে নম্বর দেন কিন্তু আসলে এমনটা নয়। কোনো শিক্ষকই প্রয়োজনের অতিরিক্ত লেখা পছন্দ করেন না। আর বেশিরভাগ শিক্ষক প্রশ্নের উত্তরটা পরিপূর্ণভাবে সংক্ষিপ্ত আকারে পেতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যেকোনো পরীক্ষা শেষেই, শিক্ষকদের কাছে গিয়ে জমা হয় ৫০০-১০০০ খাতা যা একমাসের মাঝে দেখে দিতে হয়।
একবার নিজেদের শিক্ষকদের জায়গায় বসিয়ে দেখিতো, এমন পরিস্থিতিতে যখন কোনো শিক্ষকের সামনে অতিরিক্ত পৃষ্ঠার কোনো খাতা যায়, তখন তাঁর অনুভূতিটা কী হয়? তাই কাউকে বেশি লিখতে দেখে বিব্রতবোধ না করে বরং আত্মবিশ্বাসী হতে হবে এই ভেবে যে, আমি যতটুকু লিখেছি তাই যথেষ্ট।
আমরা অনেক সময় মনে করি যে, পরীক্ষার একদম শেষে যখন সময় কম থাকবে, তখন তাড়াতাড়ি করে সহজ প্রশ্নের উত্তর দিব। এখন কঠিনটা দিয়ে শুরু করি। যা করা একেবারেই ঠিক না কারণ পরীক্ষার সময় সবসময় অনেক রিল্যাক্সড মুডে থাকতে হয়। সেখানে, শুরুটাই যদি ব্রেইনস্টর্মিং এর মাঝে দিয়ে যায় তাহলে তা বাকি উত্তরগুলোর উপর খারাপ প্রভাব ফেলবে আর কঠিন প্রশ্নের উত্তর না মিললে তো আর কথাই নেই।
বাংলায় আমি সবসময় উপন্যাসের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে শুরু করতাম। একবার করলাম কী, উপন্যাসের উত্তর সুন্দর করে লিখতে আমার এত ভাল লাগছিলো যে, আমি সময় ভুলে গিয়ে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখেই যাচ্ছিলাম এবং ফলশ্রুতিতে আমার বাকি উত্তরগুলো অনেক কম সময় নিয়ে সংক্ষেপে লিখতে হয়েছিল।
আমাদের অনেক বিষয়েরই কিছু কিছু টপিক অনেক প্রিয় থাকে যে টপিকের উত্তর লিখতে গেলে আর শেষ করতেই ইচ্ছা করে না। মনে রাখতে হবে যে, ১০ নম্বরের উত্তরে কখনো ১৫ দেয়া হয় না বরং ১০ নম্বরের প্রশ্নে ১৫ নম্বরের উত্তর দিলে, বাকি উত্তরগুলোর নম্বর পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। আরো মনে রাখতে হবে যে, শিক্ষক আসলে আমরা উত্তরটা জানি কি না তা দেখতে চায়, আমাদের সাহিত্যিক প্রতিভা না।
পরীক্ষার সময় আমরা অনেক সময় জানা জিনিসও মনে করতে না পেরে মস্তিষ্কে চাপ দিয়ে তা মনে করার চেষ্টা করতেই থাকি যা একদম ঠিক না। এতে করে অনেক সময় নষ্ট হয়। তার চেয়ে বরং ঐ প্রশ্নটা একদম শেষে উত্তর করার জন্য রেখে দিতে হবে।
আমাদের অনেকেরই পরীক্ষার সময় আগে আগে হল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অভ্যাস আছে। হুম, কারো তাড়া থাকলে ঠিক আছে। না হলে শেষ মিনিট পর্যন্ত সবারই উচিত, পরীক্ষার উত্তরপত্রটা নিখুঁতভাবে বারবার দেখা কারণ অনেক ভুল একবারে চোখে পড়ে না। আমার এক সিনিয়র অনেক আগে আমাকে বলেছিলেন, “তোমাকে ৫ মিনিট দেয়া হলে সেটাকেই ইউটিলাইজ করার চেষ্টা কর।”
পরীক্ষার আগে অনেকেই অনেক ভারী খাবার কিংবা রাস্তার কোনো খাবার খেয়ে ফেলে কিংবা পরীক্ষার দুশ্চিন্তায় সকালে না খেয়েই হলে ঢুকে যায় যাতে করে পরীক্ষা চলাকালীন শরীর খারাপ লাগা শুরু করে। পরীক্ষার আগে যথাসম্ভব অমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত যাতে করে মস্তিষ্ক ভাল কাজ করে।
পরীক্ষায় মনোযোগ না আসার একটা কারণ হচ্ছে পানিশূন্যতা। পানিশূন্যতার সময় মস্তিষ্ক ঠিকমত কাজ করতে পারে না।
মাঝে মাঝে আমাদের ছোট ছোট সমস্যাগুলোই বড় সমস্যার জন্ম দেয়। তাই আশা করি এই ছোট সমস্যাগুলো সমাধান করে ফেলতে পারলে পরীক্ষায় আর কোনো বড় সমস্যা হবে না।সবাই ভালো থাকবেন।ফেইসবুকে আমি,প্রয়োজনে অ্যাড করে নিয়েন।
আমি রশিদ হৃদয়। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 7 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 4 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।