যখন কোন প্রোজেক্ট ম্যানেজ করার প্রশ্ন সামনে আসে অবশ্যই সেখানে প্রফেশনালদের মতো কাজ করা প্রয়োজনীয়। হাতে কলমে লেখে কাজ করা বা কম্পিউটার বা মোবাইল নোট প্যাডে সেভ রাখা কখনোই আদর্শ উপায় নয়। নোটপ্যাড কখনোই আপনার প্রোজেক্ট সঠিকভাবে ম্যানেজ করতে আপনাকে সাহায্য করবে না। এর চেয়ে পাওয়ারফুল প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ এবং ওয়েবটুল ব্যবহার করে আপনার প্রোজেক্ট গুলোকে অসাধারণভাবে সাজিয়ে এবং হ্যান্ডেল করতে পারবেন।
যদিও প্রত্যেকটি টুল আপনার স্পেসিফিক প্রয়োজন অনুসারে নয়, তারপরেও আমি এই টিউনে কিছু জনপ্রিয় প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট টুল সম্পর্কে আপনাকে পরিচিত করিয়ে দিচ্ছি, যেগুলো আপনার অবশ্যই চেক করে দেখা প্রয়োজনীয়! প্রত্যেকটি টুলের কিছু নিজস্ব সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে, তো চলুন, সবকিছু এক্সপ্লোর করা যাক.
আমার সবচাইতে পছন্দের এবং এই লিস্টে প্রথম নাম্বারে আসানাকে রাখতেই হলো, কেনোনা এই অ্যাপটি ব্যবহার করা অত্যন্ত সহজ সাথে এর ইউজার ইন্টারফেস জাস্ট একবার দেখলেই মুখস্ত হয়ে যাবে আপনার। এই অ্যাপ এতো সুন্দর এবং সুগঠিতভাবে তৈরি যে আপনি এবং আপনার প্রোজেক্টের সকলে সঠিক সময়ে একসাথে সহজেই প্রোজেক্ট গুছিয়ে নিতে পারবেন।
আপনি সহজেই বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে টাস্ক গুলোকে সাজাতে পারবেন এবং প্রোজেক্ট টিম মেম্বারদের কাজ গুলো সহজেই বণ্টন করে দিতে পারবেন। যেকোনো টাস্কে ডেড লাইন যুক্ত করে দিতে পারবেন, এবং টাস্কে প্রোজেক্ট ফাইল এবং টিউমেন্ট যুক্ত করা একেবারেই জলের মতো সহজ কাজ। আসানাতে আপনি কনভারসেশনও করতে পারবেন অনেক সহজে, এতে টিম মেম্বারদের ট্র্যাকে রাখা সম্ভব হবে।
কল বা ভয়েস চ্যাট করার চেয়ে আসানাতে টেক্সট চ্যাটিং সিস্টেম রয়েছে, সেটা আপনার প্রোজেক্টকে আরো গুরুত্বপূর্ণভাবে ম্যানেজ করার ক্ষমতা প্রদান করে। শুধু এককালীন সময়ের জন্যই নয়, বরং ভবিষ্যতের কোন সমস্যার সময়ও এই চ্যাট ডাটা আপনাকে রেফারেন্স হিসেবে সাহায্য করতে পারবে। যদিও এর ফ্রী ভার্সন থেকেই ছোট প্রোজেক্ট হ্যান্ডেল করার জন্য যথেষ্ট, কিন্তু এর প্রিমিয়াম ভার্সন ১৫ উপরে মেম্বার যুক্ত করার ক্ষমতা প্রদান করে এবং আরো গভীর রিপোর্টিং সুবিধা প্রদান করে থাকে। আপনি ওয়েব নির্ভর অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে যেকোনো ইন্টারনেট ব্রাউজার থেকে টাস্ক গুলোকে কন্ট্রোল করতে পারবেন। সাথে এর অ্যাপ ভার্সনও রয়েছে স্মার্টফোনের জন্য।
ওয়েব ব্রাউজার থেকে আসানা অ্যাক্সেস করতে এখানে ক্লিক করুন। অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য রয়েছে আসানার ডেডিকেটেড অ্যাপ, যেটা এখান থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন। চিন্তা নেই, আইওএস ইউজারদের জন্যও অ্যাপ রয়েছে, জাস্ট এখানে ক্লিক করুন!
ট্রেলো আমার দ্বিতীয় পছন্দের, এখানে টাস্ক গুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে আলাদা কার্ড সিস্টেমে সো করে, যেটা সত্যিই অসাধারণ। ট্রেলো ব্যবহার করা অত্তাধিক সহজ এবং ব্যবহার করতে অনেকটা টু-ডু-লিস্ট অ্যাপ গুলোর মতো মনে হয়। প্রোজেক্টের সাথে অবশ্যই আপনি ফাইল, ইমেজ, ভিডিও, এবং আরো অনেক কিছু অ্যাড করে দিতে পারবেন। এর সবচাইতে বেস্ট বিষয়টি হচ্ছে আপনি অ্যাপ ব্যবহার করুন আর ওয়েব নির্ভর ভার্সনই ব্যবহার করুন না কেন, আপনি অফলাইন থেকে কাজ করতে পারবেন। জখন অনলাইন হয়ে যাবেন, ব্যাস আপনার সেভ থাকা ডাটা গুলো সকল ডিভাজের সাথে সিঙ্ক হয়ে যাবে।
ট্রেলোর বেসিক ভার্সন আপনি ফ্রী'তে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এই পেইড ভার্সন ব্যবহার করলে অনেক অসাধারণ সকল ফিচার আনলক করা সম্ভব হবে। এর পেইড ভার্সন আপনাকে অনেক প্রোজেক্ট মেম্বার অ্যাড করার সুবিধা, বড় টিম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, প্রত্যেক'কে আলাদা আলাদা ড্যাশবোর্ড ইত্যাদি সুবিধা গুলো প্রদান করে থাকবে।
ওয়েব ভার্সন ব্যবহার করার জন্য এখানে ক্লিক করুন। অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ এখানে এবং আইওএস অ্যাপ এখানে ডাউনলোড করতে পারবেন।
বেসক্যাম্প ৩ আপনাকে সেই সকল সুযোগ সুবিধা গুলো প্রদান করতে সক্ষম, যেগুলো আপনি একটি প্রোজেক্ট ম্যানেজার অ্যাপ থেকে আশা করতে পারেন। আমি বলবো, বেসক্যাম্প ৩ কোন সাধারণ প্রোজেক্ট ম্যানেজার অ্যাপ থেকেও আপনাকে বেশি কিছু প্রদান করবে। এর বিশেষ ফিচার হিসেবে, ফাইল শেয়ারিং, টাস্ক, ক্যালেন্ডার, ফাইল স্টোরেজ, এবং চ্যাট সেশন আপনাকে এবং আপনার প্রোজেক্টকে সর্বদা ফোকাসে রাখবে।
এই টুলটি টিচার এবং স্টুডেন্টরা ফ্রী'তে ব্যবহার করতে পারবে। যদি আপনার বিজনেস বড় হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে বেসক্যাম্প ৩ ফ্ল্যাট রেট প্রাইস অফার করে, $৯৯/মাসের জন্য অথবা $৯৯৯/বছরের জন্য। এর অ্যাপ এবং ব্রাউজার উভয় ভার্সনই রয়েছে। ওয়েব ভার্সনের জন্য এখানে ক্লিক করুন, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপের জন্য এখানে, আইওএস এর জন্য এখানে, ম্যাকওএস এর জন্য এখানে, উইন্ডোজ ৭ এবং উপরের ভার্সনের জন্য এখানে ক্লিক করুন!
এই লিস্টের সর্বশেষে আমি অবশ্যই মাইক্রোসফট প্রোজেক্ট ম্যানেজার একবার হলেও ট্রায় করতে রেকমেন্ড করবো। এই সফটওয়্যারটি প্রায় ১৯৮৪ থেকে মজুদ রয়েছে এবং ২০ মিলিয়নেরও অধিক ইউজার রয়েছে। মাইক্রোসফট কতোবড় এই ব্যাপারে নিশ্চয় আপনাদের ধারণা দেওয়ার প্রয়োজন নেই, এটি বিশ্বের বহু বড় বড় কোম্পানি তাদের প্রোজেক্ট গুলোকে ম্যানেজ করার জন্য প্রথম পছন্দ হিসেবে ব্যবহার করে।
মাইক্রোসফট অফিসের সাথেই এটি অ্যাড করা থাকে, জাস্ট ব্যবহার করতে চাইলে এর জন্য পে করতে পারেন। এটি যেহেতু মাইক্রোসফটের জিনিষ, তাই স্বাভাবিক ভাবেই এটা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে আরামে চলে যাবে। দুর্ভাগ্যবসত আলাদা প্ল্যাটফর্মের জন্য এটি লভ্য নয়। উইন্ডোজ ৭ থেকে উপরের ব্যবহারকারী'রা এখান থেকে সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করতে পারেন।
তো টিউন থেকে নিশ্চয় বুঝতে পারলেন, প্রত্যেকটি সফটওয়্যারের আলাদা আলাদা এবং স্পেশাল ফিচার রয়েছে। এখন আপনার টিমের জন্য কোনটি বেস্ট সেটা পরীক্ষা করার জন্য আমি রেকমেন্ড করবো অ্যাপ গুলোর ফ্রী ভার্সন ব্যবহার করে দেখুন, দেখুন আপনার জন্য মানানসই হচ্ছে কিনা। যদি আপনার প্রোজেক্ট এবং টিম মেম্বার অনেক থাকে, তাহলে নিশ্চয় আপনাকে প্রিমিয়াম ভার্সন কিনে কাজ করতে হবে। যেকোনো প্রশ্নে আমাকে নিচে টিউমেন্ট করে জানাতে পারেন।
আমি তাহমিদ বোরহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 177 টি টিউন ও 680 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 43 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি তাহমিদ বোরহান। টেক নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকতে ভালোবাসি। টেকটিউন্স সহ নিজের কিছু টেক ব্লগ লিখি। TecHubs ব্লগ এবং TecHubs TV ইউটিউব চ্যানেল হলো আমার প্যাশন, তাই এখানে কিছু অসাধারণ করারই চেষ্টা করি!