হীনমন্যতা খুব খারাপ জিনিষ – এ থেকে বাঁচতে হবে

সচলায়তনে প্রকাশিত হয়েছিল।

তখন (ডিসেম্বর ২০০৯) অস্ট্রেলিয়ার সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট ম্যাচ চলছে। মাত্র দুই/তিনদিন আগে একজন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার বললেন যে বাংলাদেশ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট না খেলাই ভালো। অথচ ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্টে দারুন লড়ছে ... বলা যায় না হয়তো হার এড়াতে লড়তে হবে অস্ট্রেলিয়াকেই ...। অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ড হল ক্রিকেটে সবচেয়ে প্রফেশনাল এবং বদমাইশ দল, সাথে সাউথ আফ্রিকাকেও যোগ করা যায়। কোনো দেশ ওদের সাথে খেলতে যাওয়ার আগেই মিডিয়াতে বিভিন্ন অকথা, কুকথা বলে আলোড়ন তোলা হয় ... অমুক প্লেয়ারকে ঠেকানোর কৌশল আবিষ্কার করেছি, ওরা তো খেলাই পারেনা ইত্যাদি। এছাড়া বোলিং এ্যাকশন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে উঠতি ভালো বোলারদেরকে হেনস্থা করতে এদের জুড়ি মেলা ভার ... ...।

ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেটে নোংরা কথা বলা কিন্তু প্রফেশনালিজম। স্লেজিং-ও এরকম একটা টেকনিক। ওগুলো বলে তাদের নিজেদের সরাসরি কোনো লাভ না হলেও প্রতিপক্ষের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ ওদের উদ্দেশ্য থাকে প্রতিপক্ষের মনে একটা খুঁতখুঁত বা সন্দেহ ঢুকিয়ে দিয়ে মানসিকভাবে একটু দূর্বল করে দেয়া যেন খেলার সময় ওরা ওদের স্বাভাবিক নৈপূন্য দেখাতে না পারে। এই ধরণের মনের খেলা মোকাবেলা করার জন্য আবার প্রতি দলেই সাইকোথেরাপিস্ট রাখা হয়।

সোজা সাপ্টা কথায়, কাউকে কাবু করতে চাইলে সেটা মনকে কাবু করা দিয়ে শুরু করতে হয়। খেয়াল করে দেখুন: ধার্মীক লোকজনের সামনে আমরা মাথা নিচু করে কথা বলি, দ্বীনের দাওয়াত দিতে আসলে অনিচ্ছা থাকলেও তাদের মুখের উপর না বলতে পারি না ... মাথা নিচু করে পালানোর চেষ্টায় থাকি। কারণ ছোটবেলা থেকেই কৌশলে মনে মধ্যে গেঁথে দেয়া হয়েছে যে ধর্মের রীতিনীতিগুলো পালন করা ভালো, না করা খারাপ/পাপ ... কাজেই পাপবোধটা মনকে হীনমন্য করে তোলে। আর এই হীনমন্যতার সুযোগ নিয়ে কত অযোগ্য বদমাইশ লোক আমাদের উপর কর্তৃত্ব করে বা করার চেষ্টায় রত থাকে।

এই ব্যাপারটা শোষক শ্রেণীর লোকজন সবচেয়ে ভালো বুঝে এবং নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। তাই শোষিতদেরকে ভালো শিক্ষা/সংস্কৃতি চর্চা থেকে বিরত রাখতে তাদের চেষ্টার ত্রুটি হয় না ... কারণ শিক্ষা আর সংস্কৃতির চর্চা মানুষের মনকে উৎফুল্ল করে, তাদেরকে একতাবদ্ধ করে, তাঁদের নিজেদের সম্পর্কে গর্ব করতে শেখায়। মানসিকভাবে উঁচু থাকলে তাঁর উপরে সহজে অন্যায় চাপিয়ে দেয়া যায় না, শোষন করা কষ্টকর হয়ে যায়। এজন্যই দেখা যায় সৎ অফিসার চোখ না নামিয়ে উঁচুপদের ঘুষখোর অফিসারের সাথে কথা বলতে পারেন, আর উপরের লেভেলে থাকা অসৎ বা হীনমন্যতায় ভোগা লোকটি সেটার মুখোমুখি হতে পারে না বলে বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেয়ার চেষ্টায় রত থাকে। আবার আগের সময়ে দেখা যেত, শোষক জমিদার প্রজাদের লেখাপড়া শেখার সুযোগ তৈরী করতে বড়ই অনাগ্রহী, বরং তাঁদেরকে অশিক্ষিত এবং আত্মমর্যাদাহীন করতে খুবই আগ্রহী। কোনো সৎ লোককে কাবু করতে চাইলে তাঁর উপর বিভিন্ন রকম অপবাদ চাপিয়ে দিয়ে তাকে হীনমন্যতায় ফেলার চেষ্টা করা হয়। একজনকে কাবু করার মত কোনো কিছু না পেলে তাঁর আশেপাশের আপনজনকে অপমান করার চেষ্টায় থাকে .... তোর ভাই তো আলকাতরার মত কালো, তোর অমুক তো আগে ডাকাত ছিলো ... ইত্যাদি অপবাদ দিয়ে হীনমন্যতা ঢুকানোর প্রানান্ত চেষ্টা চলতে থাকে। আবার এ-ও দেখা যায় অভাব অনটনের অমানুষিক কষ্ট হাসিমুখে সহ্য করলেও অপমান সহ্য করতে না পেরে অনেকে জীবন বিসর্জন দেয়।

হীনমন্য লোকগুলো শুভ্র সত্যবাহীদের সামনে চোখ তুলে তাকাতে পারে না, তাই পেছন থেকে কামড়ানোর জন্য কুটচাল চালতে থাকে। একই গোত্রের হীনমন্য আরো কাউকে পেলে আঁকড়ে ধরে দলে ভারী হওয়ার চেষ্টায় থাকে; নিজেরা নিজেদেরকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করে ... ঠিক যেন অন্ধকারে ভয় পেলে যেমন আমরা ভয় তাড়ানোর জন্য অদরকারী কথাবার্তাও খুব জোরে জোরে বলি; অথবা, নার্ভাস হলে অতিরিক্ত হাসি বা ফুর্তি দেখানোর চেষ্টা করি; কিংবা, কাকের মত খড়ের গাঁদায় মাথা ঢুকিয়ে ভাবি আমাকে কেউ দেখছে না ... ... ... কিন্তু ভয়ের জড়তা কি আর কাটে!

কাজেই হীনমন্যতার ব্যাপারটি মোটেও অগ্রাহ্য করার নয়। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় কারণ এটা মানুষকে ভীষনভাবে আক্রান্ত করে - তাই যেন কোনোভাবেই নিজের অজান্তে হীনমন্যতায় ভুগতে হয় এমন পরিস্থিতির শিকার না হই সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। বিভিন্ন বিষয়ের কারণে মনের গভীরে এই ক্ষতিকর হীনমন্যতা জটা পাকিয়ে আছে। চেষ্টা করি সেগুলোকে মূলসহ উপড়ে ফেলে সামনের দিকে আত্মবিশ্বাসের সাথে এগিয়ে যেতে। এইরকম একটা সুযোগ পেয়েছি ওপেনসোর্স সফটওয়্যারের কল্যানে; পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারে মনের গভীরে একটা গ্লানি ও হীনমন্যতা কাজ করতো ... এইটা থেকে বের হওয়ার উপায় পাওয়া মাত্র তাই লুফে নেই ... হাসি মুখে সংশ্লিষ্ট কিছু অসুবিধা মেনে নিয়েও।

চমৎকার বিকল্প থাকা সত্বেও আমরা কি জেনেশুনে পাইরেসী করেই যাবো (এবং মাথা নিচু করে চলবো) নাকি মুক্ত সফটওয়্যার ব্যবহার করবো - এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভারটা নিজেকেই নিতে হবে।

Level 0

আমি শামীম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 36 টি টিউন ও 449 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

গুগল আমার সম্পর্কে জানে, কাজেই জানতে চাইলে আমার নাম বা ইউজার নামটা দিয়ে গুগল করুন ... :D


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

এতো কষ্ট করে লিখেছেন কিন্তু মাত্র ১৯ বার পড়া হয়েছে দেখে খুবই খারাপ লাগলো। তাই দেরী না করে অন্তত ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য টিউনে এলাম।
এতো কষ্ট করে সুন্দর করে লেখার জন্য ধন্যবাদ……

    ছবির আইকন দেইনি বলে এবং বিদ্যূৎ ও ইন্টারনেট সমস্যার কারণে ড্রাফট প্রকাশ হতে ৭/৮ ঘন্টা দেরী হল। ফলে প্রথম পাতায় এটা ৫/৬টা টিউনের পরে এসেছে এবং স্বাভাবিকভাবেই অনেক নিয়মিত পাঠকের চোখ এড়িয়ে গেছে — এটা পঠন সংখ্যা কম হওয়ার একটা কারণ মনে হয়।

    মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

thank u……

Level 0

শামীম ভাই, ভাল লাগল সচেতন মূলক টিউন ধন্যবাদ……।

Level 0

valo laglo thanks next time u should rite

আপনার লেখা ভালো লাগলো…

আমিও ছেড়ে দিলাম। আর যে যাই বলুক নির্লজ্জের মত উড়িয়ে দিব হে হে হে.

niceeeeeeeeeeeeeeeeeee

bhai bhaloi laagce …. Kintu dhormo niya tanatani koren ken…
Onno ekta example dite parten…
Dhormiyo upodesh hinomonnota sristi kore !!!!!

আসাধারণ!!!!!!!! খুব ভাল লাগলো।