ইসমাইল টিপু সত্যিই তুমি নোবেল জয়ী (অবশেষে নোবেল পুরস্কার পাইলো)

টিউন বিভাগ খবর
প্রকাশিত

রাত ১২:০৫। শুয়ে আছি চোখে ঘুম নেই। ইদানিং এ সমস্যাটা হচ্ছে। মাঝে মাঝে স্লিপিং পিল খেতে হয়। লোকে বলে- বুড়ো হলে নাকি ঘুম কমে যায়। তবে কি আমি বুড়ো হয়ে গেলাম?

না প্রসঙ্গটা ঘুম নিয়ে নয়। প্রসঙ্গ ক্যান্সার নিয়ে। আমার আজকের ঘুম কেড়ে নিয়েছে ক্যান্সার নামক মরন ঘাতক মারাত্মক ব্যাধিটি। আমি দেখেছি এ মরনব্যাধি যার শরীরে বাসা বাঁধে কিভাবে তার ঘুম কেড়ে নেয়। দেখেছি ক্যান্সারাক্রান্ত রোগীর হাহাকার। দেখেছি বেঁচে থাকার কতইনা প্রানান্তকর চেষ্টা। মহাসাগরে জাহাজডুবি কোন যাত্রী যখন বাঁচার আর কোন উপায় খুঁজে পায়না তখন সামান্য এক খড় কুটাকেও মনে করে অনেক কিছু।

সেই ছোটবেলায় বিটিভিতে দেখেছি ‘দ্যা সোর্ড অব টিপু সুলতান’ নামক ডাবিংকৃত এক বাংলা সিরিয়াল। যেখানে ছিল রাজত্বের লড়াই। আজকে এক ইসমাইল টিপুকে সবাই দেখল জানল চিনল যার রাজত্ব ছিল ক্যান্সার। নিজেকে এ রাজ্যের রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে ব্যার্থ হয়েছে। ব্যার্থ হয়েও অন্যদের জানিয়ে গেছে সহজে পরাজয় বরণ না করতে। একবার না পারলে দ্বিতীয়বার, দ্বিতীয়বার না পারলে তৃতীয়বার, তৃতীয়বার না পারলে…

নোবেল মেডেলের আদলে আমার দ্বারা তৈরি টিপুর নোবেল মেডেল

২৫/১১/২০১১ইং থেকে ইসমাইল টিপু ব্লগারদের পাশাপাশি অনেকের কাছে এখন একটি পরিচিত মুখ। যে নামের আড়ালে লুকিয়ে ছিল কালো চাদরে ঢাকা ইতিহাস। সে ইতিহাস গোপন রাখতে চেয়েছে একান্ত নিজের করে। বিদায়ের আগ পর্যন্ত তা গোপন করেই রেখে গেছে।

এভাবেই নিজের বিদায়ের খবর সবাইকে জানিয়ে গেছে। তবে বুঝতে পারেনি কেউ-ই।

টিপুকে করা আমার প্রথম কমেন্টস

টিপু আমার কোন পূর্ব পরিচিত বন্ধু কিংবা আত্মীয় নয়। নেটে তার বিভিন্ন লেখা পড়তাম, বাদরামি দেখতাম, আনন্দ উপভোগ করতাম ব্যস এটুকুই। আর কিছু নয়। মূলত তাকে আমি চিনতাম সুতার কারিগর হিসেবে। টেক্সটাইলের ছাত্র হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার নয় বরং সুতার কারিগর হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতেন। কি সুন্দর রসবোধ।

আজকে বিভিন্ন ব্লগ সাইট ঘেটে টিপু সর্ম্পকে যে ধারনা পেলাম সেটা হচ্ছে সে অসম্ভব ফানি ছিল। কোন কিছুকেই সিরিয়াস চোখে দেখেনি। যার শরীরে মরনব্যাধি ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে সে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রযুক্তি প্রেমিদের দেখিয়ে গেছে প্রযুক্তির সাতকাহন। বুঝিয়ে দিত কিভাবে কি করতে হবে। কখনোবা এ বুঝানোয় ছিল অভিমানের সূর। তাইতো বলেছে- ‘এই সময়টুকু গার্ল ফ্রেন্ডের জল্লাদ বাপেরে দিলেও মাইয়াটা আমার হাতে তুইল্লা দিতো।’ কেউ বুঝুক আর না বুঝুক টিপু নিজের হিসাব বুঝে নিয়েছে কানা কড়িসহ।

আপনারা যারা ক্যান্সারাক্রান্ত রোগীর সান্নিধ্যে গেছেন তারা বুঝবেন এ যন্ত্রনা কেমন। আমার কাছে ভাবতে অবাক লাগে এ মৃত্যু যন্ত্রনা বুকে নিয়ে ব্লগিং করা রীতিমত এক ভয়াবহ ব্যাপার। কত সুন্দরভাবে সবাইকে বুঝিয়ে গেছে ক্যান্সার কি, লক্ষণ, কারণ, আমাদের করণীয় ইত্যাদি। কখনো বুঝতে দেয়নি আমিই ভুক্তভোগী। কারো কাছ থেকে সহযোগিতা চায়নি, সহানুভূতি চায়নি, আদর, সোহাগ, ভালবাসা চায়নি। চেয়েছে একটু বেঁচে থাকতে। পরক্ষনে আবার নিজেকে সান্তনা দিয়েছে ‘কিচ্ছূ হবে না’ বলে। বুঝে গেছে যতই বেঁচে থাকার চেষ্টা করিনা কেন আসলে ‘কিচ্ছু হবে না’। চিরবিদায় নেওয়ার আগেও সবকিছু গুছিয়ে গেছে সুচারুভাবে। বন্ধুদের জানিয়ে গেছে অনেক দূরের দেশের ভিসা হয়ে গেছে আমার। সহজে আর আমাকে খুঁজে পাবেনা। সত্যিইতো তাকে আর আমরা খুঁজে পাবোনা। আর আমাদের মাঝে হাজির হবেনা নতুন কোন টপিক নিয়ে। দেখবোনা বিল গেটসের মত অন্য কারো সাক্ষাতকার। শুনবো না পুংটা নামক কোন শব্দ।

আমি বুঝিনা কেন তার প্রতি আমার এতখানি দরদ উতলে উঠলো? নিজেকে প্রশ্ন করি সে কি আমার বন্ধু? ‍উত্তর হচ্ছে না। সে কি আমার আত্মীয়? উত্তর হচ্ছে না। সে কি আমার পরিচিত? উত্তর হচ্ছে না। তাহলে কেন আমি তার শোকে কাতর?

যারা ব্লগিং এর সাথে জড়িত তাদের প্রত্যেকের সাথে প্রত্যেকের একটি ভার্চুয়াল রিলেশন তৈরি হয় যা আপনজনের সাথে যে রিলেশন তা থেকে কোন অংশে কম না । এছাড়া টিপুর মেধা, মনন, রসবোধ আর বাস্তববাধী ‍গুণের কারণেই আমার দরদ উতলে উঠল। আমার মতে টিপু কিন্তু সত্যি সত্যিই নোবেল জয়ী। সবাই বলবে কিভাবে? তার আগে আমার ছোট্র একটি প্রশ্ন- আপনার শরীরে ক্যান্সার বা অন্যকোন রোগ বাসা বাঁধলে আপনি কি স্বাভাবিক আচার আচরণ করবেন? নিত্যকার কর্ম চালিয়ে যাবেন? ‘কিচ্ছু হবে না’ এ কথা মনকে বলতে পারবেন? উত্তর হবে আমার দ্বারা মোটেও সম্ভব নয়।

শান্তিতে অবদান রাখার জন্য যদি নোবেল পদক দেওয়া হয়, অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য যদি নোবেল পদক দেওয়া হয় তাহলে টিপু যে দৃষ্টান্ত দেখিয়ে গেল তার জন্য বাংলার নোবেল পুরস্কার এমনিতেই প্রাপ্য। তাইতো নামের সাথে যুক্ত করেছে নোবেলজয়ী কথাটি। নোবেলজয়ী এ পদক তার থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারেনি। নিজের পদক নিজেই গলায় ঝুলিয়েছে।

পরিশেষে বলবো পুংটা ইসমাইল টিপু সত্যিই তুমি নোবেলজয়ী।

মডারেদরদের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলছি- টিপুর মরনোত্তর তাকে নিয়ে লেখা যে কোন একটি টিউনকে নির্বাচিত করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি এবং সেটি যাতে কমপক্ষে ১৫ দিন রাখা হয়। কারণ টিপু টেটিতে ছিল সবচেয়ে বেশি এ্যাক্টিভ। উপহার দিয়েছে খুব সুন্দর একটি লোগো।

Level New

আমি রিজভী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 193 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

চোখ জ্বালা পোড়া করছে এবার মনে হয় ঘুম আসবে। ঘুমাতে যাই।

আমরা কক্ষনো ভুলবনা তোমাকে ……….শুধু তুমি ভালো থেকো……………………….

    আরফিন রুমির ‘ভাল থেকো তুমি’ গানটি শুনছি আর টিপুর কথা ভাবছি।

Level 2

হুম…….. আহারে আমরা মরণোত্তর পদক বেশি দেই 🙁

    নিপু দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, টিপুকে মরনোত্তর পদক দিতে হয়নি। তার জিবদ্দশায় নিজের পদক নিজেই গলায় ঝুলিয়েছে।

নোবেলবিজয়ী_টিপু নামে এক ব্লগার ২৪ তারিখে পরলোক গমন করেছেন । যারা ব্লগিং এর সাথে জড়িত তারা সবাই জানেন সকলের সাথে একটি ভার্চুয়াল রিলেশন তৈরি হয় যা আপনজনের সাথে যে রিলেশন তা থেকে কোন অংশে কম না । তাকে আমি চিনতাম না তার পুরানলেখাও পড়লাম আজকেই । সে ব্লগার হিসেবে কেমন ছিল তা নিয়ে কিছু বলবো না । তার লেখা ক্যান্সার বিষয়ক একটি পুর্নাঙ্গ পোস্ট ছিল তার শেষের কথাগুলো ছিল এমন
“””””এত বড় পোস্ট কেন করলাম? কেউত পরবে না? এই পোস্ট অন্য কারো জন্য নয়, নিজের জন্য। আমার খুব কাছের একজন এই মরণব্যাধিতে আক্রান্ত, আমি জানি খুব বেশি দিন নেই তার, তারপরেও তাকে এই মিথ্যাটুকুই সারাদিন বলি ‘কিচ্ছু হবে না'””””””

কতটুকু বুদ্ধিদৃপ্ত হলে এই ভাবে নিজের মরনের কথা বলা যায় ?
এই লেখাটুকু পড়ে কোন কথা বলার শক্তি পাচ্ছি না টিপু ভাই তুমি আজ থাকলে দেখতে পেতে । আমাদের সকল ব্লগারকে রেখে দূর পরবাসে পারি জমালে । ব্লগাররা তেদের সংসারের এক আপনজনকে হারালো । আপনজন হারানোর ব্যাথা সবাই কমবেশি জানে । আর কোন দিন তুমি ব্লগ এ লিখবে না তাই বলে কি তোমাকে আমরা ভুলে যাব বা তোমার প্রতি ভালোবাসার কোন কমতি হবে ? কখনোই না । তুমি সকলের মনে সব সময় নারা দিবে সব সময় আমদের মাঝেই থাকবে । তোমার আত্নার মাগফিরাত কামনা করছি ।

আপনি বা আমিও একদিন চলে যাব । তখন কাছের মানুষ গুলো কাঁদবে ।

    “যারা ব্লগিং এর সাথে জড়িত তারা সবাই জানেন সকলের সাথে একটি ভার্চুয়াল রিলেশন তৈরি হয় যা আপনজনের সাথে যে রিলেশন তা থেকে কোন অংশে কম না ।”
    আপনার এ লাইনটি আমি চুরি করে টিউনে যোগ করে দিয়েছি। মনে কিছু নিবেন না।

    লেখাটি পরে চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারিনি। দোয়া করি আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করেন।

পুংটা ইসমাইল টিপু সত্যিই তুমি নোবেলজয়ী ভাই। পরপারে ভাল থেকে এই কামনা ……………

Level 0

my tears cant stop.i can bear it anymore

    সত্যকে অনেক সময় সহজে মেনে নেওয়া যায়না।

উনি আমাদের মন জয় করে নিয়েছেন। নোবেল বিজয়ের চেয়েও বড় কিছু ……..

    হাসান সাহেব কমেন্টস করবেন ভাবিনি তার জন্য ধন্যবাদ। মনে হয় রাত জেগে টিউন করা সার্থক হতে চলেছে।

Level 0

Chokh ta jhapsa hoye asche keno bujhte parchina.letter gulo dkhte pcchina je!

    এমনতো হওয়ার কথা ছিল না।

Level 0

আসলে কাল থেকে সুধু টিপু র কথাই ভাবছি

    টিপু নামটি এখন আর অপরিচিত নয়।

Level 0

যতটুকু পড়ে বুঝলাম , তাতেই এককথায় দাড়িয়ে সেলুট চলে আসে , সত্যি টিপু ভাই সংগ্রামী তুমি

আল্লাহ তোমাকে জান্নান দান করুন।

এই পৃথিবীতে টিপু ভাই সম্ভবত একমাত্র ব্লগার যার লেখা পড়ে নিয়োমিত হেসেছি।আজ বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ভাইয়া আর নাই।খবরটা শোনার পর চোখের পানি কিছুতেই আটকাতে পারলাম না।

    মনে হয় যেন বাংলা ব্লগ জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

আমার গতকাল সারাটাদিন শুধু টিপুর কথা মনে পরল কতনা কমেন্ট করেছি তার টিউন এ তার উত্তরও দিয়েছিল সে…। সত্যি বলতে তার কথা ভাবতে ভাবতে আমার চখে একসময় পানি এসে গেল।
আজ সে নেই বিশ্বাস করতে অনেক কষ্ট হয় তবু মেনে নিতে হয় ।
আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসিব করুক………।

    আপনার মত সবার প্রত্যাশা- আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুক।

Level 0

আমরা আপনার জন্য প্রার্থনা করব যেন পরের জীবনে শান্তিতে থাকেন। we miss you

Level 0

VERY SAD, 🙁 WE MISS TIPU VAIYA. U STAY WITH US FOREVER.

Level 0

VERY SAD, 🙁 WE MISS TIPU VAIYA. U STAY WITH US EVER & FOREVER.

Level 0

ভাই সবাই তার জন্য আল্লার কাছে দোয়া করি …।আল্লাহ তালা তাকে বেহেস্ত বাসি করক …………….

আজকেও আমি তার জন্য নামাজ পড়ার সময় দোয়া করলাম। আসলে কান্সার নামক এই ভয়ানক জন্ত টি আমাদের বাবাকে নিয়ে গেছে পর পারে। ২০১০ এর ৭ই জানঃ তো কান্সার শুনলেই আমার কন্না আসে।

    একমাত্র ভুক্তভোগীরাই বুঝে ক্যান্সার কি জিনিস।
    টিপুর পাশাপাশি আপনার বাবাও যাতে বেহেশতবাসী হয় সে কামনা করি। ভাল থাকুন।

কি বলব ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা,
মনে হয় পৃথিবীর সবকিছুই মিথ্যা আর মৃত্যুটাই সত্য,যার কাছে সবাইকেই আত্নসমর্থন করতে হয়।
*টিপু ভাইয়ের জন্য রইল আমার দোয়া আল্লাহ যেই উনার উপর রহম করেন।
*আর সবার জন্য বলি আসুন আমরা চিরন্তন সত্য মৃত্যুর জন্য নিজেকে তৈরি রাখি প্রস্তুত করি নিজেকে পরকালের জন্য।কারন টিপু ভাইয়ের মত আমাদের সবাইকেই একদিন চলে যেতে হবে।

    আতাউর ভাই আসলে কেউ যখন মারা যায় তখন দোয়া ছাড়া তার জন্য কিছুই করার থাকে না। এজন্য নিকটাত্মীয়দের উচিত যতটা সম্ভব দোয়া দরূদের ব্যবস্থা রাখা।
    আপনার শেষ কথাটার সাথে আমিও একটা কথা যোগ করতে চাই। সেটি হচ্ছে- আমাদের প্রত্যেককে মনে রাখা উচিত আজকের দিনটাই হচ্ছে আমার জীবনের শেষ দিন। এতে পাপবোধ যেমন কমবে তেমনি আপনার মাঝে অন্য এক অনুভূতি কাজ করবে।

মডারেদরদের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলছি- টিপুর মরনোত্তর তাকে নিয়ে লেখা যে কোন একটি টিউনকে নির্বাচিত করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি এবং সেটি যাতে কমপক্ষে ১৫ দিন রাখা হয়। কারণ টিপু টেটিতে ছিল সবচেয়ে বেশি এ্যাক্টিভ। উপহার দিয়েছে খুব সুন্দর একটি লোগো।

সহমত