নোবেলবিজয়ী_টিপু নামেই যিনি ব্লগিং জগতে প্রবেশ করেছিলেন। এক কথায় উনার ব্যাপারে বলা যায় যিনি মৃত্যু ভয় কে জয় করেছিলেন। কয়জন পারবে নিজের নিশ্চিত মৃত্যুর কথা জেনে এভাবে হাসি-খুশির মাধ্যমে ব্লগকে মাতিয়ে রাখতে?
আমি এতক্ষন যাকে নিয়ে বললাম তিনি গত ২৪ নভেম্বর বিকাল ৫ টায় মাত্র ২২ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নানিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। উনি ২০০৯ থেকেই ব্লাড ক্যান্সার (Liucoplastic Liucomia) রোগে ভুগছিলেন। টেকটিউনস এর পক্ষ থেকে শোক জানাচ্ছি।
ব্লাড ক্যান্সার নিয়ে সামুতে উনার নিজের একটা পোস্ট আছে। আমি তার কিছু অংশ এখানে তুলে দিচ্ছি
ক্যান্সার শব্দটির সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত, কারন আমাদের মাঝে এমন খুব কমই পাওয়া যাবে যার কোনো না কোনো আত্মীয় বা দূর সম্পরকের কেউ এই রোগে আক্রান্ত হয়নি, বা কখনও তার কাছে কেউ ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য এসে সাহায্য চায়নি। কিন্তু বাস্তবতা হলও আমরা এই রোগটিকে সবচেয়ে অবহেলা করি। সোজা ভাষায় ক্যান্সার হলও এইডসের মতই একটি মরণব্যাধি, কিন্তু এইডসকে অতিরিক্ত ফ্ল্যাশ করতে গিয়ে এই রোগটি সম্পর্কে মানুষ অন্ধকারেই থেকে যায়।
আমাদের দেশে ক্যান্সার এর কারন নিয়ে প্রচুর বিভ্রান্তি আছে, বিশেষ করে যারা স্বল্প শিক্ষিত, তার এই রোগের পিছনে রোগীর অপকর্ম খুজে বেড়ান। এতটুকু অনুরোধ এতটা অবিচার একজন ক্যান্সার রোগীর সাথে করবেন না। এই রোগের কোনও সুনির্দিষ্ট কারন আজ পর্যন্ত গবেষকরা এতো গবেষণা করেও বের করতে পারেন নি, এমনকি ধূমপানের সাথেও ব্লাড ক্যান্সারের সরাসরি কোনও সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা গেলে ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকিমিয়া সম্পূর্ণ সেরে যায়। যতটা সহজে বললাম সম্পূর্ণ সেরে যায়, ব্যাপারটা ততটা সহজ নয়, কারন প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার ধরা পরাটাই সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ, আমাদের মত অনুন্নত দেশতো দুরের কথা উন্নত দেশগুলুতেই রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পরার হার খুবই হতাশাজনক, এর কারন আগেই বলেছি রোগী নিজেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে বুঝতে পারেন না যে তিনি কি মারাত্মক রোগে আক্রান্ত।
ক্যান্সার শুধু একটি জীবন শেষ করে দেয় তা নয়, এটি অনেক সময় একটি পরিবারকেও ধ্বংস করতে পারে। আমাদের মধ্যে এরকম কমই পাওয়া যাবে যার কাছে কেউ কোনও দিন ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য সাহায্য চান নি, পত্রিকায়, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে আমাদের কোনও সহপাঠি হয়ত সাহায্যের জন্য এসেছিল। কিন্তু শুধু রোগটির সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতার কারনে আমরা অবহেলা করেছি। ক্যান্সার চিকিৎসা আমাদের মত দেশে কোনও মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষেই এককভাবে চালানো কষ্টকর।
ক্যান্সার চিকিৎসায় আমরা অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে না পারি কিন্তু আমরা রক্ত দিয়ে কিন্তু সাহায্য করতে পারি। একজন ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসায় প্রাথমিক পর্যায়ে প্রচুর রক্তের প্রয়োজন পড়তে পারে। আসুন আমরা নিয়মিত রক্তদান করি, এতে আমাদের কোনও ক্ষতি হবে না, কিন্তু একদিন আপনিই এই ভেবে গর্বিত হবেন যে আপানার রক্তে একটি জীবন বেচেছিল।
এত বড় পোস্ট কেন করলাম? কেউত পড়বে না? এই পোস্ট অন্য কারো জন্য নয়, নিজের জন্য। আমার খুব কাছের একজন এই মরণব্যাধিতে আক্রান্ত, আমি জানি খুব বেশি দিন নেই তার, তারপরেও তাকে এই মিথ্যাটুকুই সারাদিন বলি 'কিচ্ছু হবে না'
এতক্ষন যা পড়লেন তা মূল পোস্টের কিছু অংশ। সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ুন এখান থেকে
কি মনে হচ্ছে আপনার? পারবেন নিজের মৃত্যুর কথা এভাবে বলে যেতে? কোন ব্লগারতো দূরে থাকুক অনেক পরিচিত মানুষও উনার এই মরণ ব্যাধির কথা জানে না বা উনি কাউকে বুঝতে দেননি।
টিপু ভাই শুধু সামুর ব্লগারই না উনি টেকটিউনস এরও একজন নিয়মিত টিউনার ছিলেন। উনার টিউনের মন্তব্যগুলো দেখুন কতটা প্রানবন্তভাবে উত্তর দিয়েছেন। উনার টিউন পেজের লিঙ্ক এখানে।
টেকটিউনস এর লোগো নিয়ে দেখুন কত মজার কিন্তু বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাখ্যা দাড় করিয়েছেন।
টেকটিউন্সের লোগোটা নিয়া অপারেশন চালাইলাম
techutunes এর থিম হলও- মেতে উঠুন প্রযুক্তির সুরে
দেখুন Techutunes এ, tunes এর u এবং n কে মিউজিক্যাল সাইনের রুপ দেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে সুরে সুরে মেতে উঠা বুঝাচ্ছে, আর tunes এর সামনেতো Tech বাবাজি বহাল তবিয়তেই আছে, তারমানে শেষ কথা হলও-'মেতে উঠুন প্রযুক্তির সুরে'
আমি যা বুঝলাম সেই ভাবে ব্যাখ্যা দিলাম, ভুল হলে কেউ জানাবেন, প্লিজ
পরিশেষে আমার মন্তব্যের জবাবের একটা ছবি দিয়ে শেষ করলাম। জানি আর কোন দিনই আমার পোস্টে উনাকে পাবো না। 🙁
একটা চমত্কার লিখা পড়লাম টিপু ভাইকে নিয়ে। তাই এই টিউনে যোগ করে দিলাম।
প্রিয় সহযাত্রী বন্ধুরা,
সবাই কেমন আছো?? এত তাড়াতাড়ি আসতে হবে বেঁচে থাকতে কখনো ভাবতে পারিনি। এমনকি এতো মানুষ আমাকে এত ভালবাসে, বেঁচে থাকতে সেটাও কখনো বুঝিনি। তোমাদের এত এত ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, ভক্তি, সহমর্মিতা এগুলো যদি চোখে দেখে যেতে পারতাম!!
আজই আমি তোমাদের অনেক কে আমার ব্লগে প্রথম দেখলাম!! কত জন যে প্রথম আমার ব্লগে মন্তব্য করল!! আমায় ক্ষমা করো, তোমাদের কে ধন্যবাদ জানাতে পারলাম না। কেও কেও আমার জন্য অশ্রুবর্ষণ ও করলো। এদের বেশীর ভাগ কেই আমি চিনি না, জানি না, দেখি নি চেহারা, জানি না তাদের জাত, ধর্ম, বর্ণ, কিংবা দর্শন। তবুও আমি বেশ বুঝতে পারি, তোমাদের নিখাদ ভালোবাসাটা।
আহা রে!! মানুষের দোয়ায়ও নাকি আয়ু বাড়ে। কি বোকামি টাই না করলাম আমি। শরীরের ঐ মরণব্যাধি টার কথা যদি তোমাদের ঢাক ঢোল করে জানিয়ে দিতাম আগে! ক্যান্সার এর চিকিৎসা তো অনেক খরচের। আমার বাবা মা যে হাঁপিয়ে উঠছিল, ওটা যদি আমি তোমাদের জানিয়ে দিতাম, আমায় নিশ্চয় তোমরা এভাবে নিভৃতে যেতে দিতে না! হাল ছেড়ে দিতে না!!
এই প্রকাশ বিমুখ, গর্তমানব তরুণতাকে ক্ষমা করে দিও। আমি একটু ঐ রকমই। তোমাদের একটা গল্প বলি, আমার নাম নিয়ে। আমার বন্ধুদের নামগুলো খুব সুন্দর, আধুনিক। আমার নামটা দেখো, টিপু!! কত্তো পুরানো, মাল্ধাতা আমলের। টিপু সুলতান নামের এক সুলতান ছিল নাকি ভারত বর্ষে। মা বলেছিল, সে নাকি খুব সাহসী ছিল,একেবারে বাঘের মতো, তাঁকে নাকি “শের খা” ডাকা হত। কাওকে ভয় করত না। হারতে হারতে সব কিছু নাকি সে হারিয়ে ফেলেছিল, শুধু হারায়নি আত্মসম্মান বোধ। মরার আগ পর্যন্ত নাকি সে যুদ্ধ করে গেছে, তবুও হার স্বীকার করেনি।
সেই সুলতান নাকি বলতো, “সূর্য আমি। ঐ দিগন্তে হারাবো। অস্তমিত হব, তবু ধরণীর তলে চিহ্ন রেখে যাব।”
আমার এই দর্শন টা খুব ভালো লাগতো। আমিও খুব চাইতাম, খুব বিখ্যাত হব, চারিদিকে আমার নাম ডাক ছড়িয়ে পড়বে। নোবেল টা যদি জয় করে ফেলতে পারতাম, তবে কাজটা মনে হয় খুব সোজা হত, তাই না?? তাই, নামের আগে নিজেই জুড়ে দিলাম নোবেলবিজয়ী_টিপু !
আমার ঘুম পাচ্ছে, তাছাড়া বড় লেখা লিখতে আমার ভালো লাগে না। মানুষজনও আজকাল খুব অস্থির। বড় লেখা কেও পড়তে চায় না। মানুষের দোষ ই বা দিই কি করে!! আমাদের সময় কই, সময় নষ্ট করার। জীবন টা যে খুব ছোটই। মহাকালের একটা পলক কেবল। তাই আমিও চেয়েছি, ছোট্ট এই সময়টাকে আনন্দে কাটিয়ে দিতে। কাওকে বিরক্ত করতে আমার একদম ই ভালো লাগেনা। কারও গলার ফাঁস হয়ে, কাওকে বিপদে ফেলে, টেনশনের কারণ হয়ে বেঁচে থাকার মাঝে কি আনন্দ আছে, বলো??
তাইতো তোমাদের, বন্ধুদের জানাইনি। আমার খুব একটা কষ্ট হত না সহ্য করতে, বিশ্বাস করো। বরং, আমার জন্য আরও শত মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, আমার জন্য ভিক্ষা করছে, তহবিল বাড়ানোর জন্য ছুটোছুটি করছে, কেও দুটাকা দিচ্ছে, কেও বা ভণ্ড বলে তাড়িয়ে দিচ্ছে, ওগুলোই বরং সহ্য করতে কষ্ট হতো। থ্যাঙ্ক গড, যে উনি আমাকে সহি সালামতে নিয়ে গেছেন।
দুঃখ করো না। সবাই কি আর শতবর্ষী হয় বলো!! আমার মতো স্বপ্নবাজ, আড্ডাবাজ, বন্ধুপাগল, আর নিজের প্রতি প্রচণ্ড উদাসীন সব যুবকেরই কি সব স্বপ্নগুলো পূরণ হয়!! কেই বা পারে তার সব স্বপ্ন পূরণ করে যেতে। স্বপ্ন যে ধারাবাহিক এক প্রক্রিয়া, সারা জীবন চলতে থাকে।
আমি খুব ক্লান্ত। খুব ধকল গেছে, তোমরা সবাই চিশ্চয় বুঝতে পারছ এখন। ঘুমাব আমি। চির শান্তির একটা ঘুম। তোমাদের এক একজনের দোয়া, ভালোবাসা আমার মাটির বিছানাকে কি যে আরামদায়ক করে দিয়েছে, তোমরা তা ভাবতেও পারবে না। আমি কৃতজ্ঞ তোমাদের কাছে। তোমরা সবাই একে অপরকে ভালো রেখো, এবং তবেই ভালো থেকো।
ইতি, তোমাদের স্নেহধন্য টিপু।
আমি হাসান যোবায়ের। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 157 টি টিউন ও 4939 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 166 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
নতুন কিছু করার দারুন আকাঙ্ক্ষা!
Tipu, tumi robe hridoye