নাসেরা বেগম। সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন স্বামী। নেই সন্তান, নেই আত্মীয়-স্বজন। স্বাধীনতার পরে চল্লিশ বছর বেঁচে আছেন জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে। জীবন চালাতে হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক, বিক্রয় প্রতিনিধি ও হোমিওপ্যাথি চিকিত্সকের কাজ করেছেন। হৃদরোগে সব হারিয়ে তিনি এখন কলম ফেরিওয়ালী। কল্যাণপুরের ৬/১, নম্বর বাড়ির একটি খুপরি ঘর থেকে বেরিয়ে পাবলিক বাসে চড়ে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটে যান কলম নিয়ে।
ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; ঢাকা, ইডেন ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কলম ফেরি করেন। শিক্ষার্থীদের কাছে জানান করুণ আর্তি—‘দাদু একটা কলম নেবে, কলম!’ এভাবে চলছে দেড় দশক। ব্যবহারে আভিজাত্য ও ভদ্রতার কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট ফেরিওয়ালী নাসেরা এখন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে ‘কলম দাদু’।
প্রতি মাসেই অসুস্থ হয়ে পড়েন নাসেরা বেগম। ধীর লয়ে হাঁটেন। কাঁপা কণ্ঠে কলম সাধেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। তখন তারাই তাকে নিয়ে যান ঢাকার শেরেবাংলানগরের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। অসুস্থতার কথা শুনে ছুটে যান পরিচিতজনেরা।
সেই নাসেরা বেগম প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তাকে সাহায্যের জন্য ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১৪ লাখ টাকা তুলে হাতিয়ে নিয়েছে একদল ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট। ১৪ লাখ টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেয়ার কথা বলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তার অ্যাকাউন্টে জমা দেয়া অনুদানের ১০ হাজার টাকাও নিয়ে গেছে তারা। ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ভয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পুরো ঘটনাই তিনি মুখ বুঝে সহ্য করেছিলেন। কিন্তু ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের এমন জঘন্য কাজকে কিছুতেই ভুলতে পারছেন না তিনি। তারা কলগার্ল সরবরাহের এক ওয়েবসাইটে তার মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে তাকে পরিচিত করেছে কলগার্ল মৌ হিসেবে। ওই ওয়েবসাইট থেকে নম্বর নিয়ে বিকৃতরুচির ব্যক্তিরা তাকে ফোন করে কুপ্রস্তাব দিচ্ছেন। যার ফলে একেবারেই ভেঙে পড়েছেন নাসেরা বেগম। প্রতারণার এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনার অনুসন্ধান করে জানা গেছে নানা তথ্য। ব্লগার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছরের ১৫ মার্চ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুফিদ বিন রাব্বি ‘অসামাজিক ০০৭০০৭’ নামে বাংলা কমিউনিটি ব্লগ সামহয়ার ইন ব্লগ ডট নেট-এ ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদের স্ত্রী এখন ফেরিওয়ালী!!! শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রাপ্যটা আমরা এভাবে দিলাম!?’ শিরোনামে একটি পোস্ট দেন। ব্লগটির মালিক সৈয়দা গুলশান আরা জানান, পোস্টটি স্টিকি পোস্ট হিসেবে মনোনীত করেন। পোস্টটি ৫৫৬১ বার পঠিত হয় এবং ৫০১টি মন্তব্য আসে। তাতে বিপুলসংখ্যক ব্লগার নাসেরা বেগমকে আর্থিক সহযোগিতার জন্য তাদের আগ্রহের কথা জানান। গত ২৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মাঠে ব্লগাররা নাসেরা বেগমের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক করেন। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তারা নাসেরা বেগমকে সহায়তা করার জন্য একটি তহবিল গঠন করবেন। যার মাধ্যমে তার হৃদরোগের চিকিত্সা, স্থায়ী উপার্জনের জন্য একটি দোকান ও আজিমপুরে বাসা ভাড়া করে দেয়া হবে। এরপর ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদের স্ত্রী নাসেরা বেগমকে বাঁচাতে ৪০ লাখ টাকা প্রয়োজন’ লিখে পোস্টার সেঁটে দেয়া হয় ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ, অনুষদ ও আবাসিক হলে; ইডেন, ঢাকা ও সিটি কলেজ; বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে ও নোটিশ বোর্ডে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছ থেকে এপ্রিল ও মে মাসব্যাপী অনুদান সংগ্রহ করেন ব্লগাররা।
তহবিল সংগ্রহে নেতৃত্ব দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী হামিন আহমেদ তাপস ওরফে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ‘হুলো বেড়াল’ (মোবাইল-০১৭৫৩৩৫৪৮৪৮), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের শিক্ষার্থী অরণ্য (মোবাইল-০১৬৭৭৭৩০৩৩৭), আরিফ (মোবাইল-০১৯১১৬৪৩৮৮৭), নীল ও মাসুদ; সিটি কলেজের ছাত্র সেজর (মোবাইল-০১৭১৮৩১১৭৭০), শোভন (মোবাইল-০১৯২৪১৮১৬৪২) ও তান্না (মোবাইল-০১৭১১১৯৫০৪৪) এবং সাদিক (মোবাইল-০১৯৩৭০৩৪০২) তার কাছে সংগৃহীত সব টাকা গচ্ছিত রাখেন।
তাপসের ঘনিষ্ঠ ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি গুলশান, বারিধারা, উত্তরার বিভিন্ন ধনী ব্যক্তির কাছ থেকেও নাসেরাকে সাহায্যের কথা বলে অনুদান সংগ্রহ করেছেন। এসব এলাকা থেকে অনুদান সংগ্রহ করতে তাকে সহযোগিতা করেন তার বোন জান্নাত। যার কাছে উত্তরা নিবাসী নিপা ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। অন্যদিকে তাপস ইংল্যান্ডে বসবাস করার সুবাদে ধনী প্রবাসীদের কাছ থেকেও নাসেরার জন্য অনুদান বাবদ কয়েক লাখ টাকা যোগাড় করেন।
জুন মাসের ৫ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে নাসেরা বেগমের হাতে তহবিল তুলে দেয়া হবে বলে তাপস ব্লগারদের জানান। পরে তিনি সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন। নগদ টাকা দেয়া ঝুঁকিপূর্ণ হবে দাবি করে মতিঝিলে ডাচ-বাংলা ব্যাংক অথবা এক্সিম ব্যাংকে একাউন্ট খুলে তাতে তহবিল জমা রাখার কথা জানান।
নাসেরা বেগম এ প্রতিবেদককে বলেন, তাপস বলেছিল, মতিঝিলে ডাচ-বাংলা ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। সাহায্যের টাকার সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার নামে থাকা জমা টাকাও এক সঙ্গে ওই অ্যাকাউন্টে রাখার কথা বলেছিল সে। ওর কথা বিশ্বাস করে আমি চেক-এ সই করে দিয়েছি। ও আমার অ্যাকাউন্টে থাকা ১০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।
তিনি জানান, গত ২ আগস্ট রাতে তাপস, নীল ও অরণ্য আমার বাসায় এসেছিল। আমাকে একটি কাগজের প্যাকেট দিয়ে বলল, এখানে টাকা আছে যত্ন করে রেখে দিন। পরের দিন সকালে অ্যাকাউন্ট করতে আমাকে মতিঝিলে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ওরা চলে যায়। ওরা যাওয়ার পরে প্যাকেট খুলে দেখি অনেকগুলো কাগজের সঙ্গে ৫০০ টাকার একটি নোট। এছাড়া আমার মোবাইলে থাকা ওদের সব ফোন নম্বর ওরা মুছে দিয়েছে। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে ছাত্রদের কাছে এসব ঘটনা জানাই। ওরা আমাকে তাপস, নীল ও অরণ্যের মোবাইল ফোন নম্বর জোগাড় করে দিলে আমি ওদের ফোন করি। প্রতিদিনই ফোন করি। কিন্তু ওরা আমার ফোন ধরে না। কল্যাণপুরের ছোট্ট একরুমের বাসাটি দেখিয়ে নাসেরা এ প্রতিবেদককে বলেন, বাবা আমি লোভে পড়েছিলাম। ওরা আমাকে বলেছিল আজিমপুরে বাসা নিয়ে দেবে। নতুন খাট, ওয়ারড্রব, স্টিলের আলমারি, টেবিল, চেয়ার, মিটসেফ থাকবে বাসায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলমের দোকান দিয়ে দেবে। ওরা কিছু দিল না। ইন্টারনেটে আমার নম্বর দিয়েছে। সারাদিন আজেবাজে লোক আমাকে ফোন দিয়ে কুপ্রস্তাব দেয়। কি সব ম্যাসেজ (এসএমএস) পাঠায়। আমার কষ্টের জীবনটা ওরা বিষিয়ে তুলেছে।
তার কাছ থেকে এমন কথা শুনে ঘটনার সত্যতা খতিয়ে দেখতে তার মোবাইল ফোন সেটটির ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে পাওয়া গেল বিস্ময়কর তথ্য। অসংখ্য এসএমএস করেছেন সমাজের উচ্চ শিক্ষিত ও ভদ্রজনেরা। এসএমএসের প্রতিটি শব্দ অশ্লীল। তারা তার কাছে জানতে চাচ্ছে তার ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স (শারীরিক গঠনের মাপ), এক রাত একান্তে সময় কাটাতে কত টাকা দিতে হবে। এসবের মধ্যে ০১৯১৬৮৪০২৮০, ০১৬৮১৯৬৮৬৩৬, ০১৬৭৬৬২২৭০৩, ০১৭২৪৬৬২৯৪৭ মোবাইল নম্বরের বার্তাগুলো বেশ আপত্তিকর। কিছু নম্বর থেকে পর্নো ওয়েবসাইটে এভাবে মোবাইল নম্বর না দেয়ারও পরামর্শ দেয়া হয়। নাসেরার অভিযোগ, তার নাম করে তোলা টাকা মেরে দেয়া এবং তার মোবাইল নম্বর পর্নোওয়েবসাইটে দেয়ার জন্য তাপস, নীল ও অরণ্য জড়িত। তার অভিযোগের ব্যাপারে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তাপস জানান, তিনি তাপস নন। এসময় তাকে নাসেরা বেগমের অভিযোগের কথা জানালে তিনি নিজেকে তাপস বলে স্বীকার করেন। বিস্তারিত পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, তার নাম হামিন আহমেদ তাপস। তিনি ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করেছেন। দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক সংস্থা কেয়ারে চাকরি করেছেন। তিনি ইংল্যান্ডের নাগরিক। বর্তমানে ঢাকায় থাকেন। কিছু দিন আগে স্ত্রী’র সঙ্গে তার ডিভোর্স হয়ে গেছে। এ জন্য তিনি কিছুটা ঝামেলায় আছেন বলে জানান। নাসেরা বেগমের প্রসঙ্গ জিজ্ঞেস করলে জানান, ওই মহিলা ধূর্ত ও মিথ্যুক। ১৪ লাখ টাকা নয়, মোট এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা তোলা হয়েছিল। আনুষঙ্গিক খরচ কেটে নিয়ে ৭৭ হাজার টাকা তার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। টাকা পাওয়ার প্রাপ্তি স্বীকারপত্রের স্ক্যান কপি সামহোয়ারইনব্লগে পোস্ট করা হয়েছে।
ব্লগার মুফিদ জানান, আমরা মনে করেছিলাম তাপস ভাই কলম দাদুকে টাকা দিয়েছেন। কিন্তু পরে খবর পেলাম তিনি টাকা দেননি। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলেন। পরে যোগাযোগ করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। এমনকি তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মুফিদ জানান, দাদুর প্রতারিত হওয়ার ঘটনায় আমরা প্রচণ্ড বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। নিজে যতটুকু পারছি তার পাশে থাকার চেষ্টা করছি। তিনি জানান, তিনি ইতোমধ্যে উত্তরার রাজউক কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা তুলে নাসেরাকে দিয়েছেন।
আমরা কয়েকজন মিলে একটি বাংলা community blog করতেচি,আমাদের টিমে কিছু মেম্বার আছে, আমরা চাচ্ছি কিছু নতুন মেম্বার কে আমাদের টিমে এড করতে,কেউ যদি আমাদের বাংলা community blog টিমে থাকতে চান তাহলে আমাকে ফে ই স বুকে (নক) করুন।
মুল লেখা এখানে
আমি ব্লগার খান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 22 টি টিউন ও 167 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
i m good,so not bad
কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। লজ্জা।জাতির লজ্জা।