চলেই গেলেন স্টিভ জবস……….

টিউন বিভাগ খবর
প্রকাশিত

অ্যাপল গুরু স্টিভ জবস আর নেই। মাত্র ৫৬ বছর বয়সে (১৯৫৫-২০১১) জটিল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। বুধবার ৫৬ বছর বয়সে ক্যালিফোর্নিয়ার পালো আলতোয় তিনি মারা যান।
অ্যাপল সূত্র স্টিভ জবসের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।

আইপ্যাড এবং আইফোন উদ্ভাবনার মাধ্যমে স্টিভ জবস বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। ২০০৪ সাল থেকে অগ্ন্যাশয়ের জটিল ক্যান্সারে ভুগছিলেন স্টিভ জবস।

স্টিভ জবস ছিলেন মাইক্রোসফটের অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং বিল গেটসের প্রাণপ্রিয় বন্ধু। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এবং ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ ছাড়াও বিশ্বপ্রযুক্তি অঙ্গনের শীর্ষ ব্যক্তিরা স্টিভ জবসের মৃত্যুতে গভীর প্রকাশ করেছেন|

বন্ধু স্টিভের মৃত্যুর খবর শোনার পর বিল গেটস তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, "পৃথিবী গৌরবজনক প্রভাববিস্তারী এক বিরল ব্যক্তিত্বকে প্রত্যক্ষ করেছে। আগামী অনেক প্রজন্ম তাকে স্মরণ করবে। আমরা যারা তার সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, তারা সত্যিই ভাগ্যবান। নিশ্চিতভাবেই এ এক বিশাল সম্মানের বিষয়।"

নিউ ইয়র্কে অ্যাপলের বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে শোকার্তরা মোমবাতি জ্বালিয়ে এবং ফুল দিয়ে স্টিভের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।

বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বসের হিসেব অনুযায়ী ২০১০ সালে জবসের সম্পদের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ৬.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এই হিসেব অনুযায়ী আমেরিকার ধনীদের তালিকায় জবসের ঠাঁই হয় ৪২ নম্বরে।
তবে তার এই বিশাল সম্পদের উত্তরাধিকারী কে বা কারা হবেন সে সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত কোনোকিছু জানা যায় নি।

পুরো আট বছর একান্তেই জটিল ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন স্টিভ। কিন্তু তাঁর উদ্ভাবনী শক্তিকে মোটেও দমিয়ে রাখতে পারেনি ক্যান্সার। অদম্য সাহস আর ধৈর্য্য নিয়ে তিনি গত আটটি বছর অ্যাপলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। বিশ্বকে দিয়েছেন একের পর চমক।

বিশ্ব পরিবর্তনের রূপকার হিসেবে তাঁকে এ কালের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি উপাধীও দেওয়া হয়। এরই মধ্যে পুরো বিশ্বপ্রযুক্তি অঙ্গনে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। কেউই যেন স্টিভের এ অকালে চলে যাওয়াকে মেনে নিতে পারছেন না।
বিশ্বের কোটি কোটি অ্যাপল ভক্তকে চোখের জলে ভাসিয়ে স্টিভ এখন স্মৃতির মনিকোঠায়। স্টিভ শুধু অ্যাপলের সম্পদ ছিলেন না।

বরং পুরো বিশ্বই আজ (৬ অক্টোবর) হারালো বিশ্বপ্রযুাক্তির এক অপূরণীয় মহানায়ককে।

মৃত্যুকালে স্টিভ স্ত্রী, এক ছেলে এবং দুই কন্যা রেখে গেছেন।

অ্যাপলের গুরুদায়িত্ব থেকে মাত্র ৬ সপ্তাহ আগে ইস্তফা নিয়েছিলেন স্টিভ। অ্যাপলকে সামলানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী টিম কুককে।

এ সময় অ্যাপলের ওয়েবসাইটের প্রধান পৃষ্ঠায় লেখা আছে,
‘Apple has lost a visionary and creative genius, and the world has lost an amazing human being.

Those of us who have been fortunate enough to know and work with Steve have lost a dear friend and an inspiring mentor.

Steve leaves behind a company that only he could have built, and his spirit will forever be the foundation of Apple.

অ্যাপলের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে জানানো হয়, "স্টিভের মেধা, ভালোবাসা এবং উদ্যমই ছিল অসংখ্য উদ্ভাবনের নেপথ্যে, যা আমাদের সবার জীবনযাত্রার মানোন্নয়ে বিশাল ভূমিকা রেখেছে। স্টিভের জন্যই বিশ্ব আজ অনেক উন্নত।"

অ্যাপল এই স্বপ্নদ্রষ্টার সম্মানে তাদের ওয়েবসাইটে স্টিভের সাদাকালো একটি বড় ছবি জুড়ে দিয়েছে। সেখানে লেখা, 'স্টিভ জবস: ১৯৫৫-২০১১'। প্রতিষ্ঠানটির সদর দপ্তরের বাইরে তাদের পতাকা অর্ধনমিত।

গ্যারেজ থেকে বিশ্ব ক্ষমতার মঞ্চে :

১৯৫৫: স্টিভ জবসের জন্ম ২৪ ফেব্রুয়ারি, সানফ্রান্সিসকো। ক্যালিফোর্নিয়ার মাউনটেন ভিউ অঞ্চলে পল ও ক্লারা জবস শিশু স্টিভকে দত্তক নেন।

১৯৭৪: ভিডিওগেম কোম্পানি অ্যাটারি ইনকর্পোরেশনে চাকরি নেন। তবে কয়েক মাস পর ইস্তফা দিয়ে ভারতে বেড়াতে যান।

১৯৭৫: বন্ধু স্টিভ ওuজনিয়াকের সঙ্গে স্টিভ জবস নিজেদের পারিবারিক গ্যারেজে আদি কম্পিউটারটি তৈরি করেন।

১৯৭৬: নিজেদের মেশিনপত্র বিক্রির জন্য জবস ও ওজনিয়াক অ্যাপল কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। এবারই প্রথম অ্যাপল-১ কম্পিউটারটি পরিচিতি পায়।

১৯৭৭: অ্যাপল-২ বাজারে আসে। এই প্রথম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে কম্পিউটারটি বিক্রি হয়। টানা ১৬ বছর এটি উৎপাদনে থাকে।

১৯৮০: অ্যাপল-৩ বাজারে আসলেও তা বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ হয়। কম্পিউটারটির নির্মাণে ত্রুটি ছিল। এটিকেই বলা হয় অ্যাপলের দ্বিতীয় কম্পিউটার।

১৯৮৩: লিসা নামের পারসোনাল কম্পিউটার (পিসি) বাজারে ছাড়ে অ্যাপল। মাউস দিয়ে এটি চালানো সম্ভব হয়। তবে এ প্রচেষ্টাও বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ হয়।

১৯৮৪: ম্যাকিনটশ কম্পিউটার বাজারে ছাড়ে অ্যাপল। এটি ব্যাপক মনোযোগ কাড়ে। তবে বিক্রিবাট্টা কম হয়।

১৯৮৫: অ্যাপল ছয়টি কারখানার তিনটিই বন্ধ করে এবং ১২০০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করে। বোর্ডরুম বৈঠকে জন স্কালির কাছে হেরে কোম্পানি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন স্টিভ জবস

১৯৮৬: লুকাসফিল্ম লিমিটেডের গ্রাফিকস বিভাগ কিনে নেন জবস। প্রতিষ্ঠানটির মালিক স্টার ওয়ারস চলচ্চিত্রের পরিচালক জর্জ লুকাস। এখানে পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিওস নামের একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৮৭: ম্যাকিনটশ-২ বাজারে আসে।

১৯৮৮: নেক্সট কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন জবস। আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেনি। মাত্র ৫০ হাজার কম্পিউটার বিক্রি হয়।

১৯৯৫: পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিওসের প্রধান নির্বাহী থাকাকালীন টয় স্টোরি বের হয়। কম্পিউটারে অ্যানিমেশন করা পূর্ণদৈর্ঘ্যরে ছবি। চলচ্চিত্রটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সাড়া পায়।

১৯৯৬: অ্যাপলের কাছে ৪২ কোটি নয় লাখ মার্কিন ডলারে বিক্রি হয় নেক্সট। জবসের প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন শুরু করে। এতে সফটওয়্যারও নিজেদের নির্মিত।

১৯৯৭: জবস অ্যাপলের অন্তর্বর্তী প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পান।

১৯৯৮: স্বয়ংসম্পূর্ণ কম্পিউটার আইম্যাক বাজারে ছাড়া হয়। এর সঙ্গে মনিটরও জুড়ে দেওয়া হয়। এর ফলে অ্যাপলের প্রতিদ্বন্দ্বীরা অনেক পেছনে পড়ে যায়।

২০০১: অক্টোবরে প্রথমবারের মতো আইপড বাজারে ছাড়া হয়। এতে সাফল্য আসে।

২০০৩: এপ্রিলে আইটিউনস গানের ডিভাইস বাজারে ছাড়া হয়।

২০০৭: প্রথমবারের মতো আইফোন বাজারে ছাড়া হয়। অ্যাপলের নামে কম্পিউটার যন্ত্রাংশ উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন স্টিভ জবস।

২০১০: এপ্রিল আইপ্যাড বাজারে ছাড়া হয় এবং ৮০ দিনের মধ্যে এটি ৩০ লাখ কপি বিক্রি হয়। বছর শেষে দেড় কোটি আইপ্যাড বিক্রির খবর পাওয়া যায়। অ্যাপলের বাৎসরিক আয় ছয় হাজার ৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছায়। ২০০০ সালে এ আয় ছিল ৮০০ কোটি ডলার।

২০১১: বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় অ্যাপল নতুন পণ্য ছাড়ে। এর মধ্যে আছে, আইপ্যাড২, আইফোন৪ এবং সর্বশেষ আইফোন৪এস।

সুত্রঃ banglanews24.com,bdnews24.com,ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তর |

Level 0

আমি nayeem.nay। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 7 টি টিউন ও 32 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

পৃথিবী তে যখন আসেছেন চলে ত যেতে ই হবে। তবে বিশ্ব এক জন গুনীজন হারালো। তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।

স্টিভ জবসের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি…

Level 0

স্টিভ জবসের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। বিশ্বের প্রযুক্তি প্রেমীদের আইডল বিদায় নিলেন।

Level 0

পৃথিবীতে মানুষ আসে আবার চলে যায়, এটাই কঠিন সত্য। কিন্তু কারো কারো চলে যাওয়াটা মেনে নেয়া কষ্টকর।
পুরো বিশ্বই আজ (৬ অক্টোবর) হারালো বিশ্বপ্রযুাক্তির এক অপূরণীয় মহানায়ককে।স্টিভ জবসের বিদ্রেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।

ভালো মানুষ পৃথিবীতে বেশিদিন থাকেনা, এটা তারই প্রমান।

স্টীভ জবস এর মৃত্যুতে টিটিতে তার সম্বন্ধে কোন ষ্টিকি পোষ্ট না দেখে খুব অবাক হচ্ছি

Level 0

পৃথীবি চেন্জ করে দেয়া কয়েকজনের মধ্যে অন্যতম আ্যপেলের প্রধান স্টিভ জবস আর নেই 🙁 🙁 🙁 🙁 আমরা সত্যি খুব শোকাহত। 🙁 (

আসলেই খুব দুঃখের সংবাদ।:( 🙁 🙁 🙁

ষ্টিভ জবসে্র আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি