বন্ধুরা আশা করি সকলেই ভাল আছেন। বর্তমানে আমরা ফেসবুক কিংবা ইউটিউব এ গেলেই দেখতে পাচ্ছি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার না করা সম্পর্কে নানা পরামর্শ এবং টিউটোরিয়াল। তাই আজকে আমি আলোচনা করব হোয়াটসঅ্যাপ সম্পর্কে।
হোয়াটসঅ্যাপ সম্প্রতি তাদের নতুন একটি নিয়ম যুক্ত করেছে। সেখানে কিছু শর্ত দেওয়া আছে ব্যবহারকারীদের জন্য। আপনারা যারা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করছেন তাদের কাছে সম্প্রতি হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ একটি বার্তা পাঠিয়েছে। যার ফলে অ্যাপটি ওপেন করার পর তাদের শর্ত সম্বলিত পপ-আপ উইন্ডো চলে আসে। হোয়াটসঅ্যাপ তাদের শর্তে বলেছে যে এসব শর্ত যারা এক সেবা গ্রহণ করবে না তাদের হোয়াটসঅ্যাপ আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখ থেকে ব্যবহার করতে পারবে না। এইসব শর্ত ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য হবে না।
পৃথিবীতে প্রায় 200 কোটি মানুষ কল করা এবং মেসেজ আদান প্রদানের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে। হোয়াটসঅ্যাপ হচ্ছে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপটেড। অর্থাৎ এ অ্যাপের মাধ্যমে কোন কল বা বার্তা আদান প্রদান করলে সেটি হ্যাক করার সুযোগ নেই। অর্থাৎ আপনার পাঠানো বার্তা এবং কথোপকথন গোপন থাকবে। তবে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন আপডেট এর ফলে এ অ্যাপ ব্যবহারকারীদের মনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে যে, নতুন নিয়ম অনুযায়ী এসব তথ্য দেওয়া হলে গোপনীয়তা আর বজায় থাকবে কিনা?
হোয়াটসঅ্যাপ এর মালিক হচ্ছে ফেসবুক। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের কিছু তথ্য শেয়ার করতে হবে। এসব তথ্য শেয়ার না করলে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা যাবে না। সেজন্যই ব্যবহারকারীদের তথ্য দিতে বাধ্য করছে হোয়াটসঅ্যাপ। এসব শর্ত মেনে নেবার জন্য হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ ব্যবহারকারীদের ওপর চাপ তৈরি করেছে সেটি নিয়ে বিশ্বজুড়ে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। উদ্বেগের সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয়েছে এক ধরনের গুজব। যেখানে কেউ বলছে এই অ্যাপ ব্যবহার না করতে।
হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের কি ধরনের তথ্য দিতে হবে সেটি নিয়ে অনেকের মধ্যে নানা রকম প্রশ্ন আছে। যেমন ব্যবহারকারীদের নাম দিতে হবে, তার ফোন নাম্বার দিতে হবে, ফোন সেট সংক্রান্ত তথ্য দিতে হবে। যেমন ধরুন কোন কোম্পানির ফোন সেট আপনি ব্যবহার করছেন এবং সেটের মডেল কি ইত্যাদি বিষয়। এছাড়া আইপি এড্রেস ও দিতে হবে। অর্থাৎ ব্যবহারকারী কোন ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করছে বা করছেন সে তথ্য দিতে হবে হোয়াটসঅ্যাপ কে। হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে কোন আর্থিক লেনদেনের তথ্য যদি থাকে সেটি আপনাকে দিতে হবে।
নতুন প্রাইভেসি পলিসি নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছে। তারা বলছে নতুন নিয়ম কে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে নানা ধরনের গুজব তৈরি হয়েছে। অনেকে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। হোয়াটসঅ্যাপ বলছে নতুন নিয়ম অনুযায়ী কল করা এবং বার্তা আদান প্রদানের ক্ষেত্রে গোপনীয়তার কোন সমস্যা হবে না। হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে তারা ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত মেসেজ তারা দেখতে কিংবা কলের কথা শুনতে পারেন না। যারা কল করছে এবং মেসেজ আদান প্রদান করছে তাদের কোনো রেকর্ড রাখা হয় না হোয়াটসঅ্যাপ এর কাছে। এ ছাড়া হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ গুলো যেগুলো করা হয় সেগুলো গোপনীয় থাকবে, তারপর হোয়াটসঅ্যাপ থেকে মেসেজ মুছে যাওয়ার বিষয়টি সেভ করে রাখতে পারবে ব্যবহারকারীরা। তাতে করে নির্দিষ্ট সময় পর অটোমেটিক সেটি মুছে যাবে। এছাড়া ব্যবহারকারীদের লোকেশন হোয়াটসঅ্যাপ দেখতে পারবেন না।
হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে যেসব পরিবর্তন আসবে সেগুলো মূলত ব্যবসা বাণিজ্য সংক্রান্ত মেসেজ আদান প্রদানের ক্ষেত্রে হবে। এজন্য আপনাকে একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। যেমনঃ আপনারা দেখতে পান যে ফেসবুকে অনেক বিজ্ঞাপণ আসে। এসব বিজ্ঞাপণ এর অনেক জায়গায় দেখবেন যে সেই পণ্যটি ক্রয় করতে হলে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে আপনি বিক্রেতাকে মেসেজ পাঠাতে পারবেন। হোয়াটসঅ্যাপ মূলত এখান থেকে আপনার তথ্য সংগ্রহ করবে। সে ক্ষেত্রে আপনি কোন ধরনের পণ্যের আগ্রহী সেটি জানতে পারবে হোয়াটসঅ্যাপ এবং সে অনুযায়ী ফেসবুকে আপনি বিজ্ঞাপণ দেখতে পাবেন।
এক্ষেত্রে আপনি যদি একটি মোবাইল ফোন সংক্রান্ত বিজ্ঞাপণ দেখে থাকেন এবং সেটিতে ক্লিক করে যোগাযোগ করে থাকেন পরবর্তীতে ফেসবুক আপনাকে এ ধরনের বিজ্ঞাপণ বেশি পাঠাতে থাকবে।
তবে এ ক্ষেত্রে নিজের বন্ধু-বান্ধব এবং পরিচিতিদের সাথে মেসেজ করা এবং ব্যবসা বাণিজ্য সংক্রান্ত মেসেজ আদান-প্রদান করা এক কথা নয়। অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা পণ্য বিক্রির জন্য কাস্টমারদের সাথে হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকে। মূলত এ ধরনের কোনো তথ্য আদান-প্রদান হলে ক্রেতাদের আগ্রহ সম্পর্কে জানতে পারবে ফেসবুক। এক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের এ বিষয়টি জানিয়ে রাখছে যে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারিদের কোন ধরনের তথ্য শেয়ার করছে।
হোয়াটসঅ্যাপ এর নতুন নিয়ম এর ফলে অনেকেই এর বিকল্প অ্যাপসমূহ ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে অনেকেই সিগন্যাল, টেলিগ্রাম এবং বাংলাদেশে 'বিপ' জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। হোয়াটসঅ্যাপ নতুন নিয়ম ঘোষণা করার পর কয়েক দিনের মধ্যে বিশ্বজুড়ে সিগন্যাল এবং টেলিগ্রাম ডাউনলোডের হিড়িক পড়ে গেছে। বেসরকারি ডেটা বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্সর টাওয়ারের হিসেব মতে হোয়াটসঅ্যাপ নতুন নিয়ম ঘোষণা দেবার আগে সিগনাল ডাউনলোড করা ছিল ২ লক্ষ ৪৬ হাজার বার, কিন্তু এরপরে এক সপ্তাহের সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮ লক্ষ বার। সিগন্যাল সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হয়েছে ভারতে। সেখানে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ হাজার থেকে বেড়ে ২৭ লক্ষ হয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে যোগাযোগের অ্যাপ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হয়েছে টেলিগ্রাম। এক সপ্তাহের মধ্যে বেশি ডাউনলোড হয়েছে ৪৫ লক্ষ বার, অন্যদিকে এ সময়ের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপ ডাউনলোড ২ মিলিয়ন বা ২০ লাখ কমে গেছে। কিন্তু তারপরও ব্যবহারকারীদের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে একটি জনপ্রিয় যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে থাকবে বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
তবে আপনি যদি একজন হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে আমি আপনাকে সাজেস্ট করব অন্য কোন অ্যাপ ব্যবহার করতে। এক্ষেত্রে আমি আপনাকে মুসলিম 'বিপ' বিশ্বের অ্যাপ ব্যবহার করে তোকে বলবো। এই আপনি হোয়াটসঅ্যাপ এর চাইতে অনেক আকর্ষণীয় এবং smooth। যেটি আপনি হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইমু এর চাইতে স্বাচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারবেন। আপনি চাইলে এই অ্যাপটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
বন্ধুরা এই ছিল হোয়াটসঅ্যাপ সম্পর্কে আজকের টিউন। আশা করছি টিউনটি আপনাদের কাছে অনেক ভালো লেগেছে। টিউনটি ভালো লাগলে জোসস করতে ভুলবেন না। তবে দেখা হচ্ছে পরবর্তী টিউনে আরো নতুন কিছু নিয়ে ইনশাআল্লাহ। সম্পূর্ণ টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)