আমার ধারনা সবার এই টিউন টা পরা উচিত । সময় খুব কম আমাদের হাত এ । যা করার এখনি করতে হবে । বাচতে হলে জানতে হবে ।
পুরোটাই কপি পেস্ট করা । মূল পোস্ট http://www.muktoblog.com/details.php?un=sayedurchowdhury&pid=3786 লিখেছেন সাইদুর রহমান চৌধুরী
সারা বিশ্ব দুই দিন ধরে উৎকন্ঠিত হয়ে অপেক্ষা করছে জাপানী বিশেষজ্ঞরা ও সামরিক বাহিনী আরেকটি চেরনোবিল বিভিষীকা এড়াতে পারলো কিনা তা দেখার জন্য। সেদিনের ভুমিকম্প ও সুনামীর আঘাতে জাপানের ফুকুশিমায় অবস্থিত একটি আণবিক শক্তি কেন্দ্রের একটি আনবিক চুল্লি ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং চুল্লির অভ্যন্তরভাগকে নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় রাখার জন্য যে ঠান্ডাকরণ ব্যবস্থা তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছে। গতকাল নাগাদ সেখানে একটি বড়রকমের বিস্ফোরন হয়ে বেশ খানিকটা তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ বাইরে চলে এসেছে, মূল চুল্লিটি এখনো অক্ষত থাকলেও তা নিয়ন্ত্রনে আসবে নাকি চেরনোবিলের মতো মেল্ট-ডাউনের শিকার হবে এ নিয়ে সারা পৃথিবীর বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেক রকমের জল্পনা-কল্পনা ও হিসাব-নিকাশ চলছে। ইতিমধ্যে জাপান সরকার কেন্দ্রের ২০ মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকা সব মানুষকে সরিয়ে নেয়ার কাজ করছে।
জাপানের এই দুর্ঘটনাটি একেবারেই প্রাকৃতিক, এখনো পর্যন্ত কারো দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা বা ডিজাইনের ত্রুটিকে দায়ী করার মতো আলামত পাওয়া যায়নি। অপরপক্ষে ১৯৮৬ সনে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমানে ইউক্রেন) চেরনোবিলে সংঘটিত ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক চুল্লি দুর্ঘটনাটি ঘটেছিলো প্রধানত এর চালকদের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত, কিছু ডিজাইন ক্রুটি ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশনের অভাবে (অতিরিক্ত গোপনীয়তা)।
চেরনোবিল দুর্ঘটনায় তাৎক্ষনিক ও কিছু দিনের মধ্যে মারা পড়েন প্রায় দশ হাজার মানুষ, লাখে লাখে মানুষ ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, শিশুরা ব্যাপকহারে লিউকেমিয়ার শিকার, বিকলাঙ্গ ও বিভিন্ন আরোগ্যহীন ব্যাধি নিয়ে এখনো জন্ম নিচ্ছে শিশুরা, গোটা একটি নগরী চিরদিনের মতো পরিত্যাক্ত ঘোষণা করতে হয়েছে।
আমেরিকার পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের থ্রী-মাইলস আইল্যান্ডে ১৯৭৯ সনে প্রায় চেরনোবিলের মতোই আংশিক মেল্ট-ডাউন হয়, প্রাণহানী এড়ানো গেলেও প্রচুর মানুষ উচ্চমাত্রার তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের শিকার হয়ে পরবর্তিতে ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়, যার হিসাবও এমনকি ঠিকভাবে করতে পারেনি কর্তৃপক্ষগুলো। তাৎক্ষণিক ৫ মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিতে হয়।
দুর্ঘটনা ঘটার পর চেরনোবিল ও থ্রী-মাইলসের দুটো কেন্দ্রই পরিত্যাগ করতে হয়, এর অর্থনৈতিক মূল্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। জাপানে যদি সেরকম কিছু ঘটে যায় বাকী ৪/৫টি চুল্লি চালু থাকবে নাকি পুরো বিদ্যুৎ কেন্দ্রই পরিত্যাক্ত ঘোষণা করতে হবে তা পরিস্থিতিই বলে দেবে।
এখন দৃষ্টি ফেরানো যাক বাংলাদেশের দিকে। কিছু বছর যাবৎই দেশের ক্রমাবনতিশীল বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিস্থিতির কারণে মাঝে মাঝেই আলোচনায় উঠে আসে একটি পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার কথা। অগ্রগতি খুব ধীরে ধীরে হলেও লক্ষ্যটির দিকে যে বাংলাদেশ নিশ্চিতই এগোচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। এক মাসও হয়নি রাশিয়ার সাথে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের, ২০১৭/১৮ সালের মধ্যে রূপপুরে একটি ১ হাজার মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার করার জন্য (সূত্র: রয়টার্স)। খরচ হবে প্রায় ১৫,০০০ কোটি টাকা। দুই বিলিয়ন ডলারের প্রজেক্টের উপর আমি আমার দুই পয়সার একটি প্রশ্ন করতে চাই – Can we afford a nuclear power plant?
Afford করা বলতে এই দুই বিলিয়ন ডলার নিয়ে প্রশ্ন করছিনা, এই দুই বিলিয়ন যেভাবেই হোক সরকার জোগাড় করবে। কিন্তু –
ক) আমরা কি জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাবার মতো দক্ষ হয়েছি? যেখানে আমাদের প্রচলিত তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অনেকগুলোর মূল নিয়ন্ত্রন চীনা প্রকৌশলীদের হাতে থাকে, এখানেও নিশ্চিতভাবে তা থাকবে রাশান প্রকৌশলীদের হাতে। কিন্তু এরা কি সেই একই প্রকৌশলীরা নয় যারা পৃথিবীর ভয়াবহতম দশটি পারমাণবিক দুর্ঘটনার ৪টি ঘটিয়েছে? এদের রেকর্ড পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। তারচেয়েও বড় কথা প্রকৌশলীই শেষ কথা নয়, একটি দেশের সাপোর্ট-ইনফ্রাস্ট্রাকচার হলো বড় কথা, একটি আণবিক জরুরী পরিস্থিতি উপস্থিত হলে তাকে মোকাবেলার মতো দক্ষ লোকবল ও অন্যান্য সুযোগ কি বাংলাদেশের আছে? যেই দেশে রেললাইনের উপর বাস উঠে পড়ে ট্রেন যাবার ১৫ সেকেন্ড আগে, যেই দেশে প্রতিদিন বাস-বা ট্রাক চাপা দিয়ে যায় কোন না কোন নিরীহ প্রাণ, সেই দেশে পারমাণবিক কেন্দ্রকে দায়িত্বশীলরা একটু বেশি মনোযোগ দিলেও একটা না একটা সময় দায়িত্ব পালনে ঢিলেমি দেবেই, এবং সেদিনই জন্ম হতে পারে পৃথিবীর ভয়াবহতম পারমাণবিক দুর্ঘটনার।
খ) চেরনোবিলের ৮০ কিলোমিটারের মধ্যে কোন স্বাভাবিক লোকবসতি ছিলোনা, তারপরও প্রাণহানী হয়েছে দশ হাজার, রোগাক্রান্ত লাখ লাখ। আমাদের দেশে এমন একটিও কি স্থান আছে যার ৮০ কিলোমিটারের মধ্যে বসতি নেই? রূপপুরের ৫০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে কত লোক বাস করে একটু সময় নিলে একটা হিসাব বের করতে পারবো, তবে সময় না নিয়েও আন্দাজ করতে পারি তিন লাখের কম নয় (বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ১১০০ মানুষ বাস করে)। চেরনোবিল বা থ্রী-মাইলসের মতো মেল্ট-ডাউন ঘটলে ২/৩ দিনেই মানুষ মারা পড়তে পারে একলাখ, পরবর্তী ১০ বছরে ধুঁকে ধুঁকে মারা যেতে পারে আরো দশলাখ, পরবর্তী ২০/৩০ বছরে বিকলাঙ্গ ও রোগাক্রান্ত শিশুর জন্ম হতে পারে আরো দশ-বিশ লাখ? Can we afford that? তা-ও মাত্র এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য? আর ততদিনে ১৫,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ উঠে আসবে তো?
গ) এটা সত্য বাংলাদেশ দূর্যোগের দেশ, অত্যন্ত সফলভাবে আমরা আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে বিশ্ববাসীর দৃষ্টিও আকর্ষন করেছি। কিন্তু সাইক্লোন আর পারমাণবিক চুল্লির দুর্ঘটনাকে এক করে দেখার বোধ হয় কোনই সুযোগ নেই। এমনকি আমরা বন্যা ও সাইক্লোন ছাড়া অন্য কোন বড় দুর্যোগে (যেমন: ভুমিকম্প বা সুনামী) এখনো পরীক্ষিত নই। সাইক্লোন ও বন্যা দুটোই যথেষ্ঠ প্রস্তুতির সময় দিয়ে আসে, ভুমিকম্প আসে কোন নোটিস ছাড়া, সুনামী আসে কিছু মিনিট থেকে কয়েকঘন্টার নোটিসে। সাইক্লোনে মানুষ সরাবার জন্য সময় পাওয়া যায় প্রায় ২ দিন, দূরে কোথাও সরাতে হয়না, একই এলাকার আশ্রয় কেন্দ্রে তুলে দিতে পারলেই নিরাপদ। কিন্তু পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটলে হয়তো সময় পাওয়া যাবে মাত্র কয়েকঘন্টা, লাখ লাখ লোক সরিয়ে নিতে হবে অনেক দূরের কোন এলাকায়, এবং দুর্ঘটনা ঘটে যাবার অন্তত ৫০ বছরের মধ্যে সেখানে তারা আর কোনদিন ফিরতে পারবে না। ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা সকল প্রকার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য ৫০/৬০ বছর পরিত্যাক্ত ফেলে রাখার মতো বিলাসিতা কি আমরা অ্যাফোর্ড করতে পারবো? কয়েকঘন্টার মধ্যে ৩ লাখ লোক সরাবার মতো দক্ষতা কি গোটা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীরও আছে? বাস্তব সত্য হলো, হুড়োহুড়িতে যে ট্রাফিক জ্যাম হবে তাই সরাবার মতো সড়কব্যবস্থা ও দক্ষতা বাংলাদেশের নেই।
ব্যক্তিগতভাবে আমি বাংলাদেশে পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে নই। আমি বিশ্বাস করি এখনই এর বিরুদ্ধে দেশের মানুষের অবস্থান নেয়া উচিত। আমি জানি বাংলাদেশের জ্বালানী সমস্যা অত্যন্ত প্রকট, ভবিষ্যতও নাজুক, কিন্তু চমকের পরিবর্তে প্রচলিত পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াবার চেষ্টা আন্তরিকভাবে করলে কিছুই ফলাফল পাওয়া যাবে না তা মনে করিনা। পরিবেশগত সমস্যা ও আন্তর্জাতিক বিরূপ প্রতিক্রিয়া হলেও গ্যাসের পাশাপাশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অধিক গুরুত্ব পাওয়া উচিত – পারমাণবিক টাইম-বম্ব নয়।
আমি আহত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 22 টি টিউন ও 541 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
"As long as I have a want, I have a reason for living. Satisfaction is death."
চমতকার যুকতি । ১০০% সহমত