কিছুদিন হলো বাংলাদেশে ৪জি নেটওর্য়াক এসেছে। আর অন্যদিনে ব্রন্ডবান্ড নেটেও এখন আপনি পাচ্ছেন ১০জি প্রযুক্তি নেট সুবিধা। আগে ১২০০ বা ১৩০০ টাকায় যেখানে ২ এমবিপিএস এর লাইন পেতেন এখন সেখানে ১২ মেগাবাইট এর লাইন পাবেন। আর ৪জি মোবাইল নেটওয়ার্ক এর স্বাদ নিতে আপনাকে আপনার সিমকে ৪জি সিমে বদলে নিতে হবে। কিন্তু তথ্য প্রযুক্তির সীমা কিন্তু এখানেই থেমে থাকবে না। হ্যাঁ। আসছে ৫জি নেটওর্য়াক। আপনি রেডি তো?
5G বা পঞ্চম প্রজন্মের তারহীন নেটওর্য়াক সিস্টেমকে আপনার মূলত একটি ইন্টারনেট স্পিড আপগ্রেড হিসেবে মনে হতে পারে এবং এটা স্বাভাবিক। কিন্তু একই সাথে এর মাধ্যমে আমাদের তথ্য প্রযুক্তি একটি নতুন যুগে প্রবেশ করবে। আমরা বর্তমান আধুনিক যুগ থেকে তথ্য প্রযুক্তির অত্যাধুনিক যুগে প্রবেশ করবো ৫জির মাধ্যমে। ৫জি প্রযুক্তি চালু করার জন্য প্রথমেই দরকার হবে কোটি কোটি নতুন এনটেনা এবং ৫জি সার্পোটেড লক্ষাধিক স্মার্ট ডিভাইস। আর একই সাথে ৫জির মাধ্যমে AI বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রথমবারের মতো তার পূর্ণরূপ প্রকাশ করবে।
ইন্টারনেট স্পিডের পাশাপাশি এই বাকি সব ব্যবসার কারণে ৫জি হতে যাচ্ছে পৃথিবীর সবথেকে লাভজনক ব্যবসা খাত। বলা হচ্ছে যে এটি ইলেক্ট্রিসিটির থেকে বেশি লাভ কামাই করতে পারবে। ২০৩৫ সালের মধ্যে ৫জির মাধ্যমে প্রায় ১২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার কোম্পানিগুলো আয় করতে পারবে বলে জরিপে জানা গিয়েছে। আর ৫জি প্রযুক্তির সর্বপ্রথম ইউজার হবে পৃথিবীর সিকুরিটি ফোর্স সংস্থাগুলো। হ্যাঁ সাধারণ পাবলিকদের কাছে উন্মুক্ত করে দেবার পূর্বে যাতে ৫জির মাধ্যমে ক্রিমিনাল এক্টিভিটি বেড়ে না যায় সেজন্য প্রথমে সিকুরিটি সংস্থাগুলোকে ৫জির আওতায় আনা হবে তারপরেই সাধারন জনগণের জন্য ৫জি উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। কবে? খুবই শীঘ্রই।
এ বছরের শেষের দিকে কিছু নির্দিষ্ট শহরে ৫জি নেটওয়ার্ক পরীক্ষা মূলক ভাবে শুরু হবে আর আমরা ২০২০ সাল নাগাদ ৫জি সার্পোটেড স্মার্টফোন পেতে যাচ্ছি। তবে এ ক্ষেত্রে চীন, জাপান এবং সাউথ কোরিয়া অনান্য দেশের থেকে ৫জি প্রযুক্তি ডেভেলপে এগিয়ে রয়েছে তার মানে এইসকল দেশে বিশ্বের সবার আগে ৫জি নেটওয়ার্ক চালু হতে যাচ্ছে। ইত্যিমধ্যেই সাউথ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত এ বছরের উইন্টার অলিম্পিক গেমসের ক্যামেরা সিস্টেম নিয়ন্ত্রণে পরীক্ষামূলকভাবে ৫জি নেটওর্য়াক ব্যবহার করা হয়েছে।
UN একটি সংস্থ্যা দ্যা ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (ITU) ২০১২ সাল থেকে ৫জি গিয়ে গবেষণা করে আসছে। আর তাদের মধ্যে ৫জি এর নেট স্পিড নুন্যতম 20Gb/s (১০০ মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ড ডাউনলোড স্পিড) হবে। আর আপলোড স্পিড হবে নুন্যতম 10Gb/s (৫০ মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ড আপলোড স্পিড)। এছাড়াও প্রতি স্কোয়ার মিটারে ১০০টি ডিভাইস সার্পোট এবং প্রতি বর্গ কিলোমিটার এরিয়ার ৫জি নেটওর্য়াক প্রায় ১ মিলিয়ন ডিভাইস সার্পোট করতে সক্ষম হবে।
বর্তমানে ৪জি প্রযুক্তিতে আমরা 100Mb/s গতির ডাউনলোড এবং 50Mb/s গতির আপলোড স্পিড উপভোগ করতে পারছি। আর আমেরিকার T-Mobile পৃথিবীর সবথেকে ফার্স্ট গতির ৪জি নেটওর্য়াক বহন করছে যেখানে T-Mobile ব্যবহারকারীরা প্রতি সেকেন্ডে ১৯.৪ মেগাবাইট স্পিডে ডাউনলোড করতে পারছেন। অন্যদিকে আমেরিকার আরেকটি মোবাইল নেটওর্য়াক কোম্পানি Verizon এর রয়েছে 17.8Mb/s গতি ডাউনলোড স্পিড। আর এখনই কোয়ালকোম তাদের ৫জি স্মার্টফোনের জন্য যে নেটওয়ার্ক চিপ বানাচ্ছে সেখানে 5Gb/s গতির স্পিড আমরা ব্যবহার করতে পারবো বলে বলা হচ্ছে।
৫জি প্রযুক্তি আমাদের জন্য তিনটি সুবিধা নিয়ে আসবে। ১) সার্বিক নেটওর্য়াক ব্রান্ডউইথ অনেক বেড়ে যাবে। মানে লক্ষাধিক নতুন ডিভাইস আমরা ৫জিতে ব্যবহার করতে পারবো যেগুলো বর্তমান নেটওর্য়াকে চালানো অসম্ভব। ২) ল্যাটেন্সির পরিমাণ অনেক কমে যাবে। 1ms বা ১ মিলিসেকেন্ডের ল্যাটেন্সি হবে। যারা অনলাইন গেমিং এর সাথে সংযুক্ত তারা ল্যাটেন্সির কাজ জানবেন। এর মাধ্যমে সকল গেমিং সার্ভারে আপনার পিং (ping) থাকবে সবসময় ০ বা ১। আর ৩) ৫জির মাধ্যমে স্মার্টফোনের কোয়ালিটি আরো বহুগুণে বেড়ে যাবে কারণ ৫জি নেটওর্য়াক স্মার্টফোনের ব্যাটারীর উপর সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলবে না যার মাধ্যমে স্মার্টফোনের ব্যাটারী লাইফ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
এছাড়াও ৫জির মাধ্যমে আপনি 4K কোয়ালিটির একাধিক ভিডিও ল্যাগ বিহীনভাবে স্ট্রিমিং করতে পারবেন। সেখানে ১ গিগবাইটের একটি ফাইল নেট থেকে নামাতে এখন ১ বা ২ মিনিট অপেক্ষা করতে হয় সেখানে ৫জিতে আপনি ১ গিগাবাইটের একটি ফাইল নেট থেকে ৫ সেকেন্ডের মধ্যেই নামিয়ে ফেলতে পারবেন!
৫জি প্রযুক্তির স্মার্টফোনে Wi-Fi অপশনটি আর ব্যবহার করার প্রয়োজন হবে না। কারণ ৫জি প্রযুক্তিতে তারা ফাস্টার ব্রাউজিং, ফাস্টার ডাউনলোডস, সবথেকে বেস্ট কোয়ালিটির ভিডিও কলিং, UHD এবং 360 Degree ভিডিও স্ট্রিমিং করতে পারবেন এবং ইন্সট্যান্ট ক্লাউড একসেস এর মাধ্যমে ৫জির মাধ্যমে আপনি ইন্টারনেটে ফ্রি অডিও কল করতে পারবেন। মানে ৫জিতে এখন থেকে আর মোবাইল নেটওর্য়াক ব্যবহার করে কাউকে টাকা খরচ করে ফোন দেবার প্রয়োজন হবে না।
আর এর মাধ্যমে হাই কোয়ালিটি ভিডিও কনফারেন্স, VR, AR এবং XR প্রযুক্তিতে আরো অনেক উন্নত ফিচার আনবে এবং একই সাথে এদের কে lower cost য়ে পরিণত করে ফেলবে।
আর সবথেকে মজার ব্যাপার হলো 5G প্রযুক্তিতে মোবাইল ব্রডব্যান্ডে কোনো FUP থাকবে না। মানে এখন আপনি ব্রডবান্ডের মতোই আনলিমিটেড ইন্টারনেট মোবাইল নেটওর্য়াকেই উপভোগ করতে পারবেন। তবে বাংলাদেশে এটা চালু হবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে!
এছাড়াও AI সম্বলিত রোবটদেরকে ৫জির মাধ্যমে এবার সরাসরি সাধারন মানুষদের মাঝে ট্রাফিক পুলিশের বিকল্প হিসেবে নামানো হতে পারে। তবে এখানে একটি কথা হলো ৫জির জন্য বর্তমান প্রযুক্তির মোবাইল কোম্পানিগুলোর অনেক ধরনের আপগ্রেডের কাজ করতে হবে। তবে বিশ্বের উন্নত দেশের মোবাইল কোম্পানিগুলো ২০১৯ সালের মধ্যেই ৫জি উন্মুক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছেন এবং আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বিশ্বের ২০% লোক ৫জি প্রযুক্তি ব্যবহার করা শুরু করতে পারবে বলে জানিয়েছে Ericsson কোম্পানি।
৫জির ১ মিলিসেকেন্ডের লেটেন্সি শুধুমাত্র গেমিং এ সুবিধা আনবে না বরং এটি ফিউচারিস্টিক বিভিন্ন প্রযুক্তিকেও বাস্তবে রূপ দেবার জন্য সাহায্য করবে। যেমন পুলিশে মানুষের বদলে সম্পূর্ণভাবে AI এবং মানুষ নিয়ন্ত্রিত রোবট বাসানো হবে। ব্রেইন কম্পিউটার চীপ সঠিক ভাবে কাজ করার জন্যেও এই লেটেন্সির প্রয়োজন হবে। এছাড়াও পুলিশ এবং মিলিটারীদের জন্য বিভিন্ন এডভান্স রোবোটিক এবং AR জাতীয় ফ্যান্টাসি ফিচারগুলে ৫জির মাধ্যমে বাস্তব রুপ দেওয়া সম্ভব। জমিতে এখন কৃষকের বদলে সেলফ ড্রাইভিং ট্রাক্টর থাকবে, পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশনগুলোতেও থাকবে AI নিয়ন্ত্রিত ড্রাইভার ইত্যাদি।
তবে আজকের টিউনে আমি সম্পূর্ণ ৫জি নিয়ে বলতে পারিনি কারণ বিষয়টি এখনো নির্মানাধীন অবস্থায় রয়েছে। এখানে আমি শুধু ৫জি সম্পর্কে আপনাদেরকে শুধু সাধারণ মানের একটি ট্রেইলার দিলাম। ৫জির আসল স্কোপ এর থেকেও অনেক বড়। দেখা যাক বাংলাদেশে কত বছরের ব্যবধানে ৫জি আসে আর সেই FUP বিহীন নেট সেবা আসলেই কেউ দেয় কিনা সেটা একটি দেখার বিষয়। আজ তাহলে এ পযর্ন্তই থাক। আগামীতে অন্য কোনো টপিক নিয়ে আমি টিউনার গেমওয়ালা চলে আসবো আপনাদেরই প্রিয় বাংলা টেকনোলজি কমিউনিটি প্লাটফর্ম টেকটিউনসে! টিউন ভালো লাগলে জোস বাটন প্রেস করতে ভূলবেন না যেন।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!
অসম্ভব সুন্দর একটি টিউন, আপনাকে ধন্যবাদ না দিয়ে থাকতে পারলাম না। আপনার কাছ থেকে সব সময় এমন অসাধারণ,তথ্য বহুল টিউন চাই।