বিশ্বের অন্যতম মোবাইল গুরু Samsung সম্পর্কে সেই সব অজানা তথ্য যা এর আগে আপনাকে কেউ বলেনি!

টিউন বিভাগ খবর
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

বিশ্বের সফল মোবাইল ফোন কোম্পানি কতটি রয়েছে? অ্যাপল, স্যামসং, নোকিয়া, হুয়াওয়ে এদের নাম অবশ্যই চার্ট লিস্টে আসবে। আর স্যামসং তাদের লিস্টে অবশ্যই থাকবে। স্যামসং বিশ্বের অন্যতম সফট মোবাইল ফোন কোম্পানির মধ্যে একটি অন্যতম। আর সাউথ কোরিয়ার সবথেকে বড় মোবাইল ফোন কোম্পানি এটি। আপনি অ্যাপলের ফ্যান হোন বা অন্য কোনো অ্যান্ড্রয়েডের ফ্যান হোন না কেন! আপনাকে অবশ্যই স্যামসংয়ের সাফল্যকে সম্মান জানাতেই হবে। স্যামসং শুধু মোবাইল ফোনের সীমাবদ্ধ নয়, বেশ কয়েক প্রকারের ইলেক্ট্রনিক পণ্য, ইন্সুরেন্স সার্ভিস সহ তাদের নিজেদের দেশে বেশ কিছু সমাজ সেবামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আজকের টিউনে আমি টিউনার গেমওয়ালা আপনাদেরকে স্যামসংয়ের সম্পর্কে ১৫টি তথ্য বলতে এসেছি যেগুলো হয়তো আপনার জানা নেই। স্যামসং কোম্পানিটি প্রায় ৭৯ বছর আগে ১৯৩৮ সালে Lee Byung-chul স্যামসং কোম্পানিটি একটি ট্রেডিং কোম্পানিং হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী তিন দশকে কোম্পানিটি বিভিন্ন অনান্য সেক্টরে যেমন ফুড প্রসেসিং, টেক্সটাইলস, ইন্সুরেন্স, সিকুরিটিস এবং রিটেইলসের ব্যবস্যা শুরু করে। ১৯৭০ সালের প্রথম দিকে স্যামসং ইলেক্ট্রনিকস এর জগতে প্রবেশ করে। ১৯৮৭ সালে কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুর পর স্যামসং বেশ কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায় এবং ১৯৯০ এর দশকে স্যামসং শুধুমাত্র ইলেক্ট্রনিকস এর দিকে পুরো নজর দেওয়া শুরু করে। তো স্যামংয়ের ইলেক্ট্রনিকস এর যাত্রা শুরু হয় ৬০ এর দশকে সাদা কালো টিভি বানানো দিয়ে আর তারা বাজার বাজিমাত করা শুরু করে তাদের স্মার্টফোনগুলো দিয়ে। বিশ্বের তাদের স্মার্টফোনেই সর্বপ্রথম ওয়্যারলেস চাজিং ফিচারটি আনা হয়েছিল।  তো চলুন দেখে নেই স্যামসং সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য:

১) তিন তারকা!

স্যামসং নামের অর্থ জানেন? হয়তো ভাবছেন এটি কোনো চায়নিজ শব্দ! কিন্তু না। Samsung এর মানে হচ্ছে Three Stars বা তিন তারকা! কোরিয়ান দুটি শব্দ Sam (Three) এবং Sung (Stars) থেকে এটির উৎপত্তি। কোম্পানির এই নামটি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা সেই ১৯৩০ এর দশকে পছন্দ করেছিলেন কারণ তার কাছে মনে হয়েছিল এটি কোম্পানির শুভ ভাগ্যে নির্দেশ করবে। বলা বাহুল্য যে কোরিয়ান ভাষায় তিন বা Three কোনো প্রকারের বড় এবং পাওয়ারফুল কোনোকিছুর ইঙ্গিত রেখে থাকে। তাই কোম্পানির নাম স্যামসং বা তিন তারকা রাখা হয়েছিল।

২) লক্ষাধিক প্যাটেন্টস!

বর্তমানে স্যামসং বিশ্বব্যাপী লক্ষাধিক প্যাটেন্টস এর মালিক হিসেবে রয়েছে। বিশ্বে প্যাটেন্স এর সবথেকে বেশি মালিকানার রেকর্ডে স্যামসং ২০১৫ সালে IBM কোম্পানিকে পেছনে ফেলে বিশ্বের সর্বাধিক প্যাটেন্টস এর অধিকারী হিসেবে রয়েছে প্রায় তিন বছরের অধিক সময় ধরে। এছাড়াও অ্যাপল, নোকিয়া, এলজির থেকে আমেরিকায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি স্যামসংয়ের প্যাটেন্টস রয়েছে। ‍

৩) দান

আপনি কি জানেন? স্যামসং প্রতি বছর প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার দান করে থাকে এর নন-প্রোফিট মেডিকাল চেরিটি তে। স্যামসং কোম্পানি তাদের চ্যারিটিমূলক কাজ কর্মের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রসংশিত হয়ে আসছে। তাদের প্রধান চ্যারিটির উৎস হলো স্যামসং মেডিক্যাল সেন্টার যেটি সম্পূর্ণ একটি নন প্রফিটেবল কোম্পানি। স্যামসং মেডিক্যাল হলো কয়েকটি বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সমষ্ঠি যাদের মধ্যে এশিয়ার বৃহত্তম ক্যান্সার সেন্টারটিও রয়েছে।

৪) নুডলস কোম্পানি!

স্যামসং শুরুর দিকে নুডলসের ট্রেডিং কোম্পানি হিসেবে কাজ শুরু করেছিল। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠার সময় স্যামসং ছিলো একটি ছোটখাট ট্রেডিং কোম্পানি যেটা নুডলসের উপর স্পেশালাইজড ছিলো! এছাড়াও তারা শুঁকটি মাছ এবং লোকাল রাইসেরও ট্রেডিং কোম্পানি হিসেবে নিজেদের পরিচিতি বাড়িয়ে তুলতে থাকে। কোম্পানিটি পরবর্তীতে এদের কার্যক্রম ইন্সুরেন্স এবং রিটেইলসেও বাড়িয়ে দেয়। এরা ১৯৬০ সালের আগ পর্যন্ত ইলেক্ট্রনিসকের দিকে এগোয় নি। ৬০ এর দশকে টিভি রেডিও সহ অনান্য ইলেক্ট্রনিকস পণ্যের কদর বাড়া শুরু করলে তারা ইলেক্ট্রনিকসের দিকে আগ্রহী হয়ে উঠতে শুরু করে।

৫) ধনী পরিবার

স্যামসং একটি সাউথ কোরিয়ান কোম্পানি। সাউথ কোরিয়ার GDP তে প্রায় ৮৫% ভূমিকা রেখে থাকে। আর যে পরিবারটি স্যামসং কোম্পানির মালিক সেটি সাউথ কোরিয়ার সবথেকে ধনী পরিবার হিসেবে রয়েছে অনেক বছর ধরেই। স্যামসং কোম্পানিটি সাউথ কোরিয়ার জে ইয়ং ফ্যামিলির অধীনে রয়েছে আর স্যামসংয়ের তুমুল সাফল্যের কারণে তারা আজ সাউথ কোরিয়ার শীর্ষ ধনী পরিবার। সাউথ কোরিয়ার ২য় শীর্ষ ধনী পরিবারের থেকে প্রায় দ্বিগুণ পরিমানের সম্পদের ব্যবধানে তারা শীর্ষ স্থানে রয়েছে।

৬) বিমান!

স্যামসং ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ দশক পর্যন্ত বিমান বা Aircraft নির্মাণ করেছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্যামসং ইলেক্ট্রনিকসের উপরই হাত দেয়নি। বরং আজ পর্যন্ত স্যামসং বহু প্রকার ভিন্ন ভিন্ন ইন্ড্রাট্রিসে তার আধিপত্য রেখে আসছিলো। তবে এসবের মধ্যে আপনি একটি জিনিস শুনলে বেশ হবার হবেন যে স্যামসং প্রায় ১০ বছর যাবৎ মিলিটারী যুদ্ধ বিমান তৈরি করে আসছিলো। বর্তমানে সরাসরি এয়ারক্রাফটস না নির্মাণ করলেও স্যামসং বর্তমানেও এয়ারক্রাফটসের ইঞ্জিন নির্মাণ করে থাকে।

৭) ২.৫ বিলিয়ন ডলারের জরিমানা!

আপনি জানেন কি স্যামসং অ্যাপলের দ্বারা ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের জরিমানার মামলা খেয়েছিলো? ২০১২ সালে অ্যাপল তাদের স্মার্টফোন টেকনোলজির ৬টি কোডের ভায়োলেশন করার জন্য স্যামসংয়ের বিরুদ্ধে এই মামলা করেছিলো। তবে মামলাটি অনিষ্পত্তিত অবস্থায় শেষ হয়ে পড়ে।

৮) ব্রান্ড!

স্যামসং তার ব্রান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে বরবরেই কোনো কমতি রাখে না। আমেরিকান হলিউডের বিভিন্ন সেলিব্রিটিরা চড়া মুল্যে স্যামসংয়ের ব্রান্ড মেম্বার হয়ে আছেন। তবে তাদের বেশির ভাগই কোনো না কোনো ভাবে আইফোন ইউজার বলেও মিডিয়ার কাছে ধরা খেয়েছেন! এদের মধ্যে রয়েছেন লিব্রন জেমস, জেসিকা অ্যালবা, এডাম লিভিন, এলিশা কীস, এল্যান্ড জেনারেস, অপরাহ উইফ্রি সহ বিভিন্ন হলিউডের তারকারা একসময় স্যামসংয়ের ব্রান্ড মেম্বার ছিলেন। কিন্তু মিডিয়ার কাছে তারা আইফোনের ব্যবহারকারী হিসেবে একের পর এক ভাবে ধরা খেয়ে যাওয়ায় মেম্বারশীপ হারিয়ে ফেলেন স্যামসং থেকে।

৯) একদিনে ৫০ মিলিয়ন!

একদিনে স্যামসং কোম্পানির সিইও প্রায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্যকে আগুণে জ্বালিয়ে ফেলেছিলেন! ১৯৯৫ সালে স্যামসংয়ের সিইও কুন হি লি তাদের ফ্যাক্টরিতে পণ্য সামগ্রী দেখতে যাবার পর পণ্যের নিম্ন মানের কারণে প্রায় ২০০০ কর্মীর সামনে প্রায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য (মোবাইল, টিভি এবং ফ্যাক্স মেশিন) আগুণে পুরিয়ে ফেলেন। তখন থেকে স্যামসংয়ের ১ নম্বর বিষয় হচ্ছে কোয়ালিটি!

১০) FUBU!

স্যামসং জনপ্রিয় কোম্পান্টি ফুবুতে অনেক পরিমাণ অর্থ ইনভেস্ট করেছে। ফুবু হচ্ছে একটি আমেরিকান কাপড়ে কোম্পানি যারা মূলত ক্যাজুয়্যার, স্পোর্টস এবং স্যুট তৈরি করে থাকে। এছাড়াও চোখের চশমা, বেল্টস এবং জুতোও নির্মাণ করে থাকে। ফুবু ১৯৯২ সালে ডেমন্ড জনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আর তখন থেকেই স্যামসং এই ফুবু কোম্পানির ইনভেস্টর হিসেবে রয়েছেন।

১১) উচ্চতম বিল্ডিং

পৃথিবীর উচ্চত বিল্ডিং হলো সৌদি আরবের বুর্জ খালিফা। ৮২৯.৮ মিটার লম্বা এই বিল্ডিংটির নির্মাণে স্যামসংয়েরও বিপুল পরিমাণের ইনভেস্টমেন্ট রয়েছে। কারণ এই বিল্ডিং নিমার্ণ করেছে Samsung C&T কোম্পানি! এই কোম্পানিটি স্যামসং গ্রুপের একটি ডিভিশন যেটি গ্লোবাল ইঞ্জেনিয়ারিং এবং কন্সট্রাকশন সেক্টরে নিজেদের সেবাসমূহ দিয়ে থাকে!

১২) প্রচারেই প্রসার!

স্যামসং প্রচারেই প্রসার কথাটিতে ব্যাপক ভাবে বিশ্বাস করে থাকে! তাইতো স্যামসং প্রতি বছরে বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণের অর্থ শুধুমাত্র মার্কেটিং এবং এডভারটাইজিংয়ের পেছনে খরচ করে থাকে। তবে এটা ঠিক যে বিশ্বের সকল ব্যবস্যা সফল কোম্পানিগুলোকে তাদের বাজেটের একটি অংশকে মার্কেটিং এবং এডভারটাইজিংয়ের জন্য বরাদ্দ রাখতে হয়। তবে এক্ষেত্রে স্যামসং কোনো অংশেই কিপটেমি করে না! যেমন ২০১৩ সালে স্যামসং প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এডভারটাইজিং এবং আরো ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার শুধুমাত্র জেনারেল মার্কেটিং সেক্টরে খরচ করেছিল!

১৩) আইফোনের সাপ্লাইয়ার!

আপনি জানেন কি? স্যামসং হলো আইফোনের কম্পোনেন্টস এর জন্য অ্যাপলের টপ সাপ্লাইয়ার! জ্বি হ্যাঁ! আইফোন অ্যাপল কোম্পানির ফোন হলেও এর মধ্যে হার্ডওয়্যার সম্পর্কিত কম্পোনেন্টসগুলোকে স্যামসংই অ্যাপলকে সরবরাহ করে থাকে! এটি সম্প্রতি সময়ের থেকে নয়, বরং আইফোনে নির্মাণের শুরু থেকে স্যামসং অ্যাপল কোম্পানিকে হার্ডওয়্যার কম্পোনেন্টস সাপ্লাই করে দিয়ে আসছিলো। ২০১৭ সালে একমাত্র স্যামসংই ছিল অ্যাপেল এর বিভিন্ন হার্ডওয়্যারের একমাত্র সাপ্লাইয়ার!

১৪) গ্রেফতার!

২০১৭ সালে স্যামসংয়ের প্রধান পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন! ৪৮ বছর বয়সী বিলিয়েনার লি জে ইয়ং যিনি বর্তমানে স্যামসংয়ের প্রধান হিসেবে রয়েছেন তিনি ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারীতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। উনার বিরুদ্ধে সাউথ কোরিয়ান প্রেসিডেন্টের ৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঘুষ প্রদানের অভিযোগ আনা হয়েছিল।

১৫) বিমানে নোট ৭!

আজকের টিউনটি শেষ করছি একটি মজার তথ্য দিয়ে! স্যামসংয়ের গ্যালাক্সি নোট ৭ এর ব্যাটারী বিস্ফোরণের স্ক্যান্ডালটির ব্যাপারে নিশ্চয় জেনে থাকবেন! তো এখন কোনো বিমানে বা এয়ারপ্লেনে গ্যালাক্সি নোট ৭ বহন করাটি এখন আইনতো দন্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত হচ্ছে! শুধুমাত্র পকেটে নয়, ব্যাগে, লাগেজে এমন বিমানের মালবহন করার কার্গোতেও গ্যালাক্সি নোট ৭ বহন করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ! নয়তো আপনাকে সবোর্চ্চ ১৭৯৩৩ মার্কিন ডলার এবং ১০ বছরের কারাদন্ড হতে পারে!

তো আশা করবো স্যামসংয়ের ব্যাপারে এই সকল তথ্য আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আগামীতে অন্য কোনো টপিক নিয়ে আমি টিউনার গেমওয়ালা চলে আসবো আপনারই প্রিয় বাংলা টেকনোলজি ব্লগ টেকটিউনসে! বিশেষ করে স্যামসং এর মানে যে তিন তারা সেটা আমার কাছে বেশ অবাক লেগেছে! আপনাদের কাছে কোনটি লেগেছে? টিউমেন্টে জানাতে ভূলবেন না যেন!

Level 10

আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস