কম্পিউটার আবিস্কার হবার সাথে সাথে ভিডিও গেমসের প্রতি মানুষের আগ্রহও দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেই ১৯৮০ সাল থেকে শুরু হওয়া গেমস এর এই চলমান উন্নতি বর্তমান যুগে এসে একটি লাভজনক ব্যবসা খাত হিসেবে পরিণত হয়েছে। তাই ব্যবসায়ীরা তাদের লক্ষ লক্ষ টাকা ইনভেস্ট করছেন এসব ভিডিও গেমস নির্মানে এবং যার ফলাফল স্বরূপ আমরা পাচ্ছি হলিউডের ছায়াছবির মতো উন্নত কোয়ালিটির ভিডিও গেমস!
ভিডিও গেমস নিয়ে আমি টিউনার গেমওয়ালা টেকটিউনসে ইতিহাসে সবথেকে বড় চেইন টিউন সিরিজ চালাচ্ছি। সে হিসেবে ভিডিও গেমস সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা রয়েছে আমার। ভিডিও গেমসের ব্যবসা লাভজনক হওয়া শুরু করে ৯০ এর দশকে যখন মাইক্রোসফট তাদের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম বাজারে ছাড়া শুরু করে তখন থেকে। তখনকার যুগে কোনো গেমের গ্রাফিক্সকেই গুরুর্ত্ব দেওয়া হতো! কিন্তু বর্তমান যুগে গ্রাফিক্সের পাশাপাশি ভালো স্টোরিলাইন এবং উন্নত মানে গেম-প্লে ছাড়া কোনো ভিডিও গেমস সাফল্যের মুখ দেখতে পারবে না বলা চলে। বিশ্বে প্রতি মাসে কমপক্ষে ২০০টির বেশি ভিডিও গেমস মুক্তি পাচ্ছে। কিন্তু আমরা কতগুলারই বা নাম জানি? যাই হোক আজকের টিউনে আমি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি ধনী ভিডিও গেমস কোম্পানির ব্যাপারে বলতে এসেছি। তো চলুন ভূমিকা আর না বাড়িয়ে মূল টিউনে চলে যাই:
আমাদের লিস্টের প্রথমেই রয়েছে ক্যাপকম কোম্পানির নাম। প্রায় ১ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক এই গেমিং কোম্পানিটি তাদের স্ট্রিট ফাইটার এবং রেডিডেন্ট ইভিল গেমস সিরিজের জন্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়! ক্যাপকম নামটির কুখ্যাতি এবং তাদের সেলস ট্যাকটিস নিয়ে অনেকেরই অভিযোগ করে এবং ভিডিও গেমস কোম্পানির আলোচনায় কেউই ক্যাপকমের নাম তুলবে না তবে বছর ব্যাপি ১ বিলিয়নের বেশি লাভ করে গেমটি আমাদের লিস্টে চলে এসেছে।
ক্যাপকমের উল্লেখযোগ্য গেমস সিরিজগুলো হলো স্ট্রিট ফাইটার, রেসিডেন্ট ইভিল, ডেভিল মে ক্রাই, লস্ট প্ল্যানেট, মেগাম্যান ইত্যাদি!
ব্যক্তিগত ভাবে গেমার হিসেবে এই কোম্পানির মাত্র ১টি গেম খেলেছি তাও বহু আগে। কোনামি কোম্পানিটি ১৯৬৯ সালে Kagemasa Kozuki দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করা হয়। প্রথম দিকে কোম্পানিটি Jukebox Rental & Repair ব্যবস্যা করতো। আর বর্তমানে কোনামি হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম ধনী একটি ভিডিও গেমস কোম্পানি! যেটা আমার নিজেরও জানা ছিলো না!
কোনামির উল্লেখযোগ্য ভিডিও গেমস সিরিজগুলো হচ্ছে দ্যা ডান্স ডান্স রেভুলুশন, প্রো ইভোলুশন সকার, সাইলেন্ট হিল, মেটাল গিয়ার সলিড ইত্যাদি! মূলত এইসকল গেমস সিরিজের কারণেই কোম্পানিটি বছরে ১.৫ বিলিয়ন লাভ নিয়ে আমাদের লিস্টের ৯তম স্থানে রয়েছে। ভিডিও গেমস ব্যবস্যা ছাড়াও কোম্পানিটি জাপানে বিভিন্ন ধরনের খেলনা, ট্রেডিং কার্ডস, কাটুর্ন সিরিজ, স্লট মেশিন, আরকেইড ক্যাবিনেট সহ হেলথ এবং ফিটনেস ক্লাবেরও ব্যবসা করে থাকে।
২০০৩ সালে স্কোয়ার এবং ইনিক্স দুটি কোম্পানি একত্রে মিলিত হয়ে স্কোয়ার ইনিক্স কোম্পানির সূচনা হয়। শুরু দিকে ভালো না হলেও টম্ব রাইডার এবং হিটম্যান ভিডিও গেমস সিরিজ দিয়ে বাজার মাতানো শুরু করে। এখন স্কোয়ার ইনিক্সের ফাইনাল ফ্যান্টাসি গেমস সিরিজটি বিশ্বের সর্বকালের বেস্ট গেম সিরিজ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশেষ করে ফাইনাল ফ্যান্টাসি ৭ গেমটি কোম্পানিটির সবথেকে বেশি বিক্রি করা গেম হিসেবে রেকর্ড করে। বাৎসরিক প্রায় ১.৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লাভ নিয়ে স্কোয়ার ইনিক্স আমাদের লিস্টে ৮তম স্থানে রয়েছে।
স্কোয়ার ইনিক্সের উল্লেখযোগ্য ভিডিও গেমস সিরিজগুলো হচ্ছে: টম্ব রাইডার, ডিউস এক্স, হিটম্যান, ফাইনাল ফ্যান্টাসি, জাস্ট কজ, থিইফ ইত্যাদি।
গেমারদের কাছে ইউবিআই সফট একটি পরিচিত নাম। আপনি গেমার না হলেও এদের যেকোনো একটি গেম আপনার জীবনে একবারের জন্যে হলে খেলে থাকবেন। ফ্রান্সে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই গেমস কোম্পানিটি ১৯৮৬ সাল থেকে কম্পিউটার গেমস বিজনেস শুরু করে। আর এখন পুরো বিশ্বে এদের অফিস রয়েছে এবং বিশ্বের অন্যতম ধনী ভিডিও গেমস কোম্পানি হিসেবে কোম্পানিটি নিজের স্থান অটুট করে নিয়েছে। বাৎসরিক প্রায় ২.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লাভ নিয়ে কোম্পানিটি আমাদের লিস্টের ৭তম স্থানে রয়েছে।
ইউবিআই সফটের উল্লেখযোগ্য ভিডিও গেমস সিরিজগুলো হচ্ছে এসাসিন্স ক্রিড, ফারক্রাই, প্রিন্স অফ পারসিয়া, ওয়াচ ডগস, টম ক্ল্যানসিস, দ্যা ক্রিউ, জাস্ট ডান্স, ড্রাইভার, কল অফ জুয়ারেজ ইত্যাদি।
আরেকটি জাপানিজ গেমিং কোম্পানি যেটার নাম আমরা ছোটবেলায় গেমস খেলার সময় দেখতে পেতাম। প্রথম দিকে সেগা ভিডিও গেমস হার্ডওয়্যারের বিজনেস করতো, পরবর্তীতে সরাসরি তারা ভিডিও গেমস নির্মাণ ব্যবসায় চলে আছে। ২০০৫ সালের পর থেকে কোম্পানিটি গেমিং জগতে জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করে। বলা বাহুল্য যে Sonic the Hedgehog গেমটির থেকে কোম্পানিটি এতটাই লাভ অর্জন করতে সক্ষম হয় যে এই লাভ থেকে তারা তাদের বাকি গেমসগুলো নির্মানের ফান্ডিংটি পেয়ে যায়! বর্তমানে বাৎসরিক প্রায় ৩.৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লাভ নিয়ে কোম্পানিটি আমাদের লিস্টের ৬ষ্ঠ স্থানে রয়েছে।
নিড ফর স্পিড রেসিং ভিডিও গেমের জন্য আমরা এই ইএ গেমস কোম্পানিটিতে মূলত চিনে থাকি। তবে অন্যদিকে প্রতি বছর ফিফা গেমস মুক্তি দিয়েও কোম্পানিটি আমাদের অনেক গেমারদের মন জয় করে নিয়েছে। তবে প্রথম দিকে তারা যখন ফুটবল গেমস বানাবে বলে চিন্তা করলো তখন অনেকেই এটার উপর হাস্যরত ছিলো কিন্তু এখন বর্তমানে ফিফা গেমস সিরিজটি ইএ এর একটি লাভজনক প্রজেক্ট হিসেবে পরিণত হয়েছে।
প্রতি বছর প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের লাভ নিয়ে কোম্পানিটি আমাদের লিস্টের ৫তম স্থানে রয়েছে। প্রথম দিক থেকেই কোম্পানিট স্পোটর্স ভিক্তিক গেমস নির্মাণ করতে এবং সেটা এখনো করে আসছে। তবে এখন এর সাথে অনান্য ধাঁচের গেমসও এরা নির্মাণ করে আসছে।
১৯০০ শতকের শুরুর দিকে জাপানে প্রতিষ্ঠিত এই ভিডিও গেমস কোম্পানিটি বর্তমানে বাৎসরিক ৪.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের লাভ নিয়ে আমাদের লিস্টে ৪র্থ স্থানে রয়েছে। নিনটেনডো বিশ্বের অন্যতম পুরোনো এবং প্রতিষ্ঠিত একটি ভিডিও গেমস কোম্পানি। তারা অনেক পুরোনো কোম্পানি তাই এদের গেমসের সংখ্যা কম হলেও তাদের ব্যবসা অনেক লাভজনক পর্যায়ে চলে গিয়েছে। তাদের তৈরিকৃত ভিডিও গেমস ক্যারেক্টার মারিও এবং ডনকি কং বিশ্বব্যাপী বহুল জনপ্রিয়। কিছুদিন আগে পোকেমন গো গেমটি রিলিজ দিয়ে কোম্পানিটি গেমারদের কাছে আবারো নতুন করে আলোচনায় চলে এসেছে।
২০০৮ সালে এক্টিভিশন এবং বিলিজার্ড কোম্পানি দুটি একত্র হয়ে এক্টিভিশন বিলিজার্ড কোম্পানির সূচনা করে। তারা রোল প্লে গেমিংকে এডভেঞ্চার স্ট্রাটেজি গেমে পরিবর্তন করার সহজ আইডিয়া দিয়ে বর্তমান যুগের অন্যতম ব্যবসা সফল ভিডিও গেমিং কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। কোম্পানিটি বাৎসরিক ৫.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লাভ করে আমাদের লিস্টের ৩য় স্থানে রয়েছে।
এক্টিভিশন বিলিজার্ড কোম্পানিটি সর্বপ্রথম পিসি গেমিংয়ে ল্যান প্লে সিস্টেমটি চালু করে। যারা মাধ্যমে অনলাইন হবার প্রয়োজন ছাড়াই বন্ধুদের সাথে খেলার সুযোগ করে দেওয়া হতো! জনপ্রিয় গেমস সিরিজ কল অফ ডিউটি এই কোম্পানিরই সৃষ্টি!
জাপানে প্রতিষ্ঠিত এই সনি কোম্পানিটি ভিডিও গেমস ইলেক্ট্রনিকস জগতে বেস্ট সেলিং কোম্পানি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তাদের প্লে-স্টেশন গেমস কনসোল টি বিশ্বব্যাপী বহুল জনপ্রিয়। তাদের প্লে-স্টেশন ২ গেম কনসোলটি বেস্ট সেলিং কনসোল এবং শুধুমাত্র প্লে-স্টেশন ২ এর জন্য আলাদা করে বিশাল রেঞ্জের আলাদা গেমস পাওয়া যেতো। বর্তমানে ভিডিও গেমস মার্কেটের মাইক্রোসফটের একমাত্র প্রতিদন্ধি হচ্ছে এই সনি। সনি প্রতি ৩ বছর বা একটু বেশির পর পর নতুন নতুন প্লে-স্টেশন কনসোল বাজারে মুক্তির মাধ্যমে এর মার্কেট ধরে রেখেছে। কোম্পানি প্রতি বছর প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লাভ করে আমাদের আজকের লিস্টের ২য় স্থানে রয়েছে।
২০০২ সাল থেকে মাইক্রোসফট স্টুডিওস গেমিং জগতে বড়সড় ইমপ্যাক্ট করে রেখেছে। গেমিং কনসোলের পাশাপাশি দারুণ সব গেমস তৈরি করে কোম্পানিটি বর্তমানে প্রায় ৩৯.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাৎসরিক লাভ করে আমাদের লিস্টের একদম প্রথমে রয়েছে। মাইক্রোসফট মূলত তাদের অপারেটিং সিস্টেম জগতে রাজা হলেও আয়ের দিক থেকে বর্তমানে ভিডিও গেমস জগতেও প্রভার রেখেছে।
মূলত তাদের ভিডিও গেমস কনসোল সিরিজ এক্সবক্স এবং HALO গেমস সিরিজ দিয়ে কোম্পানিটি প্রতি বছর এই পরিমাণ লাভ অর্জন করছে এবং সেটা ধরে রেখেছে। আর তাই তো তাদের প্রধান প্রতিযোগী কোম্পানি সনির থেকে প্রায় দ্বিগুণ লাভ নিয়ে আমাদের লিস্টের প্রথম স্থানে রয়েছে। ২০০১ সালে HALO সিরিজের প্রথম গেমটি দিয়ে কোম্পানিটি গেমস জগতে বাজিমাত করে। তখনকার সময়ে বেস্ট গ্রাফিক্স এবং বেস্ট গেমপ্লে এবং একই সাথে বেস্ট স্টোরিলাইন ক্ষেত্রে গেমটি চরম বাজিমাত করে ফেলে!
গত কয়েক বছরের আয়ের অনুসারে এই ছিলো আজকের ১০টি শীর্ষ ধনী গেমিং কোম্পানি। এদের সম্পর্কে আপনার কোনো মতামত থাকলে সেটা অবশ্যই টিউমেন্ট বক্সে জানাতে ভূলবেন না যেন!
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!
দারুণ পোস্ট