GRU (Main Intelligence Directorate)
এটা রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি। এটা সরাসরি মিলিটারি দ্বারা পরিচালিত হয়। (under the Jurisdiction of Russian President). রাশিয়ার বিখ্যাত KGB এর foreign operations directorate. (SVR) এর চেয়ে ছয়গুন বেশি এজেন্ট GRU এর আছে, যারা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে গুপ্তচর তথা গোয়েন্দাগিরি করে। এর দৃষ্টিনন্দন সদর দফতর Khoroshevskoye shosse 76, Khodinka, Moscow তে অবস্থিত।
আমেরিকাতে এর সমতুল্য হতে পারে (MI + NSA) ....GRU এর কাজ মুলত বিভিন্ন দেশ, (বিশেষ করে আমেরিকা আর Nato এর সামরিক কর্মকান্ডের উপর গোয়েন্দাগিরি করা) এছাড়া কেজিবিকে মিলিটারে সাপোর্ট দিয়ে থাকে প্রয়োজনে।
Committee for State Security (or better known, as KGB )
এহেন কোনো মানুষ নাই, যার ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি নিয়ে হালকা পাতলা ধারণা আছে কিন্তু সে কেজিবি'র নাম জানে না। It was the most famous intelligence agency ever known... it's a benchmark for all the intelligence agency out there... একসময় লেনিনের চেকা, সেই চেকা থেকে স্তালিনের ডান হাত হিসেবে পরিচিত ল্যাভরানতি বেরিয়ার হাতে গড়া NKVD, এবং স্তালিন মারা যাবার পর সেই NKVD হয়ে যায় KGB... একসময় এই কেজিবির দায়িত্বে আসেন Yuri Andropov ...আর কি লাগে !! সোভিয়েত আমলে KGB প্রধানরা একরকম ছিলেন পর্দার আড়ালের রিং মাস্টার। রাজণীতি, অর্থনীতি, সামরিক, টেকনোলজি, ব্যবসা, এহেন কিছু নাই যা নিয়ে কেজিবি কাজ করতো না। CIA spy জাদুঘরটি বলতে পারেন একরকম কেজিবির জন্য Tribute ... চিন্তা করে দেখুন, CIA ছিলো স্নায়ু যুদ্ধের কেজিবির প্রতিদ্বন্দ্বী। অথচ সিআইএ স্পাই মিউজিয়ামের ভেতরে যত নামফলক, লিখা আছে, সবগুলোকে উপরে ইংলিশ ও রুশভাষা একসাথে লিখা হয়েছে। সিআইএ স্পাই মিউজিয়ামে একটা বাচ্চা ঢুকলে সে কেজিবির ফ্যান হয়ে বেরিয়ে আসবে, এমন এক অবস্থা। খোদ প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েও, শত্রুও হয়েও, হারানো সেই শত্রুর প্রতি সম্মান জানাতে CIA ভোলে নি। স্পাই মিউজিয়ামে রক্ষিত আছে এযাবত কালে যত স্পাই গ্যাজেট সিআইএ উদ্ধার করেছে কেজিবি এজেন্টদের ধরে ধরে। (বলতে পারেন, এটা সিআইএরও সাফল্যের নিদর্শন) :P. যাই হোক, কেজিবি এখন ইতিহাস। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এটার দুইটি ভাগ আলাদা করা হয়। একটা হল FSB .... যেটা মুলত দেশের ভেতরের ব্যাপারস্যাপার নিয়ে কাজ করে। এটা মার্কিনীদের FBI এর মত। এর হেডকোয়ার্টার মস্কোতে।
আরেকটা হল SVR. যেটা একেবারে classic spy agency .... এটার প্রধান অফিস মস্কো থেকে কিছুটা দুরে। আপনি স্পাই থ্রিলার বলতে যা যা বোঝেন, সেটাই প্রতিদিন করে SVR.
রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ছিলেন একসময়কার কেজিবি কর্নেল। সামরিক বেসামরিক সব ধরনের লোক এতে কাজ করে। সুটেট বুটেট মানুষ থেকে শুরু করে রাস্তার ফকির রুপী গুপ্তচর... সবই আছে। এর ১৫ হাজার সদস্যের একটা বড় অংশ খোদ রাশিয়ার নাগরিকই নয় 😛
Central Intelligence Agency (CIA)
বলতেই হবে, এটা ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির ভেতরে সবার উপরেই থাকবে। বিশ্বজুড়ে মার্কিন আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে CIA কাজ করে যাচ্ছে, যাবে। সিআইএর একটা জিনিস আছে যা অন্য সকল এজেন্সির সাথে এর পার্থক্য গড়ে দেয়। আর সেটা হল বিপুল পরিমান টাকা। একটা কথা আছে, everything is for sale, everyone can be bought, all you have to say is the right price আর সিআইএ এই জিনিসটাকে খুব ভালোমত নিজেদের পক্ষে নিতে পারে টাকার জোরে ! টাকা দিয়ে হয় না এমনকাজ খুব কমই আছে বোধ হয় ! তো সিআইএ ছিলো। আছে থাকবে। ভবিষ্যতে আরো আগ্রাসী হবে। সেইসাথে যার বন্ধু হিসেবে Mossad আর shin bet আছে, তাঁর কাজ যে অনেক সহজ হয়ে যায় অনেক ক্ষেত্রে, সেটাও বলাবাহুল্য। ল্যাংলি, ভার্জেনিয়াতে CIA হেড কোয়ার্টার অবস্থিত।
NSA (National security agency)
তথ্য প্রযুক্তির এই দুনিয়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও হাইটেক ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি। এরা মুলত দুনিয়ার সেরা ম্যাথামেটিসিয়ান, ক্রিপটোগ্রাফার, কম্পিউটার প্রোগ্রামার, বিজ্ঞানী, আইটি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে গড়া এক সংস্থা। সিগন্যাল, তথ্য, ডাটা মনিটরিং, এনালাইসিস, বাগিং, এসবই এদের প্রধানকাজ। আর একাজে তাঁরা ব্যবহার করে এমন এমন সব সুপার কম্পিউটার যার বিবরণ শুনলে কেবল অবাক হয়ে থাকতে হয়। এও কি সম্ভব !! এসবও কি আছে !! এইরকম এজেন্সি আরো আছে ব্রিটেনের GCHQ আর রাশিয়ার FSO.... চীনের MSS এর একটি ইউনিট এই কাজ করে থাকে।
MI 5 and MI 6
MI-5 মুলত রাশিয়ার FSB বা আমেরিকার FBI এর মত। অর্থাৎ দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারস্যাপার নিয়ে কাজ করে। আর MI-6 হল CIA বা SVR বা Mossad এর মত... মুভিতে জেমস বন্ড MI-6 এর এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অভুতপূর্ব সাফল্য পেয়েছিলো SOE (MI 6) .... তথ্য সংগ্রহ, সার্ভিলেন্স এন্ড স্যাবোট্যাজে সুনাম আছে MI-6 এর...
Inter-Services Intelligence (ISI)
কুটনা পাকিস্তানের সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত বিতর্কিত গোয়েন্দাসংস্থা। এখন আমরা ISI বলতে যেটা বুঝি, সেটা মুলত জিয়াউল হক ক্ষমতায় আসার পর নতুন রূপ পাওয়া আইএসআই। জিয়াউল হক জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ক্ষমতাচ্যুত করে পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসেন। তাঁর শাসনামত ছিলো extreme rule এর। জিয়াউল হক Lieutenant-General Hamid Gul কে দায়িত্ব দেন ISI এর। এর হাতেই নতুন এক আগ্রাসী রূপ পায় ISI....
হয়ে ওঠে ভয়ংকর এক গোয়েন্দা সংস্থা। পাকিস্তানের ভেতরে, ইরান, আফগানিস্তান, ভারত, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, হেন কোনো দেশ নাই, যে দেশে নাসকতামুলক কর্মকান্ড চালানোর অভিযোগ ISI কে নিতে হয় নি। তবে Hamid Gul কে বলা হত "the father of taliban" ... সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য আফগানস্তানকে ভিয়েতনাম বানিয়ে ফেলার পেছনে অন্যতম কারিগর ছিলো ISI.... কেবল সিআইএ-এর অস্ত্র তালেবান বা আলকায়দার হাতে তুলে দেয়া নয়, সরাসরি আফগানিস্তানের ভেতরে সোভিয়েত বিরোধী অভিযানে ভুমিকা রাখে ISI... মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ু যুদ্ধ জয়ের পেছনে এই সংস্থার অবদান কম না। কেবল তাই নয়, লাদেনকে যে দীর্ঘদিন লুকিয়ে রেখেছিলো ISI... এটা মার্কিনরা আগে না হলেও এখন জানে। সিআইএ বা NSA এর মত সংস্থা যেখানে লাদেনকে ধরার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছে তাঁদের সমস্ত gadget and gear নিয়ে, সেখানে প্রায় ১০ টি বছর বিন লাদেন'কে তাঁরা লুকিয়ে রেখে চোর পুলিশ খেলেছে CIA এর সাথে। যাকে বলে double cross... নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছে তাঁরা CIA কে...
CIA এর সাবেক প্রধান মাইক হেইডেন বলেছিলেন, তিনি ISI কে বিশ্বাস করতেন না। আবার অবিশ্বাস করার উপাও ছিলো না। কারণ ২০০১ সালের পর যত বড় বড় আলকায়দা নেতা ধরা পড়েছে, সেটা খালিদ শেখ মোহাম্মদ থেকে ৯/১১ এর আগে ধরা খাওয়া রামজি বিন ইউসুফ, অধিকাংশকেই ধরেছে কিন্তু ISI... ধরে আমেরিকার কাছে দিয়ে দিয়েছে। যখনই CIA বা মার্কিন প্রশাসনের সন্দেহ হইতো, তখনই আল কায়দা বা তালেবানের কোনো একজনকে ধরিয়ে দিয়ে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতো ISI... তবে বিপত্তে বাধে ২০০৭ সালে... ISI এর এক মহিলা এজেন্ট (ball buster) ... পল্টিমারে CIA তে... মাইক হেইডেনের মতে, ISI এর double crossing কে মার্কিন প্রশাসন আর DOD কে বিশ্বাস করাতে এটা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছিলো।
লাদেন হত্যার পর CIA আর ISI এর দুরত্ব আর অবিশ্বাস আরো বেড়েছে। পাকিস্তান নামক volatile দেশটি টিকে আছে মুলত তাঁদের এই গোয়েন্দাসংস্থার উপর ভর করে। তবে পাকিস্তানের অনেক ঝামেলার পেছনেও আছে এই ISI... এটা চলে একরকম এর নিজেস্ব নিয়মে। খোদ সরকারের ভালো নিয়ন্ত্রন এর উপর আছে কিনা, সেটা নিয়েই সন্দেহ আছে। আবার এর ভেতরেও আছে নানান ফ্র্যাকশন। সেইসাথে পাকিস্তানের ভেতরে রাজণীতিতে এটা নাক গলায়। পাকিস্তানের রাজণীতি কলুসিত হবার পেছনে হাজারটা কারনের অন্যতম একটি হল এই আইএসআই।
The Research and Analysis Wing (R&AW or RAW)
ভারতীয় গোয়েন্দাসংস্থা। এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ISI.... এটা মুলত মার্কিন CIA, বা রাশিয়ার SVR এর মত... আর ভারতের অভ্যন্তরীণ ভীষণ ডিল করার জন্য এখন আছে NIA... 1968 সালে 'র' গঠিত হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিপুল পরিমান মানুষ রিফিউজি হয়ে ভারতে যায়। তাঁদের ট্রেনিং অস্ত্র আর লজিস্টিক দিয়ে সাহায্য করাটা ছিলো 'র' এর কাজ।
র এর প্রথম প্রধান ছিল জেনারেল কাউ। জেনারেল কাও নিজে তরকারি বিক্রেতা সেজে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে এসেছিলেন সম্ভাব্য মিলিটারি কু- সম্পর্কে সতর্ক করতে। জেনারেল কাউ এর আত্মজীবনীতে তিনি সবই লিখে গেছেন। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু হত্যার চক্রান্তের কথা RAW কিভাবে জেনে গিয়েছিলো, কে মুল পরিকল্পনাকারি ছিলো, কার বাসায় মুল পরিকল্পনা হয়েছিলো, সেটারও বর্ণনা আছে। হুমায়ুন আহমেদের দেয়াল উপন্যাসে কাউ এর আত্মজীবনী থেকে সেই অংশ লিখে দেয়া হয়েছে হুবহু, কোটেশন দিয়ে। পড়ে দেখতে পারেন। যদিও বঙ্গবন্ধু কাউ এর কথা বিশ্বাস করেন নি। উল্টা তামাশা বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর নিজ দেশের মানুষকে এতোটাই বিশ্বাস করতেন। এটাই ছিলো তাঁর বড় ভুল। তিনি বিশ্বাসই করতেন না যে তাঁর নিজ দেশের মানুষ তাঁর বুকে গুলি চালাবে।
RAW এর যেমন অনেক সাফল্য আছে। আবার ব্যর্থতাও আছে। যেমন বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরিকল্পনা চলতেছে, এটা RAW জানতে পারলেও, নিজ দেশের প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রিরা গান্ধীকে যে হত্যা করার পরিকল্পনা চলতেছে ভারতের ভেতরে, সেটা সম্পর্কেই RAW অবগত ছিলো না। তাঁদের বন্ধু সংস্থা রাশিয়ার KGB ঠিকই ১৯৭৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রিরা গান্ধীকে সম্ভাব্য হত্যা চেষ্টার ব্যাপারে সতর্ক করেছিলো। যাই হোক, ভারতের সেভেন সিস্টারে, তামিলনাড়ু আর শ্রীলঙ্কাতে ভারতের স্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ড বন্ধ করতে 'র" গুরত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। যদিও ইন্দ্রিরা গান্ধীর মৃত্যু ঠিকই আততায়ীর গুলিতে হয়। এবং খুনি ছিলো তাঁর নিরাপত্তারক্ষী। আবার ইন্দ্রিরা গান্ধির ছেলে রাজিব গান্ধীকে হত্যা করে তামিল টাইগাররা। "র" এটা ঘটনা ঘটার আগে জানতে পারলেও ব্যর্থ হয় আটকাতে। মুলত ভারতের পররাষ্ট্রণীতি তেমন আগ্রাসী নয়। আর 'র" কোনো এগ্রেসিভ গোয়েন্দাসংস্থা না। যেমনটা ISI বা মোসাদ বা ইরানের সাভাক ... আত্মরক্ষা ও ভারতীয় স্বার্থে কাজ করা যার ধর্ম। এটাই RAW এর Motto...
VAJA
1979 সালে ইসলামিক রেভোলিউশনের পর সাভাকের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় vavak... সেটা পরিবর্তন হয়ে এখন VAJA... তবে যে নামেই ডাকুন, ইরানের গোয়েন্দাসংস্থাকে পশ্চিমারা এখনো সাভাক বলেই ডাকে। যাই হোক, এর শত্রুর শেষ নেই। বিশেষ করে যখন আমেরিকা, ইসরাইল, সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের চক্ষুশূল ইরান। কিছুদিন আগে মোসাদ কিছু ইরানি নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানীকে মেরে ফেলে। বিজ্ঞানীরা গাড়িতে করে কাজ শেষ বাড়ি ফিরছিলো। মোটর সাইকেল আরোহি কিছু মোসাদ অপারেটিভ তাঁদের পিছু নেয়। একসময় একধরনের বোম চলন্ত গাড়ির পেছনে লাগিয়ে দেয়। ম্যাগনেটের মত এগুলো গাড়ির সাথে লেগে যায়। এরপর কিছুদূর যাবার পর বিস্ফোরণ। তো এই ঘটনার বদলা নিতেও সাভাক দেরি করে নি। ল্যাটিন আমেরিকাতে কিছু মোসাদ গুপ্তচরকে তাঁরা ঠিকই মেরে আসে। এভাবেই মাইর দিচ্ছে। মাইর খাচ্ছে, এই করেই চলতেছে VAJA...
Mossad and Shin bet
They are brutal... as simple as that... মোসাদ'কে বলা হয় "the most effective killing machine out there". তখন চলতেছে স্নায়ু যুদ্ধ। সোভিয়েত পলিতব্যুরোতে ভাষণ দিচ্ছে নিকিতা ক্রুসচেভ। স্তালিন মরার পর তিনি ক্ষমতায় এসেছেন। স্তালিন বেঁচে থাকতে তাঁর নামে একটা নেগেটিভ কথা বলার সাহস সোভিয়েত ইউনিয়নে কেউ পেতো না। আর বললে অবস্থা হত ভয়াবহ। কিন্তু ক্রুসচেভ সেদিন ভাষণে একেএকে তুলে ধরে স্তালিনের নানান অন্যায়, অত্যাচারের লোমহর্ষক কাহিনী। যার অনেকগুলো আবার খোদ ক্রুসচেভ স্তালিনের আদেশে করতে বাধ্য হয়েছিলো। কোনো সাংবাদিক ছিলো না পলিতব্যুরোতে। শুধুমাত্র কমিউনিস্ট পার্টির অনুষ্ঠানে দেয়া সেই ভাষণে। কিন্তু এই ভাষণের audio কপি somehow হাতে পেয়ে যায় মোসাদ। তুলে দেয় সিআইএর হাতে। সিআইএ রীতিমত আমাবস্যার চাঁদ পেয়েছিলো সেদিন। এটা রেডিও ফ্রি ইউরোপের মাধ্যমে তাঁরা প্রচার করে সমগ্র ইউরোপে। এটা ছিলো CIA এর জন্য অন্যতম প্রোপাগান্ডার লড়াইয়ের হাতিয়ার।
গায়ের জোরে ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, কৌশলে ইসরাইলি দখলদারিত্ব বজায় রাখা, তিনটা আরব ইসরাইল যুদ্ধে জয়ে অভুতপূর্ব অবদান রাখা, এসব মোসাদের অন্যতম success story... ১৯৬৭ সালের ৬ দিনের যুদ্ধে ইসরাইল যে চোখের নিমেষেই অধিক শক্তিশালী সম্মিলিত আরব দেশগুলোকে হারিয়ে দিয়েছিলো, এর পেছনে ছিলো মোসাদ... মোসাদের আরেকটি বিশেষ দিক হল স্টানবাজি। তাঁরা প্রচার করতে, প্রচারিত হতে ভালোবাসে। তাঁরা নিজেদের website বানিয়েছে অসাধারণ ভাবে। এবং তাতে একরকম কম্পিটিশনের ব্যবস্থা করে রেখেছে। online recruitment পর্যন্ত হয়। এবং তাঁরা উৎসাহিত করে এটা। বিশ্বের যে প্রান্তেই ইহুদি আছে, সেখানেই মোসাদ আছে। আর ইসরাইলের স্বার্থ বিরোধী কেউ কিছু করলে মোসাদ তাঁকে খুঁজে বের করবে। এবং খুন করে আসবে। তা সে দুনিয়ার যে প্রান্তেই থাকুক না কেন।
এক জার্মান বিজ্ঞানী একবার সাদ্দামকে শক্তিশালী স্কাড মিসাইলের উন্নয়নে সহযোগিতা করছিলো। ফলাফল, মোসাদ তাঁকে ইউরোপে গিয়ে মেরে আসে। আবার কিছুদিন আগে এক অস্ত্র ব্যবসায়ী, যে কিনা হামাসকে অস্ত্র দিচ্ছিলো, তাঁকে মোসাদ দুবাইএর বিখ্যাত সাত তারকা হোটেল ব্রুজ আল খলিফাতে গিয়ে মেরে আসে। মোসাদ ভালো করেই জানে, এটা ক্যামেরাতে ধরা পড়বে। কিন্তু তাঁরা এসেছিলো সেখানেই। উদ্দেশ্য, একে তো মেরে যাওয়া। সেইসাথে মোসাদ চায় যে এটা দুনিয়াতে প্রচার হোক। fear factor তৈরি হোক। মিউনিক ম্যাসাকারের পর এরসাথে যুক্ত ব্যক্তিদের মোসাদ দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে খুঁজে বের করে মারে। আবার জীবিত Nazi criminal দের খুঁজে খুঁজে বের করে। false flag অপারেশন, স্যাবোটাজ, খুন খারাপী রীতিমত নিত্যনতুন আর ইনোভেটিভ সব উপায়ে করে যাচ্ছে মোসাদ। মোসাদের অনেক অপারেশন নিয়ে চলচিত্র বানানো হয়েছে। বই লিখা হয়েছে। দুনিয়ার অনেক দেশের গোয়েন্দাসংস্থার যেখানে website ই নেই 😛 সেখানে মোসাদেই website দেখার মত। মোসাদের website এ লিখা থাকে, History is not written, history is created. এবং মোসাদ আর shin bet এটা করে যাচ্ছে অনরবরত।
===0===
শেষ কথা বললে, গোয়েন্দা সংস্থার কাজ অন্তত মুভি সিরিয়ালে যতটা thrilling মনে হয়, বাস্তবে ততটা না। অন্তত MI6 বা CIA এর মত সাবেক গোয়েন্দা সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত লোকেরা এমনই বলে মিডিয়াতে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একজনের পেছনে লেগে সার্ভিলেন্স চালানো, ঘণ্টার পর ঘণ্টা desk work করতে হয়। গোয়েন্দা সংস্থা মানেই যে অস্ত্র নিয়ে শত্রু পেছনে ছোটা জেমস বন্ড, তেমনটি মোটই না। এবং দুনিয়ার সেরাসেরা সব স্পাই দেখতেও মুভি বা সিরিয়ালের সেই মাসকুলার গুড লুকিং স্পাই এর মত না 😛 ... একটা মোটা বেটে লোক, তাঁকে স্পাই হিসেবে সন্দেহ করার সম্ভাবনা কিন্তু কম। নিজেই একটু চিন্তা করে দেখেন (lolz) 😛 স্পাই হিসেবে এমন লোকরাই সবচেয়ে ভালো ফলাফল দেয়। রেকর্ড তেমনই বলে। গায়ের জোরের চেয়ে মাথার বুদ্ধি এতে বেশি লাগে। সব গোয়েন্দা সংস্থাতে স্পাই থাকে, তবে গোয়েন্দা সংস্থা মানেই কেবল স্পাই না।
টাকা অনেক বড় ফ্যাক্টর। অনুন্নত গরিব দেশে বা অভ্যন্তরীণ ঝামেলায় জর্জরিত দেশে ভালো স্পাই এজেন্সি তৈরি হয় না সাধারণত মুলত এই কারনেই। হলেও দেখা যায়, সেটা যতটা না স্পাই বা ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, তাঁর চেয়েও বেশি পুলিশ। অর্থাৎ নিজ দেশে পুলিশি কর্মকান্ড চালাতেই তাঁদের সব শ্রম ও সময় ব্যয় হয়। যেমন মিশরের গোয়েন্দাসংস্থা আদেও নামে একটা গোয়েন্দাসংস্থা হলেও সেটা একটা পুলিশ ছাড়া আর কিছু না। দেশের স্বার্থ নয়, বরং জেনারেল সিসি'কে ক্ষমতায় রাখতে পারবে কি পারবে না, এটা নিয়েই তাঁর সব শ্রম ব্যয় হয়। আগে যেমন মোবাররকের জন্য করতো।
যাই হোক, it's a dirty business... সাপ হয়ে দংশন করে, ওঝা হয়ে চিকিৎসা দিতে হয়। লাঠিকে সাপ, আর সাপকে লাঠি বানাতে হয়। তবে সবচেয়ে ভালো স্পাই সেইই হয়, যে নিজেকে খুব ভালো স্পাই বা গোয়েন্দা হিসেবে মনে করে না। আর সবচেয়ে সেরা স্পাই দেখতে জেমস বন্ডের মতও হয় না। যাকে স্পাই এর মত দেখতে লাগে, সে কিভাবে স্পাই হবে বলুন !!
যাই হোক, পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
*Credit: ইন্টারনেট ও ফেসবুক(ফেসবুক আইডি প্রকাশ করছি না প্রাইভেসির কারনে) থেকে সংগৃহীত ও কপিকৃত।
আগের টিউনগুলোঃ
যেভাবে ১৯৭৭ সালে অল্পের জন্যে আমেরিকা ধ্বংস হতে যেয়েও হয়নি! স্নায়ুযুদ্ধের অজানা অধ্যায়
আমি টেকপোকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 8 টি টিউন ও 202 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
অনেক ভাল লাগল। আগেরটাও ভাল লেগেছে।