শনিবার ২৯ মে সন্ধ্যায় ফেসবুক ব্লক হওয়ার পর থেকেই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে বিভিন্ন বাংলা ব্লগ, ফোরাম এবং মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে। বলা চলে বাংলা ব্লগ গুলোর বিভিন্ন আর্টিকেল ও আলোচনায় কার্যত প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশে ফেসবুক বন্ধ করার বিষয়টি।
২৯ মে সন্ধ্যায় ফেসবুক এক্সেস বন্ধ করার পর প্রতিবাদমূলক পোস্ট সবচে বেশি প্রকাশিত হয়েছে জনপ্রিয় বাংলা ব্লগ সাইট সামহোয়্যার ইন ব্লগ-এ। এছাড়াও বিভিন্ন ব্লগে প্রতিনিয়তই ফেসবুক ব্লক করার পক্ষে-বিপক্ষে পোস্ট প্রকাশিত হয়ে আসছে। এগুলোর মধ্যে ফেসবুক ব্লক করার বিষয়টিকে ‘নির্বোধের মতো সিদ্ধান্ত’ বলেই অভিহিত করেছেন অনেকে।
এক পোস্টে ব্লগার অরূপ রাহী মন্তব্য করেছেন, ফেসবুক বন্ধ করা কোনো সমাধান নয়। তার মতে, কেউ কোনো বিষয়ে কোনো মতামত, সমালোচনা, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করলেই সেই মাধ্যমটিকে বন্ধ করার বিষয়টি যে কাজে আসে না, ‘তা ইতিহাস বারবার প্রমাণ করছে’।
ফেসবুক বন্ধের প্রধান কারণ হিসেবে পত্র পত্রিকাগুলো ফেসবুকে মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের কারণটিই উল্লেখ করেছে। তবে, দুই নেত্রীর ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশের পরপরই ফেসবুক বন্ধ করায় অনেকেই মনে করছেন, প্রকৃত কারণ নেত্রীদের ব্যঙ্গাত্মক ছবিই। কারণ মহানবীর ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন ফেসবুকে রয়েছে বহুদিন ধরেই।
আবার নেত্রীদের ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন আঁকা যদি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হয়, তাহলে কার্টুনিস্ট শিশিরকেও গ্রেফতার করা হোক, এমন দাবি জানিয়েছেন ব্লগার কুঁড়ের বাদশা। তিনি লিখেছেন, ‘আপনারা কি কখনও প্রথম আলো পড়েন নি?’ এই ব্লগার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ‘শুধু মন্ত্রী-এমপি নয় হাসিনা-খালেদারও ব্যঙ্গ কার্টুন’ ছাপা হয় পত্রিকাটিতে।
তবে ফেসবুক যে কারণেই ব্লক করা হোক না কেনো, অধিকাংশ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমই উল্লেখ করেছে, ‘পাকিস্তানের অনুকরণে’ বাংলাদেশ ফেসবুক ব্যান করেছে।
বিবিসির ওয়েবসাইটে ফেসবুক বন্ধের প্রতিবাদে মিছিলের ছবিসহ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বিষয়ক সাইট ম্যাশএবল ডটকম-এর মতে, ‘বাংলাদেশ পাকিস্তানের পথ অনুসরণ করেছে।’
এদিকে ফেসবুক বন্ধ করাকে অগণতান্ত্রিক বলেও অভিহিত করছেন অনেকে। কেননা এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ব্লগসাইট সচলায়তন-এর ব্লগার নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘আমরা প্রথমত একটা গণতান্ত্রিক সরকার চাই। যে সরকার সবাইকে কথা বলার সুযোগ দেবে, সবার মত প্রকাশের সুযোগ দেবে।’
ফেসবুক ব্লকের বিরুদ্ধে টুইটার ব্যবহারকারীরাও আওয়াজ তুলেছেন নতুন একটি টপিক (টুইটারের ভাষায় হ্যাশট্যাগ) খুলেছেন। #drawhasinaday নামের এ টপিকে প্রায় সবাই ফেসবুক বন্ধের কড়া সমালোচনা করে যাচ্ছেন। julu_vai আইডিধারী একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে ফেসবুক ব্যান করে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমস্যার সৃষ্টি করা হয়েছে। আমার মত প্রকাশের স্বাধীনতা কোথায়?’
এদিকে ফেসবুক আনব্লক করার দাবিতে ব্যানার পরিবর্তন করে ‘ফেসবুক অবমুক্তি চাই’ শীর্ষক ব্যানার বসিয়েছে আরেক জনপ্রিয় ব্লগিং প্লাটফর্ম, আমার ব্লগ।
জানা গেছে, ফেসবুক বন্ধ করায় আর্থিক ক্ষতিরও সম্মুখীন হয়েছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ও ফ্রিল্যান্স ডেভেলপার, যারা ফেসবুকের জন্য অ্যাপ্লিকেশন ও বিভিন্ন কন্টেন্ট তৈরি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারতেন। অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপার মাহফুজ বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘জীবিকা নির্বাহের এটা একটা বিশাল ক্ষেত্র। ফেসবুকে ব্যবহার উপযোগী বিভিন্ন উপকারী সফটওয়্যার তৈরি করে আমি মাসে ৭০ হাজার টাকাও আয় করেছি।’ অনেক ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপারই স্বাধীনভাবে কাজ করে মাসে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করেন বলেও তিনি জানান।
এ প্রসঙ্গে সামহোয়্যার ইন ব্লগের একজন ব্লগার লেনিন প্রশ্ন রেখেছেন, ‘শত শত প্রোগ্রামার এবং ডেভেলপার নামমাত্র মূল্য থেকে শুরু করে হাজার হাজার ডলার আয় করছে এই ফেসবুকের অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করে। এই ব্যানের ফলে তাদের ভোগান্তি আর দুর্যোগের দায় কে নেবে?’
উল্লেখ্য, সমালোচনামূলক পোস্টের সংখ্যা বেশি হলেও দু'একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে যেগুলো ফেসবুকে ব্যানের পক্ষেই মত দিয়েছে। গুরু ভাই নামের একজন ব্লগার লিখেছেন, ‘যেসময় ওদের [তরুণদের] খেলার মাঠে বন্ধুদেরকে নিয়া খেলার কথা অথবা হোমওয়ার্ক করার কথা, সেইসময় মোবাইল বা কম্পিউটার নিয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং-এর নামে ভার্চুয়াল ডেটিংয়ে (কিংবা অন্য কিছুতে) ব্যস্ত, যা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।’ অবশ্য তার পোস্টে বেশিরভাগ মন্তব্যকারীই দ্বিমত পোষণ করেছেন এবং পোস্টটিকে অপছন্দ (মাইনাস রেটিং) করেছেন।
প্রতিবাদের পাশাপাশি অনেকেই ফেসবুকের বদলে পর্নোগ্রাফিক সাইটগুলো বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ফেসবুক ব্যান হওয়ার পরপর এই সিদ্ধান্তের সমালোচনামূলক পোস্টের সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে ব্যান এড়িয়ে ফেসবুকে ঢোকা যায়, এ নিয়েও প্রচুর পোস্ট প্রকাশিত হয়েছে। এতে করে বিপুল সংখ্যক মানুষ কীভাবে ব্লক করা সাইটে ঢোকা যায় তাও বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করে নিয়েছেন। এর ফলে ভবিষ্যতে যে ওয়েবসাইটই ব্লক করা হোক না কেনো সাধারণ মানুষ সহজেই সেসব সাইটে ঢুকতে পারবেন বলে অভিমত অধিকাংশ মানুষেরই।
তথ্যসূত্রঃ বিডিনিউজ
আমি নেওয়াজ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 30 টি টিউন ও 278 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি শাহ্ নেওয়াজ পাভেল, সাধারণ একজন মানুষ!যা জানি তা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়, কিন্তু জানার যে আগ্রহ তাই নিয়ে সন্তুষ্ট। ব্লগিং - এর সাথে পরিচয় খুব বেশি দিনের না, তবুও বিষয়টাকে ব্যাপকভাবে উপভোগ করছি। ভালো মানের ব্লগার হওয়ার ইচ্ছা আছে। বর্তমানে আমি কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং(বিএসসি ৩য় বর্ষ)বিভাগে পড়াশোনা করছি। বর্তমানে...
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ!!