আসসালামু 'আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। ১ম পর্বের ২য় খণ্ড নিয়ে হাজির হলাম আজকে। আজ ইনশাআল্লাহ আলোচনা করবো বাকি টপোলজিগুলো নিয়ে। এছাড়াও থাকবে LAN, MAN, WAN আর প্রটোকল সম্পর্কে অত্যন্ত বেসিক কিছু কথা ইনশাআল্লাহ। তাহলে শুরু করা যাক।
গত খণ্ডে যে টপোলজিগুলো নিয়ে আলোচনা করছিলাম সেগুলো ছিলো পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট, আর এখন যেটা নিয়ে কথা বলবো সেটা হলো মাল্টিপয়েন্ট। এক্ষেত্রে একটা লম্বা Cable (যাকে Backbone বলা হয়) দিয়ে নোডগুলো যুক্ত করা হয়।
নোডগুলোকে বাস কেবলের সাথে যুক্ত করা হয় Drop line আর Tap এর মাধ্যমে। ছবি দেখে বুঝতেই পারছেন Drop line হলো নোড আর বাস কেবলের মধ্যে সংযোগকারী তার। আর Tap হচ্ছে একটা কানেক্টর যেটা Drop line আর বাস কেবলকে কানেক্ট করে। Tap এর কারণেই Drop line বাস কেবলের বাইরের আবরণ ভেদ করে ভেতরের মূল মেটালিক কোরের সাথে যুক্ত হতে পারে। কোনো সিগনাল যখন Backbone এর ভেতর দিয়ে যেতে থাকে তখন যেতে যেতে এর কিছু এনার্জি তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ফলে সিগনাল ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে থাকে। তাই এই টপোলজিতে সীমিত সংখ্যক নোডই ব্যবহার করা যায়।
রিং টপোলজিতে প্রত্যেকটি ডিভাইস তার দুই পাশে থাকা ডিভাইসের সাথে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট উপায়ে কানেক্টেড থাকে। রিং এর প্রত্যেকটা ডিভাইসের সাথে একটা করে Repeater থাকে। যখন একটা ডিভাইস কোনো ম্যাসেজ অন্য আরেকটা ডিভাইসকে পাঠাতে চায় তখন যে সিগনালটা তৈরি হয় সেটা রিং এর একপাশ থেকে ফরওয়ার্ড হতে থাকে। একটা ডিভাইস যখন সিগনালটা পায় তখন যদি তার নিজস্ব address আর destination address মিল না হয় তখন সেই ডিভাইসটির Repeater ম্যাসেজটার বাইনারি বিটগুলো পুনরায় তৈরি করে দেয় এবং তার পাশের ডিভাইসের কাছে পাঠিয়ে দেয়। এভাবে করে শেষ পর্যন্ত ম্যাসেজটি গন্তব্যে পৌঁছায়।
ধরা যাক, উপরের ছবিতে স্টেশন A স্টেশন B কে একটা ম্যাসেজ পাঠাবে। এখন যদি সিস্টেমে এই নিয়ম করা থাকে যে প্রত্যেক স্টেশন তার ডান পাশের স্টেশনকে ফরওয়ার্ড করবে, তাহলে A থেকে ম্যাসেজ প্রথমে যাবে X এ। X দেখবে যে তার নিজের অ্যাড্রেসের সাথে ডেসটিনেশন অ্যাড্রেস মিলে না। তখন তার Repeater ম্যাসেজের বিটগুলোকে পুনরায় Regenerate করে স্টেশন Y কে পাঠাবে। Y ও দেখবে যে অ্যাড্রেস মিলে না। তখন তার Repeater ও ম্যাসেজকে ঠিকঠাক করে Z কে পাঠাবে। এভাবে করে শেষ পর্যন্ত ম্যাসেজ B এর কাছে পৌঁছায় এবং আর ফরওয়ার্ড হয় না।
এটা নিয়ে তেমন কিছু বলার নেই। যেমন নিচের ছবিতে স্টার আর বাস টপোলজি মিলিয়ে হাইব্রিড টপোলজি করা হয়েছে।
একটা নেটওয়ার্ক কতটুকু দূরত্ব কভার করে তার উপর নির্ভর করে নেটওয়ার্ক তিন ধরনের হয়; LAN (Local Area Network), MAN (Metropolitan Area Network) আর WAN (Wide Area Network). LAN সাধারণত ২ মাইলের চেয়ে কম এলাকা কভার করে, আর WAN এমনকি সারা বিশ্বজুড়েও হতে পারে। আর এ দুটোর মাঝামাঝি MAN সাধারণত ১০ মাইলের বেশি জায়গা কভার করে থাকে।
Local Area Network (LAN) শব্দটার সাথে আমরা সবাই কমবেশি খুব পরিচিত। আমরা আমাদের পিসিতে যখন ইন্টারনেট কানেক্ট করি তখন কিন্তু সেখানে Local Area Network ই লেখা থাকে। নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে এই ধরনের নেটওয়ার্ক লোকালি অপারেট করে। এটা সাধারণত একটা প্রাইভেট কোম্পানির মালিকানাধীন থাকে এবং একটা অফিস বিল্ডিং, স্কুল/কলেজ ক্যাম্পাস, হাসপাতালের মধ্যে যে মেশিনগুলো থাকে সেগুলোকে কানেক্ট করে। LANদিয়ে সাধারণত একটা অফিসে বা হাসপাতালে যে পিসিগুলো বা ওয়ার্কস্টেশনগুলো (পিসির থেকে পাওয়ারফুল) থাকে, সেগুলোর বিভিন্ন Resource গুলো (যেমন প্রিন্টার, কোনো Shared Application Program, Data ইত্যাদি) শেয়ার করা হয়, যাতে করে ঐ অফিসের সবাই এই Resource গুলো Access করতে পারে। এখন LAN এ যেহেতু কম্পিউটারের সংখ্যা সীমাবদ্ধ থাকে তাই এখানে ট্রাফিকও কম থাকে, তাই কমিউনিকেশন দ্রুত হয় এখানে। আর একই কারণে স্বাভাবিকভাবেই LAN ডিজাইন আর মেইনটেইন করা সোজা। প্রথম যুগের LAN এর ডাটা রেট ছিল ৪ থেকে ১৬ Mbps এর মধ্যে। কিন্তু এখন LAN এর স্পিড হয় ১০০ থেকে ১০০০ Mbps এর মধ্যে। LAN সাধারণত Wired Connection ব্যবহার করে স্পিড আর সিকিউরিটির কথা চিন্তা করে, যদিও Wireless হতেও কোনো সমস্যা নেই।
WAN মোটামুটি সবদিক থেকেই LAN এর বিপরীত। নামেই বোঝা যাচ্ছে এর কভারেজ অনেক বেশি (Wide)। এই ধরনের নেটওয়ার্ক একটা দেশ, মহাদেশ এমনকি গোটা বিশ্ব জুড়েও হতে পারে। এইWAN দুই ধরনের হতে পারেঃ Switched WAN এবং Point-to-Point WAN. Switched WAN দুইটি মেশিনকে যুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। যার মাঝখানে থাকে কতগুলো রাউটার/সুইচ (রাউটার, সুইচ নিয়ে পরে আসছি ইনশাআল্লাহ) যেগুলো একটা LAN বা WAN এর সাথে আরেকটি LAN বা WAN কে কানেক্ট করে। আর Point-to-Point WAN একটা সাধারণ পিসি বা ছোট LAN কে কোনো Internet Service Provider (ISP) এর সাথে কানেক্ট করে। এ ধরনের WAN সাধারণত ইন্টারনেট কানেকশন দিতে ব্যবহৃত হয়। নিচের ছবিটা দেখলে ব্যাপারটা সহজে বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
WAN এর স্পিড মোটামুটি LAN এর ১০% এর মত হয়। কারণটা খুব স্পষ্টঃ যেহেতু WAN, LAN এর চেয়ে অনেক বেশি এরিয়া কভার করে আর WAN এ LAN এর চেয়ে ডিভাইস সংখ্যা অনেক বেশি তাই এতো দূরত্ব পার হতে আর এতো ট্রাফিক পেরিয়ে এগিয়ে যেতে স্পিড অনেক কমে যায়। WAN এর স্পিড অল্প কিছু Kbps থেকে কষ্টে-সৃষ্টে সামান্য পরিমাণ Mbps পর্যন্ত উঠতে পারে।
Metropolitan Area Network
MAN একটু কম ইম্পরট্যান্ট। এটি হলো LAN আর WAN এর মাঝামাঝি। এর কভারেজ, গতি, ট্রাফিক হলো মধ্যম পরিমাণ। এর কভারেজ সাধারণত একটা শহর বা একটা জেলা এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। MAN, ISP (Internet Service Provider) হিসেবে কাজ করতে পারে। বাকি আর MAN সম্বন্ধে তেমন একটা জানার প্রয়োজন নেই।
নিচের ছবিটা দেখুন।
এবার আসা যাক প্রটোকল নিয়ে। প্রটোকল হলো কতগুলো নিয়ম-কানুনের সমষ্টি যার কাজ হচ্ছে ডাটা কমিউনিকেশন দেখাশুনা করা। একটা প্রটোকল ডিফাইন করে কি কমিউনিকেট হচ্ছে, কিভাবে কমিউনিকেট হচ্ছে আর কখন কমিউনিকেট হচ্ছে। এই প্রটোকলের তিনটা প্রধান উপাদান হচ্ছে syntax, semantics আর timing.
Syntax দ্বারা বুঝায় যে ম্যাসেজটা আপনি আপনার বন্ধুকে পাঠাচ্ছেন তার গঠনটা বা ফরম্যাটটা কি। সোজা উদাহরণ দিলে যেমন ধরুন আপনি যখন কারো সাথে কথা বলতে শুরু করেন তখন নিশ্চয়ই কথা নেই বার্তা নেই আসল কথাটা পেড়ে ফেলেন না। শুরুতে তাঁকে সালাম দেন, কেমন আছেন জিজ্ঞেস করেন, এভাবে আরও দু-চারটা কথাবার্তা বলার পর আপনার যা জিজ্ঞাস্য তা জিজ্ঞেস করেন। তারপর যখন কথা শেষ হয় তখনও নিশ্চয়ই হুট করে চলে যান না। ইনশাআল্লাহ পরে দেখা হবে, দু'আ করিয়েন ইত্যাদি বলে সালাম জানিয়ে শেষ করেন। মানে সবকিছুরই একটা ফরম্যাট আছে। এটারই একটা ফরমাল রূপকে নেটওয়ার্কিং এর পরিভাষায় Syntax বলে। একটা সিমপল প্রটোকলে প্রথম ৮ বিট (কম্পিউটার বাইনারি ছাড়া কিছু বোঝে না তাই একটা ম্যাসেজকেও বাইনারিতে রূপান্তরিত করা হয়) সেন্ডার অ্যাড্রেস, পরের ৮ বিট রিসিভার অ্যাড্রেস এবং বাকি অংশ আসল ম্যাসেজ এরকম হতে পারে।
Semantics দ্বারা বুঝায় এক একটা বিটগ্রুপ এর meaning কি। যেমন উপরের উদাহরণে যখন আপনি কাউকে সালাম দেন তখন কি বলেন? আসসালামু 'আলাইকুম। এই বাক্যটা দ্বারা লোকটি কি বুঝবে? বুঝবে যে, আপনি আসলে তাঁর উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাম আর শান্তি কামনা করছেন। তখন তিনিও বুঝতে পারবেন এখন তাঁর কি করা উচিত। এই সালামের জবাবে তাঁরও সালামই দেয়া উচিত। এটাই হলো Semantics. তারপর যেমন মোবাইল নাম্বার। প্রথম তিন, বিশেষ করে তিন নম্বর ডিজিটটা দেখেই কিন্তু আপনি বলে দিতে পারেন এটার অপারেটর কোন কোম্পানি। যেমন ০১৭ দেখলে বুঝা যায় গ্রামীণফোন, ০১৫ মানে টেলিটক, ০১৮ মানে রবি এইরকম। তারপর আপনি যদি সরকারের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেন তখন দেখবেন, URL এ লাস্টে লিখা থাকে gov.bd; এখানে আপনি বুঝতে পারবেন লাস্ট দুটো অক্ষর দ্বারা দেশ (bd মানে বাংলাদেশ) বুঝায় আর তার আগে যে ডট থাকে তার আগে প্রতিষ্ঠানের তথ্য থাকে (যেমন gov মানে Government, mil মানে Military ইত্যাদি)। আর নেটওয়ার্কিং এর ক্ষেত্রে যদি বলতে হয় তাহলে উপরে Syntax এ যেমনটা বলেছিলাম প্রথম ৮ বিট একরকম, পরের ৮ বিট আরেকরকম। প্রথম ৮ বিট থেকে বোঝা যায় এটা সেন্ডার অ্যাড্রেস, পরের ৮ বিট দ্বারা বোঝায় এটা রিসিভার অ্যাড্রেস এরকম। এখানে সেন্ডার অ্যাড্রেস যদি ঢাকা হয় আর রিসিভার অ্যাড্রেস যদি ধরুন নীলফামারী হয় তাহলে এটা দেখে রাউটার বুঝতে পারবে তাকে ম্যাসেজটা ঢাকা থেকে উত্তরের দিকে পাঠাতে হবে; যদি রিসিভার অ্যাড্রেস কক্সবাজার হয় তাহলে ঐ একই রাউটার ঢাকা থেকে দক্ষিণে ম্যাসেজটা ফরওয়ার্ড করবে; মানে বিট থেকে বুঝা যাচ্ছে ম্যাসেজের গন্তব্য কি আর সে অনুযায়ী কোথায় ম্যাসেজ ফরওয়ার্ড করতে হবে ইত্যাদি।
এটা দ্বারা দুইটি বৈশিষ্ট্য বুঝায়ঃ কখন ডাটা পাঠানো উচিত আর কি স্পিডে পাঠানো উচিত। যেমন একটা স্পেসিফিক টাইমে নেটওয়ার্কে যদি ট্রাফিক বেশি থাকে তাহলে তখন না পাঠিয়ে অন্য টাইমে পাঠানো; সেন্ডার যদি ১০০ Mbps রেটে ডাটা তৈরি করতে থাকে আর রিসিভার যদি ১ Mbps রেটে ডাটা প্রসেস করতে পারে তাহলে দেখা যাবে রিসিভার ওভারলোড হয়ে যাবে আর কিছু ডাটা মাঝপথে হারিয়ে যাবে। যেমন যদি এমন হয় আপনি খুব স্পিডে কারো সাথে কথা বলছেন তখন দেখা যাবে তিনি আপনার সব কথা প্রসেস করতে পারছেন না আর কিছু ডাটা (কথা) মাঝখানে হারিয়ে গেছে। তারপর আপনাকে দেখা যাবে আবার শুরু থেকে বলতে হচ্ছে। এটাই আরকি।
আজ এ পর্যন্তই। সূচনা পর্ব এ পর্যন্তই থাকলো। আগামী পর্বে ইনশাআল্লাহ থাকছে Circuit Switching, Packet Switching, বিভিন্ন ধরনের Network Delay আর প্রটোকল লেয়ার নিয়ে আলোচনা। আসসালামু 'আলাইকুম।
আয়াতঃ
আর তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ। [সূরা বনী-ইসরাঈল ১৭ঃ৩২]
হাদিসঃ
আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি দুনিয়ার একদিনও অবশিষ্ট থাকে তবুও আল্লাহ আমার পরিজন থেকে অবশ্যই এক ব্যক্তিকে পাঠাবেন। তখনকার দুনিয়া যেরূপে অত্যাচারে ভরে যাবে, সে সেরূপেই তা ন্যায়-ইনসাফে ভরে দিবে। [আবু-দাঊদঃ ৪২৮৩] [হাদিসের মানঃ সহিহ]
আমি ফারহান কনক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।