“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”
প্রথমেই সবাইকে আমার সালাম ও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। ইনশা-আল্লাহ্ আমিও অনেক ভালো আছি। কথা না বাড়িয়ে চলুন টিউন শুরু করা যাক।
আজকের পর্বে আমরা বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ক সার্ভিস ও নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে আলোচনা করবো। এর মধ্যে থাকবে -
নেটওয়ার্ক সার্ভিস বলতে আমরা এমন এক রিসোর্স বুঝবো যা নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত। নেটওয়ার্কে সার্ভার কম্পিউটার অন্যান্য ওয়ার্কস্টেশনের জন্য এরকম বিভিন্ন সার্ভিস প্রদান করে থাকে। এই সার্ভিস হতে পারে প্রিন্টিং, ফাইল শেয়ারিং, অথবা অ্যাপলিকেশন শেয়ারিং।
বন্ধুকে নিয়ে আপনি রেস্টুরেন্ট গেলেন। ওয়েটার এসে সালাম দিয়ে দাঁড়ালো আপনার সামনে। আপনি তাকে যেসব অর্ডার দেবেন তাই সে পালন করবে। সেখানে তার কাজই হলো আপনার হুকুম তামিল করা। তবে সে আপনার জন্য কী করতে পারবে তার একটি সীমা আছে। সে কেবল আপনাকে খাবার সরবরাহের ব্যাপারেই সাহায্য করতে পারে। নেটওয়ার্কের সার্ভিসকে আপনি এরকম ওয়েটার সাথে তুলনা করতে পারেন। সার্ভারে এরকম বিভিন্ন সার্ভিস অপেক্ষা করছে আপনার হুকুম তামিল করার জন্য। আপনি কেবল হুকুম দিন, সে সরবরাহ করবে। আপনার হুকুম তামিল করতে তার কিছু দেরি হতে পারে, কিন্তু সে করবে। তবে এটি ঠিক যে খুব বেশি দেরি হলে আপনি সেই রেঁস্তোরার সার্ভিসের ব্যাপারে সন্দিহান হবেন এবং বিকল্প থাকলে অন্য রেঁস্তোরায় যাবেন। আর যদি একটিমাত্র রেঁস্তোরাই থাকে সেখানে তাহলে সবই সহ্য করতে হবে।
সার্ভারের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনি। সার্ভার আপনাকে বিভিন্ন সার্ভিস দেবে। তবে সেটি হওয়া চাই সময়মতো। সার্ভার যদি নেটওয়ার্ক ইউজারদের বিভিন্ন হুকুম সময়মতো তামিল না করে তাহলে ইউজাররা বিরক্ত হবেন। নেটওয়ার্ক ইউজারদের বেশ কিছু সময় ব্যয় হবে। মিশন ক্রিটিক্যাল বিজনেস এনভায়রনমেন্টে এটি খুবই ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই সার্ভার কোন ধরনের সার্ভিস দিচ্ছে, সে সার্ভিস সময়মতো সঠিকভাবে দিচ্ছে কি না সেটি নিশ্চিত করা হবে নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের প্রধান কাজ।
এখানে আমরা আলোচনা করবো সার্ভারের বিভিন্ন সার্ভিস, সেসব কীভাবে কাজ করে, সেসব সার্ভিস পাওয়ার জন্য ক্লায়েন্টকে কীভবে কনফিগার করতে হবে, ইত্যাদি বিষয়।
আগেই বলা হয়েছে সার্ভার নেটওয়ার্ক ইউজারদের জন্য বিভিন্ন সার্ভিস প্রদান করে থাকে। এসব সার্ভিসের মধ্যে এমন কিছু সার্ভিস আছে যা ইউজাররা সরাসরি ব্যবহার করে, আর কিছু সার্ভিস আছে যা সম্পর্কে ইউজাররা সাধারণত তেমন কিছু বুঝতে পারে না। এধরনের সার্ভিসের মূল ব্যবহারকারী হলো নেটওয়ার্কের ওয়ার্কস্টেশন ও বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ডিভাইস। ইউজাররা সরাসরি ব্যবহার করে এমন সার্ভিসগুলো সম্পর্কে আগেই আমরা আলোকপাত করেছি। এগুলি হলো -
এসব ছাড়াও আরো কিছু নেটওয়ার্ক সার্ভিস আছে যা বিভিন্ন নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে থাকে। এরকম কিছু সার্ভিস সম্পর্কে নিম্নে আলোকপাত করা হলো -
চিত্র ১.১ - টিসিপি/আইপি'র এরকম অনেক প্যারামিটার কনফিগার করা যেতে পারে DHCP ব্যবহার করে। ক্লায়েন্ট কম্পিউটারে উপরের চিত্রের মতো অপশনে ক্লিক করলেই ওয়ার্কস্টেশন DHCP সার্ভারের কাছ থেকে আইপি অ্যাড্রেস নিয়ে নেবে।
সার্ভার শব্দটি শুনে অনেকেই মনে করেন এটি বিশাল একটি কম্পিউটার। আসলে এ ধারণা ভুল। সার্ভার যতোটা না হার্ডওয়্যার বুঝানো হয় তার চেয়ে বেশি বুঝানো হয় সফটওয়্যার। হার্ডওয়্যার তো অবশ্যই, প্রতিটি সফটওয়্যার চালানোর জন্য অবশ্যই হার্ডওয়্যার লাগবে। কিন্তু সার্ভার হলেই যে সেটি বিশালাকৃতির কিংবা ব্রান্ড হতে হবে তা নয়। আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী আপনি আপনার কম্পিউটারকেও সার্ভার বানাতে পারেন। তবে সেখানে কোনো সার্ভিস চালানোর জন্য সার্ভার সফটওয়্যার অবশ্যই লাগবে। সার্ভার হিসেবে যেসব কম্পিউটার ব্যবহৃত হয় সেগুলিতে সাধারণত বিশেষ ধরনের অপারেটিং সিস্টেম চালানো হয় যা নেটওয়ার্কের উপযোগী। এধরনের অপারেটিং সিস্টেমকে বলা হয় নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম (NOS)।
কয়েকটি বহুল ব্যবহৃত নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম হলো -
বিভিন্ন নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও এদের মূল বৈশিষ্ট্য একই আর তা হলো সবাই নেটওয়ার্কের উপযোগী। একটি নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেমের কী কী বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার তা জানব একটু পর।
বিভিন্ন নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম একই ধরনের সার্ভিস বা প্যাকেজ দিতে পারে, তবে একই পারফরম্যান্স নাও দিতে পারে। তাই সার্ভার অপারেটিং সিস্টেম বাছাই করার সময় বেশ কিছু বিষয় ভালোভাবে যাচাই করা দরকার। এরকম কয়েকটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আমরা এখন আলোকপাত করবো।
সার্ভারের দায়িত্ব হলো বিভিন্ন ইউজারের সার্ভিস রিকোয়েস্টে জলদি ব্যবস্থা নেয়া। সাধারণ ওয়ার্কস্টেশন সাধারণত একই সময়ে কেবল একজন ইউজারের হুকুম তামিল করে। কিন্তু নেটওয়ার্ক সার্ভারে একসাথে একশজন ইউজার একশ'রকমের হুকুম দিতে পারে। সেসব হুকুম জলদি তামিল করতে না পারলে ইউজাররা সন্তষ্ট হবে না। এধরনের অবস্থা বিবেচনা করেই সার্ভারে রাখা হয় মাল্টিটাস্কিং। মাল্টিটাস্কিং বলতে বোঝায় একইসময়ে একাধিক কাজ করা। রেঁস্তোরার সেই ওয়েটারের কথা চিন্তা করে আমরা বলতে পারি সে যদি একইসাথে পাঁচজন কাস্টমারের অর্ডার তামিল করতে পারে তাহলে সে মাল্টিটাস্কিং করতে পারে। এরকম ওয়েটারের কদরই বেশি। নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষেত্রে তাই মাল্টিটাস্কিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম মাল্টিটাস্কিং করতে পারে, তবে ভিন্ন ভিন্ন লেভেলে। এই মাল্টিটাস্কিংকে উন্নত করার জন্য কোনো কোনো অপারেটিং সিস্টেম বিশেষ ধরনের মাল্টিটাস্কিং করে থাকে যাকে বলা হয় প্রিম্পটিভ মাল্টিটাস্কিং (preemptive multitasking)। প্রতিটি অ্যাপলিকেশন বা ইউজারকে প্রসেসর যাতে সমান সময় দেয় সেটি নিশ্চিত করে প্রিম্পটিভ মাল্টিটাস্কিং। (রেঁস্তোরার ওয়েটার কোনো একজন কাস্টমারকে বেশি গুরুত্ব দিলে অন্য কাস্টমাররা গোম্বা করতে পারে, তাই নয় কি ?)। উইন্ডোজ এনটি, উইন্ডোজ ২০০০, উইন্ডোজ ২০০৩/২০০৮/২০১২, ইউনিক্স, লিনাক্স, ইত্যাদি অপারেটিং সিস্টেম প্রিম্পটিভ মাল্টিটাস্কিং সুবিধা দেয়।
রেঁস্তোরার এক ওয়েটার যদি একসাথে পাঁচজন কাস্টমারকে সন্তুষ্ট করতে পারে তাহলে ভালো। তবে তার উপর নির্ভর করে দশজনের দায়িত্ব তাকে দেয়া ঠিক হবে না। কারণ সে মানুষ এবং তার কর্মক্ষমতার একটি সীমা আছে। সেই সীমা অতিক্রম করে তাকে যদি একসাথে দশজন কাস্টমারকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব দেয়া হয় তাহলে দেখা যাবে কাস্টমারদের অনেকক্ষণ বসে থাকতে হচ্ছে, বসে থাকতে থাকতে কেউ কেউ বিরক্ত হয়ে চলেও যেতে পারেন। এর সমাধান হলো আরেকজন ওয়েটার সেখানে নিয়োগ করা।
নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষেত্রেও এমন হতে পারে। প্রসেসর একইসাথে বিভিন্ন ইউজারের হুকুম তামিল করতে করতে তার কর্মক্ষমতার কাছাকাছি পৌঁছে গেলে ইউজাররা রেসপন্স পায় খুব ধীরগতিতে। এটির সমাধান করা যেতে পারে আরো বেশি ক্ষমতার প্রসেসর ব্যবহার করে। কোনো কোনো অপারেটিং সিস্টেম, যেমন মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এনটি/২০০০/২০০৩/২০০৮/২০১২, একসাথে একাধিক প্রসেসর ব্যবহার করতে পারে। একাধিক প্রসেসর ব্যবহারের এই সুবিধাকেই বলা হয় মাল্টিপ্রসেসিং। অবশ্য মাল্টিপ্রসেসিং সুবিধা ব্যবহার করতে হলে কেবল অপারেটিং সিস্টেমে সাপোর্ট থাকলেই চলবে না, বিশেষ ধরনের মাদারবোর্ডও দরকার হবে। উইন্ডোজ এনটি ৪.০ সার্ভার একসাথে চারটি প্রসেসর সাপোর্ট করে, তবে বিশেষ OEM ভার্সনে ষোলটি পর্যন্ত প্রসেসর ব্যবহার করা যায়। বড় নেটওয়ার্কে মাল্টিপ্রসেসিং বেশ সুবিধাজনক।
নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেমের আরেকটি বড় গুণ হলো এর স্থিরতা বা স্ট্যাবিলিটি। স্ট্যাবিলিটি বলতে বোঝায় একটি অপারেটিং সিস্টেম একনাগাড়ে এবং বেশি লোড নিয়ে কতক্ষণ কাজ করতে পারে। মনে রাখা দরকার সার্ভার কখনও বন্ধ হয় না, সার্ভার বন্ধ হওয়া মানে নেটওয়ার্ক ইউজাররা সার্ভিস থেকে বঞ্চিত হওয়া। তাই বলা হয় সেই সার্ভারই উত্তম সার্ভার যেটি একবার ইনস্টল ও কনফিগার করার পর কোনোরকম বন্ধ হওয়া ছাড়াই চলছে। কোনো কারণে কখনও সার্ভার যদি বন্ধ থাকে তাহলে সেটিকে ডাউনটাইম হিসেবে ধরা হয়। নেটওয়ার্কে সার্ভারের ডাউনটাইম যতো কম হয় ততো ভালো। স্ট্যাবল অপারেটিং সিস্টেম কোনোরকম ত্রুটি কিংবা রিস্টার্ট ছাড়াই একনাগাড়ে চলতে পারে। নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এনটি'র দুর্বলতা হলো এর স্ট্যাবিলিটি। এতে কোনো ডিভাইস ড্রাইভার কিংবা সফটওয়্যার ইনস্টল করা হলেই রিস্টার্ট করার দরকার পড়ে। উইন্ডোজ ২০০০ এ কমসংখ্যক রিস্টার্টের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, আর উইন্ডোজ ২০০৩/২০০৮/২০১২ সার্ভারে এটিকে আরও উন্নত করা হয়েছে। সেখানে প্রতিবার কম্পিউটার শাটডাউন কিংবা রিস্টার্ট করার সময় সার্ভার জানতে চাইবে কেন সেটি বন্ধ বা রিস্টার্ট করছেন। স্থিরতা বা স্ট্যাবিলিটির দিক থেকে ইউনিক্স ও লিনাক্স বেশ ভালো।
আগেই বলা হয়েছে সার্ভার সফটওয়্যার যাই চালাই না কেন তার জন্য অবশ্যই হার্ডওয়্যার লাগবে। নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম কোনটি ব্যবহার করছি এবং কোন ধরনের সার্ভিস হিসেবে এটিকে ব্যবহার করবো তার উপর ভিত্তি করে সার্ভার হার্ডওয়্যার বাছাই করা দরকার। তবে প্রতিটি সার্ভারের নিচের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার -
একথা ঠিক যে ফল্ট টলারেন্স সিস্টেম তৈরি করায় যে অর্থ ব্যয় করবেন তা ভালো বিনিয়োগ। কারণ ডাটা নষ্ট হওয়ার চেয়ে টাকার মূল্য অনেক কম। ধরুন আপনি ১০ জন লোক নিয়ে কাজ করলেন একমাস যাবৎ। আপনার প্রজেক্ট প্রায় শেষের দিকে। এমন সময় হার্ডডিস্ক নষ্ট হয়ে গেল (এবং এটি হওয়া খুবই স্বাভাবিক, আজ হোক কাল হোক আপনার হার্ডডিস্ক নষ্ট হবেই)। তাহলে কী করবেন ? অনেক সময় কিছু ডাটা কখনই আবার নূতন করে সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। ফল্ট টলারেন্স ব্যবস্থা থাকলে এধরনের অসুবিধা হবে না।
সার্ভার হার্ডওয়্যার বাছাইয়ের সময় সাথে একটি UPS এবং একটি টেপ ব্যাকআপ ইউনিট অবশ্যই রখা দরকার। ফল্ট টলারেন্স ব্যবস্থা থাকলেও নিয়মিত ডাটা ব্যাকআপ করার দরকার পড়ে। সেজন্য টেপ ব্যাকআপ ইউনিট দরকার পড়বে আপনার। আর লোডশেডিঙে হঠাৎ করে যাতে সার্ভার বন্ধ হয়ে ডাটা লস হতে না পারে সেজন্য দরকার UPS বা আনইন্টারাপ্টেবল পাওয়ার সাপ্লাই। UPS কেনার সময় দেখতে হবে এটি কতক্ষণ ব্যাকআপ দিতে পারবে এবং রেসপন্স টাইম কতো।
নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেমসমূহ প্রায় একইরকম সার্ভিস প্রদান করলেও আপনার জন্য দরকার কোন নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম কখন দরকার হবে, কোনটির দুর্বলতা কী এবং কোন কাজের জন্য কোনটি ব্যবহৃত হয়। কোনো কোনো সার্ভার সফটওয়্যার বেশ ভালো সার্ভিস দেয় কিন্তু সেটি চালানো খুবই কঠিন, যেমন ইউনিক্স। আবার কোনো অপারেটিং সিস্টেম চালানো সহজ কিন্তু খুব স্ট্যাবল নয়। আপনার প্রয়োজন এবং আপনার দক্ষতার উপর ভিত্তি করে বেছে নিতে হবে কোনটি চান। এখানে বিভিন্ন সার্ভার সফটওয়্যারের উপর সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হলো।
চিত্র ১.২ - বিভিন্ন ধরনের উইন্ডোজ সার্ভার অপারেটিং সিস্টেম।
সফটওয়্যার, বিশেষ করে অপারেটিং সিস্টেমের কথা বলতে গেলে মাইক্রোসফটের কথা প্রথমেই চলে আসে। মাইক্রোসফট উইন্ডোজ সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেম। উইন্ডোজের সাফল্যের হাত ধরে ১৯৯৩ সালে মাইক্রোসফট বাজারে ছাড়ে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এনটি ৩.৫১। সার্ভার অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে তখনই এটি অনেকের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়। এরপর ১৯৯৫ সালে বাজারে আসে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এনটি ৪.০ সার্ভার। এবছরই বাজারে আসে ব্যাপক জনপ্রিয় মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ৯৫। এনটি ৪ এর ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণ হলো এর ইন্টারফেস পুরোটিই উইন্ডোজ ৯৫ এর অনুরূপ। উইন্ডোজ এনটি'র এই গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেসের কারণে সহজে সার্ভার ম্যানেজ করা যায়। এই সার্ভারের সাথে আসে ইন্টারনেট ইনফরমেশন সার্ভার যা ওয়েব, এফটিপি এবং গফার সার্ভার হিসেবে কাজ করে। এছাড়া পাওয়া যায় নেটওয়ার্কের অন্যান্য প্রায় সব সার্ভিস, যেমন - DHCP, DNS, RAS, Messaging ইত্যাদি। পরবর্তীতে এর জন্য ইন্টারনেট ইনফরমেশন সার্ভার ৪ ছাড়া হয় যা উইন্ডোজ এনটি অপশন প্যাক ৪ এর অন্তর্গত। এই অপশন প্যাকে ওয়েব, FTP, NNTP, SMTP সহ ইনডেক্স সার্ভার, সার্টিফিকেট সার্ভার, মাইক্রোসফট ট্রানজেকশন সার্ভার, ইত্যাদি রয়েছে। পরবর্তীতে উইন্ডোজ এনটি ৪.০ সার্ভারকে ব্যাকঅফিস সার্ভারের অন্তর্গত করা হয়। ব্যাকঅফিস সার্ভারে রয়েছে আরো কিছু সার্ভার অ্যাপলিকেশন, যেমন প্রক্সি সার্ভার, এক্সচেঞ্জ সার্ভার, এসকিউএল সার্ভার, এসএনএ সার্ভার, এসএমএস সার্ভার, সাইট সার্ভার, ইত্যাদি। এসব সার্ভার উইন্ডোজ এনটি সার্ভারের অধীনে চলে এবং মেসেজিং, ডাটাবেজ, সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট, ই-কমার্স অ্যাপলিকেশন ইত্যাদি সার্ভিস দিয়ে থাকে।
কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে উইন্ডোজ এনটি সার্ভার বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ছোট ও মাঝারি ধরনের নেটওয়ার্কের জন্য এটি একটি ভালো সার্ভার। এনটি সার্ভার ব্যবহার করবেন কি না সে সিদ্ধান্তে আসার আগে আসুন জেনে নেয়া যাক এর সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ।
উইন্ডোজ এনটি ব্যবহারের সুবিধা হলো -
উইন্ডোজ এনটি ব্যবহারের অসুবিধা হলো -
উইন্ডোজ এনটি ৪.০ সার্ভার ইনস্টল করার জন্য মেশিনের সর্বনিম্ন যে যোগ্যতা থাকা দরকার তা হলো -
এই কনফিগারেশনের কোনো মেশিনে এনটি ইনস্টল করতে পারলেও কাজের কাজ কিছুই হবে না। বাস্তবে কাজ করতে চাইলে আপনার মেশিনের কনফিগারেশন হওয়া দরকার - ৭৫ মেগাহার্টজ পেন্টিয়াম বা তার চেয়ে শক্তিশালী প্রসেসর, ৬৪ মেগাবাইট র্যাম। সেইসাথে লাগবে ভিজিএ ডিসপ্লে মনিটর।
চিত্র ১.৩ - উইন্ডোজ এনটি নেটওয়ার্কে প্রাইমারি ডোমেইন কন্ট্রোলারে থাকে সিকিউরিটি পলিসি ও ইউজার ডাটাবেজ। এর ব্যাকআপ ডোমেইন কন্ট্রোলার এসব ডাটাবেজ মেইনটেইন করে এবং পিডিসি অকেজো হয়ে গেলে পিডিসি'র কাজ করতে পারে বিডিসি।
উইন্ডোজ এনটি নেটওয়ার্কের সিকিউরিটি পুরোটিই নির্ভর করে এর ডোমেইনের উপর। উইন্ডোজ এনটিতে ডোমেইন হলো সেসব কম্পিউটার নিয়ে একটি গ্রুপ যারা এক সিকিউরিটি জোনের অধীন। এক ডোমেইনের ইউজার ওই ডোমেইনের মধ্যে চলাচল করতে পারে। প্রতিটি ডোমেইনে অবশ্যই একটি এবং কেবল একটি প্রাইমারি ডোমেইন কন্ট্রোলার (PDC) থাকে। এখানে ইউজার ডাটাবেজ, যাকে বলা হয় সিকিউরিটি অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার বা SAM, ও অন্যান্য সিকিউরিটি পলিসি থাকে। ইউজার নেটওয়ার্কে লগ-ইন করার সময় যে ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড দেয় তা যাচাই করে এই পিডিসি। কোন ইউজার কোন রিসোর্সে অ্যাক্সেস পাবে তার লিস্ট মেইনটেইন করে এই PDC। একটি PDC কোনো কারণে অকেজো হয়ে গেলে অন্য কোনো কম্পিউটার যাতে তার কাজ চালাতে পারে সেজন্য একটি ডোমেইনে থাকে একাধিক ব্যাকআপ ডোমেইন কন্ট্রোলার বা BDC। BDC অকেজো হয়ে গেলে কোনো একটি বিডিসিকে প্রমোশন দিয়ে পিডিসি বানিয়ে দেয়া যায় কারণ BDC সবসময় পিডিসির SAM ডাটাবেজ ও অন্যান্য সিকিউরিটি সেটিংসের কপি তার কাছে রাখে।
উইন্ডোজ ২০০০/২০০০৩/২০০৮/২০১২ - এ কোনো কম্পিউটারকে ডোমেইন কন্ট্রোলার হিসেবে ব্যবহার করতে হলে সেখানে অ্যাক্টিভ ডিরেক্টরি (AD) ইনস্টল করতে হয়। এখানে অ্যাক্টিভ ডিরেক্টরি সমৃদ্ধ কম্পিউটার হলো ডোমেইন কন্ট্রোলার। কোনো উইন্ডোজ ২০০০/২০০০৩/২০০৮/২০১২ ডোমেইনে একাধিক ডোমেইন কন্ট্রোলার থাকতে পারে, তবে সেগুলির কোনোটিই প্রাইমারি বা ব্যাকআপ ডোমেইন কন্ট্রোলার নামে পরিচিত হবে না। এখানে সবকটি ডোমেইন কন্ট্রোলারে ইউজার ডাটাবেজে পরিবর্তন আনা যায় এবং কোনো ডোমেইন কন্ট্রোলার অকেজো হয়ে গেলে অন্য ডোমেইন কন্ট্রোলার আপনা থেকেই ইউজারদের অথেন্টিকেট করতে থাকে।
চিত্র ১.৪ - এক ডোমেইনের ইউজারকে অন্য ডোমেইনের রিসোর্সে অ্যাক্সেস করতে দুই ডোমেইনের মধ্যে ট্রাস্ট রিলেশনশিপ থাকা দরকার। রিসোর্স ডোমেইন যদি ইউজার ডোমেইনকে ট্রাস্ট করে তাহলেই সে ইউজার ওই রিসোর্সে অ্যাক্সেস করতে পারবে।
একই ডোমেইনের ইউজার কেবল সেই ডোমেইনের রিসোর্সে অ্যাক্সেস করতে পারবে। এক ডোমেইন থেকে আরেক ডোমেইনের কোনো রিসোর্সে অ্যাক্সেস করতে চাইলে দুই ডোমেইনের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক বা ট্রাস্ট রিলেশনশিপ (trust relationship) প্রতিষ্ঠা করার দরকার হয়। ডোমেইনকে আমরা তুলনা করতে পারি রাষ্ট্রের সাথে। আমি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিক, আমি যদি অন্য রাষ্ট্রে যেতে চাই তাহলে সেই রাষ্ট্রের অনুমতি বা ভিসা লাগবে। এই ভিসা তখনই পাবো যদি সেই দেশের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকে।
চিত্র ১.৫ - নভেল নেটওয়্যার সার্ভার অপারেটিং সিস্টেম।
নেটওয়ার্কিং অপারেটিং সিস্টেমের কথা আসলেই প্রথমে মনে পড়ে নভেল নেটওয়্যারের কথা। আশির দশকে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারকারী নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম নভেল নেটওয়্যারের প্রস্ততকারক Novel, Inc.। নভেল ৩.১১ ছিল পুরো আশির দশকে ফাইল ও প্রিন্ট সার্ভিসের জন্য ব্যবহৃত সেরা সার্ভার সফটওয়্যার। এরপরেও নভেলের বাজার বাড়তে থাকে। এর সর্বশেষ ভার্সন হলো নভেল নেটওয়্যার ৬।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতেও উইন্ডোজ এনটি'র চেয়ে নভেল নেটওয়্যার ছিল এগিয়ে। এর মধ্যে অনেকস্থানেই নভেল নেটওয়্যার প্রতিস্থাপিত করেছে উইন্ডোজ এনটি। কারণ নভেল নেটওয়্যার থেকে উইন্ডোজ এনটিতে মাইগ্রেট করার সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে এবং এনটি একইসাথে নেটওয়্যার ও ইউনিক্স নেটওয়ার্কের সাথে কাজ করতে পারে।
শুরুতে নভেল নেটওয়্যার মার্কেট পেলেও আসলে এটি ডিজাইন করা হয় ছোট নেটওয়ার্কের জন্য যেখানে একটিমাত্র সার্ভার থাকবে। আর তাই নভেল ৩ সার্ভার নেটওয়ার্কে থাকা অবস্থায় সেখানে আরেকটি সার্ভার স্থাপন করা ছিল সত্যিই কঠিন। এক সার্ভারের ইউজার ও রিসোর্সকে অন্য সার্ভারে নেয়ার সহজ উপায় ছিল না। আপনি যদি নতুন কোনো সার্ভার স্থাপন করেন তাহলে সেখানেও আগের সার্ভারের মতোই নূতন করে একই ইউজার অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। এছাড়া নভেল নেটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যান্ডার্ড TCP/IP প্রটোকল ব্যবহার না করে ব্যবহার করত তাদের নিজস্ব IPX/SPX প্রটোকল। অন্য নেটওয়ার্কের সাথে কাজ করার অসুবিধা তৈরি হয় এই প্রটোকল ব্যবহারের জন্যই।
১৯৯৫ সালে বাজারে এলো নভেল নেটওয়্যার ৪.১১। এতে অনেক উন্নতি ঘটল। এখানে দেয়া হলো টিসিপি/আইপি সাপোর্ট এবং নূতন ডিরেক্টরি সার্ভিস নভেল ডিরেক্টরি সার্ভিস (NDS)। ১৯৯৮ সালে নভেল বাজারে ছাড়ে নভেল নেটওয়্যার ৫। এতে টিসিপি/আইপি'র পুরো সাপোর্ট রয়েছে এবং এর সাথে আছে বেশ কিছু সার্ভার সার্ভিস, যেমন DHCP, DNS, ইত্যাদি। এখানে NDS এর অনেক উন্নতি হয়েছে।
নভেল ডিরেক্টরি সার্ভিস বা NDS - এ নেটওয়ার্কের প্রতিটি রিসোর্স লিস্ট থাকে। নেটওয়ার্কে কোনো ইউজার কোনো রিসোর্স খুঁজতে চাইলে দেখবে NDS - এ। সেখানে নেটওয়ার্কের প্রতিটি ওয়ার্কস্টেশন, শেয়ার, প্রিন্টার, শেয়ারড ডিভাইস, ইউজার, ইত্যাদি বিভিন্ন স্তরে বিন্যস্ত থাকে। নভেল ডিরেক্টরি সার্ভার নেটওয়্যারকে এন্টারপ্রাইজ নেটওয়ার্কের উপযোগী করে তোলে। নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের নিকট নেটওয়্যার ডিরেক্টরি সার্ভিস বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, কারণ এর মাধ্যমে তারা একই স্থান থেকে বিভিন্ন সার্ভার ও রিসোর্স ম্যানেজ করতে পারে। মাইক্রোসফট এই ডিরেক্টরি সার্ভিসের আদলেই উইন্ডোজ ২০০০ সার্ভারের সাথে যোগ করে অ্যাক্টিভ ডিরেক্টরি সার্ভিস (ADS)।
নভেল নেটওয়্যারের সুবিধা হলো -
নভেল নেটওয়্যারের অসুবিধা হলো -
নভেল নেটওয়্যার ৫ ইনস্টল করার জন্য আপনার কম্পিউটারের সর্বনিম্ন যে যোগ্যতা দরকার তাহলো - পেন্টিয়াম প্রসেসর, ৬৪ এমবি র্যাম এবং ১ জিবি হার্ডডিস্ক স্পেস। তবে ভালো পারফরম্যান্স পেতে হলে পেন্টিয়াম ২ প্রসেসর, ১২৮ এমবি র্যাম এবং ৪ জিবি হার্ডডিস্ক স্পেস দরকার পড়বে।
চিত্র ১.৬ - ইউনিক্স সার্ভার অপারেটিং সিস্টেম।
চিত্র ১.৭ - ইউনিক্স সার্ভার অপারেটিং সিস্টেম।
ইউনিক্স শব্দটি শুনলেই অনেকে আঁতকে উঠেন, যেমন ছোটবেলায় আমরা ইংরেজী কিংবা অংকের কথা শুনলে আঁতকে উঠতাম। এর কারণ হলো ইউনিক্স চালানো বেশ কঠিন এবং এটি শিখতে যাওয়া মানে আপনাকে প্রস্ততি নিতে হবে বিশাল এক কমান্ড লিস্ট মুখস্ত করার জন্য। এর সব কমান্ডই দিতে হবে কমান্ড প্রম্পট থেকে। উইন্ডোজের মতো পয়েন্ট অ্যান্ড ক্লিক সুবিধা এতে নেই। তবে অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের মতোই এটি বিভিন্ন অ্যাপলিকেশন ও সার্ভিস চালাতে পারে। অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে এটি বেশ দ্রুতগতির, নির্ভরযোগ্য এবং শক্তিশালী। এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক শক্তিশালী হওয়ায় ইন্টারনেট সার্ভার হিসেবে ইউনিক্স ব্যবহৃত হয়।
ইউনিক্সের যেমন বিভিন্ন সংস্করণ রয়েছে, তেমনি রয়েছে এক বিশাল ইতিহাস। এর জন্ম হয়েছিল AT&T'র বেল ল্যাবরেটরিতে ষাটের দশকে। তারপর থেকে এর বিভিন্ন সংস্করণ হয়েছে। সবচেয়ে আলোচিত ভার্সন হলো ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলি'র ছাত্রদের উদ্ভাবিত BSD (বার্কলি সফটওয়্যার ডিস্ট্রিবিউশন) ইউনিক্স। তারা বেল ল্যাবের ইউনিক্স কোড নিয়ে নূতন প্রোগাম করে এবং এটি বেশ জনপ্রিয় হয়। BSD ইউনিক্সের কোড বিনামূল্যে বিতরণ করা হয় এবং এর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন সংস্করণ গড়ে তোলে। উল্লেখযোগ্য ইউনিক্স ভার্সন হলো - সান মাইক্রোসিস্টেমসের সোলারিস, হিউলেট-প্যাকার্ডের এইচপি-ইউএক্স (HP-UX), আইবিএম - এর AIX, এবং অ্যাপল কম্পিউটারের অ্যাপল OSX সার্ভার।
AT&T ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করলেও তারা সেটি বিক্রি করতে পারেনি আমেরিকার এন্টি ট্রাস্ট আইনের কারণে। এন্ট্রি ট্রাস্ট মামলার পর AT&T তাদের কোড প্রকাশে বাধ্য হয়। এরপর তারা ইউনিক্সকে উন্নত করার চেষ্টা করে এবং তৈরি করে ইউনিক্স সিস্টেম ফাইভ (UNIX System V)। এর সর্বশেষ সংস্করণ হলো System V Release 4 (SVR4)। AT&T এটি ডেভেলপ করে সান মাইক্রোসিস্টেমসের সাথে যৌথভাবে।
আপনার যদি ইউনিক্স জানা নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর থাকে তাহলেই কেবল সার্ভারে ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পারেন।
ইউনিক্সের সুবিধা হলো -
ইউনিক্সের অসুবিধা হলো -
ইউনিক্সের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো এদের অনেক ভার্সন, একেকটি আরেকটির চেয়ে ভিন্ন। আবার একটি রিলিজ আরেকটি থেকে ভিন্ন। সব ইউনিক্স সবধরনের প্রসেসরে চলে না।
চিত্র ১.৮ - বিভিন্ন ধরনের লিনাক্স সার্ভার অপারেটিং সিস্টেম।
লিনাক্সের নাম এতদিনে নিশ্চয় শুনে থাকবেন। পত্রপত্রিকা খুললে দু'একটি নিবন্ধ লিনাক্সের উপর দেখতে পাবেনই। লিনাক্স আসলে ইউনিক্সের মতোই একটি আলাদা অপারেটিং সিস্টেম। লিনাক্সের জন্মদাতা হলেন হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লিনাস টোরভাল্ড। এটি একটি ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম। অর্থাৎ এর সোর্স কোড সবার জন্য উন্মুক্ত। আপনি সোর্স কোড দেখে নিজের প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করে নিতে পারেন (যদি সেই স্তরের প্রোগ্রামার হন)। এর আরেকটি সুবিধা হলো বিভিন্ন প্ল্যাটফরমের জন্য উপযুক্ত কম্পাইলার দিয়ে সোর্স কোড কম্পাইল করে নিলেই সেটি সেই প্ল্যাটফরমের উপযোগী হবে।
বিশ্বজুড়ে লিনাক্স নামের শক্তিশালী এবং বিশ্বস্ত এই অপারেটিং সিস্টেমটিকে যেভাবে সবাই গ্রহণ করে নিয়েছে তা সত্যিই বিস্ময়কর। এখন ইন্টারনেট থেকে শুরু করে বড় বড় কোম্পানীর নেটওয়ার্ক সার্ভার সবই ইউনিক্স ও লিনাক্স সিস্টেমের উপরে এতোটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যে উইন্ডোজ ছাড়া পৃথিবী চললেও লিনাক্স কিংবা ইউনিক্স ছাড়া পৃথিবী অচল।
অসম্ভব রিলায়াবিলিটি, স্ট্যাবিলিটি ও শক্তিশালী অপারেটিং সিস্টেম বলতে যা বুঝায় তার সবই আছে লিনাক্সের মাঝে, তাই এর এতো কদর। সারা বিশ্বে লিনাক্স এখন দারুণভাবে ব্যবহার হচ্ছে। এটি ব্যবহারের অন্যতম কারণ হচ্ছে এর সিকিউরিটি। লিনাক্স প্রচন্ড রকমের সিকিউরড। ভাইরাস আক্রমণ, হ্যাক হয়ে যাওয়া এ কথাগুলো এখানে না বললেও চলে। আরও আছে, দীর্ঘদিনের ব্যবহারের ফলে উইন্ডোজ স্লো হয়ে যায় অথচ একবার ইনস্টল দিয়েই আপনি লিনাক্স চালাতে পারবেন বছরের পর বছর। আর তাছাড়াও বাইরের দেশে যেখানে হাজার হাজার টাকা দিয়ে একটি অপারেটিং সিস্টেম কিনতে হয়, তার উপর রয়েছে অন্যান্য অ্যাপলিকেশন কেনার খরচ, সেখানে লিনাক্সে পুরো অপারেটিং সিস্টেমের সাথে হাজারখানেক অ্যাপলিকেশন পাবেন ফ্রীতে। এতো খরচের হাত থেকে বাঁচতে লিনাক্স কে তখন আপনার আশীর্বাদই মনে হবে। এছাড়াও হোম ইউজার থেকে শুরু করে নেটওয়ার্ক এনভায়রনমেন্টে লিনাক্স অপরিহার্য। লিনাক্সের কয়েকটি ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে - অ্যাপলিকেশনন সার্ভার, ডেটাবেজ সার্ভার, ওয়ার্কস্টেশন, এক্স টার্মিনাল ক্লায়েন্ট, নেটওয়ার্ক সার্ভার, ইন্টারনেট সার্ভার, ক্লাস্টার কম্পিউটিং, এমবেডেড সিস্টেমস, ইউনিভার্সিটি সিস্টেম, বিভিন্ন কাস্টোমাইজেবল সলিউশন যেমন - হোটেল, মেডিক্যাল অফিস, রিজার্ভেসন সিস্টেম, লিগ্যাল অফিস, গর্ভমেন্ট, মিডিয়া টেলিকমিউনিকেশন, আইএসপি, রিসেলার, ফিন্যান্সিয়াল ট্রেডার ওয়ার্কস্টেশন ইত্যাদি শত শত ক্ষেত্রেই লিনাক্সের প্রয়োগ হচ্ছে সফলতার সাথে।
আপনার উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম কতটা স্থিতিশীল ? উইন্ডোজ ৭ আসার পর উইন্ডোজ অবশ্য অনেকটাই স্থিতিশীল হয়েছে, তার আগের ভার্সনগুলোর অবস্থা বেশ খারাপ। তবে লিনাক্সের মত স্থিতিশীল আর কিছু নেই। লিনাক্স হ্যাং বা ক্র্যাশ করেনা বললেই চলে। কোনো সফটওয়্যার উল্টাপাল্টা ব্যবহার করলে সেটা জোরপূর্বক বন্ধ করে দেয়া যায়। ফলে কম্পিউটার রিস্টার্টের দরকার হয়না বললেই চলে। এক বছর টানা কম্পিউটার চালু রেখেছে রিস্টার্টের দরকার ছাড়াই এমন উদাহরণ অনেক। সার্ভার পিসিতে লিনাক্স প্রথম পছন্দ হবার এটি একটি প্রধান কারণ।
লিনাক্সেরও আছে বিভিন্ন ভার্সন। এর মধ্যে জনপ্রিয় লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন হলো রেডহ্যাট লিনাক্স। বর্তমানে পাওয়া যায় রেডহ্যাট এন্টারপ্রাইজ লিনাক্স ৫। এটির সাথে এফটিপি সার্ভার, ওয়েব সার্ভার, মেইল সার্ভার, এনএনটিপি সার্ভার সহ বেশ কিছু নেটওয়ার্ক সার্ভিসের সুবিধা আছে। বর্তমানে লিনাক্সের বিভিন্ন জনপ্রিয় সংস্করণ যেমন ফিডোরা ও উবুন্টু খুবই সহজবোধ্য ও ব্যবহারযোগ্য। আশা করা যায় এটি শীঘ্রই ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে উইন্ডোজকে প্রতিস্থাপন করবে। লিনাক্সে উইন্ডোজের মতো গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস দেয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় এক্স-উইন্ডোজ। এর প্লাসপয়েন্ট হলো এটি ওপেন সোর্স বা ফ্রি, উইন্ডোজের মতো এটিকে কিনতে হয় না।
লিনাক্সের বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউশনে কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। ইউনিক্সের মতো এটিও শেখা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায় বিভিন্ন ভার্সনের কারণে। তবে এর জনপ্রিয়তার কারণ হলো এটি ৩৮৬ মেশিনেও চলে, এর জন্য বিভিন্ন অ্যাপলিকেশন যা তৈরি হচ্ছে তার বেশিরভাগই বিনা পয়সায় পাওয়া যায় এবং অপারেটিং সিস্টেমও পাওয়া যায় বিনা পয়সায়।
আপনি ইউনিক্স ব্যবহারে আগ্রহী হলেই কেবল লিনাক্স ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এখানেও লিনাক্সে দক্ষ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর দরকার পড়বে।
লিনাক্সের সুবিধা হলো -
লিনাক্সের অসুবিধা হলো -
লিনাক্স ইনস্টল করার জন্য আপনার কম্পিউটারের সর্বনিম্ন যোগ্যতা হওয়া দরকার - ইন্টেল ৩৮৬ প্রসেসর, ১৬ এমবি র্যাম এবং ১২৫ এমবি হার্ডডিস্ক স্পেস। তবে ভাল পারফরম্যান্স পাওয়ার জন্য মোটামুটি কনফিগারেশন হওয়া দরকার ইন্টেল ৭৫ মেগাহার্টজ প্রসেসর, ৩২ এমবি র্যাম এবং ১ জিবি হার্ডডিস্ক স্পেস।
চিত্র ১.৯ - অ্যাপল কম্পিউটার্সের তৈরি সার্ভার সফটওয়্যার অ্যাপলশেয়ার আইপি।
অ্যাপল কম্পিউটার্সের তৈরি সার্ভার সফটওয়্যার হলো অ্যাপলশেয়ার। এর বিভিন্ন ভার্সনের মধ্যে অ্যাপলশেয়ার ৪ - ই প্রথম ভালো ফাইল এবং প্রিন্টার সার্ভার হিসেবে কাজ করে। ১৯৯৭ সালে বাজারে আসে অ্যাপলশেয়ার ৫ আর অ্যাপলশেয়ার ৫.০.৩ থেকে টিসিপি/আইপিসহ ই-মেইল, এফটিপি ও ওয়েব সার্ভার অ্যাপলিকেশন রয়েছে। অ্যাপলশেয়ার ৫ এর আরেকটি ভালো ফিচার হলো এই যে, একটি অ্যাপলশেয়ার লাইসেন্স ব্যবহার করে কয়েকটি সার্ভারে সেটি ইনস্টল করা যায়। এর ফলে নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এক কম্পিউটারে এফটিপি সার্ভার, আরেকটিতে এনএনটিপি সার্ভার এবং অন্য কম্পিউটারে ই-মেইল সার্ভার সেটআপ করে সার্ভারের কাজকে ডিস্ট্রিবিউটেড করতে পারে।
সর্বশেষ ভার্সন হলো অ্যাপলশেয়ার আইপি ৬.১। এটি ম্যাক ওএস ৮.৫ এও চলে এবং এতে টিসিপি/আইপি নেটিভ সাপোর্ট রয়েছে। ফলে উইন্ডোজ এনটি নেটওয়ার্কের সাথে এটি কাজ করতে পারে। উইন্ডোজ মেশিনের নেটওয়ার্ক নেইবরহুড থেকে সরাসরি ম্যাকিন্টোশ কম্পিউটারকে দেখা সম্ভব হলো অ্যাপলশেয়ার আইপি'র ফলে।
অ্যাপলশেয়ার ব্যবহারের সুবিধা হলো -
অ্যাপলশেয়ারের অসুবিধা হলো -
অ্যাপলশেয়ার ব্যবহারের জন্য আপনার কম্পিউটারের সর্বনিম্ন কনফিগারেশন হওয়া দরকার - পাওয়ারপিসি ৬০২ প্রসেসর, ৬৪ এমবি র্যাম এবং ৫০০ এমবি হার্ডডিস্ক স্পেস। তবে ভালো পারফরম্যান্স পাওয়ার জন্য ব্যবহার করতে হবে কমপক্ষে পাওয়ারপিসি ৬০৪/২০০ মেগাহার্টজ প্রসেসর, ৯৬ এমবি র্যাম এবং ১ জিবি হার্ডডিস্ক স্পেস।
চিত্র ১.১০ - অ্যাপলের ম্যাক ওএস এক্স সার্ভার অপারেটিং সিস্টেম।
মার্চ ১৯৯৯ সালে অ্যাপল কম্পিউটার্স বাজারে ছাড়ে ম্যাক ওএস এক্স সার্ভার। এটি মূলত বিএসডি ইউনিক্সের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এর কোডকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয় এই আশায় যে বিভিন্ন দেশের ডেভেলপাররা লিনাক্সের মতো একেও ডেভেলপ করবে। কিন্তু বাস্তবে সে ধারণা কাজ করে নি।
ম্যাক ওএস এক্স সার্ভার ব্যবহারের সুবিধা হলো -
ম্যাক ওএস এক্স সার্ভারের অসুবিধা হলো -
নেটওয়ার্কে কেবল সার্ভার সফটওয়্যার ইনস্টল করলেই চলবে না, প্রতিটি ওয়ার্কস্টেশনে চাই ক্লায়েন্ট সফটওয়্যার। ক্লায়েন্ট মেশিনে ব্যবহার করা হয় ক্লায়েন্ট অপারেটিং সিস্টেম। একটি নেটওয়ার্কে কী কী ক্লায়েন্ট অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা যায় এবং কোনটির কী সুবিধা সে সম্পর্কে জানা দরকার। এখন আমরা বিভিন্ন ক্লায়েন্ট অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে আলোচনা করবো।
আজকের পিসির জনপ্রিয়তার মূলে আছে মাইক্রোসফট ডসের ভূমিকা। মাইক্রোসফট ডসই প্রথম পিসি অপারেটিং সিস্টেম। তবে এর অনেক অসুবিধা। এটি স্ট্যান্ড অ্যালোন কম্পিউটারের উপযোগী হলেও নেটওয়ার্কে একে ব্যবহার করা যায় না। ডসে নেটওয়ার্ক সাপোর্ট নেই, তবে এর জন্য বিভিন্ন সার্ভারের উপযোগী ক্লায়েন্ট সফটওয়্যার পাওয়া যায়। যেমন নেটওয়্যার সার্ভারের সাথে সংযোগ গড়ার জন্য আছে ডস ক্লায়েন্ট ফর নেটওয়্যার এবং উইন্ডোজ এনটি'র ক্লায়েন্ট হিসেবে কাজ করার জন্য আছে মাইক্রোসফট ল্যান ম্যানেজার।
ডসে কোনো গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস না থাকায় এটিতে কাজ করা অনেকের জন্যই অসুবিধাজনক। ডসের পরে আসে উইন্ডোজ। উইন্ডোজে নেটওয়ার্কিং যোগ করা হয় উইন্ডোজ ফর ওয়ার্কগ্রুপ বা উইন্ডোজ ৩.১১ থেকে। তবে এই অপারেটিং সিস্টেমের দুর্বলতা হলো এসবে মাল্টিটাস্কিং ছিল না। উইন্ডোজে মাল্টিটাস্কিং তখনও খুবই শৈশবাবস্থায়। বর্তমানে এ দুটি অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহৃত হয় না বললেই চলে।
উইন্ডোজ ৩.x এর পর ১৯৯৫ সালের আগস্ট মাসে এলো মাইক্রোসফটের অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ৯৫। উইন্ডোজ ৯৫ যুগান্তকারী এই জন্য যে এতে সত্যিকার অর্থেই গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস যোগ করা হলো। এতে মাল্টিটাস্কিং উন্নত হলো এবং এর স্থিরতা বাড়ল।
ইন্টেল বেজড কম্পিউটারের জন্য উপযোগী একটি নেটওয়ার্ক সচেতন অপারেটিং সিস্টেম হলো মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ৯৫। এটি দুধরনের মাল্টিটাস্কিং ব্যবহার করে। ৩২-বিট অ্যাপলিকেশনের জন্য এটি প্রিম্পটিভ (preemptive) মাল্টিটাস্কিং ব্যবহার করে, কিন্তু ১৬-বিট কিংবা ডস অ্যাপলিকেশনের জন্য এটি ব্যবহার করে কোঅপারেটিং মাল্টিটাস্কিং। সেকারণেই দেখা যেতো উইন্ডোজ ৯৫ এ কোনো একটি প্রোগাম হ্যাং করলে পুরো অপারেটিং সিস্টেমই হ্যাং করছে। তখন রিস্টার্ট করা ছাড়া উপায় ছিল না।
উইন্ডোজ ৩.x আর উইন্ডোজ ৯৫ এর মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো এদের গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস। উইন্ডোজ ৩.x এ ব্যবহার করা হতো প্রোগাম ম্যানেজার। উইন্ডোজ ৯৫ এ প্রোগ্রাম ম্যানেজারের পরিবর্তে এলো উইন্ডোজ এক্সপ্লোরার। এর গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস ইউজারকে নানাবিধ সুবিধা দিতে লাগল। নেটওয়ার্ক কম্পোনেন্ট ইনস্টল ও কনফিগারেশন আগের চেয়ে অনেক উন্নত হলো। বড় সুবিধা হলো এতে অনেক ডিভাইসের জন্য প্লাগ এন্ড প্লে ফিচার যোগ করা হলো। তার মানে আপনি যদি প্রচলিত নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টার ইনস্টল করেন তাহলে এর সেটিংস কম্পিউটার প্রায় আপনাআপনি সেরে ফেলে।
উইন্ডোজ ৯৫ এর ব্যাপক সাফল্যের পর এর উত্তরসূরী উইন্ডোজ ৯৮ বাজারে ছাড়া হলো। এটিতে নেটওয়ার্কিং ফিচার বাড়ানো হলো। এর ইউজার ইন্টারফেসেও পরিবর্তন আনা হলো। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ৪ এর অ্যাক্টিভ ডেস্কটপ ফিচারের কারণে এটি অনেক আকর্ষণীয় হয়ে উঠল। এটিতেও প্লাগ এন্ড প্লে হার্ডওয়্যার ব্যবহৃত হতে লাগল।
ইউজারের ব্যবহারযোগ্যতার দিক থেকে এদুটি অপারেটিং সিস্টেম ভালো হলেও এ দুটি অপারেটিং সিস্টেম ডিজাইনে নিরাপত্তার বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পায়নি। এর ফল হলো এই দুই অপারেটিং সিস্টেমের কোনটিই নেটওয়ার্কে ব্যবহারের জন্য নিরাপদ নয়। এর ফাইল সিস্টেম FAT কিংবা FAT32 হওয়ায় এতে লোকাল সিকিউরিটি পাওয়া যায় না।
উইন্ডোজ ৯৫ ও ৯৮ গড়ে উঠেছে এমএস ডসের উপর ভিত্তি করে। সেকারণে এদুটি অপারেটিং সিস্টেম ডসের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারে নি। ডসের এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে মাইক্রোসফট একটি নেটওয়ার্ক উপযোগী নিরাপদ ও স্ট্যাবল অপারেটিং সিস্টেম উদ্ভাবনে মন দেয়। এরই ফল হলো উইন্ডোজ এনটি। উইন্ডোজ এনটি'র রয়েছে দুটি শ্রেণী - ওয়ার্কস্টেশন এবং সার্ভার। উইন্ডোজ এনটি ওয়ার্কস্টেশনকে ডিজাইন করা হয়েছে ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেম কিংবা নেটওয়ার্কে ক্লায়েন্ট অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে। এর রয়েছে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং এটি ব্যবহার করতে হলে তাকে অবশ্যই লগঅন করতে হবে। লগঅন করতে হলে অবশ্যই ওই কম্পিউটারে তার একটি ইউজার অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। তাছাড়া এতে NTFS ফাইল সিস্টেম ব্যবহার করা হলে লোকাল মেশিনেও অ্যাক্সেস কন্ট্রোল করা যেতে পারে ফাইল ও ফোল্ডার লেভেল অ্যাক্সেস কন্ট্রোলের মাধ্যমে। এতে রিমোট অ্যাক্সেস সার্ভিসেরও সুবিধা আছে।
উইন্ডোজ এনটি প্রিম্পটিভ মাল্টিটাস্কিং ব্যবহার করে এবং এতে MS-DOS ও ১৬-বিট অ্যাপলিকেশন চলে ভিন্ন মেমরি স্পেসে। ফলে একটি প্রোগাম হ্যাং হয়ে গেলে পুরো অপারেটিং সিস্টেম হ্যাং হয় না। নিরাপদ ও স্ট্যাবল ক্লায়েন্ট অপারেটিং সিস্টেম চাইলে উইন্ডোজ এনটি ওয়ার্কস্টেশন হবে ভালো অপশন।
উইন্ডোজ এনটি'র পরে আরো উন্নত ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেম হলো উইন্ডোজ ২০০০ প্রফেশনাল। এর গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেসের উন্নতি ঘটেছে, সেই সাথে বেড়েছে নির্ভরযোগ্যতা। তবে এরপরের ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে মাইক্রোসফট এক্সপি অনেক জনপ্রিয়। বস্তুত মাইক্রোসফটের ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেমসমূহের মধ্যে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এক্সপি প্রফেশনাল হলো সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও বেশি ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেম।
ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ভিস্তা সবচেয়ে নিন্দিত ও অগ্রহণযোগ্য অপারেটিং সিস্টেম। এটির কারণে মাইক্রোসফট অনেক সমালোচনার মুখেও পড়েছে এবং ইউজাররা আগের ভার্সনে ফিরে গেছে।
উইন্ডোজ ৭ কে বলা হচ্ছে এখন পর্যন্ত মাইক্রোসফটের তৈরি করা সর্বোৎকৃষ্ট অপারেটিং সিস্টেম। উইন্ডোজ ভিস্তার ব্যাপক ব্যর্থতার পর এটি এখন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এতে ভিজ্যুয়াল ইন্টারফেস অনেক চমৎকার করা হয়েছে এবং সেই সাথে নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করা হয়েছে। উইন্ডোজ ভিস্তার চেয়ে অনেক কম প্রসেসিং ক্ষমতা ও মেমরি নিয়ে এটি অনেক ভাল পারফরম্যান্স দিতে পারে। তবে উইন্ডোজ ৭ এর রয়েছে অনেকগুলি সংস্করণ। উইন্ডোজ ৭ আলটিমেট ভার্সন ছাড়া অন্যগুলিতে নেটওয়ার্কের ব্যবহার সীমিত রাখতে হবে।
ইউনিক্স একটি মাল্টিইউজার ও মাল্টিটাস্কিং কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম, এটি প্রথমে অ্যাসেম্বলি ল্যাংগুয়েজ এ ডেভেলপ করা হলেও পরবর্তীতে সি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ এ রেকর্ড করা হয়। এটি সার্ভার, ডেক্সটপ ও ল্যাপটপের জন্য দারুণ একটি স্ট্যাবল অপারেটিং সিস্টেম।
ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেম তিনটি পার্ট নিয়ে গঠিত। কার্নেল, শেল, এবং ফাইল ও প্রসেস।
ইউনিক্সের অনেকগুলো ভার্সন রয়েছে তবে এদের মধ্যে কিছু সাধারণ মিল রয়েছে। এর মধ্যে ফ্রি বিএসডি, সান সোলারিস, জিএনইউ লিনাক্স এবং ম্যাক ওএস এক্স বেশী জনপ্রিয়।
বিশ্বজুড়ে লিনাক্স নামের শক্তিশালী এবং বিশ্বস্ত এই অপারেটিং সিস্টেমটিকে যেভাবে সবাই গ্রহণ করে নিয়েছে তা সত্যিই বিস্ময়কর। এখন ইন্টারনেট থেকে শুরু করে বড় বড় কোম্পানীর নেটওয়ার্ক সার্ভার সবই ইউনিক্স ও লিনাক্স সিস্টেমের উপরে এতোটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে যে উইন্ডোজ ছাড়া পৃথিবী চললেও লিনাক্স কিংবা ইউনিক্স ছাড়া পৃথিবী অচল।
অসম্ভব রিলায়াবিলিটি, স্ট্যাবিলিটি ও শক্তিশালী অপারেটিং সিস্টেম বলতে যা বুঝায় তার সবই আছে লিনাক্সের মাঝে, তাই এর এতো কদর। সারা বিশ্বে লিনাক্স এখন দারুণভাবে ব্যবহার হচ্ছে। এটি ব্যবহারের অন্যতম কারণ হচ্ছে এর সিকিউরিটি। লিনাক্স প্রচন্ড রকমের সিকিউরড। ভাইরাস আক্রমণ, হ্যাক হয়ে যাওয়া এ কথাগুলো বোধহয় লিনাক্স ইউজাররা জীবনেও শুনেনি। আরও আছে, দীর্ঘদিনের ব্যবহারের ফলে উইন্ডোজ স্লো হয়ে যায় অথচ একবার ইনস্টল দিয়েই আপনি লিনাক্স চালাতে পারবেন বছরের পর বছর। আর তাছাড়াও বাইরের দেশে যেখানে হাজার হাজার টাকা দিয়ে একটি অপারেটিং সিস্টেম কিনতে হয়, তার উপর রয়েছে অন্যান্য অ্যাপলিকেশন কেনার খরচ, সেখানে লিনাক্সে পুরো অপারেটিং সিস্টেমের সাথে হাজারখানেক অ্যাপলিকেশন পাবেন ফ্রীতে। এতো খরচের হাত থেকে বাঁচতে লিনাক্স কে তখন আপনার আশীর্বাদই মনে হবে। এছাড়াও হোম ইউজার থেকে শুরু করে নেটওয়ার্ক এনভায়রনমেন্টে লিনাক্স অপরিহার্য।
আপনার উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম কতটা স্থিতিশীল ? উইন্ডোজ ৭ আসার পর উইন্ডোজ অবশ্য অনেকটাই স্থিতিশীল হয়েছে, তার আগের ভার্সনগুলোর অবস্থা বেশ খারাপ। তবে লিনাক্সের মত স্থিতিশীল আর কিছু নেই। লিনাক্স হ্যাং বা ক্র্যাশ করেনা বললেই চলে। কোনো সফটওয়্যার উল্টাপাল্টা ব্যবহার করলে সেটা জোরপূর্বক বন্ধ করে দেয়া যায়। ফলে কম্পিউটার রিস্টার্টের দরকার হয়না বললেই চলে। এক বছর টানা কম্পিউটার চালু রেখেছে রিস্টার্টের দরকার ছাড়াই এমন উদাহরণ অনেক।
উইন্ডোজ ৯৫ এর অনেক আগে থেকেই গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস দিয়ে আসছে ম্যাকিন্টোশ। ম্যাকিন্টোশে ব্যবহৃত হয় ম্যাক ওএস। ম্যাক ওএস এমনই যে এতে ইউজারদের ওই সিস্টেম সম্পর্কে তেমন কিছু জানতে হয় না, কোথায় কোথায় ক্লিক করতে হবে এটি জানলেই চলে। এজন্য ননটেকনিক্যাল লোকদের প্রিয় অপারেটিং সিস্টেম হলো এটি। আর এই অপারেটিং সিস্টেম কেবল ম্যাকিন্টোশ কম্পিউটারসমূহেই চলে।
ম্যাক ওএস ৮ এর আগ পর্যন্ত এতে নেটওয়ার্কিঙের তেমন সুবিধা ছিল না। এর অ্যাপলটক ও লোকালটক ব্যবহার করেই নেটওয়ার্ক বানাতে হতো। অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের সাথে ফাইল লেনদেন ও যোগাযোগ বেশ কঠিন ছিল। সেকারণে বড় ধরনের ব্যবসায়িক কাজে নিয়োজিত নেটওয়ার্কে ম্যাকিন্টোশ কম্পিউটারের ব্যবহার সীমিত।
এটি গ্রাফিক্স ও ভিডিও এডিটিঙের জন্যই বেশি ব্যবহৃত হয়। তবে বর্তমানে ইন্টেল-বেজড কম্পিউটারসমূহ উচ্চগতি পাওয়ার সাথে সাথে এসব কাজের জন্য ম্যাকিন্টোশের সমকক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনার নেটওয়ার্কে ম্যাকিন্টোশ কম্পিউটার থাকলে বাধ্য হয়েই আপনাকে ম্যাক ওএস ব্যবহার করতে হবে।
নেটওয়ার্কে ক্লায়েন্ট ও সার্ভার হিসেবে থাকে বিভিন্ন অ্যাপলিকেশন ও সার্ভিস। এসব অ্যাপলিকেশন বা সার্ভিসের বেশিরভাগই চলে সার্ভারে। তাই সার্ভার হার্ডওয়্যার অন্যান্য ক্লায়েন্ট মেশিনের চেয়ে উন্নত হওয়া দরকার। সার্ভার অপারেটিং সিস্টেমও হওয়া দরকার কিছু বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।
সার্ভার অপারেটিং সিস্টেমের তিনটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো মাল্টিটাস্কিং, মাল্টিপ্রসেসিং এবং স্ট্যাবিলিটি। মাল্টিটাস্কিং হলো একসাথে একাধিক নির্দেশ পালনের ক্ষমতা। মাল্টিপ্রসেসিং বলতে বোঝানো হয় একটি অপারেটিং সিস্টেম একসাথে কয়টি প্রসেসর ব্যবহার করতে পারে। স্ট্যাবিলিটি বলতে বোঝায় একটি অপারেটিং সিস্টেম একটানা কতক্ষণ কাজ চালিয়ে যেতে পারে।
সার্ভার হার্ডওয়্যারের ক্ষেত্রেও তেমনি তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার - নির্ভরযোগ্যতা, সম্প্রসারণযোগ্যতা এবং ফল্ট টলারেন্স। সার্ভারে ব্যবহৃত হার্ডওয়্যার অবশ্যই নির্ভরযোগ্য ও সম্প্রসারণযোগ্য হতে হবে যাতে এটি কোনোরকম ত্রুটি ছাড়াই কাজ করতে পারে এবং প্রয়োজনে তাতে নূতন কম্পোনেন্ট যোগ করা যেতে পারে। ফল্ট টলারেন্স হলো সেই সিস্টেম যেখানে কোনো সাবসিস্টেমের একটি অংশ বিকল হয়ে গেলেও সেটি অন্য অংশকে নিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে পারে।
নেটওয়ার্ক সার্ভারে ব্যবহৃত কয়েকটি সার্ভার অপারেটিং সিস্টেম হলো - মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এনটি, উইন্ডোজ ২০০০/২০০৩/২০০৮/২০১২, ইউনিক্স, লিনাক্স, নভেল নেটওয়্যার ইত্যাদি। এছাড়া ক্লায়েন্ট অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ব্যবহৃত হয় উইন্ডোজ ৯৫/৯৮, এনটি ওয়ার্কস্টেশন, ২০০০ প্রফেশনাল, এক্সপি প্রফেশনাল, ভিস্তা, ৭, ৮, ৮.১, এবং ১০ ইত্যাদি।
আজকে এখানেই শেষ করছি। কোন প্রকার ভুল ত্রুটি ধরা পড়লে বা মনে হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং অবশ্যই অবশ্যই টিউমেন্টে আমাকে জানাবেন প্লিজ। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো সংশোধন করতে। আগামী পর্বে ইনশা-আল্লাহ্ আবার দেখা হবে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
[ বিঃদ্রঃ ] আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে যে, আমার এই লিখাগুলো/টিউনগুলো কপি পেস্ট করে অন্য কোথাও (নিজের বা অন্যের ব্লগ/ওয়েবসাইট/ফোরাম) নিজের নামে চালিয়ে দেবেন না প্লিজ। যে একবার লিখে সেই বুঝে লিখার মর্ম আসলে কি এবং সেই জানে যে লিখতে আর একটা টিউন পুরোপুরি বানাতে কি পরিমাণ কষ্ট হয়। তারা কখনও কপি পেস্ট করে নিজের নামে চালিয়ে দেয় না যারা একবার একটা সম্পূর্ণ টিউন তৈরি করে। কোনো লিখা/টিউন কপি পেস্ট করে লেখকের নাম বা আসল সোর্স উল্লেখ না করে নিজের নামে চালিয়ে দিলে মূল লেখকের পুরো লিখাটাই ব্যর্থ হয় এবং সে পরবর্তীতে লিখার মন মানসিকতা হারিয়ে ফেলে। তাই আমরা প্লেজারিজম থেকে সবসময় বিরত থাকার চেষ্টা করবো এবং মূল লেখককে সবসময় ম্যানশন করার চেষ্টা করবো যাতে সে বেশী বেশী অনুপ্রেরণা পায়। আপনারা লিখাগুলো শুধুমাত্র নিজেদের সংগ্রহে রাখতে পারেন কিন্তু কপি পেস্ট করে অন্য কোথাও চালিয়ে দিতে পারেন না। এই লিখাগুলো একান্তই আমার লিখা তাই আমার অনুমতি ছাড়া টেকটিউনস এ লিখা আমার এ টিউনগুলো অন্য কোথাও কপি পেস্ট করে হুবহু দিয়ে দিবেন না প্লিজ। আর যদি একান্তই দিতে চান তাহলে অবশ্যই অবশ্যই আমার নাম এবং টেকটিউনস এর সোর্স বা টেকটিউনসে পূর্বে প্রকাশিত উল্লেখ করে দিয়ে দিবেন প্লিজ।
আমি মোঃ কামরুজ্জামান কামরুল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 21 টি টিউন ও 145 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Studying B. Sc in Computer Science and Engineering at Daffodil International University. I Want to Buildup My Career as an Expert and Professional Network Engineer. Please Everyone Pray for Me. Thanks.
ওয়ালাইকুম, অনেক কষ্ট করে টিউন টি করেছেন। যাযাকাল্রাহ