“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”
প্রথমেই সবাইকে আমার সালাম ও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। ইনশা-আল্লাহ্ আমিও অনেক ভালো আছি। কথা না বাড়িয়ে চলুন টিউন শুরু করা যাক।
আজকের পর্বে আমরা বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ক টপোলজি নিয়ে আলোচনা করবো। এর মধ্যে থাকবে -
আমরা বায়োলজি, জুওলজি ইত্যাদি শব্দের সাথে পরিচিত। বায়োলজি হলো জীবসম্পর্কিত জ্ঞান। নেটওয়ার্কের জগতে এরকম একটি ‘লজি’ হলো টপোলজি (topology)। একটি নেটওয়ার্কের টপ বা উপর থেকে দেখলে নেটওয়ার্কটি যেমন দেখা যায় তাই হলো টপোলজি। উপর থেকে তাকালে দেখা যাবে নেটওয়ার্কে কম্পিউটারসমূহ কীভাবে সংযুক্ত আছে, ক্যাবল কীভাবে একটি আরেকটির সাথে যুক্ত হয়েছে। নেটওয়ার্কে কম্পিউটারসমূহ একটি আরেকটির সাথে সংযুক্ত থাকার পদ্ধতিকে বলা হয় টপোলজি। নেটওয়ার্ক ডিজাইনের ক্ষেত্রে এই টপোলজি বিশেষ ভূমিকা রাখে। কোন কাজের জন্য নেটওয়ার্ক ব্যবহার করব তার উপর ভিত্তি করে উপযুক্ত টপোলজি বাছাই করা দরকার। প্রতিটি টপোলজিরই কিছু সুবিধা ও অসুবিধা আছে। এসব বিবেচনা করে উপযুক্ত টপোলজি বেছে নিতে হবে। এখন আমরা বিভিন্ন নেটওয়ার্ক টপোলজি ও সেগুলির সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে জানব।
নেটওয়ার্কে ফিজিক্যাল টপোলজি বলতে বোঝায় বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ডিভাইস ও মিডিয়ার লেআউট বা পরস্পর সংযোগ পদ্ধতিকে। এই মিডিয়ায় ডাটা প্যাকেট কীভাবে পরিবাহিত হয় তা বোঝানো হয় লজিক্যাল টপোলজির মাধ্যমে।
প্রথম দৃষ্টিতে আপনার মনে হতে পারে ফিজিক্যাল টপোলজি দেখলেই তো লজিক্যাল টপোলজি বোঝা যায়। তাহলে দুটিকে ভিন্ন করার কারণ কী ? আসলে ব্যাপারটি এত সহজ নয়। ফিজিক্যাল টপোলজি দেখে লজিক্যাল টপোলজি সবসময় বোঝা যায় না। যেমন ধরা যাক আপনি দেখছেন পাঁচটি কম্পিউটার থেকে ক্যাবল বেরিয়ে একটি অয়্যারিং ক্লোজেটে যোগ হয়েছে। এটি দেখে আপনি হয়তো ধরে নিতে পারেন এটি লজিক্যাল স্টার টপোলজি। কিন্তু এটি নির্ভর করছে ক্লোজেটে কোন ডিভাইস ব্যবহার করা হয়েছে - হাব (hub) নাকি মাউ (MAU) - তার উপর। এখানে যদি MAU ব্যবহৃত হয় তাহলে সেটি হবে লজিক্যাল বাস অথবা রিং টপোলজি, আর যদি হাব/সুইচ (hub/switch) ব্যবহৃত হয় তাহলে হবে লজিক্যাল স্টার টপোলজি।
অন্যদিকে লজিক্যাল ও ফিজিক্যাল এই দুই টপোলজি একটি আরেকটির উপর নির্ভরশীল। নেটওয়ার্কের কার্যপ্রণালী ভালোভাবে বোঝার জন্য উভয় ধরনের টপোলজি বোঝা দরকার। ক্যাবল টানা, বিভিন্ন ডিভাইস সংযোগ ইত্যাদির উপর নির্ভর করে ফিজিক্যাল ও লজিক্যাল উভয় ধরনের টপোলজি।
আমরা প্রথমে জানব বিভিন্ন ফিজিক্যাল টপোলজি, সেগুলির বৈশিষ্ট্য, সুবিধা-অসুবিধা এবং বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কে। তারপর আলোচনা করব বিভিন্ন লজিক্যাল টপোলজি ও তাদের কার্যপ্রণালী সম্পর্কে।
নেটওয়ার্কিং মিডিয়া বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ডিভাইসের সাথে যেভাবে যুক্ত থাকে সেই লেআউটকে বলা হয় ফিজিক্যাল টপোলজি। একটি নেটওয়ার্কের বাইরে দেখেই আমরা এর ফিজিক্যাল টপোলজি বলে দিতে পারি। চারটি প্রধান ফিজিক্যাল টপোলজি হলো - বাস, স্টার, রিং এবং মেশ।
কোন ধরনের ফিজিক্যাল টপোলজি ব্যবহার করছেন তার উপর নির্ভর করছে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো -
এসব দিকে নজর রেখে বিভিন্ন কোম্পানি স্টার, এক্সটেন্ডেড স্টার কিংবা হাইব্রিড টপোলজি ব্যবহার করে। আমরা এখন বিভিন্ন ফিজিক্যাল টপোলজি সম্পর্কে জানব।
ছোট, সহজে ইনস্টলযোগ্য ও কম ব্যয়ের মধ্যে নেটওয়ার্ক গড়তে চাইলে বাস টপোলজি ব্যবহার করা হয়। বাস টপোলজিতে একটি মূল ক্যাবল সরাসরি চলে যায় এবং এর সাথে যুক্ত থাকে প্রতিটি কম্পিউটার। এখানে মূল ক্যাবল যেটি একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে চলে যায় তাকে বলা হয় বাস (bus)। বাসের দু’প্রান্তে থাকে টার্মিনেটর যা ইলেকট্রিক সিগন্যালকে শুষে নেয়। চিত্র ১.১ - এ এরকম একটি বাস টপোলজি দেখানো হলো।
চিত্র ১.১ - বাস টপোলজি
সাধারণত বাস নেটওয়ার্কে সচরাচর একটিমাত্র ক্যাবল কোনো প্রকার ইলেকট্রোনিক ডিভাইস, যেমন রিপিটার বা অ্যামপ্লিফায়ার ছাড়া ব্যবহৃত হয় যাতে এক কম্পিউটারের সিগন্যাল আরেক কম্পিউটারে সরাসরি যেতে পারে। তাই এই টপোলজিকে প্যাসিভ টপোলজি (passive topology) বলা হয়। যখন একটি কম্পিউটার অন্য কোনো কম্পিউটারের উদ্দেশ্যে মেসেজ পাঠায় তখন সেই মেসেজ সিগন্যাল ক্যাবলের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে সবকটি কম্পিউটারের নিকট পৌঁছে। যে কম্পিউটারের উদ্দেশ্যে সেটি পাঠানো হয় কেবল সেটিই সে মেসেজ গ্রহণ করে আর অন্যরা কেবল সেই প্যাকেটকে বাতিল করে দেয়, সেটির দিকে কোনো নজর না দিয়েই।
বাস টপোলজিতে একসাথে কেবল একটি কম্পিউটার মেসেজ পাঠাতে পারে। কোনো কম্পিউটার যখন মেসেজ পাঠাচ্ছে তখন অন্যদের অপেক্ষা করতে হয় তার পাঠানো শেষ না হওয়া পর্যন্ত। তার মেসেজ পাঠানো শেষ হলে অন্য কম্পিউটার মেসেজ পাঠাতে পারে। তাই এ নেটওয়ার্কে কম্পিউটারের সংখ্যা বেড়ে গেলে নেটওয়ার্ক পারফরম্যান্সের অবনতি ঘটে। অবশ্য এ সমস্যা স্টার ও রিং টপোলজিতেও ঘটে।
বাস নেটওয়ার্কে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো টার্মিনেশন (termination)। বাস একটি প্যাসিভ টপোলজি হওয়ার কারণে এর একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত সিগন্যাল অবাধে যেতে পারে। যদি ক্যাবলের প্রান্তকে টার্মিনেট করা না হয় তাহলে দেখা যাবে সিগন্যাল একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাচ্ছে কিন্তু সেখান থেকে ধাক্কা খেয়ে আবার ফেরত আসছে। এভাবে ক্রমাগত ইলেকট্রিক সিগন্যাল যাতায়াত করতে থাকবে এবং এর পরের সিগন্যালের সাথে মিশে ভজঘট পাঁকাবে। প্রান্ত থেকে সিগন্যাল ফিরে আসাকে বলা হয় রিংগিং (ringing)। এই রিংগিং যাতে ঘটতে না পারে সেজন্য ক্যাবলের প্রান্তে টার্মিনেটর নামের একটি রোধক ব্যবহার করা হয়। এই টার্মিনেটর ইলেকট্রিক সিগন্যাল কে নিঃশেষ করে দেয়, ফলে তা প্রতিফলিত হতে পারে না। প্রান্তে টার্মিনেটর ব্যবহার করা না হলে সমস্যা হবে। আপনার বাস টপোলজি নেটওয়ার্কে সমস্যা দেখা দিলে আগে দেখে নিন বাসের দু’প্রান্ত ঠিকমতো টার্মিনেট করা হয়েছে কি না।
বাস টপোলজির সুবিধা হলো -
বাস টপোলজির অসুবিধা হলো -
বাস টপোলজি ব্যবহার করে গড়ে ওঠা একটি জনপ্রিয় নেটওয়ার্ক হলো ১০ বেজ ২ (10Base2)।
স্টার টপোলজিতে সকল কম্পিউটার থেকে ক্যাবল এসে একটি কেন্দ্রীয় স্থানে যুক্ত হয় (চিত্র ১.২)। এই সেন্ট্রাল লোকেশনে থাকে একটি ডিভাইস যাকে বলা হয় কনসেনট্রেটর বা হাব (hub) অথবা সুইচ (switch)। এই টপোলজিতে সবকটি কম্পিউটারের সংযোগ এক জায়গায় যুক্ত থাকে বলে একে কনসেনট্রেটেড টপোলজিও বলা হয়। নেটওয়ার্ককে সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা থাকলে এই টপোলজি বেশ সুবিধাজনক। এতে সহজেই নেটওয়ার্ককে সম্প্রসারণ করা যায় কেবল হাব অথবা সুইচের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়ে।
চিত্র ১.২ - ফিজিক্যাল স্টার টপোলজি
স্টার টপোলজিতে কোনো কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারের নিকট মেসেজ পাঠাতে চাইলে সিগন্যাল পাঠায় সরাসরি হাব/সুইচের নিকট। হাব/সুইচ সেই সিগন্যালকে সব কম্পিউটারে কিংবা ওই গন্তব্য কম্পিউটারের নিকট পাঠায়। যদি সেই নেটওয়ার্ক হয়ে থাকে ব্রডকাস্ট-বেজড বা হাব-বেজড তাহলে হাব থেকে সিগন্যাল যাবে সবক'টি কম্পিউটারে। আর যদি সেটি সুইচড নেটওয়ার্ক হয় তাহলে সুইচ সেই সিগন্যালকে নির্দিষ্ট কম্পিউটারের নিকট পাঠিয়ে দেবে।
স্টার টপোলজিতে বিভিন্ন ধরনের ক্যাবল ব্যবহার করা যায়। কোন ধরনের ক্যাবল ব্যবহার করব তার উপর নির্ভর করে বিশেষ ধরনের হাব/সুইচ দরকার হবে। কোনো কোনো হাব/সুইচ এ একইসাথে কোএক্সিয়াল ক্যাবল এবং ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল ব্যবহার করা যায়।
স্টার টপোলজির সুবিধা হলো -
স্টার টপোলজির অসুবিধা হলো -
স্টার টপোলজি ব্যবহার করে গড়ে ওঠা একটি জনপ্রিয় নেটওয়ার্ক হলো ১০ বেজটি (10BaseT) নেটওয়ার্ক।
রিং টপোলজিতে একটি কম্পিউটার আরেকটি কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকে এবং শেষ কম্পিউটারটি যুক্ত হয় প্রথম কম্পিউটারের সাথে (চিত্র ১.৩)। এভাবে এটি একটি রিং বা বলয় তৈরি করে। এই বলয়ের প্রতিটি কম্পিউটার সমান অধিকার পায় ডাটা প্রবাহের ক্ষেত্রে।
উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য এ ধরনের টপোলজি ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের নেটওয়ার্কের বড় সুবিধা হলো এখানে প্রতিটি কম্পিউটার সমান অধিকার পায় এবং অধিক কম্পিউটারের কারণে নেটওয়ার্কের পারফরম্যান্স কমে গেলে সেটি সবার জন্যই প্রযোজ্য হয়।
রিং টপোলজিকে বলা হয় অ্যাক্টিভ টপোলজি। এ টপোলজিতে কোনো কম্পিউটার অন্য কোনো কম্পিউটারের নিকট মেসেজ পাঠাতে চাইলে সেটি এর নিকটবর্তী কম্পিউটারের নিকট যাবে। সে কম্পিউটার দেখবে সেই মেসেজটি তার জন্য কি না। সেটি তার জন্য না হলে সে ওই মেসেজকে পরবর্তী কম্পিউটারের নিকট পাঠাবে, এভাবে সেটি গন্তব্য কম্পিউটারে পৌঁছাবে। প্রতিটি কম্পিউটার সেই সিগন্যালকে বর্ধিত করে পরের কম্পিউটারের নিকট পাঠায়। আর এ টপোলজিতে ডাটা প্যাকেট সবসময় একই দিকে (সাধারণত ঘড়ির কাঁটার দিকে) প্রবাহিত হয়। বাস নেটওয়ার্কের মতো এখানে কোনো টার্মিনেটর ব্যবহারের দরকার পড়ে না, কারণ এখানে উন্মুক্ত প্রান্ত বলে কিছু থাকে না।
চিত্র ১.৩ - টোকেন রিং
বিশেষ ধরনের রিং নেটওয়ার্ক হলো টোকেন রিং নেটওয়ার্ক। টোকেন রিং নেটওয়ার্কে টোকেন পাসিং বলে একটি পদ্ধতি আছে। এতে একটি সংক্ষিপ্ত মেসেজ, যা টোকেন নামে পরিচিত, রিঙে ঘুরতে থাকে। ওই টোকেনটি যখন যে কম্পিউটারের কাছে থাকে তখন সেই কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ডাটা পাঠাতে পারে। ডাটা পাঠানো শেষ হলেই টোকেনটি আবার ছেড়ে দিতে হবে এবং সেটি রিং বা বলয়ে আবর্তিত হতে থাকবে। যে কম্পিউটারের ডাটা পাঠানোর দরকার পড়বে সে ওই টোকেন ক্যাপচার করবে এবং ডাটা পাঠাবে।
চিত্র ১.৪ - FDDI রিং
এই টোকেন পাসিং খুব দ্রুত ঘটে থাকে। একটি ২০০ মিটার ব্যাসের বলয়ে একটি টোকেন সেকেন্ডে ১০,০০০ বারেরও বেশি ঘুরতে পারে। ফাইবার ডিস্ট্রিবিউটেড ডাটা ইন্টারফেস (FDDI) বা ফিডি নেটওয়ার্ক এধরনের রিং টপোলজি ব্যবহার করে গড়ে উঠেছে।
রিং টপোলজির সুবিধা হলো -
রিং টপোলজির অসুবিধা হলো -
মেশ টপোলজিতে প্রতিটি কম্পিউটার প্রতিটির সাথে যুক্ত থাকে। এতে অনেক সংযোগ তৈরি করতে হয়। এখানে সংযোগের সংখ্যা বেশি হওয়ায় বড় ধরনের নেটওয়ার্কে মেশ টপোলজি ম্যানেজ করা প্রায় অসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই দেখা যায় বেশিরভাগ মেশ টপোলজিতেই সত্যিকার মেশ ব্যবহার না করে হাইব্রিড মেশ ব্যবহৃত হয়।
চিত্র ১.৫ - মেশ টপোলজি
মেশ টপোলজি ইনস্টল ও ম্যানেজ করা কঠিন। নেটওয়ার্ক ডিভাইস বাড়ার সাথে সাথে এটির সংখ্যা বাড়তে থাকে। যেমন একটি নেটওয়ার্কে যদি ৫ টি ডিভাইস থাকে এবং সেগুলিকে মেশ টপোলজির অধীনে আনতে চান তাহলে সংযোগ তৈরি করতে হবে ১৫ টি (৫+৪+৩+২+১)। তেমনি ডিভাইসের সংখ্যা ১০ টি হলে সংযোগের সংখ্যা হবে ৫৫ টি (১০+৯+৮+৭+৬+৫+৪+৩+২+১)। এভাবে ডিভাইস বাড়ার সাথে সাথে সংযোগও বাড়বে।
মেশ টপোলজির বড় সুবিধা হলো এটি ফল্ট টলারেন্ট অর্থাৎ এতে কোনো একটি সংযোগ অকেজো হলে নেটওয়ার্ক অকেজো হওয়ার সম্ভাবনা নেই। প্রতিটি ডিভাইস প্রতিটির সাথে সবসময় সংযোগ রক্ষা করতে পারবে এ টপোলজিতে। তবে অসুবিধা হলো এটি ম্যানেজ করা এবং রিকনফিগার করা। এটি ব্যয়বহুলও বটে।
এখানে উল্লেখিত বিভিন্ন টপোলজির একাধিক টপোলজি নিয়ে গড়ে ওঠে হাইব্রিড টপোলজি। এতে একইসাথে কোনো অংশে স্টার কোনো অংশে বাস কিংবা রিং টপোলজি ব্যবহার হতে পারে। একে প্রধান দুইভাগে ভাগ করা যেতে পারে - স্টার বাস এবং স্টার রিং।
এই টপোলজিতে বাস এবং স্টার উভয় টপোলজির সমন্বয় ঘটানো হয়। এখানে কয়েকটি স্টার টপোলজির হাব/সুইচ কে এক বাসে সংযুক্ত করা হয় (চিত্র ১.৬)। এতে যদি কোনো কম্পিউটার বিকল হয় তাহলে শুধু সেই কম্পিউটার নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। আর যদি কোনো হাব/সুইচ বিকল হয় তাহলে সেই হাব/সুইচ এর সাথে যুক্ত কম্পিউটারসমূহ নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং এতে বাস নেটওয়ার্ক দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়তে পারে।
চিত্র ১.৬ - স্টার বাস টপোলজিতে কম্পিউটারগুলি হাব/সুইচ এর সাথে যুক্ত থাকে ফিজিক্যাল স্টার ব্যবহার করে, আর হাব/সুইচ সমূহ যুক্ত থাকে বাসে।
এ টপোলজিতে স্টার টপোলজির মতো করেই নেটওয়ার্ক ক্যাবল যুক্ত থাকে কিন্ত হাব/সুইচ গুলি যুক্ত থাকে রিং আকারে (চিত্র ১.৭)। টোকেন রিং নেটওয়ার্ক এধরনের স্টার রিং নেটওয়ার্ক। এটি দেখতে যদিও স্টারের মতো কিন্তু কাজ স্টার রিঙের।
চিত্র ১.৭ - স্টার রিং
আমরা এতক্ষণে বিভিন্ন ফিজিক্যাল টপোলজি সম্পর্কে জেনেছি। এখন জানব লজিক্যাল টপোলজি সম্পর্কে। ফিজিক্যাল টপোলজিতে জেনেছি কীভাবে একটি ডিভাইস আরেকটি ডিভাইসের সাথে যুক্ত থাকে। এসব ডিভাইস কীভাবে ডাটা ট্রান্সমিট করে তা বুঝতে পারলেই পেয়ে যাবো লজিক্যাল টপোলজি। লজিক্যাল টপোলজি হতে পারে মাত্র দু'প্রকার - বাস এবং রিং।
কোনো নেটওয়ার্কে ডিভাইসগুলি বাসে যুক্ত থাকলে আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে এটি একটি বাস নেটওয়ার্ক এবং এখানে ডাটা পরিবাহিত হচ্ছে একটি কম্পিউটার থেকে আরেকটিতে সিরিয়্যালি। এতে কোনো কম্পিউটার ডাটা পাঠাতে চাইলে সেটি সকল কম্পিউটারের কাছেই পৌঁছে। তেমনি ফিজিক্যাল রিং দেখে আমরা সহজেই ধরে নিতে পারি সেটিতে ডাটা প্রবাহিত হচ্ছে রিং টপোলজির নিয়মানুসারে। কিন্ত সমস্যা হয় যখন সেটি ফিজিক্যাল স্টার টপোলজি ব্যবহার করে তখনই।
ফিজিক্যাল স্টার টপোলজিতে প্রতিটি ডিভাইস একটি সেন্ট্রাল ডিভাইসের সাথে যুক্ত থাকে। নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড, হাব/সুইচ কিংবা মাউ (MAU) এবং লেয়ার ২- এ ব্যবহৃত লেয়ার ২ প্রটোকলসমূহের উপর নির্ভর করছে এর লজিক্যাল টপোলজি কী হবে।
বর্তমান ইথারনেট নেটওয়ার্কে আমরা সাধারণত ফিজিক্যাল স্টার টপোলজি ব্যবহার করে থাকি। ফিজিক্যাল স্টার টপোলজি ব্যবহার করা হলে সবকটি কম্পিউটার থেকে হাব/সুইচ এ সংযোগ দেয়া হয়। যেকোনো ডিভাইস থেকে সিগন্যাল পরিবাহিত হতে হলে সেটি যায় হাব/সুইচ এর মধ্য দিয়েই। এই সিগন্যাল পরিবহনের জন্য হাব/সুইচ লজিক্যাল বাস টপোলজি ব্যবহার করে।
লজিক্যাল বাস টপোলজির সুবিধা হলো -
লজিক্যাল বাস টপোলজির অসুবিধা হলো -
কোনো ফিজিক্যাল টপোলজিতে ডাটা যদি রিং বা বলয়াকারে পরিবাহিত হয় তাহলে সেটিকে বলা হবে লজিক্যাল রিং টপোলজি। লজিক্যাল রিং টপোলজির বাস্তব উদারহরণ হলো টোকেন রিং নেটওয়ার্ক। এখানে ডাটা পরিবাহিত হয় বলয়ে। ফিডি (FDDI) নেটওয়ার্ক হলো লজিক্যাল রিং টপোলজির আরকে উদাহরণ।
ফিজিক্যাল স্টার টপোলজিতেও লজিক্যাল রিং টপোলজি হতে পারে যদি হাবের স্থানে থাকে মাউ (MAU) বা মাল্টিস্টেশন অ্যাক্সেস ইউনিট। এই মাউতে কম্পিউটারগুলি যুক্ত থাকে স্টার টপোলজির মতো করেই।
নেটওয়ার্কে একটি কম্পিউটার আরেকটি কম্পিউটারের সাথে কীভাবে যুক্ত আছে সেই লেআউটকে বলা হয় টপোলজি। এটি দু'ধরনের হতে পারে - ফিজিক্যাল ও লজিক্যাল। ফিজিক্যাল টপোলজিগুলো হলো - বাস, স্টার, রিং, মেশ এবং হাইব্রিড। আর লজিক্যাল টপোলজি হতে পারে দু'ধরনের - লজিক্যাল বাস ও লজিক্যাল রিং। এসব টপোলজির প্রতিটিরই আছে সুবিধা-অসুবিধা। আপনার নেটওয়ার্কের জন্য সুবিধাজনক একটি টপোলজি বাছাইয়ের উপর নির্ভর করবে এর ব্যয়, গতি এবং আরো কিছু বৈশিষ্ট্য।
আজকে এখানেই শেষ করছি। কোন প্রকার ভুল ত্রুটি ধরা পড়লে বা মনে হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং অবশ্যই অবশ্যই টিউমেন্টে আমাকে জানাবেন প্লিজ। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো সংশোধন করতে। আগামী পর্বে ইনশা-আল্লাহ্ আবার দেখা হবে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
[ বিঃদ্রঃ ] আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে যে, আমার এই লিখাগুলো/টিউনগুলো কপি পেস্ট করে অন্য কোথাও (নিজের বা অন্যের ব্লগ/ওয়েবসাইট/ফোরাম) নিজের নামে চালিয়ে দেবেন না প্লিজ। যে একবার লিখে সেই বুঝে লিখার মর্ম আসলে কি এবং সেই জানে যে লিখতে আর একটা টিউন পুরোপুরি বানাতে কি পরিমাণ কষ্ট হয়। তারা কখনও কপি পেস্ট করে নিজের নামে চালিয়ে দেয় না যারা একবার একটা সম্পূর্ণ টিউন তৈরি করে। কোনো লিখা/টিউন কপি পেস্ট করে লেখকের নাম বা আসল সোর্স উল্লেখ না করে নিজের নামে চালিয়ে দিলে মূল লেখকের পুরো লিখাটাই ব্যর্থ হয় এবং সে পরবর্তীতে লিখার মন মানসিকতা হারিয়ে ফেলে। তাই আমরা প্লেজারিজম থেকে সবসময় বিরত থাকার চেষ্টা করবো এবং মূল লেখককে সবসময় ম্যানশন করার চেষ্টা করবো যাতে সে বেশী বেশী অনুপ্রেরণা পায়। আপনারা লিখাগুলো শুধুমাত্র নিজেদের সংগ্রহে রাখতে পারেন কিন্তু কপি পেস্ট করে অন্য কোথাও চালিয়ে দিতে পারেন না। এই লিখাগুলো একান্তই আমার লিখা তাই আমার অনুমতি ছাড়া টেকটিউনস এ লিখা আমার এ টিউনগুলো অন্য কোথাও কপি পেস্ট করে হুবহু দিয়ে দিবেন না প্লিজ। আর যদি একান্তই দিতে চান তাহলে অবশ্যই অবশ্যই আমার নাম এবং টেকটিউনস এর সোর্স বা টেকটিউনসে পূর্বে প্রকাশিত উল্লেখ করে দিয়ে দিবেন প্লিজ।
আমি মোঃ কামরুজ্জামান কামরুল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 21 টি টিউন ও 145 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Studying B. Sc in Computer Science and Engineering at Daffodil International University. I Want to Buildup My Career as an Expert and Professional Network Engineer. Please Everyone Pray for Me. Thanks.
ধন্যবাদ আপনাকে ।