“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”
প্রথমে সবাইকে আমার সালাম ও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। ইনশা-আল্লাহ্ আমিও অনেক ভালো আছি। কথা না বাড়িয়ে চলুন টিউন শুরু করা যাক।
আজকের পর্বে আমরা নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করবো। এর মধ্যে থাকবে -
নেটওয়ার্কের কাজ ও গঠন অনুসারে নেটওয়ার্ককে প্রধান তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে -
LAN, MAN, ও WAN প্রত্যেকের গঠন একটি অপরটির থেকে আলাদা। এদের ভৌগলিক অবস্থান ছাড়াও ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য আছে।
LAN এ ব্যবহৃত ডিভাইসসমূহ সাধারণত খুবই সহজলভ্য ও স্বল্পমূল্যের হয়ে থাকে। অফিস আদালতে সাধারণত এ ধরনের নেটওয়ার্কই গড়ে তোলা হয় এবং এটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে একজন লোকই যথেষ্ট। অন্যদিকে MAN কিংবা WAN - এর ক্ষেত্রে বেশ জটিল ও ব্যয়বহুল ডিভাইস ব্যবহারের দরকার পড়ে। এটি তৈরি করাও কঠিন। এধরনের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনার জন্য অভিজ্ঞ নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর দরকার পড়ে, এবং একজনের পক্ষে পুরো নেটওয়ার্ক ম্যানেজ করা সম্ভব হয় না।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা LAN - ই ব্যবহার করে থাকি। ছোট-মাঝারি অফিস-আদালত ও ব্যবসা-বাণিজ্যে এ নেটওয়ার্ক ব্যবহৃত হয়। এর মূল উদ্দেশ্য থাকে ডিভাইসসমূহের পরস্পরের মধ্যে তথ্য এবং রিসোর্স শেয়ার করা। ছোট-মাঝারি অফিসে LAN তৈরি করে প্রিন্টার, মডেম, স্ক্যানার, ইত্যাদি ডিভাইসের জন্য সাশ্রয় করা যেতে পারে।
কম্পিউটার ও অন্যান্য নেটওয়ার্ক ডিভাইসকে সংযুক্ত করার জন্য লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক ব্যবহৃত হয় যাতে ডিভাইসগুলো একটি আরেকটির রিসোর্স শেয়ার করতে পারে। ল্যানে এসব ডিভাইসকে যুক্ত করা হয় কমদামী ক্যাবলের মাধ্যমে। এখানে ব্যবহৃত ক্যাবলের সর্বোচ্চ অতিক্রমযোগ্য দূরত্ব ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের কারণে LAN একই বিল্ডিং এর মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে।
চিত্র ১.১ - সুইচের সাথে কতগুলো ওয়ার্কষ্টেশন যোগ করে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায়।
চিত্র ১.১ - এ কয়েকটি কম্পিউটার ক্যাবলের মাধ্যমে সুইচ নামের একটি ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে প্রায়ই সুইচ নামের এই ডিভাইসটি দেখা যাবে। এর কাজ হলো বিভিন্ন কম্পিউটার থেকে বের হয়ে আসা ক্যাবলগুলোকে একটি কেন্দ্রীয় স্থানে যুক্ত করা। নেটওয়ার্কে আসলে তথ্য প্রবাহিত হয় বিভিন্ন কম্পিউটার থেকে আসা ক্যাবলের মাধ্যমে। প্রতিটি ক্যাবলের মধ্য দিয়ে আসা ডাটা প্রবাহিত হবে সুইচের মধ্য দিয়ে। সুতরাং সুইচ নষ্ট হয়ে গেলে কম্পিউটারসমূহ ডাটা আদান-প্রদান করতে পারবে না।
কোনো কোম্পানি বা অফিসের আকারের ওপর নির্ভর করে একাধিক LAN থাকতে পারে। যেমন কোনো বড় একটি কোম্পানি যার প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে প্রায় শ’খানেক লোক কাজ করে, সেখানে প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের জন্য একটি করে LAN থাকতে পারে অথবা প্রতিটি ফ্লোরে ভিন্ন ভিন্ন LAN থাকতে পারে। যদি এসব ল্যানকে সংযুক্ত করার পড়ে তাহলে ব্রিজ (bridge) কিংবা রাউটার (router) নামের ডিভাইস লাগবে। এখানে কম্পিউটারসমূহকে ক্যাবলে যুক্ত করার জন্য দরকার হবে আরেকটি নেটওয়ার্ক ডিভাইস যা নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড বা LAN কার্ড নামে পরিচিত। একে নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টারও বলা হয়।
লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো -
মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক বা MAN একাধিক লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা LAN এর সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। এক্ষেত্রে ল্যানসমূহ থাকে একই শহরে। এ ধরনের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বেশ উচ্চগতিতে বিভিন্ন নেটওয়ার্ক তাদের তথ্য শেয়ার করতে পারে। বিভিন্ন সরকারি অফিস এর প্রধান ব্যবহারকারী, যেমন ধরা যাক ঢাকা শহরের প্রতিটি পুলিশ স্টেশনের নেটওয়ার্ককে নিয়ে গড়ে তোলা হলো একটি নেটওয়ার্ক। তাহলে এটি হবে মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক বা MAN। ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক থেকে এর পার্থক্য হলো এই যে, ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্কে গতি কম থাকে, কিন্তু মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্কে আমরা বেশ উচ্চগতি পেতে পারি। এটি বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন অফিসকে যুক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে এবং ৫০ - ৭০ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।
লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে বিভিন্ন ডিভাইস সরাসরি নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত, কিন্তু মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্কে প্রতিটি সাইট যুক্ত থাকে নেটওয়ার্কে। এক্ষেত্রে সাধারণত টেলিফোন কোম্পানির ইনস্টলকৃত ক্যাবল ব্যবহার করা হয় অথবা নিজে নূতন ক্যাবল ইনস্টল করার দরকার পড়ে।
চিত্র ১.২ - বিভিন্ন শহরের নেটওয়ার্ককে নিয়ে গড়ে তোলা যায় মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক বা MAN। দূরবর্তী নেটওয়ার্কসমূহকে যুক্ত করার জন্য অনেক সময় স্যাটেলাইট ব্যবহার করা হয়।
মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্কের বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো -
বিস্তৃত ভৌগলিক এলাকায় অবস্থিত একাধিক LAN বা MAN কে নিয়ে গড়ে ওঠে ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক। এ ধরনের নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে টেলিফোন কোম্পানির ক্যাবল ব্যবহার করে। সে কারণে ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক ধীরগতির হয়ে থাকে। বিস্তৃত এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠে বলে বিভিন্ন ল্যান ও ম্যানকে সংযুক্ত করার জন্য বিশেষ ডিভাইস ও টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়। ল্যানের চেয়ে WAN গঠনের পরিকল্পনা সত্যিই বেশ কঠিন। এটি ম্যানেজ করাও কঠিন। যদি গোটা বিশ্বজুড়ে কোনো LAN গড়ার দরকার পড়ে তাহলে অনেকক্ষেত্রেই স্যাটেলাইট ব্যবহার করা হয়।
চিত্র ১.৩ - গোটা বিশ্বে বিভিন্ন দেশের দূরবর্তী শহরে অবস্থিত ল্যান বা ম্যানকে যোগ করার জন্য স্যাটেলাইট ব্যবহার করে ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যায়।
বেশিরভাগ ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক ৫৬ কেবিপিএস থেকে ১.৫৪ এমবিপিএস গতিতে কাজ করে। এতে সর্বোচ্চ গতি হতে পারে ৪৫ এমবিপিএস। ওয়্যানকে ধীরগতির বলা হলেও ধীরে ধীরে এর পরিবর্তন হচ্ছে।
ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্কের বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো -
প্রাথমিকভাবে কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে তিন ভাগে বিভক্ত করা যায় - লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক, মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক এবং ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে একই বিল্ডিঙের কম্পিউটারসমূহ নিয়ে। মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক একটি শহরের বিভিন্ন অফিসকে যুক্ত করতে পারে। আর ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক বিস্তৃত এলাকা নিয়ে গড়ে উঠে। মেট্রোপলিটান এরিয়া নেটওয়ার্ক ও ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক গড়ার জন্য বিভিন্ন ইন্টারনেটওয়ার্কিং ডিভাইস দরকার হয়।
আজকে এখানেই শেষ করছি। কোন প্রকার ভুল ত্রুটি ধরা পড়লে বা মনে হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং অবশ্যই অবশ্যই টিউমেন্টে আমাকে জানাবেন প্লিজ। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো সংশোধন করতে। আগামী পর্বে ইনশা-আল্লাহ্ আবার দেখা হবে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
[ বিঃদ্রঃ ] আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে যে, আমার এই লিখাগুলো/টিউনগুলো কপি পেস্ট করে অন্য কোথাও (নিজের বা অন্যের ব্লগ/ওয়েবসাইট/ফোরাম) নিজের নামে চালিয়ে দেবেন না প্লিজ। যে একবার লিখে সেই বুঝে লিখার মর্ম আসলে কি এবং সেই জানে যে লিখতে আর একটা টিউন পুরোপুরি বানাতে কি পরিমাণ কষ্ট হয়। তারা কখনও কপি পেস্ট করে নিজের নামে চালিয়ে দেয় না যারা একবার একটা সম্পূর্ণ টিউন তৈরি করে। কোনো লিখা/টিউন কপি পেস্ট করে লেখকের নাম বা আসল সোর্স উল্লেখ না করে নিজের নামে চালিয়ে দিলে মূল লেখকের পুরো লিখাটাই ব্যর্থ হয় এবং সে পরবর্তীতে লিখার মন মানসিকতা হারিয়ে ফেলে। তাই আমরা প্লেজারিজম থেকে সবসময় বিরত থাকার চেষ্টা করবো এবং মূল লেখককে সবসময় ম্যানশন করার চেষ্টা করবো যাতে সে বেশী বেশী অনুপ্রেরণা পায়। আপনারা লিখাগুলো শুধুমাত্র নিজেদের সংগ্রহে রাখতে পারেন কিন্তু কপি পেস্ট করে অন্য কোথাও চালিয়ে দিতে পারেন না। এই লিখাগুলো একান্তই আমার লিখা তাই আমার অনুমতি ছাড়া টেকটিউনস এ লিখা আমার এ টিউনগুলো অন্য কোথাও কপি পেস্ট করে হুবহু দিয়ে দিবেন না প্লিজ। আর যদি একান্তই দিতে চান তাহলে অবশ্যই অবশ্যই আমার নাম এবং টেকটিউনস এর সোর্স বা টেকটিউনসে পূর্বে প্রকাশিত উল্লেখ করে দিয়ে দিবেন প্লিজ।
আমি মোঃ কামরুজ্জামান কামরুল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 21 টি টিউন ও 145 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Studying B. Sc in Computer Science and Engineering at Daffodil International University. I Want to Buildup My Career as an Expert and Professional Network Engineer. Please Everyone Pray for Me. Thanks.
ধন্যবাদ আপনাকে । পরবর্তী টিউনের জন্য অপেক্ষায় আছি । সাবনেটিং নিয়ে একটা বিস্তর আলোচনার জন্য রিকোয়েস্ট রইল ।