ক্রায়োসার্জারি কী? ক্রায়োসার্জারির সুবিধা অসুবিধা এবং খরচ সম্পর্কে জানুন

ক্রায়োসার্জারি নামক চিকিৎসা পদ্ধতিটি প্রতিনিয়ত আমাদের কাছে পরিচিত এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সে কারণেই হয়তোবা ক্রায়োসার্জারি নিয়ে আমাদের প্রশ্নও দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর ক্রায়োসার্জারি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে এই লেখায়। তাই ক্রায়োসার্জারি সম্পর্কে জানতে এবং ক্রায়োসার্জারি সম্পর্কিত আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে পড়ে নিতে পারেন আজকের লেখাটি। আশা করছি উপকৃত হবেন।

১. ক্রায়োসার্জারি কী?

বিশেষ ধরনের এক প্রকার চিকিৎসা পদ্ধতির নাম হচ্ছে ক্রায়োসার্জারি। এ পদ্ধতিতে মূলত অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রা ব্যবহার করে রোগাক্রান্ত স্থানের কোষগুলোকে মেরে ফেলা হয়। 'ক্রায়োসার্জারি' শব্দটি গ্রিক শব্দ থেকে এসেছে। 'ক্রায়ো' শব্দটির অর্থ 'বরফের মতো ঠান্ডা' এবং 'সার্জারি' শব্দের অর্থ 'হাতের কাজ'। নামকরণ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে হিমাঙ্কের মতো বা হিমাঙ্কের নিচের তাপমাত্রা ব্যবহার করে চিকিৎসা করা হয়। আর চিকিৎসায় ব্যবহৃত এ তাপমাত্রা বরফের মতো নয় বরং বরফের চেয়েও অত্যধিক পরিমাণে শীতল বা ঠাণ্ডা।

২. ক্রায়োসার্জারি আবিষ্কারের ইতিহাস

ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, মিশরীয়রা সর্বপ্রথম খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ সালের দিকে চিকিৎসা পদ্ধতিতে শীতল তাপমাত্রার ব্যবহার করেছিল। সেখান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে জেমস আরনট ক্রায়োসার্জারির নিজস্ব পদ্ধতি বর্ণণা করেন এবং সেই অনুযায়ী ১৮৪৫ সালে প্রথম ইংল্যান্ডে ক্রায়োসার্জারির ব্যবহার শুরু করা হয়। প্রথম দিকে ক্রায়োসার্জারিতে লবন-পানির মতো পদার্থের ব্যবহার করা হলেও পরবর্তীতে শুরু হয় গ্যাসের ব্যবহার। এক্ষেত্রে শিকাগোর একজন চিকিৎসা বিজ্ঞানী ক্রায়োসার্জারিতে প্রথম কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের ব্যবহার শুরু করেন। এরপর শুরু হয় অক্সিজেন (১৯২০) এবং নাইট্রোজেন গ্যাসের (১৯৫০) ব্যবহার।

৩. যেভাবে ক্রায়োসার্জারি করা হয়

সর্বপ্রথম আক্রান্ত কোষটির অবস্থান নিখুঁতভাবে নির্ণয় করা হয়। তারপর ক্রায়োপ্রোবের সূঁচের ভেতর দিয়ে বিভিন্ন ক্রায়োজনিক এজেন্ট যেমন– কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, ইথাইল ক্লোরাইড, আর্গন ইত্যাদির কোনো কোনোটিকে অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় পরিণত করে সেই রোগাক্রান্ত কোষটিতে প্রবেশ করিয়ে কোষটিকে জমাট বাঁধানো হয়। একবার কোনো কোষ যদি জমাট বেঁধে যায় তখন সেখানে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে কোষটি মারা যায়। তখন সেই স্থানে থাকে কেবলমাত্র প্রচুর পরিমাণ ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া একটি মৃত কোষ। এরপর বরফ হয়ে যাওয়া কোষটিকে গলানোর জন্য পুনরায় ক্রায়োপ্রোবের সূচের ভেতর দিয়ে হিলিয়াম গ্যাস পরিচালনা করে সেই স্থানের তাপমাত্রা ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রিতে উঠানো হয়। এতে জমাট বাঁধা কোষটি গলে যায়। তবে এতে কোনো ক্ষতি হয় না। কারণ কোষটিকে আগেই মেরে ফেলা হয়। আর এভাবেই রোগের উপশম হয়।

৪. ক্রায়োসার্জারিতে ব্যবহৃত কিছু গ্যাসের তাপমাত্রা

১. সলিড কার্বন ডাই অক্সাইড (-৭৯° সেলসিয়াস)

২. ডাই মিথাইল ইথার ও প্রোপেন (-৪১° সেলসিয়াস)

৩. তরল অক্সিজেন (-১৮২.৯° সেলসিয়াস)

৪. তরল নাইট্রোজেন (-১৯৬° সেলসিয়াস) ইত্যাদি।

৫. যেসব রোগের চিকিৎসায় ক্রায়োসার্জারি করা হয়

ক্রায়ো সার্জারি মূলত ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে ক্যান্সার, টিউমারসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায়ও এর ব্যবহার রয়েছে। সাধারণত যে রোগগুলো নিরাময়ে ক্রায়োসার্জারি ব্যবহার করা হয়ে থাকে সেগুলো হলো– ত্বকের ক্যান্সার (প্রাথমিক পর্যায়ে), শিশুদের রেটিনার ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, মূত্রথলির ক্যান্সার, টিউমার, এইডস সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগ ইত্যাদি।

৬. ক্রায়োসার্জারির সুবিধাগুলো

প্রথমত অন্যান্য সার্জারি তুলনায় এই সার্জারিতে ব্যাথা এবং রক্তপাত দুটোই কম হয়। এটি তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল একটি সার্জারি। সার্জারির পর বেশিদিন হাসপাতালেও থাকার প্রয়োজন পড়ে না। দরকার হলে একাধিকবার এই সার্জারি করা যায়। বিশেষ করে যারা দুর্বল, কম অথবা বেশি বয়স্ক, বিভিন্ন শারীরিক জটিলতার কারণে সার্জারি করাতে পারে না; তারা চাইলে খুব সহজেই ক্রায়োসার্জারি করিয়ে নিতে পারে।

৭. ক্রায়োসার্জারি করানো হলে পরবর্তীতে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অসুবিধা দেখা যায়?

১. প্রথম বিষয়টি হচ্ছে, ক্রায়োসার্জারি করার সময় যদি সঠিকভাবে রোগাক্রান্ত কোষটিকে নির্ণয় করা না যায় তাহলে সার্জারি করার পর জীবাণু ধ্বংস না হয়ে বরং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে রোগ না কমে বরং বৃদ্ধি পাবে।

২. ক্রায়োসার্জারি দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতার নিশ্চয়তা দেয় না অর্থাৎ একবার ক্রায়োসার্জারির মাধ্যমে কোনো রোগ নিরাময় করা হলে পরবর্তীতে কম সময়ের মধ্যে আবারও ঐ রোগটি রোগীর হতে পারে।

৩. প্রাথমিক দিকের ক্যান্সারের চিকিৎসায় অর্থাৎ যখনও রোগটি ছড়িয়ে পড়তে পারেনি তখন সেই রোগ নিরাময়ে ক্রায়োসার্জারির ব্যবহার করা হয়। কিন্তু একবার ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে এই পদ্বতি আর কাজ করে না।

৪. ত্বকের ক্যান্সারের চিকিৎসায় এই চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করলে কখনো কখনো ত্বক ফুলে যেতে পারে এবং অতিরিক্ত ঠান্ডা ব্যবহার করার ফলে স্নায়ুর সমস্যাও হতে পারে।

৫. যাদের ঠাণ্ডায় সংবেদনশীলতা আছে বা যাদের শরীরে কোনো ক্ষত হলে তা শুকাতে সময় লাগে– ক্রায়োসার্জারি করা হলে তাদের অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যেতে পারে।

ক্রায়োসার্জারি চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ সার্জারির নাম। আবিষ্কারের পর থেকেই এ সার্জারির পদ্ধতিটি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত এবং পরিবর্ধিত হচ্ছে। অবদান রাখছে দ্রুততম সময়ে, স্বল্প খরচে এবং তুলনামূলক কম ব্যাথায় রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে।

যাইহোক, আপনি যদি এ ধরনের লেখা আরও পড়তে চান তাহলে এ একাউন্টটি ফলো দিয়ে রাখতে পারেন।

আর পরিবর্তনশীল সময়ের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন আপডেটেড লেখা পড়তে নিয়মিত চোখ রাখুন টেকটিউনস এর পাতায়। ধন্যবাদ।

Level 2

আমি জান্নাতুল ফেরদৌস ইভা। এসএসসি ২০২২, ময়মনসিংহ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 2 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 14 টি টিউন ও 14 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 8 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 8 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস