বাংলাদেশের অতি পরিচিত কয়েকেটি রোগ

প্রিয় টেকটিউনস বন্ধুরা সবাই নিশ্চয় প্রতিপালকের অশেষ কৃপায় ভালোয় আছেন। বরাবরের মতো আজকে আমি আপনাদের মাঝে বাংলাদেশের অতি পরিচিত কয়েকটি রোগ নিয়ে কথা বলবো।

তো চলুন আজকে আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাই।

 

পরিপাকতন্ত্রের রোগ(Diseases of the Digestive System)

ভূমিকাঃ জীবন ধারণের জন্য প্রাণী মাত্রই পরিমিত খাদ্য হতে প্রয়োজনীয় কৌশিক শক্তি সংগ্রহ করে। দেহ কোষের বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ ও প্রতিরক্ষায় এ খাদ্য অপরিহার্য। মানব দেহের যে তন্রের মাধ্যমে ভক্ষণকৃত জটিল খাদ্য বস্তুকে পরিপাক করে রক্তে তথা দেহে শোষণ উপযোগী করে তোলে তাকে পরিপাকতন্ত্র বলে।

নিম্নলিখিত অঙ্গসমূহ মিলে পরিপাক তন্ত্র গঠিত-

  • মুখগহ্বর (Mouth Cavity),
  • গলবিল (Pharynx),
  • অন্ননালি (Oesophagus),
  • পাকস্থলি (Stomach),
  • ক্ষুদ্রান্ত্র (Small Intestine)
  • বৃহদান্ত্র (Large Intestine)
  • মলাশয় ও গুহ্যদ্বার (Rectum & anal canal)
  • লিভার (পিত্তথলিসহ) ও অগ্নাশয় হজমে সহায়ক অতিরিক্ত অঙ্গ হিসেবে পরিপাক তন্ত্রের সাথে সংযুক্ত।

পরিপাক তন্ত্রে পাঁচটি স্ফিংটার ও একটি ভাল্ব রয়েছে-

স্ফিংটার গুলো হলো-

  1. মাউথ স্ফিংটার,
  2. কার্ডিয়াক স্ফিংটার,
  • পাইলোরিক স্ফিংটার,
  1. স্ফিংটার অব ওডাই,
  2. এনাল ক্যানেল স্ফিংটার।

এছাড়াও ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্রের সংযোগ স্থলে একটি ভাল্ব আছে যা হলো ইলিওসিকাল ভাল্ব।

পরিপাক তন্ত্রের প্রবেশ দ্বার হচ্ছে মুখ। মুখগহ্বর পরিপাক তন্ত্রের প্রথম অঙ্গ। এর সম্মুখ দ্বার পথে দু’টি ঠোঁট ও তার ভিতরে উপরে-নিচে দু’পাটি দাত রয়েছে। মুখগহ্বর উপরের দিকে তালু ও নিচের দিকে ‍জিহ্বা অবস্থিত। মুখগহ্বরের দেয়াল গালের মাংস দিয়ে আবৃত। মুখের দু’পাশে ও নিচে মোট তিন জোড়া লালা গ্রন্থি থাকে যথা- প্যারোটিড, সাবমেন্ডিবুলার ও সাব লিঙ্গুয়াল।

মুখের কোমল তালু প্রন্তের দ’পাশে দু’টি টনসিল গ্রন্থি থাকে। মুখগহ্বরে আছে কর্ণ রন্ধ্রের পথ, নাসা রন্ধ্রের পথ, শ্বাসনলির পথ, অন্ননালির পথ। গলকক্ষ নাক ও মুখের পিছনে অবস্থিত। এর ‍তিনটি অংশ Nasopharynx, Oropharynx & Laryngopharynx। ল্যারিংগোফ্যারিংক্স স্বরযন্ত্রের পেছনে অবস্থিত এবং অরোফ্যারিংক্স গঠন করে অন্ননালি পর্যন্ত পৌছে যায়। বাতাস ও খাদ্য উক্ত নালিপথে প্রবেশে অরোফ্যারিংক্স মুখ্য ভূমিকা রাখে এবং প্রবেশদ্বার হিসেবে এটি বাতাসকে ল্যারিংক্স হয়ে শ্বাসনালিতে প্রবেশ করায় এবং খাদ্য অন্ননালি হয়ে পাকস্থলিতে প্রবেশ করে। কিন্তু খাওয়া দাওয়ার সময় বা কোন কিছু পান করার সময় শ্বাসনালির মুখ উক্ত অরোফ্যারিংক্স দ্বারা বন্ধ থাকে।

খাবার সময় বেশি কথা বলা বা হাসাহাসি করলে কিংবা খুব উৎকণ্ঠা নিয়ে খাবার খেলে অসাবধানতাবশতঃ খাদ্য গিলতে গিয়ে গলকক্ষের মধ্য দিয়ে প্রবেশ না করে শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে তা হলে আমাদের বিষম লাগে এবং তীব্র কাশির উদ্রেক হয়।

আমাদের ভুক্ত খাদ্য দ্রব্যের প্রথম পরিপাক শুরু হয় মুখগহ্বর থেকে। দাঁত ও চোয়াল বড় খাদ্য টুকরা চিবিয়ে ছোট কণায় ভাঙ্গতে সাহায্য করে। লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালা খাদ্যকণাকে নরম করে। মুখের ভিতর জিহ্বা হচ্ছে সবচেয়ে সঞ্চালাানক্ষম অঙ্গ। জিহ্বা নড়াচড়া করিয়ে খাদ্যের সঙ্গে লালা রসকে উত্তম রূপে মিশ্রিত করে। জিহ্বা খাদ্য দ্রব্য চর্বণ, চোষণ ও গলধঃকরণ কাজ ছাড়াও স্বাদ সম্পর্কে অনুভূতি জন্মায়। জিহ্বার উপরিভাগে থাকে স্বাদ কুড়ি। যা দ্বারা খাদ্যের মিষ্ট, টক, তিক্ত ও লবণাক্ত স্বাদ অনুভব ও উপভোগ করা সম্ভব পর হয়। এ স্বাদ গ্রহনের জন্য খাদ্য বস্তুর তরল হওয়ার জন্য লালা রসের সাথে উত্তমরূপে মিশ্রিত হওয়ার দরকার রয়েছে। লালা চর্বণকৃত খাদ্যকে পিচ্ছিল করায় তা সহজে অন্ননালি দিয়ে পাকস্থলীতে পোঁছায়।

মুখগহ্বর থেকে খাদ্য দ্রব্যের মেকানিক্যাল ও রাসায়নিক উভয় ধরনের হজম প্রক্রিয়ার সূত্রপাত হয়। তিনজোড়া স্যালাইভারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত মিশ্র্ররস হচ্ছে লালা। লালা হচ্ছে প্রথম পরিপাক রস। দৈনিক গড়ে ৮০০-১৫০০ মি.লি. লালা নিাঃসৃত হয়। লালারসে থাকে পানি, খনিজ লবণ, স্যালাইভারি অ্যামাইলেজ, টায়ালিন, মিউকাস, লাইসোজাইম, ইমিউনোগ্লোবিউলিন্স এবং ব্লাড ক্লোটিং ফ্যাক্টর। স্যালাইভারি অ্যামাইলেজ অ্যানজাইম শর্করা খাদ্যের রাসায়নিক ভাঙ্গন ঘটায়। উক্ত এনজাইম বহুশিকল যুক্ত সিদ্ধ শর্করাকে রাসায়নিক ভাবে ভেঙ্গে দ্বি-শিকল যুক্ত শর্করা তথা ডেক্সট্রিন ও ম্যালটোজ এ পরিণত করে।

মুখগহ্বরের সুস্বাস্থ রক্ষার জন্য লালার ভূমিকা অপরিসীম। লালারসের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে জীবাণুর আক্রমণ থেকে দাঁত ও মুখগহ্বরকে রক্ষা করা। আমাদের মুখে প্রচুর সংখ্যায় প্যাথজেনিক ব্যাকটেরিয়া বিদ্যমান থাকে। এ ব্যাকটেরিয়া সহজেই মুখের কোষকে ধ্বংস করে দিতে পারে এবং দন্ত ক্ষয় করতে পারে। তবে সবসময় মুখে অল্প পরিমাণ লালা নিঃসরণ হয় বলে তা জীবাণুর আক্রমণ থেকে দাঁত ও মুখকে রক্ষা করে। লালারসে বিদ্যমাণ লাইসোজোম ও থায়োসায়ানেট আয়ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেল। এছাড়া লালারসে গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিবডি থাকে যা দন্ত ক্ষয়কারী ব্যাকটেরিয়াকে সরাসরি মেরে ফেলে। মুখের লালা রসে থাকে Streptococcus Saliverin নামক উপকারী ব্যাকটেরিয়া। এরা মুখের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে এবং মুখে দুর্গন্ধ হতে দেয় না। তাই কোন কারণে লালা নিঃসরণ কমে গেলে বেশি করে দই, আনারস, ক্যানবেরি, ধনিয়া, আদা, সবুজ শাকসবজি খেতে হবে।

তো টেকটিউনস বন্ধুরা আজ এ পর্যন্তই দেখা হবে আগামী কোনো পর্বে সে পর্যন্ত দোয়া করি সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।

Level 1

আমি Abdur Rashid। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 1 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস