লিনাক্স কমিউনিটির সম্ভবত এ যাবৎ কালের সবচেয়ে বড় ক্রাইসিসের নাম হলো ব্যাকট্রাক/কালি ! যখনই কেউ বলে সে লিনাক্সে মাইগ্রেট করছে, শুনতে ভালো লাগে। এরপর যখন শুনি তার শুরুটা ব্যাকট্রাক বা কালি দিয়ে হচ্ছে, ফাটা বেলুনের মতো চুপসে যেতে হয় ! উত্তরটা স্বাভাবিক, যে ডিষ্ট্রোর প্র্যাক্টিক্যালী কোন ইন্টারফেসে কোন কাজই নাই, সেটা দিয়েই শুরু?
শুরুটা হওয়া দরকার ব্যাকট্রাক আর অন্য ডিষ্ট্রো গুলার মধ্যে পার্থক্য দিয়ে। জেসন ডেনিস উবুন্টুর একটা ডিষ্ট্রোর উপর ভিত্তি করে ব্যাকট্রাক বানিয়েছিলো, উদ্দেশ্য ছিলো, ডিজিটাল ফরেনসিক এবং পেনিট্রেশন টেষ্টীং। ব্যাকট্রাক এর মূল ধারাটাই হলো পেনিট্রেশন টেষ্টিং এর ওপর ভিত্তি করে, ফলে এখানে কাজের ওপর নজর একটু বেশী দেওয়া হয়েছে। ব্যাকট্রাক একটা ফুল প্রফেশনাল লিনাক্স ডিষ্ট্রো, যা নির্দিষ্ট একটা পেশা/শ্রেনী/টাইপের মানুষের জন্য তৈরী। অন্যদিকে, উবুন্টু, মিন্ট, ওপেন স্যূসে - এইগুলো মূলত সব ধরনের মানুষের জন্য তৈরী। সাধারন মানূষ থেকে যে কোন পেশার/শ্রেনীর/টাইপের মানূষের জন্য। যেহেতু এটা সর্বসাধারনের জন্য, এখানে নতুনদের এবং অপেক্ষাকৃত কম অভিজ্ঞদের কথা মাথায় রেখেই সব কিছু সাজানো হয়েছে, ফলে এটা ব্যবহারে সহজ, এমনকি আপনি এর আগে জীবনে লিনাক্সে হাত দিয়ে না থাকলেও, এগুলো চালাতে পারবেন।
কিন্তু ব্যাকট্রাক? এটা তৈরীই করা হয়েছে পেনটেষ্টারদের জন্য। এখানে বোঝার জিনিস কম, করার জিনিস বেশি। ব্যাকট্রাক নিয়ে কাজ করতে গেলে আপনাকে প্রথমেই কমান্ড লাইনে এক্সপার্ট হতে হবে। সত্যি কথা বলতে এতোটাই এক্সপার্ট হতে হবে যে, একটা ফাইল এক যায়গা থেকে অন্য যায়গায়তে কপি/মুভ করতে হলেও আপনি কমান্ড লাইনে করছেন। ব্যাকট্রাক এর ফোরামে যান, ওখানে ইংলিশ কম, কমান্ড লাইনের কমান্ড বেশি। ওরা মুখে কথা কম বলে, যা হয় কমান্ডে।
ব্যাকট্রাকের যে বৈশিষ্টের জন্য আমাদের সদ্য লিনাক্সে আসা সদস্যরা একে এতো পছন্দ করেন, ব্যাকট্রাক এর বিশাল পেনটেষ্ট টুল ভান্ডার। ব্যাকট্রাক এর মধ্যে অনেক গুলো টুল প্রি-কনফিগার করা থাকে, বলতে গেলে সেগুলো রেডিমেড অবস্থায় পাওয়া যায় এবং সেটা আমাদের তরুনদের মধ্যে একটা ধারনার জন্ম দিয়েছে, যার জন্য বস্তুত একদল আবাল দায়ী, ব্যাকট্রাক থাকলেই বিশাল বড় হ্যাকার হওয়া যায়। মূলত ব্যাকট্রাক কোনদিন হ্যাকিং টুল ছিলোই না। এটা সব কিছুর ওপরে একটা পেনটেষ্ট এনভার্মনেন্ট, আপনার একটা ওয়েবসাইট আছে? ওয়েব অ্যাপ আছে? ওয়েব এ পি আই বেজ ডেক্সটপ অ্যাপ আছে? সেটার ত্রুটি, সিকিউরিটি হোল খুঁজে বের করার জন্য ব্যাকট্রাক এর জন্ম। সারাদিন শত শত টুল নিয়ে বসে বসে কনফিগার করে কাজ করার চেয়ে সময় বাঁচানোর জন্য জেসন ডেনিস ব্যাকট্রাক বানিয়েছিলো, আপনার বিশাল বড় হ্যাকার হওয়ার জন্য নয়। তারচেয়ে বড় কথা হলো, আপনি সারাজীবন উইন্ডোজ ব্যবহার করে ব্যাকট্রাকে যাচ্ছেন, তার মানে আপনি সারাজীবন বাংলা বলে এইবার হিব্রু ভাষায় চাকরী নিয়েছেন, যার মাথা মুন্ডু কিছুই আপনি বোঝেন না। শতকরা ৯০% নয়া ব্যাকট্রাক ইউজার ইন্সটল দেওয়ার পরে ঘোড়ার ডিম কিছু না বুঝে শেষে রিমুভ করতে গিয়ে পার্টিশন টেবল এর বারোটা বাজিয়ে দেয় !
এটা সত্য, যেহেতু ব্যাকট্রাক এর টুলগুলো তৈরীই করা হয়েছে ত্রুটি খোঁজার জন্য, সেটা আপনাকে হ্যাকিং এ অনেক সহায়তা করবে। তবে প্রশ্ন হলো, ফুটো না হয় খুঁজে পেলেন, তার পর কি করবেন? এক্সপ্লয়েট করার জন্য যতোটুকু টেকনিক্যাল জ্ঞান দরকার, সেটা থাকলে আপনার ব্যাকট্রাক এর দরকার হতো না, তাতে আমরা ধরেই নিতে পারি, আপনি হুজুগে হ্যাকার, কয়েকটা টিউটোরিয়াল আর হ্যাকিং গ্রুপে ঘুরেই আপনি ধরে নিয়েছেন এইবার আর হ্যাকার না হলে মান সম্মান থাকছে না, বন্ধুরা গুরুত্ব দিচ্ছে না। অতঃএব আমার হ্যাকার হওয়া চাই। এমনটা ভাবলে আপনি গাধার স্বর্গ রাজ্যে বাস করছেন। হ্যাকিং পৃথিবীর অনেক দেশের আইনেই গর্হিত একটা কাজ, এবং সেটা অন্যের জন্য ক্ষতিকর। প্র্যাক্টিক্যালী আপনি জানেন বলেই আপনাকে কেউ অধিকার দেয়নি আরেকজনের পরিশ্রমের সাইট ধ্বসিয়ে দেওয়ার। যদি এতোই জেনে থাকেন, তাহলে সাইটের মালিককে ইনফর্ম করুন।
জানি এরকম আরও ২০০ টা লেখা আসলেও, কেউ একদিন আবার কোন লিনাক্স হেল্প গ্রুপে টিউন করবে, ব্যাকট্রাকের ডাউনলোড লিঙ্ক চাই প্লিজ হেল্প !!! সেদিন গ্রুপের সবাই তাকে নিয়ে মজা করবে, আসলে এই মজাটাও আসে তিক্ত সব অভিজ্ঞতা থেকেই। ব্যাকট্রাক এর হেল্প এর জন্য একটা গ্রুপ খোলা হয়েছে দেখলাম, কোন টিউমেন্ট নেই এ ব্যাপারে, তবে একটা দীর্ঘশ্বাস থাকে, গ্রুপের কেউই ব্যাকট্রাক এর আসল উদ্দেশ্যটাকে বোঝেনি, যা না তা রিয়ালাইজ করেই চালিয়ে যাচ্ছে !
ব্যাকট্রাক ইউজাররা সুখে থাকুন, আশা করি আপনিও হতাশ হয়ে ব্যাকট্রাক আনইন্সটল করতে গিয়ে হার্ডড্রাইভ এর পার্টিশন টেবিল এর ১২ টা বাজাবেন না। আরও একটা কথা, শেষে বলাটাই শ্রেয় মনে করলাম, ব্যাকট্রাক বা কালি লিনাক্স এর সমস্ত টুলই ডেবিয়ান ডিষ্ট্রোর ওপর বেজ করা বানানো। ফলে এটা উবুন্টু বা মিন্ট, ডেবিয়ানের যে কোন সাক্সেসরেই চলবে। টুল গুলোর লিষ্ট অনলাইনেই পাবেন। গুগল আছে সার্চ করার জন্য। এরপর ডাউনলোড করে নিন। টুলের ডকুমেন্টেশনে পাবেন কিভাবে কনফিগার করতে হবে। সেটা পড়তে পড়তে টুলটার সম্পর্কে আপনারও অনেক কিছু শেখা হয়ে যাবে।
আমি কম্পিউটার ম্যান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 28 টি টিউন ও 127 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।