ল্যাপটপ আমরা সবাই প্রতিদিন ব্যবহার করি। সেটা হোক অফিসের কাজ, ব্যক্তিগত কোন কাজ বা ব্যাবসায়িক কাজ। কিন্তু এটি ততোক্ষণই ঠিক মত আমাদের সার্ভিস দেবে যতক্ষণ আমরা এর সঠিক পরিচর্যা করব ও যত্ন নেব। তার জন্যে আমাদের ল্যাপটপ চলমান ও সবল রাখাটাও জরুরী। অনেক সময়ে আমরা ল্যাপটপে অনেক জোরদার ও ভারী কাজ করে থাকি যার কারণে ল্যাপটপে প্রচুর চাপ পড়ে ও ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়। চলুন দেখে নেয়া যাক কিভাবে আমাদের এই দরকারি যন্ত্রটি ঠিক ও চলমান রাখা যায়।
১। ল্যাপটপ কাছে রেখে কোন রকম খাওয়া দাওয়া করা যাবেনা এবং কাছাকাছি কোন পানি জাতীয় কোন তরল রাখা যাবেনা। আমাদের সবার ল্যাপটপেই অনেক রকমের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, ফোল্ডার ও তথ্য থাকে। তরল কোন বস্তু কাছাকাছি রাখলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনা বেড়ে যায়, যাতে এই গুরুত্বপূর্ণ ফাইল গুলি ঝুঁকির মুখে পড়ে। ল্যাপটপের কাছাকাছি খাওয়া দাওয়া করলে খাদ্যের কণা গুলো ল্যাপটপের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে এবং কীবোর্ড, মাউসপ্যাড, স্পীকার ও স্ক্রিনের ক্ষতি হতে পারে।
২। ল্যাপটপ রাখতে হবে সমতল কোন জায়গায় যেমন টেবিল বা ডেস্কের ওপর। অনেক্ষন ল্যাপটপ চালালে ল্যাপটপ গরম হয়ে যায় ও ল্যাপটপকে ঠাণ্ডা রাখার জন্য নিচে একটি, অনেক সময়ে দুটি ফ্যান থাকে। অসমান ও উঁচুনিচু জায়গা যেমন বিছানা, সোফা বা কোলের ওপর রাখলে ল্যাপটপের নিচের অংশটি কভার হয়ে যায় যার কারণে ফ্যান গুলো ঠিক মত কাজ করতে পারেনা এবং খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যায়। এই গরম হয়ে যাওয়াটা ল্যাপটপের ব্যাটারির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই এটা মাথায় রাখতে হবে যেন ল্যাপটপের নিচের অংশটি কোন সমান জায়গায় থাকে যাতে বাতাস চলাচল ঠিক মত করতে পারে এবং ব্যাটারিও ঠাণ্ডা থাকে। দরকার হলে আমরা কুলিং প্যাডও (cooling pad) ব্যবহার করতে পারি।
৩। আমাদের ল্যাপটপ অনেক স্পর্শকাতর একটি যন্ত্র। তাই আমাদের চেষ্টা করতে হবে ল্যাপটপটি খুব নিরাপদ ও সঠিক জায়গায় রাখার। নিশ্চিত করতে হবে সেই জায়গাটা যেন সরাসরি রোদ, গরম, ও হিট ভেন্টের মত জায়গায় থেকে দূরে থাকে। আবার বৃষ্টি, আদ্রতা, ধুলোবালি, ময়লা ইত্যাদি থেকেও যেন দূরে থাকে।
৪। নিয়মিত ল্যাপটপের ভেতর এবং বাহির দুটোই পরিষ্কার করতে হবে যাতে ধুলো ময়লা না জমতে পারে। নিয়মিত স্ক্রিন, কীবোর্ড, এয়ার ভেন্ট, স্পীকার এগুলো পরিষ্কার করতে হবে।
৫। ল্যাপটপ বন্ধ থাকা অবস্থায় স্ক্রিনের ওপর কোন ভারী জিনিস রাখা যাবেনা। এতে স্ক্রিনের ওপর অনেক চাপ পড়ে।
৬। সারাদিন ল্যাপটপ চালালে ল্যাপটপে অনেক প্রেশার পড়ে যাতে ল্যাপটপের ক্ষতি হয় ও বয়সসীমা কমে যেতে থাকে। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন একবার হলেও ল্যাপটপটি রিস্টার্ট দেয়া এবং পুনুরায় অন করার আগে কমপক্ষে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করা।
৭। ব্যবহার ও সময়ের সাথে সাথে ব্যাটারির আয়ু ও মান কমতে থাকে আর ব্যাটারির কোন ক্ষতি হলে ল্যাপটপ একদমই অচল হয়ে যায়। তাই যখনি সম্ভব চার্জারের তার প্লাগ ইন (plug in) করেই ব্যবহার করা উচিত। শুধুমাত্র অতি দরকারে চার্জারের তার খোলা যেতে পারে। আর কখনই ব্যাটারিকে পুরোপুরি জিরোতে নামতে দেয়া উচিত নয়। এতে ব্যাটারির প্রচুর ক্ষতি হয় এবং ২০% এ নেমে আসলেই ব্যাটারি চার্জে দেয়া উচিৎ।
৮। ল্যাপটপের প্রয়োজনীয় সব সফটওয়ারের নিয়মিত আপডেট করা উচিত এতে ল্যাপটপ স্মুথলি চলতে পারে এবং সফটওয়ারজনিত সমস্যা থেকেও দূরে থাকা যায়।
৯। অপ্রয়োজনীয় সফটওয়ার, ফাইল ও ফোল্ডার মুছে ফেলা উচিত। প্রতিদিন কাজ করার ফলে আমাদের ল্যাপটপে শত শত ফাইল, ও তথ্য জমা হয় যা আমাদের ল্যাপটপকে স্লো করে ফেলে ও এর কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই কন্ট্রোল প্যানেলে থাকা অ্যাড অর রিমুভ (add or remove) প্রোগ্রামে গিয়ে দেখা উচিত কোন কোন সফটওয়ার গুলো আমাদের লাগেনা এবং সেই অনুযায়ী সেগুলো ডিলিট করে ফেলা উচিত। আর স্টার্ট মেন্যুতে থাকা রান অপশনে গিয়ে কয়েকটি প্রম্পটে (prompt) গিয়ে সেই ফাইল গুলোও মুছে ফেলা দরকার। প্রম্পট গুলো হচ্ছে, prefetch, temp %temp% ও recent। তবে যেকোনো ফাইল বা ফোল্ডার ডিলিট করার আগে ভালোভাবে চেক করে নেয়া জরুরী।
১০। ভালও মানের একটি অ্যাান্টিভাইরাস (antivirus) ব্যবহার করা উচিত। কাপারস্কি(Kaspersky), নর্টন(Norton), অ্যাভাস্ট(Avast), এভিজি (AVG), ম্যালওয়ারবাইট (Malwarebyte) অ্যাান্টিভাইরাসগুলির মধ্যে অন্যতম। ইন্টারনেটে কাজ করার ফলে আমাদের অনেক রকম ওয়েবসাইট ও পেইজ ভিজিট করতে হয় যার কারণে মারাত্মক ভাইরাস ঢুকে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকি আমরা। এতে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল হারিয়ে বা চুরি হয়ে যেতে পারে, ব্যক্তিগত ও স্পর্শকাতর সব তথ্য চুরি হতে পারে, স্ক্যাম ও আইডেন্টেকটিউনস থেফটের (identity theft) মত নানান ঝামেলায় পড়তে হয়। একটি ভাল মানের অ্যাান্টিভাইরাস এসব সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় এবং বেশিরভাগ সময়েই এসব ভাইরাস হামলা হওয়ার আগেই তা ঠেকায়। তবে মনে রাখতে হবে অ্যাান্টিভাইরাসটি যেন নিয়মিত আপডেট করা হয় এবং ওয়েবসাইট ভিজিটের ক্ষেত্রে ভালো মানের ব্রাউজার এক্সটেনশন ও সফটওয়ার ব্যবহার করা উচিত।
১১। বাহ্যিক কোন ডিভাইস যেমন এক্সটারনাল হার্ড ড্রাইভ (external hard drive), পেন্ড্রাইভ (pendrive), মেমোরি কার্ড (memory card) ইত্যাদি ব্যবহারেও অত্যন্ত সাবধান থাকা দরকার। অনেক সময়ে অচেনা অনেক পেন্ড্রাইভ ক্ষতিকারক ভাইরাস এবং ম্যালওয়ার বহন করতে পারে, যাতে আমাদের অগচরেই ঘটতে পারে ভয়ংকর সব দুর্ঘটনা। আর আরও আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে এই ভাইরাস গুলো সাধারণ আর ১০টি ফাইলের মতই দেখায় যাতে অ্যাান্টিভাইরাস সফটওয়ারগুলোর এদেরকে চেনা কঠিন হয়ে পড়ে। অচেনা কোন পেন্ড্রাইভ ব্যবহার করার ব্যাপারে অতি সাবধান থাকতে হবে এবং নিজের ব্যক্তিগত ডিভাইসটিও খুব সাবধানতার সাথে ব্যবহার করতে হবে।
১২। আমরা ল্যাপটপ ব্যবহার করার সময়ের উইন্ডোজের ব্যাকগ্রাউইন্ডে নানান প্রোগ্রাম চলতে থাকে, অনেকগুলো দরকারি আবার অনেকগুলো অদরকারি। এই অদরকারি প্রোগ্রাম গুলোকে বন্ধ করে দেয়া উচিত, যাতে ল্যাপটপের স্পেই্স বৃদ্ধি পায় ও দ্রু্ত কাজ করতে পারে। সেজন্য Ctrl + Alt + Delete বাটন টিপ দিয়ে টাস্ক ম্যানাজার (Task manager) খুলতে হবে। সেখানে গেলে দেখা যাবে ব্যাকগ্রাউইন্ডে কোন কোন প্রোগ্রামগুলো চলছে। তারপর দরকার অনুযায়ী অপ্রয়োজনীয় সব প্রোগ্রামগুলোকে কেটে দিতে হবে।
এই নিয়মগুলো মেনেই চললেই নানান রকম ল্যাপটপের টেকনিক্যাল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, অহেতুক কোন ঝামেলায় পড়তে হয় না এবং সেই সাথে ল্যাপটপের আয়ুও বৃদ্ধি পায়। তাই সবার উচিত এই নিয়মগুলো মেনে চলা ও সাবধানতার সাথে ল্যাপটপ পরিচালনা করা। আশাকরি টিপসগুলো আপনাদের কাজে দেবে। ভালো লেগে থাকলে টিউমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না, আর বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি করে শেয়ার করবেন। আর আমাকে ফলো করে জানাবেন এরপর কোন বিষয় আপনাদের সামনে তুলে ধরব।
আমি সাদাফ সাদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 5 টি টিউন ও 2 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।