টাইটেলে গেমিং ল্যাপটপ বলা রয়েছে দেখে এটা ভাববেন না যে গেমিং ছাড়া অন্য কিছু করা যায় না এই ল্যাপটপটিতে। নজরকাড়া ডিজাইনের জন্যই এই Razer Blade ল্যাপটপটি নিয়ে আমি আজ চলে এলাম একটি ছোট্ট রিভিউ নিয়ে। আশা করি আমার মতো আপনারাও এই ল্যাপটপটির প্রেমে পড়ে যাবেন! (দামে নয়!)
বাজারে বর্তমানে অনেক গুলো গেমিং ল্যাপটপ রয়েছে। তাদের মধ্যে Razer Blade ২০১৮ সংষ্করণটি হচ্ছে একটি। সাধারণ ল্যাপটপের থেকে একটি গেমিং ল্যাপটপের পার্থক্য কি সেটা আগের একটি টিউনে আমি বলে দিলে আজ আবারো বলে দিচ্ছি, সাধারণ ল্যাপটপে গেমস খেলার মূল উপাদান “গ্রাফিক্স কার্ড” কম আকারে দেওয়া থাকে অন্য দিকে গেমিং ল্যাপটপে গ্রাফিক্স কার্ডের সাথে সাথে গেমিং সহ হেভি ডিউটি কাজ করার জন্য বিল্ড করা হয়ে থাকে। আর এই Razer Blade ২০১৮ সংষ্করণটি বাজারে সবথেকে শক্তিশালী গেমিং ল্যাপটপ নয়, এটা ওজনে সবথেকে হালকাও নয়, তবে এ বছরের সেরা “মসৃণ” নোটবুক হিসেবে এই ডিভাইসকে আখ্যায়িত করাই যায়। শুরু দিক থেকেই Razer কোম্পানি তাদের Blade মডেলগুলোকে ম্যাকবুক মেশিনের অল্টারনেটিভ হিসেবে বলে আসছে। আর এবারের Razer Blade মেশিনটি বর্তমানের ম্যাকবুক প্রো এর অল্টারনেটিভ হিসেবেও আপনি কিনে নিতে পারেন, আর অল্টারনেটিভ হিসেবে দামটাও কিন্তু অল্টারনেটিভ হবে!
ল্যাপটপটির ভালো দিক | ল্যাপটপটির খারাপ দিক |
প্রিমিয়াম বিল্ড কোয়ালিটি | উচ্চমূল্য (১৯০০ মার্কিন ডলার) |
পাওয়ারফুল হার্ডওয়্যার | অনান্য গেমিং ল্যাপটপের মতো হালকা নয় |
144Hz এর স্মুথ ডিসপ্লে | |
আরামদায়ক কিবোর্ড এবং ট্রাকপ্যাড | |
সলিড ব্যাটারি লাইফ |
জেট ব্ল্যাক ইউনিবডি অ্যালুমিনিয়াম কেইস ছাড়া কোনো Razer কোম্পানির ল্যাপটপগুলো Blade মডেলের হয়ে উঠে না। এই মডেলটিও এর ব্যতিক্রম নয়। এই গেমিং ল্যাপটপটিকে আপনি পাবেন সুন্দর ছিমছাম ডিজাইন যা সাধারণত অনান্য গেমিং ল্যাপটপগুলোতে আপনি পাবেন না। অ্যালুমিনিয়ামের সাথে কোম্পানিটি ল্যাপটপটিকে দিয়ে দিয়েছে “anodized finish” মানে এই ফিচারের মাধ্যমে ডিভাইসটিতে স্ক্র্যাচ পড়বে না। অনান্য বছরের রেজার ব্লেড মডেলগুলোর থেকে ২০১৮ সালের এই মডেলের সবথেকে বড় আপগ্রেড হচ্ছে এর ডিসপ্লে সাইজ। এই রেজার ব্লেড মডেলে রয়েছে ১৫.৬ ইঞ্চির স্ক্রিণ। গত বছরের মডেলে ছিলো ১৪ ইঞ্চির স্ক্রিণ। বড় হবার সাথে সাথে স্ক্রিণের ব্রেজেলকেও আরো চিকন করে দেওয়া হয়েছে। ডিভাইসটিতে অনান্য বছরের ব্লেড মডেলগুলোর থেকে আপনি ২০% বেশি Screen-to-body রেশিও পাবেন।
সাইড ব্রেজেলগুলোকে কোম্পানিটি 4.9 মিলিমিটারে সাজালোর উপরের দিকের ব্রেজেলকে একটু বড় করে রাখা হয়েছে, কারণ উপরে রয়েছে ৭২০ রেজুর ওয়েবক্যাম। অনেক ল্যাপটপেই ডিভাইসের স্ক্রিণের নিচে ওয়েবক্যাম দেওয়া থাকে (যেমন Gigabyte Aero 15X, Dell XPS)। স্ক্রিণকে আপনি ১০৮০p কোয়ালিটির ৬০ মেগাহার্জ কিংবা ১৪৪ মেগাহার্জ যেকোনো কোয়ালিটিতেই ব্যবহার করতে পারা সহ চাইলে আপনি ডিভাইসটিতে সর্বোচ্চ 4K রেজুলেশন পর্যন্ত যেতে পারেন। আর ডিভাইসটির স্ক্রিণকে আপনি টাচস্ক্রিণ হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন। এগুলো ছাড়াও ডিভাইসটির ডিসপ্লেটি বর্তমানে SRGB Color Profile সার্পোট করে, অর্থ্যাৎ এই ডিভাইসটিতে আপনি পাবেন চমৎকার কালার কোয়ালিটি। অন্যদিকে আগের বছরের ব্লেড মডেলগুলোর থেকে এ বছরের ব্লেড মডেলগুলো ওজনের দিক থেকেও বেড়েছে। ১০৮০p মডেলটির ওজন ৪.৫ পাউন্ডস (২ কেজির একটু বেশি) আর ৪কে মডেলটির ওজন হচ্ছে ৪.৭ পাউন্ডস।
এবার আসি কনফিগারেশনের। রেজার ব্লেড ২০১৮ সংষ্করণটি বাজারে আপনি ২টি মডেলে পাবেন। দুটিতেই থাকছে ৬টি কোরযুক্ত অষ্টম প্রজন্মের ইন্টেল আই ৭ প্রসেসর, একটি মডেলে আপনি পাবেন ৬ গিগাবাইট জিফোর্স জিটিএক্স ১০৬০ ম্যাক্স-কিউ গ্রাফিক্স প্রসেসর এবং অন্য মডেলে পাবেন ৮ গিগাবাইট জিটিএক্স ১০৭০ ম্যাক্স-কিউ গ্রাফিক্স। দুটি মডেলই বর্তমানের যুগের গেমসগুলোকে ৬০ ফ্রেম স্পিডে 1080p রেজুলেশনের চালাতে সক্ষম। পোর্টের দিক থেকে বলতে গেলে ডিভাইসটিতে রয়েছে তিনটি USB 3 র্পোট, একটি USB-C Thunderbolt 3 পোর্ট, HDMI এবং মিনি-ডিসপ্লে পোর্ট। রেজার কোম্পানিটি তাদের ল্যাপটপগুলোর চার্জিং কানেক্টশনটি নিজের মতো করে কাস্টমাইজ করে নেয় যা অনান্য ব্রান্ডের AC Adapter গুলোর থেকে বেশ হালকা, যা আপনি এই ডিভাইসেও দেখতে পাবেন। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে ল্যাপটপটিতে HDR ফিচারটি নেই, এটা না থাকা স্বত্তেও আপনি বেশ চমৎকার গ্রাফিক্স কোয়ালিটি পাবেন।
গেমিংয়ে চমৎকার পারফরমেন্স ছাড়াও ডিভাইসটি দিয়ে অনান্য কাজ করার সময় ডিভাইসটির ১৪৪ হার্জ ডিসপ্লে আপনার ল্যাপটপে চোখের যত্ন নিবে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘসময় ধরে কম্পিউটার স্ক্রিণের দিকে তাকিয়ে থাকেন (আমার মতো) তাদের জন্য এই রেজার ব্লেড ২০১৮ সংষ্করণের ১৪৪ হার্জ কোয়ালিটির ডিসপ্লেটি বেশ দরকারি। যেমন উচ্চমানের মুভি দেখে আপনি ল্যাপটপটিকে বেশ মজা পাবেন, এছাড়াও নিত্যদিনের সকল কাজ এবং বিশেষ করে মাল্টিটাস্কিং বেশ সহজেই সেরে ফেলতে পারবেন। আমার বর্তমান ল্যাপটপে রয়েছে ৮০ হার্জ কোয়ালিটি যা এই ১৪৪ হার্জের কোয়ালিটির থেকে বেশ কম।
সাধারণ ল্যাপটপের থেকে গেমিং ল্যাপটপগুলোকে হিটিং জিনিসটা একটু বেশি হয়ে থাকে। কারণ গেমিং ল্যাপটপগুলো হেভি ওয়েট টাস্ক করে থাকে এবং এগুলোতে উচ্চমানের হার্ডওয়্যার দিয়ে রাখা হয় বিধায় এই ডিভাইসগুলো অনান্য সাধারণত ডিভাইসের থেকে বেশি গরম হয়ে থাকে। এ বছরের রেজার ব্লেড ডিভাইসের হিটকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কোম্পানিটি একটি চিকন vapor ফিচারের কুলিং চেম্বার সেট করে রেখেছে যা ডিভাইসটির সিপিইউ এবং জিপিইউ দুটোকেই কভার করতে সক্ষম। তবে যতই ব্যবস্থা থাকুক না কেন ৩০ মিনিটেড ফুল সোর্সের ভিডিও গেমস খেললে ডিভাইসটি তাপমাত্রা ৮০ থেকে ৮৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যাবে, আর তখন ল্যাপটপটির কির্বোডে হাত দিলেই ডিভাইসের হিট আপনি বুঝতে পারবেন! তাই এক্সট্রা কিবোর্ড ছাড়া এটাকে গেম না খেলাই আপনার জন্য ভালো হবে। এছাড়াও হেভি ওয়েট টাস্কের হেভি ওয়েট হিটগুলোর জন্য ডিভাইসটির নিচের দিকে দুটি এক্সট্রা ফ্যান দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা আপনি যখন গেমস খেলবেন তখনই চালু হবে, এবং এই ফ্যানগুলোর থেকে বাতাসের সাথে সাথে শব্দও উৎপন্ন হবে। তাই একদমই নিরব অফিসে বা বেডরুমে গেমস খেলার সময় এই শব্দটি আপনি বেশ ভালো ভাবেই শুনতে পারবেন। তবে এটা প্রতিযোগী ডিভাইসগুলোর থেকে কম হবে এটা আমি আপনাকে বলতে পারি।
ল্যাপটপটির মূল আকর্ষণ হচ্ছে এর ডিজাইন। বাইরে থেকে দেখলে আপনার কখনোই মনে হবে না এটি একটি গেমিং ল্যাপটপ। বাইরের থেকে দেখলে এটাকে যেকোনো করর্পোরেট ল্যাপটপ হিসেবেই ভেবে নিতে পারেন আপনি। ছিমছাম পরিপাটি ডিজাইনের ভেতরে যে এত বড় সাইজের কনফিগারেশন দিয়ে রাখা হয়েছে তা শুনে অনেকেই অবাক হতে পারেন। এর কিবোর্ডটির দিকেই তাকিয়ে দেখুন, পুরোটাই ছিমছাম এবং করর্পোরেট ডিজাইনের কির্বোড দিয়ে রাখা হয়েছে, যা গেমিং ল্যাপটপ গুলোতে দেখা যায় না। ল্যাপটপের কির্বোডে রয়েছে রেজার কোম্পানির Chroma RGB লাইটিং, যা রাতের বেলায় কিবোর্ডের অক্ষরগুলোকে উজ্জল করে রাখবে। রয়েছে মাইক্রোসফটের Precision Touchpad। টচপ্যাডটি গত বছরের মডেলের থেকে ৫০ শতাংশ বড়। ল্যাপটপের টচপ্যাডে সবথেকে ভালো মানের হচ্ছে এই Microsoft Precision Touchpad। যারা এটি ব্যবহার করেছেন তারাই জানবেন যে এই মডেলের টচপ্যাডগুলো কতটুকু স্মুথ কাজ করে।
গেমিং ল্যাপটপে বেস্ট ব্যাটারি লাইফও আপনি পেয়ে যাবেন এই রেজার ব্লেড মডেলটিতে। পূর্ণ ইউজে ডিভাইসটি ৮ ঘন্টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতে সক্ষম। চিন্তা করে দেখুন। হ্যাঁ এখানে আপনি বলতে পারেন যে আপনার ৩০ হাজার টাকার ল্যাপটপটিও ৬/৭ ঘন্টা পর্যন্ত ব্যাকআপ দেয় কিন্তু এখানে আমি বলছি পূর্ণ ইউজের কথা। ফুল ইউজে আপনার ল্যাপটপটিও ঘন্টা ৩ এর মধ্যেই চার্জ ফুরিয়ে যেতে পারে একবার ট্রাই করে দেখুন। হেভি ইউজে প্রায় ৯ ঘন্টার মতো ব্যাটারি ব্যাকআপ পাচ্ছেন মানে হচ্ছে নরমাল ইউজে আরো বেশিক্ষণ ধরে ডিভাইসটি আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।
টিউনটি শেষ করছি ডিভাইসটির প্রাইস দিয়ে। টিউনের শুরুতেই বলেছি এটি একটি বেশ উচ্চমূল্যের ডিভাইস। ডিভাইসটি দুটি মডেলে আপনি বাজারে পাবেন। প্রথম মডেলটিতে আপনি পাবেন ১০৮০p রেজুলেশনের ৬০ হার্জের স্ক্রিণ, ৬ গিগাবাইট জিটিএক্স ১০৬০ ম্যাক্স কিউ গ্রাফিক্স কার্ড এবং ২৫৬ গিগাবাইটের SSD। প্রথম মডেলটির দাম রাখা হয়েছে ১৯০০ মার্কিন ডলার বা এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। অন্যদিকে ২য় মডেলটি আরেকটু উন্নত। ২য় মডেলে আপনি পাবেন 4K রেজুলেশনের ১৪৪ হার্জের স্ক্রিণ, ৮ গিগাবাইট জিটিএক্স ১০৭০ ম্যাক্স কিউ গ্রাফিক্স কার্ড এবং ৫১২ গিগাবাইটের SSD। এই মডেলের দাম রাখা হয়েছে ২৬০০ মার্কিন ডলার বা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। এটা হচ্ছে মডেলগুলোর আন্তজার্তিক মূল; আমাদের দেশে বিভিন্ন ট্যাক্স এবং সার্ভিস ফি যুক্ত হয় বিধায় ডিভাইসগুলোর দাম আরো বেশি হবে। দুটি মডেলেই আপনি পাবেন ৬৪ বিট উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেম, ৮ অস্টম প্রজন্মের ইন্টেল কোর আই ৭ প্রসেসর (i7-8750H - 2.2GHz, 9MB L3 Cache), ১৬ গিগাবাইটের ডুয়াল চ্যানেল ডিডিআর ৪ র্যাম (DDR4-2667) এবং ৮০Wh ব্যাটারি।
শেষ কথা হচ্ছে এটি একটি চমৎকার ডিভাইস। আপনি যদি বাজেটে কুলাতে পারেন তাহলে নিয়ে নিতে পারেন যেকোনো একটি মডেলকে। ডিভাইসটি নিয়ে দিনের বেলায় আপনি অফিস করতে পারেন আর রাতে বাসায় এসে গেমিং করে নিতে পারেন। একের ভিতর দুই মডেলের বেশ চমৎকার একটি ল্যাপটপ হচ্ছে এই রেজার ব্লেড। তবে অ্যাপল ম্যাকবুক প্রোয়ের মতোই এই ডিভাইসটিও সবার জন্য নয়। কারণ একটাই, এর দাম।
তবে আপনি যদি দামের দিক থেকে টেনশনমুক্ত থাকেন এবং বর্তমান বছরের সেরা হার্ডওয়্যারযুক্ত গেমিং ল্যাপটপটি নিতে চান তাহলে নিয়ে নিতে পারেন ASUS Zephyrus ল্যাপটপটি; যেখানে আপনি পাবেন লেটেস্ট এনভিডিয়ার জিফোর্স জিটিএক্স ১০৮০ ম্যাক্স কিউ গ্রাফিক্স সিস্টেম। আজ এ পর্যন্তই। ল্যাপটপটির সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে নির্দ্বিধায় নিচের টিউমেন্ট বক্সে করে ফেলতে পারেন। আগামীকাল অন্য কোনো টপিক নিয়ে আমি চলে আসবো আপনাদেরই প্রিয় বাংলা টেকনোলজি সোশাল প্লাটফর্ম টেকটিউনসে। টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ সবাইকে।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!