বর্তমান যুগে কম্পিউটার একটি অন্যতম অপরিহার্য উপাদান হিসেবে আমাদের দৈন্যদিন জীবনের একটি অংশ হয়ে গিয়েছে। আর সবর্ত্র বহনযোগ্য কম্পিউটার হিসেবে ল্যাপটপকে আমরা ডেক্সটপের থেকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। আর ব্যক্তিগত বা অফিসের কাজে ল্যাপটপ কেনার সময় বেশ কিছু জিনিসের উপর খেয়াল রেখেই ল্যাপটপটি কেনা উচিত। আর আজকের টিউনে আমি উক্ত বিষয়গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। তো চলুন দেখে নেই:
ডেক্সটপ আর ল্যাপটপ পিসির মধ্যে মূল পাথর্ক্য হলো এখানে। ল্যাপটপ ব্যাটারীতে বিদ্যুৎ চলে গেলেও আপনাকে ব্যাকআপ দিবে। আর ল্যাপটপ কেনার সময় এর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। ল্যাপটপ কেনার সময় কোম্পানি কর্তৃক দেওয়া ব্যাটারী লাইফকে মিনিমাম হিসেবে ধরে আপনাকে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সময় অনুসারে হিসেব করেই তবেই আপনি ল্যাপটপ কিনতে পারেন। ধরুন আপনার বাসা থেকে অফিসে যেতে প্রায় ৪০ থেকে ৬০ মিনিট লাগে আর এই সময়টুকুর মধ্যে আপনি একটি রিপোর্ট রেডি করে রাখতে চান। আবার লাঞ্জ টাইম ১ ঘন্টা, লাঞ্জ টাইমে ইন্টারনেট ব্রাউজিং ও নেটে খবরের কাগজ পড়েন আপনি, অন্যদিকে অফিস থেকে ফেরার পথে ইউটিউব ব্রাউজি। সব মিলিয়ে দিনে আপনার ৪/৫ ঘন্টা ল্যাপটপ ব্যাটারীতে চালাতে হবে, তাই আপনার ল্যাপটপটি এইটুকু ব্যাকআপ আপনাকে দিতে পারবে কিনা সেটা ল্যাপটপ কেনার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন। তবে একটা কথা, চার্জে বা বিদুৎতে ল্যাপটপ চালানোর সুযোগ থাকলে অযথা ল্যাপটপ ব্যাটারীতে চালাবেন না এবং ব্যাটারীতে ল্যাপটপ চলমানরত অবস্থায় হেভি গেমস বা প্রেসার পড়ে এমন কোনো সফটওয়্যার চালানো থেকে বিরত থাকুন।
ল্যাপটপ কেনার সময় ল্যাপটপের ব্যাটারীর চার্জ ধারণ ক্ষমতা, চাজিং স্পিড, ব্যাটারী টাইপ (Nica, NiMH or Li-ion), ব্যাটারী ম্যানুফেক্চার ব্রান্ড, ব্যাটারী ভোল্টেজ এবং ব্যাটারীর mAH চেক করে নিবেন।
প্রতিটি পোর্টেবল কম্পিউটারে ডিসপ্লে ইউনিটটি কীর্বোডের সাথে সংযুক্ত অবস্থায় থাকে। আর ল্যাপটপ কেনার আগে সেটার ডিসপ্লে সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। প্রথমত আপনি আপনার দরকারি ডিসপ্লে সাইজ নির্বাচন করুন। বেশি ছোট হলে কাজ করতে অসুবিধে হবে আর সাইজে বেশি বড় হলে সেটি বহন করতে কস্ট হবে। সাইজের পাশাপাশি ডিসপ্লে টেকনোলজি এবং কোয়ালিটির ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখা উচিত। সাধারণত বাজারে ছোট ডিসপ্লে যুক্ত ল্যাপটপগুলো দাম তুলনামূলক ভাবে কমই হয়ে থাকে।
ডিসপ্লে স্ক্রিণের Dimensional Size এবং Screen Size দুটি বিবেচনা করে তারপর ল্যাপটপটি কেনা উচিত। Dimensional Size বলতে ডিসপ্লেটির ঘনত্ব বুঝায়। যেমন আগেরকার যুগের CRT মনিটরগুলোর Dimensional Size অনেক বেশি ছিলো। অর্থ্যাৎ ডিসপ্লে যতো চিকন হবে Dimensional Size তত কম হবে।
এর পাশাপাশি ডিসপ্লেটি সর্বোচ্চ কত রেজুলেশন সার্পোট করে সেটাও দেখে নিবেন। উন্নত মানের রেজুলেশন আপনাকে এক চমৎকার ইউজার ইন্টারফেস উপহার দিবে কিন্তু লক্ষ্য রাখবেন বেশি বড় রেজুলেশন পিসি স্লো এবং ইমেজ কোয়ালিটি খারাপ করে দিতে পারে।
15" 800 x 600 or 1, 024 x 768
17" 1, 280 x 1, 024
19" 1, 280 x 1024
21" - 1, 600 x 1, 200
এটা হলো স্ক্রিণের সাইজ ভিক্তিক স্যান্ডার্ড রেজুলেশন কোয়ালিটি। এখন যদি আপনি ১৫ ইঞ্চির মনিটরে 1600 x 1200 রেজুলেশন ব্যবহার করেন তাহলে হয়তো সেটা সার্পোট করবে না অথবা ছবি কোয়ালিটি অনেক ছোট এবং অমসৃণ হবে।
অনেক সময় ল্যাপটপ কেনার সময় আমরা সেটার ড্রাইভসগুলোকে লক্ষ্য করে থাকি না। এটি একটি ভুল পদক্ষেপ। অনান্য বিষয়ের মতোই একটি ল্যাপটপ কেনার সময় সেটা ড্রাইভসগুলোও চেক করে নেওয়া উচিত। ল্যাপটপগুলোকে বিভিন্ন টাইপের ড্রাইভস দেওয়া থাকে। যেমন ডিভিডি রম ড্রাইভ, ফ্লপি ড্রাইভ, ইউএসবি ড্রাইভ, ৩.১ হেডফোন জ্যাক ইত্যাদি। ওজন এবং সাইজে পাতলা করার জন্য অনেক ল্যাপটপে আপনি এই সমস্ত ড্রাইভের অনুপস্থিতি দেখতে পারবেন। তবে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সকল ড্রাইভস ল্যাপটপে রয়েছে কিনা সেটা ল্যাপটপ কেনার আগে যাচাই করে নিবেন।
হার্ডডিক্স হলো ল্যাপটপের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ল্যাপটপে আপনার প্রয়োজনীয় ডাটাগুলোর ধারণক্ষমতা এই হার্ডডিক্সের সাইজের উপরই নির্ভর করবে। তাই ল্যাপটপ কেনার আগে সেটার হার্ডডিক্সের সাইজ বুঝে নিন। কম দামে ল্যাপটপ পাবার জন্য আপনি কম সাইজের হার্ডডিক্স নিয়ে ল্যাপটপটি কিনলেন কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আপনার হার্ডডিক্স আপনার ডাটায় ভরে গেল তখন কিন্তু আপনাকে আরেকটি পোর্টেবল হার্ডডিক্সের সাহয্য নিতে হবে আর এক্ষেত্রে খরচ কিন্তু দ্বিগুণ হয়ে গেল। শুধু সাইজেই নয়, হার্ডডিক্সের ডাটা কপির স্পিডও আপনাকে কেনার আগে চেক করে নেওয়া উচিত। কারণ হার্ডডিক্সের স্পিড আপনার ল্যাপটপের অভারঅল স্পিড এর উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে থাকে।
সরাসরি পারফরমেন্স এই র্যামের উপর নির্ভর করবে। তাই ল্যাপটপ কেনার সময় তাতে সঠিক ও উপযুক্ত হারে র্যাম রয়েছে কিনা সেটা আপনি চেক করে নিবেন। কারণ ডেক্সটপ কম্পিউটারে আমরা প্রয়োজনমাফিক পরবর্তীতে এক্সট্রা র্যাম লাগানো সুযোগ পেয়ে থাকি কিন্তু ল্যাপটপে সেটা করা অনেক কঠিন একটি কাজ। তাই প্রথমে আপনি ল্যাপটপ দিয়ে কি কি কাজ করবেন সেটা ঠিক করুন তারপর আপনার কাজের ভিক্তিতে সঠিক র্যাম যুক্ত ল্যাপটপ নির্বাচন করুন। মনে রাখবেন র্যাম, প্রসেসর এবং মাদারবোর্ড তিনটি একই সুত্রে ঘাঁথা।
প্রসেসরের স্পিডের উপরই আপনার ল্যাপটপের সার্বিক স্পিড নির্ভর করে থাকে, আর প্রসেসর এর কোয়ালিটি এবং স্পিড এর উপরই ল্যাপটপের দাম কমবেশি হয়ে থাকে। তাই এক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন মাফিক সঠিক স্পিডের প্রসেসরের ল্যাপটপ কিনে নিন। প্রসেসর এর ব্রান্ড, ক্লক স্পিড, গিগাহার্জ গতি এবং কুলিং সিস্টেম এই কটি জিনিস আপনি নিশ্চিত হয়ে তারপর ল্যাপটপটি কিনবেন।
ল্যাপটপে আমরা যে জিনিসটি একদমই খেয়াল করি না সেটা হলো গ্রাফিক্স কার্ড। ডেক্সটপ কম্পিউটারের ন্যায় ল্যাপটপে তুমুল পারফরমেন্স পাবার জন্য কিংবা গেমিং ল্যাপটপ কেনার সময় অথবা হেভি ডিউটি গ্রাফিক্সের কাজ করার জন্য অবশ্যই ল্যাপটপে একটি শক্তিশালি গ্রাফিক্স কার্ডের প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে আপনি নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার ল্যাপটপে ইন্টারনাল বা এক্সটাল কোনো জিপিইউ আছে কিনা। ইন্টারনাল জিপিইউ মাদারবোর্ডে বিল্ট ইন অবস্থায় দেওয়া থাকে আর এগুলো তেমন শক্তিশালি নয় কিন্তু অপর দিকে এক্সটারনাল জিপিইউ ল্যাপটপে আলাদা ভাবে দেওয়া থাকে আর এগুলো আপনাকে বেশ শক্তিশালি পারফরমেন্স দিতে সক্ষম।
একই সাথে মনে রাখবেন যে শক্তিশালি জিপিইউযুক্ত ল্যাপটপ আপনাকে বেশিক্ষণ ব্যাটারী ব্যাকআপ দিতে পারবে না। কারণ সিপিইউ এর চাইতে বেশি বিদ্যুৎ গ্রাফিক্স কার্ডে চালান হয়ে থাকে।
ডেক্সটপ কম্পিউটার কেনার সময় আমরা ব্রান্ড ভিক্তিক এবং নন-ব্রান্ড ভিক্তিক পথ বেছে নেই। যেমন নিজে থেকেই আলাদা ভাবে খুচরা যন্ত্রাংশ কিনে এনে যেগুলো একত্রে বসিয়ে আমরা সহজেই একটি নন ব্রান্ড এবং অপেক্ষাকৃত কমদামী একটি ডেক্সটপ কম্পিউটার তৈরি করে নিতে পারি। কিন্তু ল্যাপটপে এটার সুযোগ নেই। ল্যাপটপগুলো একটি ব্রান্ড হিসেবে বাজারে আসে। আর আপনার উচিত ভালো ব্রান্ডের একটি ল্যাপটপ কিনে নেওয়া। কমদামী ব্রান্ড কিংবা চায়না ব্রান্ডের ল্যাপটপ কেনার আগে এক্সপার্ট কারে সাহায্য নিন এবং উক্ত ব্রান্ডের ব্যাপারে ইন্টারনেটে রিসার্জ করুন, ব্রান্ডের ব্যাপারে ইউজারদের মতামত ইন্টারনেটে চেক করুন, রিভিউগুলো দেখুন।
ল্যাপটপের কীবোর্ডগুলো সাধারণত একটু বেশি ভালো মানের হয়ে থাকে আর এগুলো আন-রিপ্লেসেবল তাই ল্যাপটপ কেনার আগে এর কিবোর্ড কোয়ালিটি চেক করা উচিত। আর লং টাইপিং এর জন্য ল্যাপটপের কীবোর্ড সরাসরি ব্যবহার না করে একটি আলাদা ইউএসবি কীবোর্ড কিনে নিতে পারেন। আর এছাড়াও ল্যাপটপের কীবোর্ডে আপনার প্রয়োজনীয় কী সমূহ রয়েছে কিনা সেটা চেক করে নিবেন।
আপনি কোন প্লাটফর্মের ল্যাপটপ চান? উইন্ডোজ, ম্যাক নাকি ক্রোম ওএস? সেটি নির্ধারণ করে নিন। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম চালিত ল্যাপটপগুলোর প্রচলন অনেক বেশি হয়ে থাকে কারণ উইন্ডোজ ওএস চালাতো অপেক্ষাকৃত ভাবে সহজ। অন্যদিকে ম্যাক ওএস শুধুমাত্র আপনি ম্যাকবুক ল্যাপটপগুলোতেই পাবেন। আর বর্তমানের উইন্ডোজ ল্যাপটপগুলোতে আপনি উইন্ডোজ ১০ ওএস দেওয়া দেখতে পাবেন। আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে আপনি যদি টাচস্ক্রিণ সুবিধা যুক্ত ল্যাপটপ কিনতে চান তাহলে আপনাকে উইন্ডোজ ভিক্তিক ল্যাপটপ কিনতে হবে কারণ এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাকবুকে টাচস্ক্রিণ ফিচারে বাজারে ছাড়া হয় নি।
এছাড়াও অনেক ল্যাপটপে বিভিন্ন ফিচার দেওয়া থাকে। সেগুলোও আপনার প্রয়োজন মাফিক ফিট হয়েছে কিনা সেটাও ল্যাপটপ কেনার আগে যাচাই করে নিবেন। আর হ্যাঁ সর্বশেষে ল্যাপটপটিতে সার্ভিস এবং ওয়্যারেন্টি ভালোভাবে চেক করে নিবেন। আর বাসায় আসার পূর্বে প্রয়োজনীয় জ্যাক এবং মাদারবোর্ড ডিক্স সাথে এনেছেন কিনা সেটাও চেক করে নিবেন। আর নতুন ল্যাপটপ ব্যবহারের পূর্বে বাসায় এসে ল্যাপটপটি বন্ধ থাকা অবস্থা প্রথমে ল্যাপটপটিকে ফুল চার্জে দিয়ে তারপর ব্যবহার করা শুরু করবেন। আর ল্যাপটপ ব্যাটারী সম্পূর্ণ শেষ না হলে চার্জিং দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!
আমার একটি প্রশ্ন ছিল ভাইয়া, যদি উত্তর দিতেন খুব উপকার হতো।
আমার ল্যাপটপটি সারাদিন বাসায় ব্যবহার করা হয়। বাইরে নেয়ার কোন প্রয়োজনই পড়ে না। তো বাসায় থাকি বিধায় সারাদিন বিদ্যুতের সাহায্যেই ল্যাপটপ চালাই। ব্যাটারি ব্যবহার করা হয় না বললেই চলে। এখন এভাবে যদি সারাক্ষণ বিদ্যুতের সাহায্যে চালাই তাহলে কি কোন ক্ষতি হবার আশংকা রয়েছে?