শুধু সামাজিক জীবনেই নয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোতেও গুজব একইভাবে বিস্তার লাভ করে। আর তাই বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্তির যুগে গুজবগুলোও একটা দারুণ রুপ লাভ করেছে। গুজব থেকেই বের হয়ে আসছে অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য। বেরিয়ে আসছে বিভিন্ন পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। সেই সাথে ছোট ছোট অনেক তথ্য থেকে সহজেই অনুমাণ করা যাচ্ছে অনেক নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে।
গতমাসে পাকিস্তানের বিরোধী রাজনীতিকরা অভিযোগ করেছিলেন যে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করে লন্ডনে দামী ফ্ল্যাট কিনেছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। পানামা পেপার্স থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল যে ঐ ফ্ল্যাটের মালিক নওয়াজ শরিফের মেয়ে মারিয়াম নওয়াজ।
যদিও মারিয়াম নওয়াজ নিজেকে শুধুমাত্র কোম্পানির একজন ট্রাস্টি বলে দাবি করেন। আর প্রমাণ হিসেবে একটা দলিলও পেশ করেন। দলিলটিতে সই করা তারিখ ছিল ২০০৬ এর। কিন্তু তদন্তকারীরা বলেছিলেন, মাইক্রোসফট’য়ের যে ফন্টটি ব্যবহার করে দলিলটি টাইপ করা হয়েছিল সেই 'Calibri' ফন্টটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয় ২০০৭ সালে। অর্থাৎ দলিলটি ছিল জাল।
প্রযুক্তির সুবিধাটা এই। অনেক ছোট কিছু থেকে অনেক বড় বড় তথ্য বের করা যায়। যাইহোক। চলে যাচ্ছি মূল বিষয়ে।
মার্কিন টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান অ্যাপল নিয়ে গুঞ্জনের অন্ত নেই। কী আগে, কী পরে, নতুন কিছু যোগ হবার গুঞ্জন সবসময়ই। নতুন প্রোডাক্ট রিলিজ হলেই গ্রাহকদের মনে থাকে নানা কৌতূহল, নানা প্রশ্ন।
বলা হচ্ছে অ্যাপল এবার টাচ আইডি প্রযুক্তি বাদ দিতে যাচ্ছে। আর যুক্ত হতে যাচ্ছে নতুন ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম। অর্থাৎ অ্যাপল নতুন আইফোন ৮-এ মুখ বা ফেইস সনাক্তকরণ পদ্ধতি যোগ করতে যাচ্ছে। তবে এ নিয়ে জনমনে প্রচুর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রথমেই কথা উঠছে ‘অ্যাপল পে’ নিয়ে। অনেকেই বলছেন যদি টাচ আইডি বাদ যায় তাহলে ‘অ্যাপল পে’ কীভাবে কাজ করবে?
বলে রাখা ভাল ‘অ্যাপল পে’ হলো অ্যাপলের ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিস। কোনো দ্রব্য বা সেবা ক্রয় করে ‘অ্যাপল পে’র মাধ্যমে সহজেই তার মূল্য পরিশোধ করা যায়। চালু হবার দুই বছরের মধ্যেই ১১ টি দেশে 'অ্যাপল পে' তাদের কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়। শুধু আইফোনই নয়, অ্যাপল ওয়াচ, আইপ্যাড বা ম্যাক সবকিছুতেই গ্রাহকরা তাদের পেমেন্ট সম্পন্ন করতে পারেন।
কিন্তু এর জন্য গ্রাহককে প্রথমেই তার আঙুল টাচ আইডিতে রেখে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হতো। এরপর চেকমার্ক সংবলিত ইংরেজিতে ‘Done’ লেখা স্ক্রিনে ভেসে আসলে গ্রাহক পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে পারতেন। তাই গ্রাহক মনে এই প্রশ্ন আসা খুবই স্বাভাবিক যে টাচ আইডি তুলে দিলে ‘অ্যাপল পে’ কীভাবে কাজ করবে! আর গুঞ্জনটা মূলত একারণেই।
আর সেটা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তো নয়ই। প্রোগ্রামার’রাও বসে নেই। তথ্য উদ্ধারের জন্য তারা সবসময়ই তাদের ঘাম ঝড়িয়ে যাচ্ছে। কথায় আছে, সকালের সূর্য দেখলে দিন বোঝা যায়। কিছুদিন আগে রিলিজ হওয়া একটা হোমপড ফার্মওয়্যারের ফাইল বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে অ্যাপল আইফোন ৮-এ মুখ সনাক্তকরণ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। আর এখন আরো কিছু তথ্যের উপর ভিত্তি করে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে মুখ সনাক্তকরণ প্রযুক্তির মধ্যেই এমন ব্যবস্থা করা হচ্ছে যে পেমেন্ট করতে গ্রাহককে আর টাচ আইডির মতো আঙুল ব্যবহার করতে হবে না। চলুন একটু বিস্তারিত দেখা যাক।
আইওএস ডেভেলপারদের তৈরি হোমপড ফার্মওয়্যারে একটি “com.apple.passbook.payment” নামক স্ট্রিং পাওয়া যায়। এতে অন্যান্য পেমেন্ট ভেরিফিকেশন ডেটাবেইজে দুই ধরনের রেফারেন্সের সন্ধান মেলে। একটি হলো “pearl.field-detect” এবং অন্যটি হলো “pearl.pre-arm”। আগের কিছু ফাঁস হওয়া তথ্য থেকে ধারণা করা যায় যে “pearl” দ্বারা পার্ল আইডি’কে বোঝায় যা অ্যাপলের মুখ সনাক্তকরণ পদ্ধতির কোডনেম।
আর এই পার্ল দ্বারা খুব ভালভাবেই বোঝা যায় যে অ্যাপলের বর্তমান কার্যক্রম এখনও অসম্পূর্ণ। আর সে কারণেই পার্ল শব্দটি শুধুমাত্র প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। সম্পূর্ণ কাজ হয়ে গেলে পুরো প্রযুক্তিটাই চালু থাকতো। এছাড়াও পূর্বের কিছু ফার্মওয়্যারের নমুনা দেখেও এসব বিষয় সম্পর্কে মুটামুটিভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিষয়টা বেশ মজার। অ্যাপল ঘোষণা না দিলেও প্রোগ্রামাররা ডেটাবেইজ পর্যালোচনা করে ঠিকই বের করে ফেলেছে অ্যাপলের কাজের গতি ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে। প্রযুক্তির নিয়মটাই এমন। কোনো না কোনো সূত্র পাওয়াই যায়। যা থেকে বড় বড় তথ্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়। তবে অনেকের মনে সন্দেহের দানা বেঁধেছে যে টাচ আইডি’র বদলে মুখ সনাক্তকরণ পদ্ধতি কতটা ফলপ্রসু হবে বা আদৌ হবে কিনা। আবার অনেকে সেটা কতটা নিরাপদ হবে সে প্রশ্নও তুলেছেন।
টাচ আইডিতে যত সংখ্যক ডেটা পয়েন্ট ধারণ করা হতো, মুখ সনাক্তকরণ পদ্ধতিতে আরো বেশি বেশি সংখ্যক ডেটা পয়েন্ট ধারণ করা হবে। তার মানে মুখ সনাক্তকরণ পদ্ধতির জন্য আরো বিশ্লেষণধর্মী কিছু ডেটা নেয়া হবে। তাই মুখ সনাক্তকরণ পদ্ধতিটা আরো বেশি নিরাপদ হবে। তবে সম্পূর্ণ এই নতুন ধরনের বায়োমেট্রিক পদ্ধতি তৈরির জন্য অ্যাপল'কে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ, টাচ আইডিকে ফুলস্ক্রিন ফ্রন্ট ফেসিং ডিসপ্লে তে পরিণত করা বেশ কষ্টসাধ্য কাজই বটে।
এছাড়াও হোমবাটন ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ছাড়া 'অ্যাপল পে' কীভাবে কাজ করবে তা এখনও স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে এতটুকু ধারনা করা যায় প্রযুক্তিটা এমন হবে যেন ব্যবহারকারীর মুখও স্ক্যান করা যাবে, একইসাথে বর্তমান আইফোনগুলোর মতো স্ক্রিনের সাহায্যেই পেমেন্ট প্রদান করা যাবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে হোমপড ফার্মওয়্যার থেকে প্রথম গুজব ছড়িয়েছিল যে নতুন আইফোন ৮-এ শুধুমাত্র টাচ আইডিটা থাকছে না।
আর এখন দেখা যাচ্ছে যে নতুন আইফোন ৮-এ কোনোরকম ফিজিক্যাল টাচ আইডিই থাকছে না। তার মানে ধারণাগুলো ক্রমেই সত্য বা বাস্তবে পরিণত হতে চলেছে।
তবে, অ্যাপল এখন কী করে সামনে, সেটাই দেখার পালা। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে অ্যাপল তাদের প্রোডাক্টগুলো অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। গ্রাহকদের চমক দেওয়া তো আছেই, সেই সাথে বিশ্বকে ক্রমাগত নতুন নতুন সেবা দিয়ে এখনও পর্যন্ত শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে অ্যাপল।
আজকের মতো এ পর্যন্তই। প্রযুক্তির পরিবর্তনগুলো এরকম চমকপ্রদ’ই হয়ে থাকে। নতুন নতুন আরো তথ্য ও উপাত্ত নিয়ে আবারও হাজির হবো নতুন কোনো টিউনে। আর, টিউন সংক্রান্ত কোনো মতামত থাকলে নিচের টিউমেন্ট বক্সে টিউমেন্ট করুন। ভালো থাকবেন সবাই। সুস্থ থাকবেন। আর প্রযুক্তির সাথেই থাকবেন। টেকটিউনস’এর সাথে থাকবেন।
আমি মামুন মেহেদী। Civil Engineer, The Builders, Bogra। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 92 টি টিউন ও 360 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি আপনার অবহেলিত ও অপ্রকাশিত চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।