আমরা সকলেই আইপি এড্রেস সম্পর্কে অবগত। কিন্তু, আইপি অ্যাড্রেস বা ইন্টারনেট প্রটোকল এড্রেস কীভাবে কাজ করে, তা খুব কম লোকই জানে। আর, ইন্টারনেট কাজ করার ক্ষেত্রে IP Address কী ভূমিকা রাখে, সেটি সম্পর্কে হয়তোবা আপনি এখনো পর্যন্ত অবগত নন।
ইন্টারনেট সংযুক্ত প্রত্যেকটি ডিজিটাল ডিভাইসের একটি আইপি এড্রেস থাকে, যা দ্বারা সেটি ইন্টারনেটের সাথে কানেক্ট হয়। ইন্টারনেটে একটি ডিভাইসের পরিচয় হিসেবে IP Address সকল জায়গায় প্রদর্শিত হয়। আর তাই, যখন কোন একজন হ্যাকার, বিজ্ঞাপনদাতা, সরকার অথবা আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার আপনার সম্পর্কে কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে চায়, তখন তারা আপনার আইপি এড্রেস ব্যবহার করে।
আপনি কে, আপনি অনলাইনে কী করছেন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে গভীরভাবে বোঝার জন্য তারা অন্যান্য সকল ইনফরমেশনের পাশাপাশি আপনার আইপি অ্যাড্রেস ও ব্যবহার করে থাকে। যে কারণে, ইন্টারনেটে আপনার আইপি অ্যাড্রেস অনেক বেশি সেনসিটিভ একটি বিষয়।
সহজভাবে বলতে গেলে, Internet Protocol Address বা IP Address হলো একটি ইউনিক Numerical Identifer, যা ইন্টারনেট সংযুক্ত সকল ডিজিটাল ডিভাইস যেমন: মোবাইল, কম্পিউটার, রাউটার, প্রিন্টার এবং গেম কনসোল ইত্যাদি ডিভাইস গুলোকে নেটওয়ার্কে সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।
প্রত্যেকটি ডিজিটাল ডিভাইসের একটি নিজস্ব ইউনিক আইপি অ্যাড্রেস রয়েছে, যার মাধ্যমে তারা অন্যান্য ডিভাইসে কানেক্ট হয় এবং তথ্য শেয়ার করে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যখন ইন্টারনেটে কোনো একটি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন, তখন সেই ওয়েবসাইটের সার্ভার কে বুঝতে হবে যে, সেই রিকোয়েস্টটি কোন ডিভাইস থেকে এসেছে এবং পরবর্তীতে তথ্য কোন ডিভাইসে প্রেরণ করতে হবে।
স্বাভাবিকভাবে আমরা বাড়ির নfম্বর দিয়ে কোন এলাকার নির্দিষ্ট বাড়ির ঠিকানা খুঁজে পেতে পারি। একইভাবে, যদি ইন্টারনেটে একটি ডিভাইস থেকে অন্য একটি ডিভাইসে তথ্য শেয়ার করার কথা আসে, তাহলে এখানে অন্য ডিভাইসকে সনাক্ত করার মাধ্যম হলো আইপি অ্যাড্রেস। অর্থাৎ, এখানে ইন্টারনেটের সেই ডিভাইসটির পরিচয় বা ঠিকানা হিসেবে আইপি এড্রেস কাজ করে।
যদিও ইন্টারনেট সংযুক্ত প্রত্যেকটি ডিভাইসের একটি ইউনিক আইপি অ্যাড্রেস থাকে, কিন্তু ইন্টারনেটে সেই ডিভাইস দিয়ে যোগাযোগের ক্ষেত্রে তার নিজস্ব আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করে না। কেননা, অনেক ক্ষেত্রেই রাউটারের একটি নিজস্ব আইপি এড্রেস থাকে, যা দিয়ে সেটি ইন্টারনেটের সাথে কানেক্ট হয়। আর, রাউটার তার সাথে সংযুক্ত প্রত্যেকটি ডিভাইসকে একটি ইউনিক আইপি এড্রেস প্রদান করে, যেটিকে লোকাল আইপি অ্যাড্রেস বলা। যেখানে রাউটারটি ইন্টারনেটের ডিভাইস গুলোর মধ্যে একটি গেটওয়ে হিসেবে কাজ করে।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি যখন আপনার মোবাইল থেকে কাউকে একটি ইমেইল পাঠান বা কোন একটি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেন, তখন ইন্টারনেটে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আপনার মোবাইলের IP Address কোথাও প্রদর্শিত হয় না। এক্ষেত্রে, আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার আপনার বাড়ির রাউটারের জন্য যে পাবলিক আইপি অ্যাড্রেস প্রদান করেছে, সেটির মাধ্যমে ইন্টারনেটে যোগাযোগ হয়।
অর্থাৎ, আপনি যখন আপনার মোবাইল থেকে কোন একটি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার জন্য রিকোয়েস্ট পাঠান, তখন সেই রিকোয়েস্টটি আপনার রাউটার হয়ে ইন্টারনেটে যায়। এখানে রাউটার এবং আপনার ডিভাইসের মধ্যে থাকে একটি লোকাল আইপি অ্যাড্রেস, যা রাউটার কর্তৃক প্রদান করা হয়। এই আইপি এড্রেসটি এজন্যই প্রদান করা হয়, যাতে করে রাউটারের সাথে সংযুক্ত ডিভাইস গুলোকে সনাক্ত করা যায়।
আর এর পরবর্তীতে ইন্টারনেট থেকে সেই তথ্যটি নিয়ে আবার আপনার ডিভাইসেই প্রেরণ করার জন্য এই লোকাল আইপি এড্রেসটি কাজ করে। আপনি যদি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই আপনার ডিভাইসের নির্ধারিত প্রাইভেট আইপি অ্যাড্রেস ইন্টারনেটে রেকর্ড হচ্ছে না। কিন্তু তবুও, কিছু লোক যদি আপনার এই আইপি এড্রেসটি ও পেয়ে যায়, তারা আপনার সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পেতে পারে। এসবের মধ্যে যেমন: আপনি কোথায় থেকে ইন্টারনেটের সংযুক্ত হয়েছেন, আপনি কোন ওয়েবসাইট বা সার্ভিস গুলো ব্যবহার করেন ইত্যাদি বিষয়গুলো।
আপনি হয়তোবা এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন যে, অন্য কেউ আপনার আইপি অ্যাড্রেস জানলে কী হবে? তারা শুধুমাত্র আপনার আইপি এড্রেস দিয়ে কী করতে পারবে? Ntrepid এর চিপ সাইন্টিস্ট এর মতে, আইপি অ্যাড্রেস হলো ইন্টারনেটে আপনার প্রথম এবং সবচেয়ে দৃশ্যমান তথ্য সনাক্তকরণের মাধ্যম। ইন্টারনেটে আপনাকে কিংবা আপনার অর্গানাইজেশন কে ইউনিকভাবে সনাক্ত করার জন্য ইন্টারনেট প্রটোকল এড্রেস সবার প্রথমে কাজ করে থাকে।
কেউ যদি আপনার আইপি এড্রেস জানতে পারে, তাহলে তারা সেই তথ্য দিয়ে তারা কী কী করতে পারে, তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
একটি আইপি এড্রেস আপনার ভৌগোলিক অবস্থান, যেমন: আপনার City, Region এবং Country ইত্যাদি তথ্য প্রকাশ করতে পারে। এছাড়াও, একটি আইপি এড্রেস এর সাথে আরো কিছু ইউনিক তথ্য থাকে। এসবের মধ্যে যেমন: আপনার আইএসপি এবং হোস্টনেম। তবে, কোন ধরনের IP Address Lookup Tool ব্যবহার করে IP Addresss এর তথ্য খোঁজা হচ্ছে, তার উপর ভিত্তি করে এসব তথ্য পাবার ভিন্নতা দেখা যায়।
যদিও একটি আইপি অ্যাড্রেস Snooper-দের কাছে আপনার একেবারে সঠিক লোকেশন শেয়ার প্রকাশ করতে পারবেনা। কিন্তু তবুও আইপি লোকেশন সহ অন্যান্য তথ্যের মাধ্যমে আপনার অনলাইন অ্যাক্টিভিটি এবং একটি ডিজিটাল প্রোফাইল তৈরি করার জন্য এই তথ্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
এছাড়াও, কোন নির্দিষ্ট Country বা Region এর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নির্দিষ্ট কোন ওয়েবসাইটে বা সার্ভিস ব্যবহার সীমাবদ্ধ করার জন্য আইপি অ্যাড্রেস ধরে ব্লক করা হয়।
মূলত, ইন্টারনেটে কোন একজন ব্যবহারকারীর সম্পর্কে তথ্য জানার প্রথম মাধ্যম হিসেবে আইপি এড্রেস কাজ করে থাকে। যেটি একজন ব্যবহারকারীর জিও লোকেশন ও অনলাইন এক্টিভিটি সম্পর্কে কোন ব্যক্তিকে ধারণা দিতে পারে, যেটি একজন ব্যক্তির ডিজিটাল প্রোফাইল তৈরি করতে সহায়তা করে।
আপনি কি জানেন যে, বিজ্ঞাপনদাতারা আপনার আইপি এড্রেস ব্যবহার করার মাধ্যমে এটি খুঁজে পেতে পারেন যে, আপনি কোন ধরনের বিজ্ঞাপণ গুলোতে ক্লিক করেন? আপনি প্রতিদিন অনলাইনে যেসব অ্যাক্টিভিটি দেখান, সেগুলোর সবখানেই আপনার আইপি এড্রেস রেকর্ড থাকে। তাই, আপনার আগ্রহ সম্পর্কে যদি একটি প্রোফাইল তৈরি করতে হয়, তাহলে আইপি এড্রেস দিয়ে সেটি খুব সহজেই করে ফেলা সম্ভব। এক্ষেত্রে তাদেরকে যা করতে হবে তা হলো, আইপি এড্রেসের মাধ্যমে আপনার অনলাইন এক্টিভিটি গুলো সনাক্ত করা এবং যার মাধ্যমে আপনার বিজ্ঞাপণের পছন্দ সম্পর্কে ধারণা নেওয়া।
বিজ্ঞাপনদাতারা যখন আপনার আগ্রহ সম্পর্কে জেনে যায়, তখন আপনাকে লক্ষ্য করেই তারা বিজ্ঞাপণ দেখিয়ে থাকে, যা আপনার অনলাইন এক্সপেরিয়েন্সকে নষ্ট করে দিতে পারে। আপনি এই মুহূর্তে কোন ধরনের প্রোডাক্ট বা বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন, IP Address অনুযায়ী বিভিন্ন প্লাটফর্ম সেই তথ্যগুলো সংরক্ষণ করে রাখে। আর পরবর্তীতে যখন সেসব প্লাটফর্মে কেউ বিজ্ঞাপণ দিতে আসেন, তখন আপনাকে টার্গেট করে বিজ্ঞাপণ চালানো হয়।
অনলাইনে আপনার ডিভাইসের পরিচয় হিসেবে যেহেতু আইপি এড্রেস ই প্রকাশিত হয়, তাই সেই ডিভাইসটি ইন্টারনেটে কেমন এক্টিভিটির দেখিয়েছে, তার উপর ভিত্তি করেই বিভিন্ন প্লাটফর্ম সেই ব্যবহারকারীদের আলাদা আলাদা ক্যাটাগরিতে ভাগ করে রাখে। সুতরাং, আইপি এড্রেস একটি ডিভাইসের অনলাইন পরিচয়কারী হিসেবে কাজ করছে। যার মাধ্যমে বিজ্ঞাপণ দাতারা নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির মানুষদেরকে বেশি বেশি বিজ্ঞাপণ দিতে পারছে।
আপনি হয়তোবা ইতিমধ্যেই জানেন যে, আপনি যেসব ওয়েবসাইট ব্রাউজ করেন কিংবা যেসব সার্ভিস ব্যবহার করেন, সেগুলো আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আইএসপি দেখতে পারে। যদিও, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে ISP গুলোর এরকম তাদের ব্যবহারকারীদের মেটাডেটা সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া রয়েছে।
তবে, যদি কোন আইএসপি কোম্পানিকে সরকার কর্তৃক নির্দেশনা দেওয়া হয়, তাহলে তারা নির্দিষ্ট কোন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত সকল তথ্য যেমন: ক্রেডিট কার্ডের ডিটেলস, নাম, ফোন নম্বর, ফিজিক্যাল এড্রেস সহ যাবতীয় তথ্য সরবরাহ করতে পারে।
যদিও আপনার আইপি এড্রেস আপনার এরকম লোকেশন শেয়ার করতে পারে না যে, আপনি সেই সময়ে কোন এলাকায় থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। এটি হতে পারে, আপনার জেলা, বিভাগ অথবা কাছাকাছি কোন জায়গায় ঠিকানা, যা হলো একটি আনুমানিক অবস্থান। তবে, যদি একটি নির্দিষ্ট আইপি অ্যাড্রেস এর সাথে সম্পর্কিত কোন ব্যবহারকারীর অনলাইন এক্টিভিটি গুলোর দিকে নজর দেওয়া হয়, তাহলে সেই IP Address ব্যবহারকারী টি সম্পর্কে অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে সহায়তা করতে পারে।
আর তাই, আপনি যখনই ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন, তখনই আপনার আইপি অ্যাড্রেস সুরক্ষিত রাখা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞগণ এরকমটি বলে থাকেন যে, IP Address হাইড করা ছাড়া ইন্টারনেটে কোন Anonymous উপায় নেই।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি যখন ওয়েবে অনুসন্ধান করেন, তখন সেখানে থাকা অনেক সেনসিটিভ ইনফরমেশন এর মধ্যে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য ও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, যা অত্যন্ত ব্যক্তিগত ইনফরমেশন। আপনি যদি আইপি এড্রেস না লুকান, তাহলে আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, বিজ্ঞাপণ দাতারা সহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের কাছে সেগুলো শেয়ার হয়ে যেতে পারে। আর আপনি কখনোই এসব অতি পার্সোনাল ইনফরমেশন গুলো অন্য কারো কাছে শেয়ার করতে চাইবেন না।
ইন্টারনেটে আপনার গোপনীয়তা, নিরাপত্তা এবং আরো বেশ কিছু কারণে আইপি অ্যাড্রেস হাইড করা উচিত। ইন্টারনেটে আপনার যেসব কারণে IP Address মাস্ক করা উচিত এবং এটি আপনাকে যেসব সাহায্য করতে পারে, সেগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো।
আপনার আইপি এড্রেস হাইড করার মাধ্যমে আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজিং Anonymous করা সম্ভব। অর্থাৎ, আপনি ইন্টারনেটে আপনার কোন পরিচয় প্রকাশ না করে সকল ধরনের ব্রাউজিং করতে পারেন। এক্ষেত্রে, অনলাইনে কেউ আপনার পরিচয় ধরে অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাক করছে এমন ভয় ছাড়াই আপনার অনলাইন এক্টিভিটি গুলো চালিয়ে যেতে পারেন।
এক্ষেত্রে, আপনি যে কীওয়ার্ড অথবা ওয়েবসাইটেই প্রবেশ করুন না কেন, কেউ আপনাকে সনাক্ত করতে পারবে না কিংবা তারা আপনার পরিচয় পাবে না।
আপনি কি আপনার দেশ থেকে নির্দিষ্ট কোন ওয়েবসাইটে এক্সেস করতে পারছেন না? তাহলে, আপনার জন্য সহজ সমাধান হলো, নিজের আইপি অ্যাড্রেস মাস্ক বা হাইড করা এবং একটি ভার্চুয়াল লোকেশন সেট করা। এটি করার মাধ্যমে আপনি ইন্টারনেটে আপনার পছন্দের যেকোনো ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস করতে পারবেন।
আপনি বিশ্বের যেকোন প্রান্তেই থাকুন না কেন, এক্ষেত্রে আপনি জিও লোকেশন এর ভিত্তিতে কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা থেকে বাধাগ্রস্ত হবেন না। যা আপনার অবস্থানের ভিত্তিতে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের অ্যাক্সেসের রেস্ট্রিকশন দূর করে।
আপনি যখন পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করেন, তখন এই ধরনের নেটওয়ার্ক গুলো আপনার জন্য বিপদজনক হতে পারে। কেননা, এধরনের নেটওয়ার্ক গুলোতে হ্যাকার সহ সকল ধরনের আনসিকিউর ব্যবস্থা থাকতে পারে।
আপনি যখন আপনার আইপি অ্যাড্রেস মাস্ক করেন, তখন পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকি গুলো অনেকাংশে কমে যায় এবং এতে আপনার তথ্য সুরক্ষিত থাকতে পারে।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আইএসপির কাছে ব্যবহারকারীদের ডেটা সংগ্রহ করার ক্ষমতা থাকে। যার ফলে, তারা ব্যবহারকারীদের সম্মতি ছাড়াই থার্ড পার্টির কাছে তথ্য বিক্রি করতে পারে। এক্ষেত্রে, আপনি চাইলে অনলাইনে আপনার কার্যকলাপ গোপন করতে IP Address মাস্ক করতে পারেন। যার ফলে, অনলাইনে আপনি আপনার ISP থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারবেন এবং আইএসপি ও আপনার সম্পর্কে কোন ডাটা সংগ্রহ করতে পারবেনা।
আমরা অনেকেই ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত সার্চিং এর জন্য Incognito Mode ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু, প্রাইভেট ব্রাউজিং এর জন্য Incognito Mode কার্যকর নয়। কেননা, এটি ব্রাউজারে Zero Record ছাড়া আর কিছুই করেনা।
আপনি যদি আসলেই অনলাইনে আপনার Activity সমূহ প্রাইভেট চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই আইপি এড্রেস মাস্ক করতে হবে। যা আপনাকে যাবতীয় ইন্টারনেট ব্রাউজিং ও ইন্টারনেটের সার্চিং গুলোকে প্রাইভেট রাতে কাজ করবে।
আপনি কি নির্দিষ্ট কোন টিভি শো স্ট্রিম করতে চাচ্ছেন, কিন্তু লোকেশন ব্লকিং এর কারণে সেটি করতে পারছেন না? এক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার IP Address হাইড করে অন্য একটি ভার্চুয়াল আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার প্রিয় স্ট্রিমিং সার্ভিসটি উপভোগ করতে পারবেন।
জিও লোকেশনের কারণে অনেক সময় বিভিন্ন দেশ বা অঞ্চলের ব্যবহারকারীদের নির্দিষ্ট কিছু স্ট্রিমিং সার্ভিস ব্যবহারের জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে। আপনি যদি নিজের আইপি অ্যাড্রেস মাস্ক করে ভার্চুয়াল একটি আইপি এড্রেস ব্যবহার করেন, তাহলে এ ধরনের সমস্যার সমাধান পাবেন।
আপনি যখন স্বাভাবিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তখন আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, সরকার কিংবা থার্ড পার্টি অন্য কারো দ্বারা আপনার অনলাইন এক্টিভিটি গুলো নজরদারি করা সম্ভব হয়। কিন্তু, আইপি এড্রেস মাস্ক করার মাধ্যমে, আপনার অনলাইন এক্টিভিটি গুলো অ্যাক্সেস করা অসম্ভব হয়ে যায়।
যার ফলে, আপনার আইএসপি, সরকার কিংবা অন্য কারো পক্ষে ইন্টারনেটের ট্রাফিক গুলো মনিটর করা কঠিন হয়ে যায়।
কিছু নির্দিষ্ট জায়গা গুলোতে আপনাকে কঠোর সেন্সরশিপ ব্যবস্থাকে বাইপাস করার জন্য আইপি এড্রেস হাইড করা উচিত। কর্মক্ষেত্রে কিংবা আপনার অফিসে ইন্টারনেটের বিধিনিষেধ যুক্ত পরিবেশে ইন্টারনেট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সুবিধা পেতে আপনাকে নিজের আইপি অ্যাড্রেস হাইড করা উচিত।
আপনি যদি এই মুহূর্তে এরকম অনুসন্ধান করেন যে, “কীভাবে আইপি এড্রেস হাইড করতে হয়?” তাহলে, গুগলে আপনার আইপি অ্যাড্রেস হাইড করার বিভিন্ন উপায় দেখতে পাবেন। যাইহোক, সব উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা উপায় হল, ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন ব্যবহার করা। যা আইপি এড্রেস হাইড করার জন্য সবচেয়ে কার্যকর এবং সেরা একটি পদ্ধতি।
যদিও আমি এখানে নিজের আইপি অ্যাড্রেস হাইড করার জন্য কিছু সাধারণ উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি, যেগুলোর মাধ্যমে আপনি আপনার আইপি অ্যাড্রেস মাস্ক করতে পারেন।
ইন্টারনেটে নিজের আইপি অ্যাড্রেস লুকানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকর ও সহজ পদ্ধতি হলো একটি VPN সার্ভিস ব্যবহার করা। Cotterell বলেন যে, “আপনার একটি ওয়েবসাইটে ভিজিট করার চাইতে, একটি নির্ভরযোগ্য ভিপিএন সার্ভিস ব্যবহার করে আইপি অ্যাড্রেস লুকানো অনেক সহজ। এক্ষেত্রে আপনি সেই ভিপিএন এর আইপি অ্যাড্রেস থেকে সংযুক্ত বলে মনে হবে, যার ফলে আপনার অ্যাক্টিভিটি মনিটর করা কারো পক্ষে সম্ভব হবে না। ”
বর্তমানে ভালো সার্ভিস দেয় এরকম অনেক VPN সার্ভিস রয়েছে। এসব গুলোর মধ্যে অন্যতম কিছু সেরা ভিপিএন হলো ExpressVpn, NordVPN, Surfshark, Proton VPN ইত্যাদি। যেসব VPN গুলোর বিশ্বব্যাপী অসংখ্য সার্ভার রয়েছে এবং যেগুলো আপনার Real IP Address মাস্ক করে থাকে। এসব ভিপিএন সার্ভিসগুলো আপনাকে ইন্টারনেটে সম্পূর্ণ Anonymous বা পরিচয় গোপন রেখে ইন্টারনেট ব্রাউজ করার ক্ষমতা দিবে।
এছাড়া ও আপনি ভিপিএন ব্যবহার করার মাধ্যমে Bandwidth Caps, Military-grade 256-bit এনক্রিপশন, Unlimited সার্ভার সুইচিং, WebRTC Leak প্রটেকশন এবং ইন্টারনেট কিল সুইচ এর মত ফিচারগুলোর অ্যাক্সেস পেতে পারেন। যা আপনাকে সর্বোচ্চ অনলাইন সিকিউরিটি ও প্রাইভেসি নিশ্চিত করবে।
একটি প্রক্সি বা প্রক্সি সার্ভার আপনার কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের মধ্যে একটি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে। এটিও আপনার আইপি অ্যাড্রেস মাস্ক করে, যেমনটি ভিপিএন করে থাকে। আপনি যখন কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করতে চান, তখন আপনার সেট করা প্রক্সি সার্ভারটি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তার আইপি এড্রেস ইন্টারনেটে প্রদর্শন করে।
কিন্তু, প্রক্সি ব্যবহারে ক্ষেত্রে সিকিউরিটির দিক থেকে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটি শুধুমাত্র ওয়েব ব্রাউজারে সাপোর্ট করে এবং সার্ভারে চাপের কারণে ধীরগতির সংযোগ প্রদান করে। এছাড়াও, এনক্রিপশন এবং সিকিউরিটি ফিচারের অভাবের কারণে প্রক্সি ব্যবহার করা অনিরাপদ।
তবে, আমাদের দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এর স্পিড বাড়িয়ে নেয়ার জন্য বা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের BDIX এর স্পিডকে Raw স্পিডে কনভার্ট করার জন্য অনেকেই প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করে থাকেন। যা, ইন্টারনেটের গতি কয়েকগুন পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে।
এই মুহূর্তে যারা ইন্টারনেটে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে বেশি সচেতন, তারা অনলাইনে নিজেদের পরিচয় ও অ্যাক্টিভিটি গুলো লুকিয়ে রাখার জন্য Tor নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারেন। টর ব্যবহার করার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি ইন্টারনেটে কয়েকটি স্তরে নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। কারণ, এই ব্যবস্থায় একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ট্রাফিক কয়েকটি সার্ভারের মধ্য দিয়ে মূল সার্ভারের প্রেরণ করা হয় এবং প্রতিটি নেটওয়ার্কে শক্তিশালী এনক্রিপশন থাকে।
তবে, যেহেতু অনেক লোকই অবৈধ উদ্দেশ্যে ও টর ব্যবহার করে থাকেন, তাই এটিকে আপনি একেবারে অধিক নিরাপদ ভাববেন না। কারণ, টর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে যেকোন অবৈধ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে, সেই ওয়েবসাইটে ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরা নজরদারীর উদ্দেশ্যে ওত পেতে থাকতে পারে, যা Tor-DNM Related গ্রেফতারের ঘটনাগুলো দ্বারা প্রমাণ হয়।
তবে, আমাদের নিত্যদিনকার ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে Tor নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীদের আইপি অ্যাড্রেস লুকিয়ে রাখে এবং শক্তিশালী অনলাইন সুরক্ষা প্রদান করে।
আশা করছি যে আপনি বুঝতে পেরেছেন, আইপি অ্যাড্রেস কী, অনলাইনে IP Address আপনার সম্পর্কে কী কী তথ্য প্রকাশ করতে পারে এবং কীভাবে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে আপনার আইপি এড্রেস লুকিয়ে রাখা যায়। মোটকথা বলতে গেলে, ইন্টারনেটে আপনার একমাত্র প্রথম পরিচয় সনাক্তকারী হিসেবে IP Address সকল জায়গায় প্রদর্শিত হয় এবং এটি দ্বারাই আপনার অনলাইন এক্টিভিটি গুলোকে সনাক্ত করা হয়।
এই মুহূর্তে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে নিজেদের প্রাইভেসি নিয়ে বেশি সচেতন, তারা সবসময় নিজেদের Real IP Address লুকানোর জন্য ভিপিন ব্যবহার করছেন। তবে, আপনি যদি একটি ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন ব্যবহার করে নিজের আইপি অ্যাড্রেস লুকিয়ে রাখতে পারেন, তাহলে আপনি নিরাপদ ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের সুবিধা পাবেন। ধন্যবাদ, আসসালামু আলাইকুম।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)