আমরা সার্ফেস ওয়েব, ডিপ ওয়েব কিংবা ডার্ক ওয়েবের নাম শুনেছি। কিন্তু, শ্যাডো ওয়েব কি?
আমরা দিনের বেশিরভাগ সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকি। আর ইন্টারনেট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আমরা বেশিরভাগ সময়ই ফেসবুক কিংবা ইউটিউবে সময় কাটাই। এছাড়া আমরা আরো অন্যান্য সব সোশ্যাল মিডিয়া, ওয়েবসাইট এবং অনলাইন কেনাকাটা করে থাকি। আর ইন্টারনেটে বিভিন্ন বিষয়গুলো অনুসন্ধান করার জন্য আমরা Google chrome, Bing কিংবা Microsoft Edge ব্রাউজার ব্যবহার করি। এসব ব্রাউজারগুলো ব্যবহার করে আমরা ইন্টারনেটের সামান্যতম বিষয়গুলোই অ্যাক্সেস করতে পারি। যেখানে ইন্টারনেটের গভীরে রয়েছে আরো অনেক কিছু। যাকে আমরা শ্যাডো ওয়েব বলতে পারি।
তাহলে, Shadow web আসলে কি?
আপনি অনেক সময় দেখবেন যে, অনেকেই Dark web কিংবা Deep web এর বিষয়গুলো বোঝানোর জন্য উদাহরণ হিসেবে সমুদ্রের ভেতরের একটি বরফ খণ্ড ব্যবহার করে। যে ছবিটির মাধ্যমে বোঝানো হয়, আমরা ইন্টারনেটের কতটুকু অংশ ব্যবহার করছি এবং কতটুকু অংশ আমাদের কাছ থেকে হাইড রয়েছে।
ইন্টারনেটে আমাদের দৃশ্যমান অংশ হচ্ছে সার্ফেস ওয়েব। আমরা ইন্টারনেটে কোনো কিছু অনুসন্ধান করে যেগুলো খুব সহজেই পেয়ে যাই, সেগুলোই মূলত Surface web এর অংশ। এর মধ্যে রয়েছে, বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স থাকা ওয়েবসাইটগুলো। এগুলো যেমন: ফেসবুক, ইউটিউব এবং টুইটার ইত্যাদি। এর পরবর্তীতে আসে ডিপ ওয়েব এবং ডার্ক ওয়েব। Dark web মূলত Deep web এর একটি উপসেট।
আর শ্যাডো ওয়েব হচ্ছে ডার্ক ওয়েব এর একটি পরবর্তী ধাপ।
Shadow web আসলে কি, তা নিয়ে প্রচুর রিপোর্ট রয়েছে। কেউ কেউ দাবি করে যে, এটি পাসওয়ার্ড দিয়ে সুরক্ষিত একটি ওয়েব। আর এটি শুধুমাত্র ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে অ্যাক্সেস করা যায় এবং যেটিকে অ্যাক্সেস করার জন্য টর ব্রাউজারের প্রয়োজন হয়। তবে, আপনি এটি অনুমান করতে পারেন যে, শ্যাডো ওয়েব হল সার্ফেস ওয়েব কিংবা ডিপ ওয়েব এর চাইতে অনেক বেশি সন্দেহজনক।
সুতরাং, আপনি এই Shadow ওয়েবে কি খুঁজে পেতে পারেন? আচ্ছা, এই ওয়েব ভালো নয়। যারা শ্যাডো ওয়েব অ্যাক্সেস করেছেন, তারা এটি বলে থাকেন যে, এখানে তারা অনেক বিরক্তিকর কনটেন্ট খুঁজে পেতে পারে। এবার আপনি বুঝতেই পারছেন যে, ইন্টারনেটে প্রতিটি স্তরের সাথে সাথে এগুলো আরো Dark হতে থাকে। অর্থাৎ, প্রথমে রয়েছে সার্ফেস ওয়েব, তারপর ডিপ ওয়েব ও ডার্ক ওয়েব, এবং পরবর্তীতে আমরা বলতে পারি শ্যাডো ওয়েব।
যদিও আমাদের কাছে এসব বিষয়গুলো অনেক ভীতিকর মনে হতে পারে, তবে ডার্ক ওয়েবের অস্তিত্ব আসলে প্রমাণিত হয়নি। বর্তমানে ইন্টারনেটে ব্যবহারকারীর অনেক ক্ষুদ্র একটি অংশ শুধুমাত্র Dark Web-এর সাথে পরিচিত। এই ক্ষুদ্র একটি অংশ নিয়েই অনেক মানুষের এত কৌতূহল। আর এটি দ্বারা বুঝায় যে, শ্যাডো ওয়েব থাকলে তারা আরো ছোট্ট একটি অংশ অ্যাক্সেস করতে পারত। অনেকেই বলে থাকেন যে, Shadow Web গুজব ছাড়া আর কিছুই নয় এবং ডার্ক ওয়েব হচ্ছে গভীরতম গভীর একটি ওয়েব।
অন্যরা দাবি করছেন যে, শ্যাডো ওয়েব হল ডার্ক ওয়েবের মধ্যে একটি স্ক্যাম সাইট। যেটি ব্যবহার করা হয় ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিময়ের জন্য কিংবা অনলাইনে অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। এমনকি একটি কথিত শ্যাডো ওয়েব পোর্টাল রয়েছে, যেখানে অ্যাক্সেস করার জন্য ব্যবহারকারীকে প্রথমে 200 ডলার ফি প্রদান করতে হয়।
সুতরাং এটি বলা যায় যে, Shadow web কি এবং এটি আসলে বাস্তব কিনা; তা সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো ধারণা নেই।
কেউ কেউ বলেন যে, ডার্ক ওয়েব হল শুধুমাত্র ইন্টারনেটের কতটা গভীরে যাওয়া যায় সেটির শুরু মাত্র এবং যা বেশ কয়েকটি স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত। আবার কেউ কেউ আরও বলেন যে, ইন্টারনেটের সবচাইতে গভীরতম স্থানটির নাম হল "মারিয়ানার ওয়েব" (যা মারিয়ানা ট্রেঞ্চ এর সাথে সম্পর্কিত, পৃথিবীর সবচাইতে গভীরতম বিন্দু)। এছাড়াও অন্যরা দাবি করেন যে, শ্যাডো ওয়েব এবং মারিয়ানা ওয়েব একই জিনিস।
এবার তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে যে, মারিয়ানা ওয়েব আসলে কি? কেউ কেউ বলে থাকেন যে, এটি আসলে কেবল অনলাইন ট্রল দ্বারা তৈরি একটি অতিরঞ্জিত কথা। যাইহোক, যারা দাবি করে থাকেন মারিয়ানা ওয়েব সত্য; তারাও বলে থাকে যে, এখানে এমন সব কন্টেন্ট এবং ওয়েবসাইট রয়েছে যা ইন্টারনেটের অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। আবার অনেকে বলে থাকে যে, মারিয়ানার ওয়েব এমন একটি জায়গা, যেখানে সরকার অত্যন্ত গোপনীয় নথি গুলো লুকিয়ে রাখে। তবে, এটি এখন অবশ্য প্রমাণিত হয়নি।
Deep web এবং Dark web এ উৎসাহী ব্যক্তিরা দাবি করে যে, মারিয়ানার ওয়েবে প্রবেশ করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। তারা অভিযোগ করে যে, এই ওয়েবে প্রবেশ করার জন্য জটিল অ্যালগরিদম এর প্রয়োজন হয় এবং যার জন্য কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রয়োজন।
বর্তমানে অনেক গুজব ঘিরে রয়েছে তথাকথিত মারিয়ানা ওয়েব কে নিয়ে। যেগুলোর মধ্যে এরকম অনেক হাস্যকর বিষয়ও রয়েছে যে, এটি অনেক জটিল আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্ট সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত হয়। যাইহোক, মারিয়ানার ওয়েব এর অস্তিত্ব এখনো প্রমাণিত হয়নি। বর্তমানে যেটি আলোচনার বিষয় ছাড়া আর কিছুই নয়।
আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই হয়তো বা কৌতূহল বশত ডার্ক ওয়েব বা ডিপ ওয়েব সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে, নিষিদ্ধ জিনিসের ক্ষেত্রে মানুষের একটু বেশিই আগ্রহ এবং কৌতূহল থাকে। যেকারণে এমন অনেকেই এসব ওয়েবে একবার হলেও প্রবেশ করার চেষ্টা করে থাকে। যেখানে তারা এটি জানতে চায় যে, এসব ওয়েবসাইট গুলো কোন ধরনের এবং এগুলো কোন ধরনের কনটেন্ট গুলো অফার করে। কিন্তু, ডার্ক ওয়েব বা শ্যাডো ওয়েব কতটা বিপদজনক? এটি নির্ভর করে আপনি এটির কোন লেয়ারটি ব্যবহার করতে চাচ্ছেন, তার উপর।
যেমন-ভাবে, ডিপ ওয়েব এর বেশিরভাগ অংশ হলো সার্ফেস ওয়েব এর ঠিক পরের অংশটিই। এই অংশটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। ডিপ ওয়েবে থাকা বিষয়বস্তুগুলো হল শুধুমাত্র আন-ইন্ডেক্স কনটেন্টগুলো। এর মধ্যে যেমন: আপনার গুগল ড্রাইভে থাকা তথ্য, ফেসবুকে প্রাইভেট করা ছবি কিংবা ভিডিও ইত্যাদি। আপনার গুগল ড্রাইভ বা ক্লাউড স্টোরেজের সংরক্ষিত ডাটা গুলো কখনোই কোন সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স হবে না। এক্ষেত্রে, আপনার জিমেইলের ইউজার-নেম এবং পাসওয়ার্ড ব্যতীত কোন ব্যক্তি সেসব তথ্যগুলো দেখতে পাবেনা।
একইভাবে এমন কোন ওয়েবসাইট হতে পারে, যেটি কোন সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স করা হয়নি। এক্ষেত্রে সেসব ওয়েবসাইটের কতগুলো মানুষের অজানাই থেকে যায়, যদি না সেই ওয়েবসাইট এড্রেস কেউ জানে। এছাড়া, সেটি পাসওয়ার্ড দ্বারা সুরক্ষিত ও থাকতে পারে। এক্ষেত্রে আমরা এটিকে ডিপ ওয়েব এর অন্তর্ভুক্ত ধরতে পারি। ডিপ ওয়েব এর অন্তর্ভুক্ত হিসেবে আমরা বিভিন্ন Banking portal এবং Academic journal গুলোকে ধরতে পারে।
তবে, এরপরের স্তরটি হল ডার্ক ওয়েব। যেসব ওয়েবসাইটগুলো আবার সাধারণ সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স অবস্থায় নেই এবং সাধারণ ব্রাউজার ব্যবহার করে যেগুলো অ্যাক্সেস করা যায় না। যেসব সাইটগুলো ব্রাউজ করার জন্য বিশেষ ধরনের ব্রাউজার এর প্রয়োজন হয়। আর Dark web-এ প্রবেশ করার জন্য "টর" ব্রাউজার কে ব্যবহার করা হয়। যাইহোক, আপনি কখনো ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করলে, আপনাকে অবশ্যই একবার চিন্তা করতে হবে।
ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করে আপনি যে বিষয়বস্তুটি দেখার চেষ্টা করছেন, সেটি সম্পর্কে মনে রাখার গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, আপনি যদি কোন কিছু চিন্তা না করে কোন লিংকে ক্লিক করে দেন, তাহলে হ্যাকারদের পক্ষে আপনার সেনসিটিভ ইনফরমেশন গুলো পাওয়া অনেক সহজ হবে। এমনকি এক্ষেত্রে আপনি মারাত্মক হ্যাকিংয়ের শিকার হতে পারেন।
প্রকৃতপক্ষে, কোন হ্যাকার যদি ফিশিং, স্পাইওয়্যার বা অন্য কোনো মাধ্যমে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাক করে নিতে পারে; তাহলে সেগুলো বিক্রি করার জন্য ডার্ক ওয়েব একটি আদর্শ জায়গা। এখানে আপনার সংবেদনশীল ডাটাগুলো বিভিন্ন ক্রেতার কাছে বিক্রি করা হবে। ক্রেতা তখন আপনার সেই তথ্যগুলো দিয়ে যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে, যা অবশ্যই ভীতিকর।
যাইহোক, আমাদের এটি মনে রাখা ভাল যে, ডার্ক ওয়েব বেআইনি নয়। তবে, এই ওয়েবে অনেক অবৈধ কার্যকলাপ সংঘটিত হয়ে থাকে। সুতরাং, আপনি যদি এটি সম্পর্কে দক্ষ হন এবং ডার্ক ওয়েবের ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত ও সচেতন হয়ে থাকেন, তাহলে ইন্টারনেটের এই স্তরটি ব্যবহার করা আপনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে না। তবে, Dark web-এর প্রতিটি লিংক আপনার জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আর এই ওয়েব অ্যাক্সেস করার জন্য শক্তিশালী এনক্রিপশন ব্যবহার করা প্রয়োজন, যেটি আপনার এখতিয়ারের উপর নির্ভর করে বেআইনি ও হতে পারে।
শ্যাডো ওয়েব এবং মারিয়ানার ওয়েব কতটা নিরাপদ, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, তাদের অস্তিত্বই এখন বিতর্কের মধ্যে রয়েছে। তবে, আপনি যদি একবার ডার্ক-ওয়েবে যেতে চান, তবে আমি অবশ্যই আপনাকে আরো একবার সচেতন হবার সিদ্ধান্ত নিতে বলবো। কেননা, এখানে থাকা প্রত্যেকটি লিংক আপনার কম্পিউটারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, যদি না আপনি সেই ওয়েবসাইট এর ব্যাপারে আগে থেকে জেনে থাকেন।
যে সমস্ত লোকেরা সার্ফেস ওয়েবে প্রতারিত হয় এবং যাদের হ্যাকিং এর শিকার হয়ে তথ্য বেহাত হয়ে যায়, তাদের তথ্য বিক্রির জন্য ডার্ক ওয়েব একটি আদর্শ জায়গা। যেখানে অবৈধ মাদক, অস্ত্র কেনাবেচা সহ যাবতীয় অপরাধমূলক কাজ রয়েছে।
যদিও আমরা এটি অনুমান করতে পারি যে, ইন্টারনেট আসলে কতটা বিস্তৃত এবং গভীর। তবে, ইন্টারনেটের আসলে কতগুলো স্তর রয়েছে, তা নির্ধারণ করা অনেক কঠিন এবং অকল্পনীয়। এমনকি অনেক ডার্ক ওয়েব ব্যবহারকারীরাও নিশ্চিত করতে পারে না যে, এটি আসলে কতটা গভীর। যা সত্যিই অনেক ভীতিকর এবং কৌতূহলজনক ও বটে।
ইন্টারনেটে আমাদের প্রয়োজনীয় কাজগুলো করার জন্য ডার্ক ওয়েবের প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে, আমরা শুধুমাত্র সার্ফেস ওয়েব এবং ডিপ ওয়েব এর সমন্বয়েই কাজগুলো করতে পারি। তবে, ইন্টারনেটের আরো অন্যান্য ওয়েব স্তর গুলোর ব্যাপারে আমাদের মনের ভেতরে কৌতূহল থেকেই যায়। আর আপনাদের এই কৌতূহলী মনের জন্যই আজকের টিউনটি ছিল। আশা করছি, Shadow web সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। ধন্যবাদ, আসসালামু আলাইকুম।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 12 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)