এখানে PTC বা Pay to Click নিয়ে পোস্টের ছড়াছড়ি দেখে খারাপ লাগে। পিটিসি টাকা ইনকামের কোন সম্মানজনক পদ্ধতি বলে মনে হয় না কখনই। এটা সংঘবদ্ধ প্রতারককে সহযোগীতা করার একটা পদ্ধতি ছাড়া কিছুই না।
কিছুদিন আগে আমাদের দেশে বেশ কিছু কাজ আসতো, ছবি দেখে ওখানে যা লেখা আছে তা টাইপ করার কাজ। ছবির লেখাগুলো খুব সাধারণ আর দৈর্ঘ্যও খুব বেশি না - একটা কি দুইটা শব্দ। পাবলিক তো ভাবলো, আহ্ কি সহজ কাজ -- টাকাও কামাইলো। কিন্তু ফলাফল হল বাংলাদেশের অনেক আইএসপি এখন ব্ল্যাক লিস্টেড এই কারণে। কারণটা কী? জানতে চান?
কারণ - এগুলো ছিল ক্যাপচা পূরণের কাজ। বিভিন্ন সাইটে রেজিস্ট্রেশন বা পোস্ট করার জন্য স্প্যাম ঠেকানোর জন্য ক্যাপচা দেয়া হয়। উদ্দেশ্য হল অটোমেটিক কোন স্ক্রিপ্ট দিয়ে এখানে তাহলে স্প্যামারটা কিছু পোস্ট করতে পারবে না - কারণ অটোমেটিক স্ক্রিপ্ট এই ক্যাপচা পূরণ করতে অক্ষম। দুষ্টু স্প্যামাররা তখন সেই কাজ করার জন্য এই কাজ আউটসোর্সিং করলো। ওদের স্ক্রিপ্ট একটা করে ক্যাপচা নিয়ে আসে আর এখানকার লোক টাকার জন্য সেটা পূরণ করা মাত্র ওদের স্ক্রিপ্ট ওখানে একটা স্প্যাম পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু দোষ হয় এখানকার আইপি'র। কারণ ওখানকার এডমিনরা দেখে যে, এখানকার আইপি থেকে এই ক্যাপচা পূরণ করে স্প্যাম পোস্ট করা হয়েছে।
এবার আসি পিটিসির ব্যাপারে। অ্যাডসেন্স কিভাবে কাজ করে সেটা বুঝতে হবে এজন্য। ইন্টারনেটে কোনো কম্পানি বিজ্ঞাপন দিলে সেটার জন্য পেমেন্ট দেয়ার সিস্টেমটা বেশ সুন্দর। তবে সেটা বলার আগে ইন্টারনেটের বদলে বাইরের বিজ্ঞাপনের কথা বলি .... ... একটা বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দিলে সেটার ভাড়া স্থানভেদে ভিন্ন হয়। ঢাকার ফার্মগেটের মত জায়গায় যেখানে প্রচুর লোক এই বিজ্ঞাপন দেখে সেখানে বড়সড় একটা বিলবোর্ডের ভাড়া মাসে লাখটাকার মত, আর একই বিলবোর্ড মিরপুর বা অন্য জায়গায় হলে সেটার ভাড়া ত্রিশহাজার টাকার মত। ভাড়ার এই তারতম্যের কারণ হল এই বিলবোর্ড কতজন সম্ভাব্য কাস্টমারের কাছে পণ্যটার কথা পৌঁছে দিচ্ছে সেটা। বেশি কাস্টমারের কাছে পৌঁছে দিলে চার্জ বেশি, আর কম কাস্টমারে চার্জ কম। একই কারণে বেশি প্রচারসংখ্যার পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের চার্জ বেশি (বেশি লোকের কাছে পণ্যের বিজ্ঞাপন পৌঁছাচ্ছে)। প্রথম আলোর মত পত্রিকার প্রথম পাতায় একবার (অর্থাৎ ১ দিন) ৩*৫ বর্গইঞ্চি বিজ্ঞাপনের চার্জ লাখটাকা, কিন্তু একই বিজ্ঞাপন ৭ নম্বর পাতায় দিলে সেটার চার্জ ২০ হাজার -- কারণটা একই ... প্রথম বা শেষ পাতার বিজ্ঞাপন বেশি লোক দেখে, ভেতরের পাতার বিজ্ঞাপন দেখে কম মানুষ।
ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে এই বিজ্ঞাপনের রেট আরো বেশি যুক্তিসংগত করা গেছে। শুধুমাত্র সম্ভাব্য কতজন ক্রেতা সেই বিজ্ঞাপন দেখছে সেটার উপর ভিত্তি করে এখানেও ভাড়া বা মূল্য পরিশোধ করা হয়। একটা বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে এটা সম্পর্কে আরেকটু ডিটেইলস খোঁজ খবর নেবে শুধুমাত্র আগ্রহী ক্রেতা, অন্যরা এই ব্যাপারে আগ্রহী না হলে এটাতে ক্লিক করার মত কাজ করে সময় নষ্ট করবে না। যেমন: আমি যখন ক্যামেরা কেনার কথা চিন্তা করি তখনই শুধু বিভিন্ন ক্যামেরার বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে স্পেসিফিকেশন দেখবো, কেনার চিন্তাভাবনা না থাকলে শুধু শুধু ক্লিক করে সময় ও ব্যান্ডউইড্থ নষ্ট করবো না। আবার, কখনো দেখা যায় ভুল ক্রমে কেউ একটা বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে ফেলেছে - তখন দ্রুত সে ঐ সাইট থেকে বেরিয়ে যায়, বিজ্ঞাপনে কী লেখা আছে সেটা পড়ার দরকার বোধ করে না।
তাই ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দাতাগণ এখানে বিজ্ঞাপনে কতগুলো ক্লিক হয়েছে সেটার উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপন প্রকাশের সাইটকে মূল্য পরিশোধ করে। তবে আগ্রহী ক্রেতা তারাই যারা অন্তত ৩০ সেকেন্ড ঐ বিজ্ঞাপনটা দেখেন, এর চেয়ে কম দেখলে তিনি আসলে আগ্রহী ক্রেতা নন, ভুলক্রমে ঐ সাইটে ক্লিক করে ঢুকেছিলেন বলে ধরা হচ্ছে।
এইখানেই পিটিসি সাইটগুলো চিট করে। আপনি ক্লিক করে ঢুকছেন, ৩০ সেকেন্ড থাকছেন --- কাজেই আপনি সম্ভাব্য ক্রেতা। এই ক্লিকের জন্য বিজ্ঞাপনদাতা সাইটকে পে করবে। আর সাইটওয়ালা আসলে অসৎ ... ... কারণ তার সাইটে আসলে জেনুইন ক্রেতা ক্লিক করে নাই, করেছে ভাড়া করা ক্রেতার অভিনেতা (আপনি)। তাই তার ইনকাম থেকে কিছু অংশ আপনার অভিনয়ের চার্জ হিসেবে দিয়ে দিচ্ছে।
একই কারণে একই বিজ্ঞাপনে একাধিকবার ক্লিক করা নিষেধ। কারণ সেখানে মূল বিজ্ঞাপনদাতার একজন সম্ভাব্য ক্রেতার জন্য একবারই মূল্য পরিশোধের কথা। আপনি একাধিকবার ক্লিক করলে সেটার জন্য সাইটওয়ালা চার্জ করবে এতে সাইটওয়ালাকে বিজ্ঞাপনদাতা এর জন্য টাকা তো দেবেই না উল্টা মিথ্যাবাদী বলবে আর ভবিষ্যতে বিজ্ঞাপনও দেবে না। তাই সাইটওয়ালারা এই অভিনেতা ক্রেতা আনার ব্যাপারে খুবই সতর্ক। একাধিক ক্লিক করলে পিটিসি একাউন্ট বাতিল ... .... .... মিয়া প্রতারণার সহযোগী হতে হলে আরো স্মার্ট হতে হবে - সহযোগীতা করতে গিয়ে ওস্তাদরে ফাঁসায় দিবেন নি - আপনি বাতিল!
এই হইলো কাহিনী।
পুরাটা আমার কমনসেন্স থেকে লিখেছি। ভুল থাকতে পারে। থাকলে ধরিয়ে দিবেন আশা করছি ... ... আর সিদ্ধান্ত নিবেন - এই প্রতারণার সহযোগী হবেন কি না।
আমি শামীম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 36 টি টিউন ও 449 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
গুগল আমার সম্পর্কে জানে, কাজেই জানতে চাইলে আমার নাম বা ইউজার নামটা দিয়ে গুগল করুন ... :D
Excellent @@@