একরকম হঠাৎ করেই যেন ওয়েব ওয়ার্ল্ডের বাকিটুকুও হাত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে গুগল। ইন্টারনেট জগতে নিজেদের রাজত্ব বাড়াচ্ছে গুগল। খুব সন্তর্পণে, পরিকল্পিতভাবে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের শেষের দিকে নতুন এক ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন (ব্রাউজারেই ব্যবহার করা যায় যেই অ্যাপ্লিকেশন) রিলিজ দেয়ার ঘোষণা দিলো অনলাইন জায়ান্ট গুগল। বলা হচ্ছে, নতুন সেই অ্যাপ্লিকেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে গুগলের ইতিহাসের বৃহত্তম প্রোডাক্ট লঞ্চ। কারণ, গুগল তার নতুন সেবা দিয়ে সমগ্র ওয়েব ওয়ার্ল্ডের বাসিন্দাদের তাক লাগিয়ে দিতে যাচ্ছে। আর সেই রিলিজের আগেই অদ্ভুত রকমের সাড়া ফেলা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনটির নাম গুগল ওয়েভ ( Google Wave ) - যা আজকের এই টিউনের মূল বিষয়।
আগেই বলা হয়েছে গুগল ওয়েভ ( Google Wave ) এখনো মুক্তি পায়নি। গুগলের দেয়া তথ্যমতে ২০০৯ সালের শেষের দিকে সব সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য উন্মুক্ত করা হবে গুগল ওয়েভ। তবে গুগল ওয়েভ সম্বন্ধে ভালো ধারণা দিয়েছে গুগল - যা ইন্টারনেটের প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন ব্লগ ও ওয়েবসাইটে বিচরণ করছে। গুগল ওয়েভ ( Google Wave ) কী এবং এতে কী কী সুবিধা থাকছে, শুধু এতটুকু তথ্য দিয়েই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে গুগল ওয়েভ। গুগলে "Google Wave" লিখে সার্চ দিলে দেখবেন অসংখ্য পোস্ট প্রকাশিত হয়েছে গুগল ওয়েভ নিয়ে। উন্মুক্ত হবার আগেই একরকম বিখ্যাত হয়ে গেল গুগল ওয়েভ ( Google Wave )।
উপরের ছবিটি লক্ষ্য করুন। গুগল ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহার করে গুগল ওয়েভের স্ক্রিনশট ওয়েবে প্রকাশ করেছে গুগল। একটু লক্ষ্য করলে বুঝতে অসুবিধা হবে না যে উপরের ব্রাউজারে ফটো শেয়ারিং, চ্যাট, ইমেইল ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ প্রযুক্তিগুলো দেখা যাচ্ছে। এরপরও যদি ধারনা করে না নিতে পারেন, তাহলে সহজ ভাষায় বলা যায় যে, "গুগল ওয়েভ একটি অনলাইন কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ করার অ্যাপ্লিকেশন যার মাধ্যমে আপনি তাৎক্ষণিকভাবে বার্তা আদান-প্রদান, ফাইল কিংবা ছবি শেয়ারিং, ইমেইলের সুবিধাদি ইত্যাদি একই ছাদের নিচে তথা একই উইন্ডোতে ব্যবহার করতে পারবেন।"
আসুন আরও একটু কাছ থেকে দেখি। নিচের ছবিটি গুগল ওয়েভের ডেভেলপার প্রিভিউ থেকে নেওয়া।
প্রথমবার মনে হতে পারে যোগাযোগের সবগুলো প্রযুক্তিকে একটি প্লাটফর্মে নিয়ে আসাতেই বিখ্যাত হয়েছে গুগল ওয়েভ। কিন্তু গুগলারদের মতে, অবিশ্বাস্য ও ইনোভেটিভ কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্ম দেবে গুগল ওয়েভ যা পুরো অনলাইন যোগাযোগ ব্যবস্থাকেই বদলে দেবে এবং যোগাযোগের মাধ্যমকে করে দেবে অবিশ্বাস্য দ্রুত ও সহজতর। গুগল ওয়েভে কী কী বিশেষত্ব থাকছে তা অবশ্যই খুলে বলেনি গুগল। তবে কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা খোলাসা করেছে গুগল যা নিচে দেয়া হলোঃ
আপনাকে অবাক করে দিতে সক্ষম হবে গুগল ওয়েভ। কেননা, এর সবকিছুই রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে আপডেট হবে। একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ধরুন, ইয়াহু!তে চ্যাট করার সময় আপনার কন্টাক্ট যখন কিছু টাইপ করছে, তখন নিশ্চয়ই ".....is typing" এই ধরনের একটি মেসেজ নিচে প্রদর্শিত হতে থাকে। কিন্তু গুগল ওয়েভে আপনি আপনার বন্ধুর টাইপ করা প্রতিটি অক্ষর দেখতে পারবেন সঙ্গে সঙ্গেই। অর্থাৎ, সে যদি টাইপে ভুল করে এবং মুছে নতুন করে লিখে, সেটাও আপনি দেখতে পারবেন। নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন গুগল ওয়েভের বৈশিষ্ট্যের সারিতে সর্বপ্রথম অবস্থান করা বৈশিষ্ট্যটির কথা শুনেই!
গুগল ওয়েভ আপনি চাইলে নির্দিষ্ট কোনো ওয়েব বা ব্লগে এমবেড করে নিতে পারেন। এর ফলে, ঐ ব্লগ বা সাইটের সকল ভিজিটর ও লেখকদের সঙ্গে দ্রুততর যোগাযোগ ব্যবস্থার সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।
এগুলো হচ্ছে বাড়তি পাওনা। এই একটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে লুকিয়ে আছে কয়েক হাজার বা কয়েক কোটি বৈশিষ্ট্য। ফেসবুকে অ্যাপ্লিকেশন কিংবা আইগুগলে উইজেটের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন? কতগুলো অ্যাপ্লিকেশন আছে ফেসবুকে? আর কত ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকে অ্যাপ্লিকেশনগুলো? উত্তরঃ অসংখ্য। ঠিক তেমনি গুগল ওয়েভেও থাকবে অ্যাপ্লিকেশন। ডেভেলপাররা তাদের পছন্দমতো অ্যাপ্লিকেশন লিখতে পারবেন গুগল ওয়েভের জন্য। এটি হতে পারে সামান্য একটি ক্যালকুলেটর বা আবহাওয়ার পূর্বাভাস, কিংবা কোনো ফ্ল্যাশ গেমস।
অনেকটা ফাইলের কানে ধরে এনে যথাস্থানে ছেড়ে দেয়ার মতোই ড্র্যাগ এন্ড ড্রপ পদ্ধতি। কিন্তু আজ অবধি ড্র্যাগ এন্ড ড্রপ পদ্ধতিতে ফাইল শেয়ারিংয়ের সুবিধা দেয় এমন কোনো সেবার কথা আমার জানা নেই। আর যদি থাকেও, তা কখনোই গুগল ওয়েভের মতো নয়। কারণ, গুগল ওয়েভে তাৎক্ষণিকভাবে আপনার ড্র্যাগ এন্ড ড্রপ করে শেয়ার করা ডকুমেন্ট, ফাইল, ছবি ইত্যাদি একই ওয়েভের অন্যান্য ব্যবহারকারীরা পেয়ে যাবেন।
গুগল ওয়েভে সবকিছুই শেয়ার্ড। আর এটি অনেকটা উইকিপিডিয়ার মতো। এখানে প্রকাশিত তথ্য সংশ্লিষ্ট ওয়েভের যে কেউ সম্পাদনা করতে পারবে।অর্থাৎ, একটি কমিউনিটির মিলনমেলা হতে পারে গুগল ওয়েভ।
গুগল ওয়েভ খুব সহজেই এবং দ্রুত আপনার তথ্য অন্য ভাষায় অনুবাদ করতে পারে। এছাড়াও আপনার বানান ভুলও ধরে দেবে গুগল। এর ফলে খুব সহজেই আপনি আপনার সাইট বা ব্লগের বিদেশি পাঠকদের সঙ্গে তাদের ভাষায়ই কথা বলতে পারবেন। 😀
উপরে বর্ণিত বৈশিষ্ট্যগুলো ছিটেফোঁটা মাত্র। গুগল ওয়েভের রয়েছে অসামান্য সব আবিষ্কার যা আরেকবার পুরো ওয়েব্ওয়ার্ল্ডকে সফলভাবেই চমকে দেবে। একবার ভেবে দেখুন, আপনার সাইট বা ব্লগে একটি গুগল ওয়েভ এমবেড করা থাকবে যেখানে যে কেউ অংশ নিতে পারবে। তাৎক্ষণিকভাবে বার্তা আদান-প্রদান করা সম্ভব হবে। এক ক্লিকেই বিভিন্ন ডকুমেন্ট শেয়ার করা যাবে।আবার ভাষায়ও বদলে দেয়া যাবে প্রেরিত বার্তার। আর বিভিন্ন টিম বা কোম্পানীর জন্য গুগল ওয়েভ উন্মুক্ত হবার আগেই অপরিহার্য্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার শুধু অপেক্ষা, কখন উন্মুক্ত করা হবে গুগল ওয়েভ।
গুগল ওয়েভ প্রিভিউ সাইটঃ http://wave.google.com
আমি মো. আমিনুল ইসলাম সজীব। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 16 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 83 টি টিউন ও 201 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 7 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
গুগল ওয়েব পুরো অনলাইন জীবনকেই পাল্টে দিবে… এইটাই তাদের উদ্দেশ্য… দেখা যাক কতটুকু সফল হয়।
অনেক ধন্যবাদ আমিনুল ইসলাম সজীব। yahoo messenger এর সময় শেষ হতে চলছে মনে হয়…..