ওয়াইফাই Vs. ইথারনেট Vs. ৪জি | আপনি কোনটি ব্যবহার করবেন এবং কেন ব্যবহার করবেন?

আজকের মডার্ন টেক বিনা তারের উপর নির্ভর হচ্ছে ধীরেধীরে। টেলিফোন বাদ দিয়ে আমরা সেলফোন ব্যবহার করতে কেন আরম্ভ করেছি, জানেন? কেনোনা এটি ওয়্যারলেস, যে কাজ তারের ঝামেলা ছাড়ায় করা যেতে পারে, সেখানে তারের ব্যবহার কেন করবো তাই না? যদি বলা হয়, ইন্টারনেট কানেকশনের কথা, নিশ্চিত করে বলতে পারি, ইথারনেটের আগে আপনার মাথায় ওয়াইফাই বা ৩জি'র কথা আসবে।

যদিও ৩জি ব্রডব্যান্ড লেভেলের হাই-স্পীড এখনো আমাদের দেশে সক্ষম নয়, কিন্তু কয়েকমাসের মধ্যে ৪জি আসছে, আর ৪জি অবশ্যই ব্রডব্যান্ড লেভেল স্পীড প্রদান করতে সক্ষম। তো ৪জি আসার পরে কি মানুষ আর ইথারনেট ব্যবহার করবে? কেনোনা এখানে ওয়্যারলেস'ভাবে আপনি ব্রডব্যান্ড পেতে পারবেন।

ওয়্যারলেস প্রযুক্তি যেখানে এতোটা উন্নতি সাধন করে ফেলেছে, এই অবস্থায় এখনো পুরাতন ইথারনেট কানেকশন ব্যবহার করা কতোটা উপযোগী? ইথারনেট কানেকশনে কি সুবিধা রয়েছে, যার জন্য এই প্রযুক্তি এখনো বেঁচে আছে? —এই টিউন থেকে তিনটি কানেকশনের কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করবো এবং সিদ্ধান্ত গ্রহনে সাহায্য করবো, আপনার জন্য কোন কানেকশনটি বেশি উপযোগী। তো চলুন শুরু করা যাক...

ওয়াইফাই

বর্তমানের সবচাইতে জনপ্রিয় কানেকশন স্ট্যান্ডার্ড হলো এই ওয়াইফাই, আর এটি ইউনিভার্সাল, অর্থাৎ যেকোনো নেটওয়ার্কিং ডিভাইজ এখন এটিকে সমর্থন করে, তাই খুব সহজেই ডিভাইজ গুলো একে অপরের সাথে কানেক্ট করানোর সুবিধা পাওয়া যায়। প্রত্যেকটি ডিভাইজের মধ্যে আগে থেকেই ওয়াইফাই অ্যাডাপ্টার লাগানো থাকে, ব্যাস রাউটারের রেঞ্জের মধ্যে আসার মাধ্যমেই ইন্টারনেট কানেকশন পাওয়া সম্ভব, আর এটা যেহেতু ওয়্যারলেস, তাই অবশ্যই তারের কোন ঝুট ঝামেলা নেই।

কোন প্রকারের বাড়তি ঝামেলা ছাড়া নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্টেড হওয়ার সর্বাধিক সুবিধা ওয়াইফাই প্রদান করে থাকে। যদিও ওয়াইফাই ইথারনেটের মতো হাই স্পীড ব্যান্ডউইথ ট্র্যান্সফার রেট প্রদান করতে পারে না, কিন্তু এর পোর্টেবিলিটি এবং ব্যবহারে সহজ হওয়ার ক্ষমতা একে এতো জনপ্রিয় বানিয়েছে।

চিন্তা করে দেখুন, কফি শপ বা এয়ারপোর্টের কথা, যেখানে ওয়াইফাই কানেকশন ব্যবহার করে কতো সহজেই ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া সম্ভব। এই অবস্থায় ইথারনেট হলে কি হতো বলুন তো? সবার ডিভাইজ গুলোতে কি তার লাগিয়ে বেড়ানো হতো?

তো বুঝতেই পাড়ছেন, ওয়াইফাই এর বর্তমানে কতো সুবিধা রয়েছে! অনেক সুবিধা থাকলেও এর যে কোন অসুবিধাই নেই, এমনটা তো হতে পারে না, তাই না? সবচাইতে বড় অসুবিধা হচ্ছে রেঞ্জ, মানে আপনি রাউটারের খুব কাছে বা মোটামুটি কাছে না থাকলে ভালো রেঞ্জ পাবেন না, আর রেঞ্জ ভালো না থাকলে ডাউনলোড আর আপলোড স্পীড বহু খারাপ হয়ে যাবে, সাথে লেটেন্সিও বেড়ে যাবে।

সাথে পাবলিক ওয়াইফাই বা ওপেন ওয়াইফাই গুলোতে কানেক্ট হলে বহু সিকিউরিটি সমস্যা ঘটতে পারে। আপনার বাড়িতে যদি আলাদা ডিভাইজ চলে যেমন মাইক্রোওয়েভ ওভেন বা ব্লুটুথ স্পীকার, এই ডিভাইজ গুলো ওয়াইফাই এর সমতুল্য রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে, তাই সহজেই ওয়াইফাই সিগন্যাল ড্রপিং প্রবলেম তৈরি হতে পারে।

আপনার ওয়াইফাই সিগন্যাল আর প্রতিবেশীর ওয়াইফাই সিগন্যালের মধ্যে গণ্ডগোল পাকিয়ে যেতে পারে। তাছাড়া ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে কানেক্টেড থাকা একটি স্লো ডিভাইজ সম্পূর্ণ নেটওয়ার্কেই স্লো করে দিতে পারে। আর ওয়াইফাই থেকে আপনি কখনোই ইথারনেটের মতো স্পীড আশা করতে পারবেন না।

যদিও নতুন ওয়াইফাই স্ট্যান্ডার্ড ১০ গিগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত স্পীড প্রদান করতে সক্ষম, কিন্তু ঐ টাইপের ডিভাইজ আর রাউটার বাজারে আসতে অনেক দেরি আছে। যদি সঠিকভাবে রাউটার সেটআপ না করেন, আপনার ওয়াইফাই সহজেই কেউ হ্যাক করে ব্যবহার করতে পারে।

ইথারনেট

ওয়্যারলেস টেকের সাথে তুলনা করতে গেলে ইথারনেট আজকের দিনে একটু পুরাতন টেকনোলজি। কিন্তু তারপরেও এতে এমন কিছু বিশিষ্ট রয়েছে, যেগুলো এখনো একে মডার্ন টেকে জায়গা করে দেয়। ওয়াইফাই বা আলাদা ওয়্যারলেস টেকের সাথে ইথারনেটের সবচাইতে বড় পার্থক্য হচ্ছে, এটি তারের সাহায্যে কাজ করে, তার এটিই এই টেকের সবচাইতে অসুবিধা, মানে আপনি মোটেও পোর্টাবিলিটি পাবেন না। সাথে যেকোনো ডিভাইজকেও আপনি ইথারনেটের সাথে কানেক্ট করতে পারবেন না। কম্পিউটার বা ল্যাপটপ গুলোকে সহজেই ইথারনেটের সাথে কানেক্টেড করা গেলেও, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট গুলোকে ইথারনেটে কানেক্ট করা অসম্ভব।

তবে এর সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে আপনার নেটওয়ার্কের প্রায় সকল ব্যান্ডউইথ এটি আরামে হ্যান্ডেল করতে পারবে। ওয়াইফাই এর মতো এতে কোন সিগন্যাল লস প্রবলেম বা ডাটা লস প্রবলেম হয় না, ওয়াইফাই সিগন্যাল কমে গেলে ডাটা লস হয়ে যায়, ব্যান্ডউইথ ট্র্যান্সফার রেট স্লো হয়ে যায়। কিন্তু ইথারনেটে এধরনের কোনই সমস্যা নেই। সাথে ইথারনেট কানেকশনে বেস্ট পিং রেট পাবেন, যেটা অনলাইন গেমিং এর জন্য আদর্শ ব্যাপার।

তারের কানেকশন হওয়া এর সবচাইতে বড় অসুবিধা, দূর থেকে কানেকশন নিয়ে আসার সময়ও খরচ বেড়ে যেতে পারে এবং ব্যান্ডউইথ স্পীড হয়ে যেতে পারে, এর জন্য সিগন্যাল এমপ্লিফায়ার ব্যবহার করতে হয়, যেটা আলাদা একটি ডিভাইজ। আপনার ডিভাইজ রাউটারের কাছে না থাকলে কখনোই ইথারনেট ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। তারের কানেকশন আর কতোদুরই নিয়ে যাবেন বলুন!

৩জি/৪জি (মোবাইল ইন্টারনেট)

যদিও মোবাইল ডিভাইজ গুলো বিশেষ করে সেল টাওয়ার থেকে ওয়্যারলেস মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে কাজ করে, কিন্তু ৩জি বা ৪জি মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে কম্পিউটার বা ল্যাপটপেও ইন্টারনেট চালানো সম্ভব। যদিও ৩জি টেকে অনেক কমতি রয়েছে, কিন্তু ৪জি অবশ্যই ব্রডব্যান্ডকে টক্কর দেওয়ার মতো প্রযুক্তি। ৪জি'তে ১০০মেগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত ব্যান্ডউইথ ট্র্যান্সফার করা সম্ভব।

আপনি দুইভাবে কম্পিউটারে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন, প্রথমত ইন্টারনেট ডঙ্গল ব্যবহার করে, অথবা ওয়াইফাই রাউটার ব্যবহার করে, যে রাউটারে বিল্ডইন মডেম রয়েছে। আবার মোবাইলের পোর্টেবল মডেম বা ওয়াইফাই হটস্পট চালু করেও মোবাইল ইন্টারনেট কম্পিউটারে ব্যবহার করা সম্ভব।

মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করার সবচাইতে বড় সুবিধা প্রথমত অবশ্যই এটি ওয়্যারলেস এবং দ্বিতীয়ত আপনি যেখানেই যান সিগন্যাল রয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্কের সবচাইতে বেশি সিগন্যাল ক্যাভারেজ থাকে। যেমনটা গ্রামের বন্ধুরা শুধু মাত্র মোবাইল ইন্টারনেটের উপরই নির্ভরশীল। পাবলিক ওয়াইফাই থেকে মোবাইল ৩জি/৪জি কানেকশন অনেক বেশি শক্তিশালী এবং নিরাপদ।

এতেও কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন আপনার কাছে ভালো সিগন্যাল থাকলে আপনি অবশ্যই ভালো ব্যান্ডউইথ স্পীড পাবেন, কিন্তু বিশেষ করে ৪জি নেটওয়ার্কে সিগন্যাল কমে যাওয়ার সাথে সাথে স্পীড রেট লো হয়ে যায় এবং লেটেন্সি বেড়ে যায়। তাই গ্রামে ৪জি নেটওয়ার্ক অত্যন্ত সমস্যা করতে পারে।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের তুলনায় মোবাইল ইন্টারনেটের দাম অনেক বেশি হয়ে থাকে এবং লিমিটেড ইন্টারনেট পাওয়া যায়। মোবাইল ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে কোন আনলিমিটেড প্ল্যান হয় না, তাই হেভি ইন্টারনেট ইউজারদের খরচ অনেক বেশি হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আপনার লোকেশনে যদি ইথারনেট বা ব্রডব্যান্ড না থাকে, তো মোবাইল নেটওয়ার্কই বেস্ট সলিউসন!


তো এতক্ষণের আলোচনা থেকে কি সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন? চলুন আমি সিদ্ধান্ত নেওয়াটাকে আরেকটু সহজ করে দেয়। যদি আপনার পোর্টাবিলিটি এবং যেকোনো টাইপের ডিভাইজ কানেক্ট করা আসল উদ্দেশ্য হয়ে থাকে অবশ্যই ওয়াইফাই আপনার জন্য বেস্ট।

হোম নেটওয়ার্ক, হাই স্পীড ব্যান্ডউইথ ট্র্যান্সফার রেট, লো পিং এসকলের জন্য ইথারনেট বেস্ট। আর যেকোনো স্থানে সিগন্যাল কাভারেজ সাথে ওয়াইফাই থেকে বেটার সিকিউরিটি পাওয়ার জন্য মোবাইল ইন্টারনেট বেস্ট হবে!

তো আপনার মতামত কি? বা আপনি কোন টাইপের কানেকশন ব্যবহার করেন বা করতে পছন্দ করেন? আমাদের সবকিছু টিউমেন্ট করে জানান, নিচের টিউমেন্ট সেকশন সকলের জন্য ওপেন রয়েছে।

Level 6

আমি তাহমিদ বোরহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 177 টি টিউন ও 680 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 43 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।

আমি তাহমিদ বোরহান। টেক নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকতে ভালোবাসি। টেকটিউন্স সহ নিজের কিছু টেক ব্লগ লিখি। TecHubs ব্লগ এবং TecHubs TV ইউটিউব চ্যানেল হলো আমার প্যাশন, তাই এখানে কিছু অসাধারণ করারই চেষ্টা করি!


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস