হ্যালো! কেমন আছেন আপনারা? আজ কোনো সফটওয়্যারের রিভিউ কিংবা কোনো টেকনোলজিক টপিকে আলোচনা করতে আশাকরি, এই ইন্টারনেটের বয়স কত জানেন? হ্যাঁ ইন্টারনেটের বয়স এ বছর ৪০ এ গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ইন্টারনেটের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ কিছু অন্যরকম স্বাদের টিউন নিয়ে চলে আসলাম।
আজ ইন্টারনেট জগতের সর্বপ্রথম কিছু বিষয় নিয়ে অন্যরকম একটি টিউন নিয়ে চলে এসেছি। ইন্টারনেট জগতের প্রথম ইমেইল, প্রথম ইউটিউব ভিডিও, প্রথম মাল্টিপ্লেয়ার গেম, প্রথম সাইবার ক্যাফে ইত্যাদি নিয়ে আজকের এই টিউন। তো চলুন অতিরিক্ত কোনো কথা না বলে সরাসরি টিউনে চলে যাই:
আজকাল বিভিন্ন ব্যক্তিগত কিংবা অফিসিয়াল কাজে আমরা প্রায়ই ইমেইলের আদান-প্রদান করে থাকি! কিন্তু দুনিয়ার সর্বপ্রথম ইমেইল কবে পাঠানো হয় তা কি জানেন? সেই ১৯৭১ সালে! ১৯৭১ সালের শেষ দিকে Ray Tomlinson নামের একজন ইঞ্জিনিয়ার টিনেক্স নামের একটি টাইম শেয়ারিং সিস্টেম নিয়ে কাজ করছিলেন। তিনি সিপিনেট এবং SNDMSG নামের দুটি প্রোগ্রামকে একত্রে কাজে লাগিয়ে সর্বপ্রথম নেটওর্য়াক ইমেইল পাঠাতে সক্ষম হন!
এই ঘটনার আগে ১০ বছর পর্যন্ত শুধুমাত্র একটি কম্পিউটারের এক ইউজার থেকে অন্য ইউজারে ইমেইল পাঠানো যেতো, কিন্তু তিনি সর্বপ্রথম দুটি কম্পিউটারে নেটওর্য়াক ইমেইল পাঠাতে সক্ষম হন। আজকালকের ইমেইলের পাঠানোর বৈশিষ্ট্যগুলো ঠিক একই ভাবে তখনও ব্যবহৃত হয়েছিল। যেমন @ চিহ্ন দিয়ে ইউজারনেম এবং হোস্ট কম্পিউটারের নাম বিভক্ত করে নেওয়া। দুনিয়ার প্রথম নেটওর্য়াক ইমেইল ১৯৭১ সালে পাশাপাশি অবস্থিত দুটি কম্পিউটারের মধ্যে পাঠানো হয়েছিল!
ম্যাথমেটিশিয়ান জন ভন নিউম্যান ১৯৪৯ সালে কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলোকে নিজে থেকেই পরিবর্তন করতে পারে এমন একধরণের প্রোগ্রামের নাম কম্পিউটার ভাইরাস এবং ওর্মস দিয়ে একটি থিউরি প্রদান করে গিয়েছিলেন। তার এই থিউরী মোতাবেক দুনিয়ার প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস হিসেবে ক্রিপার কে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। ক্রিপার ভাইরাসটি ১৯৭১ সালে আরপানেট নাম একটি কম্পিউটারে ইনফেক্ট করে।
ক্রিপার ভাইরাস টি BBN কোম্পানির বব থমাস নামের একজন ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করেন। তিনি ক্রিপার ভাইরাসকে শুধু পরীক্ষামূলক ভাবে তৈরি করেছিলেন। ক্রিপার আক্রান্ত কম্পিউটারে শুধু ”Im the creeper: catch me if you can" বার্তাটি প্রদর্শিত হতো, ক্রিপার কোনো ক্ষতি করার জন্য তৈরি করা হয়নি। ক্রিপারের এই বার্তার উপর ভিক্তি করেই দুনিয়ার প্রথম এন্টিভাইরাস “দ্যা রিপার” তৈরি করা হয়! দ্যা রিপার এন্টিভাইরাসও সিস্টেমের সর্বত্র ছড়িয়ে গিয়ে ক্রিপার ভাইরাসকে সনাক্ত করে সেটিকে মুছে দেয়।
১৯৮১ সালে WHO তে কাজ করার সময় ড. ল্যারি ব্রিলিয়েন্ট একটি প্রিমিটিভ অনলাইন কনফারেন্সিং সিস্টেম তৈরি করেন। এর মূল উদ্দেশ্য ছিলো নেপালে বন্যা কবলিত অঞ্চলে হেলিকপ্টার পাঠানো নিয়ে আলোচনা করা। পরবর্তীতে আমেরিকায় এসে ড. ল্যারি এই সিস্টেমকে অ্যাপল এর ফাউন্ডার স্টিভ জবসকে দেখান এবং স্টিভ জবসের পরামর্শ মতো ড. ল্যারি এই সিস্টেমের একটি মডিফাইড সংস্করণ তৈরি করেন যা ব্যক্তিগত কম্পিউটারগুলো ব্যবহার করা যাবে।
পরবর্তীতে তিনি একটি স্থায়ী টেক্স কনফারেন্সি সিস্টেম ডেভেলপ করেন, যা আজ আমরা ইন্টারনেট ফোরাম হিসেবে চিনে থাকি। ১৯৮৫ সালে ড. ল্যারি এবং স্টুর্য়াড ব্রান্ড মিলে দুনিয়ার প্রথম অনলাইন ফোরাম The Well তৈরি করেন।
১৯৮০ সালের শুরুর দিকে Carnegie Mellon এর কম্পিউটার সাইন্স ডিপার্টমেন্টে কাজ করার সময় প্রফেসর Scott E Fahlman এর মাথায় প্রথম স্মাইলির আইডিয়া আসে। তখনকার সময় অনলাইন বুলেটিন বোর্ডগুলো সাধারণত বড় কোনো রিসার্চ করার কাজে ব্যবহৃত হতো।
তখন এইসব বুলেটিন বোর্ডে মজা করার উদ্দেশ্যে সরাসরি কোনো অক্ষর না লিখে পাঙ্কচুয়েশন মার্কের ব্যবহার করা শুরু হয়। তখন ১৯৮২ সালের একসময় প্রফেসর স্কট : -) এই তিনটি অক্ষরকে একত্রে ব্যবহার করে 🙂 স্মাইলির ব্যবহারের প্রচলন শুরু করেন। পরবর্তীতে দুনিয়ার সর্বত্র স্মাইলি ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়ে যায়।
ইন্টারনেটের আবিস্কারের প্রথম যুগের মধ্যেই মাল্টিপ্লেয়ার গেমস এর আইডিয়া এবং তৈরির কাজ শুরু হয়। ভিডিও গেমসের ২য় লাইফ বা প্লেয়ারের বার বার আর্বতন হওয়ার থিউরীর উপর ভিক্তি করেই মাল্টিপ্লেয়ার গেমের আইডিয়া আসে।
Mud (Multi-User Dungeon) হচ্ছে দুনিয়ার সর্বপ্রথম মাল্টিপ্লেয়ার গেম, যেটি ইসেক্স ইউনিভার্সিটির দুজন প্রোগ্রামার Roy Trubshaw এবং Richard Bartle ১৯৭৮ সালে নির্মাণ করেন। এটি হচ্ছে একটি টেক্স ভিক্তিক ফ্যান্টাসি গেম, যেখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে দুনিয়ার সবাই একত্রে খেলতে পারার ফিচার রাখা হয়। তবে মজার ব্যাপার হলো এই গেমটির নির্মাতা নিজেও জানতেন না যে তারাই দুনিয়ার সর্বপ্রথম মাল্টিপ্লেয়ার গেম বানিয়েছেন!
ইন্টারনেটে কেনো তথ্য খোঁজার জন্য আমরা প্রতিদিনই অনেকবার সার্চ ইঞ্জিন ওয়েবসাইটে ঢু মেরে থাকি। যেমন গুগল ওয়েবসাইটটি এখন সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে দুনিয়াতে সবথেকে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু দুনিয়ার সর্বপ্রথম সার্চ ইঞ্জিন এর সম্পর্কে জানেন?
১৯৮৯ সালে McGill University তে মাস্টার্স ডিগ্রিতে পড়ার সময় তরুণ কম্পিউটার সাইন্টিস Alan Emtage কে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিস্টেম এডমিনিস্টেটরের পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখন তিনি দেখেন যে, স্টুডেন্টদের জন্য প্রতিনিয়ত অনলাইন ঘেঁটে সফটওয়্যার খোঁজা একটি কস্টকর এবং বোরিং জিনিস হয়ে গিয়েছি। তারপর তিনি একটি স্ক্রিপ্ট সেট তৈরি করেন যেটি ভার্সিটির সিস্টেম ডাটাবেজ থেকে অটোমেটিক্যালি রানিং হয়ে সহজ ভাবে তথ্য খুঁজে দিবে।
তার এই স্ক্রিপ্টের কার্যকারিতা চারিদিকে ছড়িয়ে গেলে, তারই দুইজন কলিগ Mike Parker এবং Bill Heelan তিনজন মিলে ১৯৯১ সালে Archie নামের একটি অনলাইন সার্চ ইঞ্জিন নির্মাণ করে ফেলেন! Archie নামটি Archive নাম থেকে নেওয়া হয়েছে, শুধু V অক্ষরটি বাদ দিয়ে।
টিম বার্নার লি ১৯৯১ সালে দুনিয়ার সর্বপ্রথম ব্রাউজার WorldWideWeb তৈরি করেন। পরবর্তীতে তিনি এটির নাম Nexus এ পরিবর্তন করে দেন কারন এই নামটির সাথে web এর নামের মিল থাকায় স্বাভাবিকভাবেই একটি কনফিউশন তৈরি হতো।
১৯৯১ সালে একটি ইউরোপিয়ান কোম্পানি Cern এর নিউক্লিয়ার রিচার্জের জন্য টিম বার্নার লি এই WorldWideWeb ব্রাউজারটি তৈরি করে থাকেন। WorldWideWeb ব্রাউজারটি শুধুমাত্র Nextstep প্লার্টফর্মে চালানো যেতো। Nextstep প্লার্টফর্মটি অ্যাপেলের ম্যাক ওএস এক্স এর আগের সংস্করণ হিসেবে পরিচিত। তবে Nextstep প্লার্টফর্মটি জনসাধারণের জন্য তৈরি করা হয়নি বিধায় WorldWideWeb ব্রাউজারটিও জনসাধারণের ব্যবহার করার সুযোগ হয়ে উঠে নি।
কিন্তু ১৯৯৩ সালে ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেমের জন্য সর্বপ্রথম জনসাধারণের ব্যবহার উপযোগী ওয়েব ব্রাউজার Mosaic রিলিজ করা হয়। Mosaic ব্রাউজারটি বার্নার লি’র সার্ভারেই তৈরি করা হয়, তবে এটায় গ্রাফিক্স, সাউন্ড এবং ভিডিও ক্লিপসের ফিচার যুক্ত করে রিলিজ করা হয়।
দুনিয়ার প্রথম ওয়েবক্যাম সিস্টেমটি ১৯৯১ সালে অপারেটিং করা শুরু করে। এটি XCoffee নামে পরিচিত হয়। তৎকালীন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবের কয়েকটি কফি মেশিন ছিলো। কিন্তু অনেক সময় কফি মেশিন খালি থাকায় স্টুডেন্টস এবং টিচাররা শুধু শুধুই কফি মেশিনের কাছে এসে ঘুরে যেতো।
এই সমস্যার সমাধানের জন্য ক্যামব্রিজের কিছু বিজ্ঞানীরা তাদের ল্যাবের কফি মেশিনের সামনে একটি পুরাতন ক্যামেরাকে কম্পিউটারের সাথে এটাচ করে একটি প্রোগ্রাম তৈরি করেন যেটার মাধ্যমে ল্যাবের বিভিন্ন কফি মেশিনের লাইভ ছবি প্রর্দশিত হত। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে যখন ওয়েব ব্রাউজারে ছবি প্রদর্শনের ফিচার আসে তখন ক্যামব্রিজের বিজ্ঞানী Dan Gordon এই XCoffee সফটওয়্যারের একটি মডিফাইন সংস্করণ Coffeecam তৈরি করেন, যেটা ব্রাউজেরর মাধ্যমে ইন্টারনেটে দুনিয়ার সর্বত্র থেকে দেখা যেতো। ক্যামব্রিজের কম্পিউটার সাইন্স ডিপার্টমেন্ট নতুন বিল্ডিংয়ে স্থানান্তিরিত হবার ফলে Coffeecam ওয়েবক্যামটি ২০০১ সালে বন্ধ হয়ে যায়।
দুনিয়ার সর্বপ্রথম সাইবার ক্যাফে হচ্ছে সাইবেরিয়া, যেটি ১৯৯৪ সালে ব্রিটেনের মধ্য লন্ডনের ওয়াইটফিল্ড স্ট্রিটের ইজিনেট অফিসের নিচতলায় খোলা হয়। আস্তে আস্তে সাইবার ক্যাফের জনপ্রিয়তা শহর ছড়িয়ে যেতে থাকে এবং পরবর্তীতে এই সাইবার ক্যাফের প্যারিস, ব্যাংকক, টোকিও ইত্যাদি শহরের শাখা অফিস খোলা হয়। সাইবেরিয়া সাইবার ক্যাফেতে ঘন্টা প্রতি ইন্টারনেন্ট ব্যবহারের জন্য ১৫০ ডলার করে চার্জ নেওয়া হতো!
আজকাল সোশাল নেটওয়ার্কিং এর সবথেকে জনপ্রিয় ওয়েবসাই ফেসবুকের জন্মকাহিনীতো অনেকেই জানেন, ২০০৪ সালে ফেসবুকের জন্ম হয়। কিন্তু দুনিয়ার সর্বপ্রথম সোশিয়াল নেটওয়ার্কিং সাইটের ব্যাপারে জানেন কি?
দুনিয়ার সর্বপ্রথম সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট হচ্ছে classmates.com এটি ১৯৯৫ সালে Randy Conrads এর দ্বারা চালু করা হয়। তখন এর মূল উদ্দেশ্য ছিলো, আমেরিকায় সাবেক হাই স্কুল বন্ধুদেরকে ইন্টারনেটে একত্র করে তাদের বর্তমান লাইফ স্টোরিগুলোকে একে অপরের সাথে শেয়ার করা। প্রথমে সাইটের নির্মাতা Randy Conrads তার সাবেক মিলিটারী স্কুলের বন্ধুদের সাথে কমিউনিকেট করা শুরু করলেও পরবর্তীতে সাইটটি অন্যদের কাছেও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হওয়া শুরু করে।
জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট ইউটিউবের সর্বপ্রথম ভিডিও কোনটি সেটি জানেন কি? সাইট নির্মাণের পর ২০০৫ সালের ২৩ এপ্রিল "Me at the zoo" শিরোনামে একটি ১৮ সেকেন্ডের ভিডিও আপলোড করা হয়। এবং এই ভিডিওটিই হচ্ছে ইউটিউবের সর্বপ্রথম ভিডিও! এই ভিডিওটি স্যান ডিয়াগোর চিড়িয়াখানায় হাতিদের সামনে থেকে শুট করা হয়েছিল। ভিডিওটি হাস্যকর হলেও এই টিউনটি লেখা পর্যন্ত ভিডিওটি ৪০, ৭৪, ৩৭২৪ বার দেখা হয়েছে! কি আজব তাই না?
তো আজকের এই ইন্টারনেটের সর্বপ্রথম কিছু বিষয় নিয়ে টিউন এখানে শেষ করছি! টিউনটি সম্পর্কে মতামত জানাতে টিউমেন্ট করতে ভুলবেন না যেন! আর টেকটিউনসের নতুন থিম আপনার কাছে কেমন লাগছে সেটাও টিউমেন্টে জানান। আজ এ পর্যন্তই। টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আল্লাহ হাফেজ।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!
অনেক অনেক ধন্যবাদ। বিশ্বের প্রথম কিছু অ্যাপ্লিকেশনের সাথে পরিচিত দেখার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।