ইন্টারনেট নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। আজকাল পিসি আর ইন্টারনেট একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ হয়ে উঠেছে। আপনি কি ধরনের ইন্টারনেট ব্যবহার করেন? ব্রডব্যান্ড? ওয়াই ফাই? মোবাইল ইন্টারনেট? ফাইবার নেট? ইন্টারনেট সংযোগের এইসকল মাধ্যমগুলো আজকাল বিভিন্ন নামে পাওয়া যাচ্ছে। আজ আমি আপনাদের সাথে এইসব ইন্টারনেট সংযোগের ব্যাপারে আড্ডা দিতে চলে এলাম।
আমাদের দেশে যেসব পদ্ধতিতে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হচ্ছে সেগুলোও আজকের আড্ডায় থাকছে। সহজ একটি প্রশ্ন দিয়ে আজকের আড্ডাটা শুরু করি। ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহারের জন্য আমাদের দেশে সাধারণত দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যেগুলোকে আপনারা ব্রডব্যান্ড লাইন এবং মোবাইল ইন্টারনেট বা ওয়্যারলেস ইন্টারনেট বলে থাকেন।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ হচ্ছে একটি টেলিফোন লাইনের মতো যেটি আপনার isp এর থেকে আপনার বাসায় ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে থাকে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ সবসময় চালু থাকে, আপনার পিসি বন্ধ থাকলেও নেটের লাইন কিন্তু দিনে ২৪ ঘন্টাই চালু থাকে সেটা জানেন কি? তাছাড়া বাহিরের দেশে (যেমন আমেরিকায়) 25Mbps ডাউনলোড এবং 3Mbps আপলোড স্পিড সম্পন্ন যেকোনো তারযুক্ত নেট সংযোগকে ব্রডব্যান্ড বলে আখ্যায়িত করা হয়। সেখানে আমাদের দেশের কথা নাইবা বললাম।
তো চলুন ইন্টারনেট সংযোগে ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলো নিয়ে শুরু থেকে আড্ডা হয়ে যাক:
বাসায় ইন্টারনেট সংযোগের জন্য সবথেকে পুরোনো পদ্ধতি হচ্ছে ডায়ালআপ পদ্ধতি। বাসার কিংবা অফিসের টেলিফোনকে একটি মোডেমে ক্যাবলের সাহায্যে সংযুক্ত করে কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হত এই পদ্ধতিতে। কম্পিউটার থেকে ডিজিটাল সিগন্যালগুলোকে মডেম সাউন্ডে পরিবর্তন করে টেলিফোনের মাউথপিসে টান্সফার করে এবং টেলিফোন সংযোগটি isp (internet service provider) এর ভূমিকায় কাজ করে। ওদিকে ইন্টারনেট থেকে আগত অডিও সিগন্যালগুলোকে মডেম ডিজিটাল সিগন্যালে পরিবর্তন করে কম্পিউটারে প্রেরণ করে। এভাবেই এই পদ্ধতিতে পিসিতে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়ে থাকে।
ডায়াল-আপ মডেমগুলোর কাজ করা হয় টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে। আগেকার দিনে টেলিফোন লাইনের মাধ্যমেই অনেকদিন ইন্টারনেট সার্ভিস দেওয়া হত। টেলিফোন লাইনগুলো এনালগ পদ্ধতির কপারের তাঁর ছিল। এনালগ পদ্ধতির জন্য এই ডায়াল-আপ মডেম আমাদেরকে সর্বোচ্চ 56Kbps গতির ই্ন্টারনেট সার্ভিস দিতে পারতো।
DSL এর পূর্ণরূপ হলো Digital Subscriber Line. টেলিফোন কোম্পানিগুলো তাদের ফোন লাইনে অতিরিক্ত একটি সিগন্যাল পাঠানোর জন্য এই প্রযুক্তি আবিস্কার করেন। উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির ব্যবহারের মাধ্যমে টেলিফোন লাইনে ইন্টারনেট ডাটা আদান-প্রদানের মাধ্যমেই এই পদ্ধতিতে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হতো।
ধরুন একটি পাইপে প্রতি মিনিটে ভয়েস পাঠানো হয়। আর সেই পাইপে প্রতি ৫ সেকেন্ডে ইন্টারনেট ডাটাও পাঠানো হলো। এবার নিচের চিত্রের মতো পাইপে ভয়েস এর তুলনায় ডাটার ট্রান্সফার ফ্রিকোয়েন্সি বেশি হবে:
পাইপের শেষের দিকে একটি মেশিন বসানো থাকে, যেটির কাজ হলো ডাটাগুলোকে কম্পিউটারে প্রেরণ করা এবং ভয়েসগুলোকে টেলিফোনে প্রেরণ করা।
এই মেশিনটির নাম হলো সিগন্যাল ফিল্টার। আপনি যদি ডিএসএল পদ্ধতিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনি এগুলোকে টেলিফোনের কাছে দেখে থাকবেন। এই সিগন্যাল ফিল্টার শুধু ডাটা এবং ভয়েস ট্রান্সফারের কাজই করে না, এর মাধ্যমে টেলিফোন লাইনে আরো সুন্দর এবং পরিস্কার ভয়েস শোনার কাজেও ব্যবহার করা হয়। ডিএসএল পদ্ধতি আপনাকে 1.5Mbps স্পিডের ইন্টারনেট সংযোগ দিতে পারবে।
ডায়াল আপ আর টেলিফোনের যুগের পর আমরা এখন ক্যাবল ইন্টারনেট সংযোগ পদ্ধতির কথা বলবো। মূলত ব্রডব্যান্ড বলতে এই ক্যাবল পদ্ধতিকেই বুঝায়। টিভির ডিস লাইনের ক্যাবলের মতো এই ক্যাবলটি সরাসরি আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানি থেকে আপনার পিসির নেটওর্য়াক পোর্টে লাগনো হয়।
আর আপনি নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সার্ভিস পেয়ে থাকেন। ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেবার এই পদ্ধতিকে Data Over Cable Service Interface Specificaiton (DOCSIS) বলা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতি আপনাকে 10Mbps গতি পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগ দিতে পারবে।
ক্যাবল পদ্ধতিতে ইন্টারনেট সংযোগে লেটেস্ট আপডেট হলো এই ফাইবার অপটিক পদ্ধতি। ফাইবার অপটিক পদ্ধতিতে আলোর মাধ্যমে ইন্টারনেট ডাটা আদান-প্রদান হয় আর এতে ব্যবহার করা হয় বিশেষ প্ল্যাস্টিক ক্যাবল। আপনার জানেন যে ইলেক্টট্রিসিটির থেকে আলোর গতি অনেক বেশি! সেক্ষেত্রে এই ফাইবার অপটিক পদ্ধতিতে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
এই ফাইবার অপটিক ক্যাবলের একপ্রান্তে ট্রান্সমিটার লাগানো থাকে যেটি ইন্টারনেটের ইলেক্ট্রিক সিগন্যালগুলোকে আলোতে পরিবর্তন করে ক্যাবলে প্রেরণ করে। ক্যাবলের অপর প্রান্তে আলোটিকে আবারো ইলেক্ট্রিক সিগন্যালে পরিবর্তন করার জন্য আরেকটি ট্রান্সমিটার লাগানো থাকে এবং এটি ইলেক্ট্রিক সিগন্যালকে আপনার পিসিতে প্রেরণ করে দেয়। উচ্চ গতির এই ইন্টারনেট সংযোগের সেটআপ করার জন্য ফাইবার অপটিক ক্যাবলে অনেক টাকা খরচের ব্যাপার রয়েছে। ফাইবার অপটিক পদ্ধতিতে আপনি 100Mbps থেকে 1Gbps গতির ইন্টারনেট সংযোগ সেবা পেতে পারেন।
ওয়ারলেস ব্রডব্যান্ড হচ্ছে এমন একটি ইন্টারনেট সংযোগ পদ্ধতি যেটার কানেক্ট হবার জন্য isp এবং আপনার পিসিতে কোনো প্রকার ক্যাবলের দরকার হয় না। ওয়ারলেস ব্রডব্যান্ড পদ্ধতিতে isp তাদের ইন্টারনেট সার্ভিসকে একটি রেডিও টাওয়ারে প্রেরণ করে। টাওয়ারটি ডাটাগুলোকে রেডিও ওয়েভের মাধ্যমে আশেপাশের এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে দেয়। আর আপনি কাস্টমার হিসেবে মডেমের মাধ্যমে উক্ত রেডিও ওয়েভকে রিসিভ করে ইন্টারনেট সংযোগ উপভোগ করতে পারবেন।
এই পদ্ধতির আপগ্রেডেড সংস্করণ হচ্ছে ওয়াই-ফাই। ওয়াই-ফাইতে স্পিড বেশি পাওয়া গেলেও এর এরিয়া কভারেজ কম হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে আপনি সর্বোচ্চ 1.5Mbps গতির ইন্টারনেট সেবা উপভোগ করতে পারবেন। কারণ উন্মুক্ত সিগন্যালের থেকে ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেটের গতি বেশি হয়ে থাকে।
মোবাইলে ইন্টারনেট কে মডেম কিংবা সরাসরি ইউএসবি পোর্টের মাধ্যমে পিসিতে কানেক্ট করে ইন্টারনেট সংযোগ উপভোগ করাকেই মোবাইল ইন্টারনেট মাধ্যম বলা হয়ে থাকে। আজকাল সবচেয়ে সহজ ও সুবিধাজনক ইন্টারনেট সংযোগ পদ্ধতি হচ্ছে এই মোবাইল ইন্টারনেট পদ্ধতি।
মোবাইল ইন্টারনেট পদ্ধতিকে ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ বলা হয়, কারণ আপনার মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে আপনি চলতি পথেও ইন্টারনেট সেবা উপভোগ করতে পারছেন। মোবাইল ইন্টারনেট পদ্ধতির কাজ করার সিস্টেম ওয়ারলেস ব্রডব্যান্ডের মতো। শুধু এখানে আপনি টাওয়ারের পরিবর্তে আপনার মোবাইলের সিমকার্ডের মাধ্যমে ইন্টারনেট ডাটা পেয়ে যাচ্ছেন।
মোবাইল ইন্টারনেট পদ্ধতিতে আপনি বিভিন্ন স্পিডের ইন্টারনেট সংযোগ উপভোগ করতে পারবেন। যেমন 3G, 4G, LTE ইত্যাদি মাধ্যমে কারণে আপনার মোবাইলের ইন্টারনেট স্পিড কম-বেশি হয়ে থাকে।
নাম দেখেই বুঝতে পারছেন যে এই পদ্ধতিতে স্যাটালাইট ডিসের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়। আকাশে অবস্থানরত স্যাটালাইটে isp সিগন্যাল প্রেরণ করে এবং কাস্টমার হিসেবে আপনি আপনার স্যাটালাইট ডিসের মাধ্যমে উক্ত সিগন্যালকে রিসিভ করে ইন্টারনেট সংযোগ উপভোগ করতে পারেন।
তবে এই পদ্ধতি সেটআপ করতে প্রচুর টাকা পয়সা এবং অভিঞ্জ ইন্সটলারের প্রয়োজন পড়ে বিধায় এই পদ্ধতির ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা অতটা জনপ্রিয় হয়নি। এই পদ্ধতিতে ইন্টারনেট ডাটাগুলোকে isp, স্যাটালাইট এবং আপনার স্যাটালাইট ডিসে আসার জন্য প্রায় ৪৫ হাজার মাইল পথ পাড়ি দিতে হয়। এই কারণে এই পদ্ধতিতে বেশি স্পিডের ইন্টারনেট কানেকশন পাওয়া সম্ভব নয়।
ডায়াল আপ থেকে শুরু করে ফাইবার অপটিক লাইন, মোবাইল ইন্টারনেট থেকে শুরু করে ওয়াই-ফাই পদ্ধতি ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতিতে আজকাল আমরা ইন্টারনেট সংযোগ সেবা উপভোগ করছি। তবে সকল পদ্ধতিতেই একই নিয়মে ডাটা ট্রান্সফার হচ্ছে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যৎতে মোবাইল এবং টিভির উপর দখল নিয়ে নেবে ইন্টারনেট।
তখন কাউকে কল দেবার জন্য সিমকার্ডের প্রয়োজন হবে না, আর টিভি দেখার জন্য ডিস লাইনেরও প্রয়োজন হবে না। এসকল কিছুই ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা যাবে। টিউন সম্পর্কে আপনার কোনো মতামত থাকলে অবশ্যই তা টিউমেন্টে আমাকে জানাতে পারেন। আজ এ পর্যন্তই। আগামীতে অন্য কোনো বিষয় নিয়ে টেকটিউনসে হাজির হবো। টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!