সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি, সবাইকে আন্তরিক সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে আলোচিত এবং দোদুল্যমান প্রশ্ন “অনলাইনে অ্যানোনিমাস ব্রাউজিং আসলেই সম্ভব কিনা?” সম্পর্কিত আমার আজকের মেগাটিউন।
আমরা সকলেই জানি বাংলাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুক বন্ধ রয়েছে। দেশের নিরাপত্তা স্বার্থে বাংলাদেশ সরকারকে হয়তো এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে ফেসবুক প্রেমিদের কাছে বিষয়টা ভালো না লাগলেও সরকারের এই পদক্ষেপ যে ফলপ্রসু হয়েছে এ কথা বলতেই হয়। কারন শুধুমাত্র ফেসবুক বন্ধ করার জন্য দেশে সহিংসতা অনেক মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে। আর যদি হ্রাস নাও পেয়ে থাকে তাহলে অন্তত আমরা সে খবর ফেসবুকের মাধ্যমে দ্রুত জানতে পারছি না। যাহোক, ফেসবুক বন্ধ রাখার পর আমরা কিন্তু অনেকেই ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করে ঠিকই ফেসবুক ব্যবহার করে আসছি। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে যারা ভিপিএন ব্যবহার করে ফেসবুক ব্যবহার করছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। এরই ফলশ্রুতিতে রাস্তাঘাটে চলমান পথিকের মোবাইলফোনগুলোতে পুলিশ ভিপিএন চেকিংও করছে। যাহোক, অনেকেই হয়তো ভাবছেন আমি তো ভিপিএন ব্যবহার করে নিজেকে গোপন করেই রেখেছি সরকার আমাকে দেখবে কীভাবে? আর কীভাবেই বা আমার উপর গোয়েন্দা নজরদারী সম্ভব? সরকারের পক্ষে আসলেই আপনাকে সনাক্ত করা যাবে কিনা এই ব্যাপারে নিঃসন্দেহ হতে টিউনের পরবর্তি অংশে আপনাকে স্বাগতম।
আপনারা হয়তো জানেন, আইপি এড্রেস হলো ইন্টারনেট সংযুক্ত ডিভাইস সম্পর্কে যাবতীয় তথ্যের গেটওয়ে। প্রত্যেক ইন্টারনেট সংযুক্ত ডিভাইসের জন্য একটি করে নির্দিষ্ট আইপি এড্রেস আছে। যেখান থেকে ব্যবহারকারী সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য বের করা যাবে। আমরা ইন্টারনেট চালনার জন্য যে সার্ভিস প্রোভাইডারের সেবা গ্রহণ করে থাকি তাদের কাছে আমাদের প্রত্যেকটি ডিভাইসের আইপি সংরক্ষিত থাকে। আইএসপি গুলো আমাদের এই আইপি সংশ্লিস্ট তথ্যগুলো কমপক্ষে ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখে। এবং সরকারের জন্য হয়তো এই মেয়াদ আরও বেশি থাকে। যার কারনে কোন কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার করে ক্রাইম করলে সেই আইপি ব্যবহার করে অপরাধীকে সহজেই ধরা যায়।
আপনি যখন কোন ওয়েব সাইট ভিজিট করেন তখন ঐ ওয়েব সাইট হয়তো জানেনা আপনি কে। কিন্তু আপনি যে আইপি দিয়ে ঐ ওয়েব সাইট ভিজিট করেছেন সেই আইপি ওয়েব সার্ভারে রেকর্ড হয়ে থাকে। সেই ডাটা গুলো এতোটাই ক্ষুদ্র যে তারা চাইলে সেগুলো বছরের পর বছর ধরে সংরক্ষণ করতে পারে। এখন আপনি যাই করেন না কেন সরকার কিংবা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) চাইলে আপনার সকল তথ্য বের করে ফেলতে পারবে। আপনারা হয়তো ভাবছেন, ফাহাদ ভাই আমাদের বোকা মনে করেছে! আমরা তো পাইরেট ব্রাউজার, ভিপিএন কিংবা স্পেশালাইজড টর ব্রাউজার ব্যবহার করি। আমাদের সরকার কিংবা আইএসপি ধরবে কীভাবে? চলুন তাহলে এসব প্রাইভেট নেটওয়ার্ক সম্পর্কে একটু জেনে নেই।
পাইরেট ব্রাউজার হলো অ্যানোনিমাস ব্রাউজিং এর জন্য অন্যতম জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার। এটি মূলত ফায়ারফক্স ব্রাউজারের একটি কাস্টমাইজড ভার্সন যাতে টর ব্রাউজার এবং কিছু প্রক্সি প্লাগিং সংযুক্ত করা হয়েছে অ্যানোনিমাস ব্রাউজিং এর জন্য। কিন্তু আসলেই কি এটা ততোটুকু করতে পারে? উত্তর হলো, না! কারন এটা যেকোন ব্লক সাইট এক্সেস করতে সাহায্য করে। এর সাহায্যে যেকোন দেশ বা বয়স রেসট্রিকটেড সাইট ভিজিট করা যায়। কিন্তু নিজেকে অ্যানোনিমাস করা যায় না। এটা কেবল ফায়ারওয়ালটাকে বাইপাস করতে পারে যেটা আপনার সরকার কিংবা আইএসপি ব্লক করে দিয়েছে। কিন্তু আপনার আইপি রিলেটেড তথ্যগুলো অবশ্যই উক্ত সাইটে রেকর্ড করা হয়।
প্রাইভেট ব্রাউজিং এর জন্য ভিপিএন হলো সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পথ। এটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং রিমোট সার্ভারের মাঝে একটি গোপন সংযোগ স্থাপন করে যাতে সরকার কিংবা আইএসপি নজরদারী করতে না পারে। কিন্তু ভিপিএন এর ক্ষেত্রে সমস্যা একটাই যে ভিপিএনগুলোকে বিশ্বাস করা যায় না। এগুলো এরকম যে ক্ষেতের বেড়া ক্ষেতের ফসল খেয়ে ফেলে। মানে আপনি ভিপিএন ব্যবহার করলেন নিজেকে অ্যানোনিমাস করার জন্য অথচ ভিপিএন নিজেই আপনার তথ্যগুলো সংরক্ষণ করে রাখলো। তাহলে বিষয়টা কোন পর্যায়ে গিয়ে দাড়ালো?
সহজ কথা হলো, ভিপিএন ব্যবহার করার জন্য কখনোই আমেরিকার তৈরী কোন ভিপিএন সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন না। কারন তাদের অধিকাংশ ভিপিএন গোয়েন্দা সংস্থাকে তথ্য সরবরাহ করে থাকে কিংবা নিজেরাই ইউজারের তথ্য সংরক্ষণ করে। তাছাড়া ফেসবুকের উদ্দেশ্যে যদি বলেন তাহলে বলবো আপনি যে ভিপিএন দিয়ে ফেসবুক ব্যবহার করছেন এটা তো আপনার আইডি দিয়েই করছেন। আপনি কোন দেশের সার্ভার ব্যবহার করলেন সেটা বড় কথা না। বড় কথা হলো আপনি বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশে বসে ফেসবুক ব্যবহার করছেন নিজের আইডি দিয়ে। এটাকে কি অ্যানোনিমাস বলা চলে? আপনাকে ধরে ফেলা সময়ের ব্যাপার। (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন!)
যারা ডার্কওয়েব কিংবা হ্যাকিং এর সাথে জড়িত তাদের কাছে টর ব্রাউজার একটি নির্ভরযোগ্য প্লাটফর্ম। ভিপিএন কিংবা প্রাইরেট ব্রাউজারের চেয়ে টর ব্রাউজার অনেক সিকিউরিটির সাথে ইন্টারনেট ব্রাউজ করার নিশ্চয়তা দেয়। কিন্তু সম্প্রতি এফবিআই টর ব্রাউরে একটা ম্যালওয়ার ইনজেক্ট করে ব্রাউজার সার্ভার থেকে সমস্ত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর আইপি সংগ্রহ করেছে। বুঝতেই পারছেন নিরাপত্তাহীনতার মাত্রা এখানে কতোটুকু। তারমানে আপনি টর ব্রাউজারেও সব সময় নিজেকে অ্যানোনিমাস প্রমাণ করতে পারবেন না।
তবে টর ব্রাউজারের ক্ষেত্রে মজার ব্যাপার হলো আপনি যদি কোন ভাবে ব্রাউজার হ্যাক করে এখান থেকে তথ্য বের করতে চান তাহলে এর থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে সঠিক ইনফো বের করতে অন্তত ৬ মাসের মতো সময় লাগবে। ব্যাপারটা একটু হাস্যকর হলেও আমি এমনটাই জেনেছি। এতো কিছু থেকে একটা প্রশ্নই আবার ঘুরে ফিরে আসে ইন্টারনেটে কি কোন ভাবেই অ্যানোনিমাস থাকার উপায় নেই? উত্তর হলো-
অ্যানোনিমাস ব্রাউজিং এর ক্ষেত্রে কঠিন সত্য হলো, সত্যিকার অর্থে অ্যানোনিমাস ব্রাউজিং এর জন্য কোন খাঁটি পথ নেই! তাহলে আমরা কি সত্যিই ইন্টারনেটে অনিরাপদ? এটার উত্তর হলো, না। আমরা ইন্টারনেটে অনিরাপদ না। কারন সরকার কিংবা ভিপিএন প্রত্যেকটি ইউজারের উপর গোয়েন্দাগিরি করতে পারে না। শুধুমাত্র তারা কিছু কিওয়ার্ড এর উপর গোয়েন্দা নজরদারী করে। যেমন আপনি টাইপ করলেন বোম্ব! সাথে সাথে আপনাকে নজরদারীতে রাখা হবে। তাছাড়া আর কোন ভাবেই আপনাকে তারা ডিস্টার্ব করতে আসবে না। আর বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে কথা হলো, কোন উসকানিমূলক কিংবা সরকার বিরোধী টিউন না করলে আপনি ফেসবুকে শতভাগ নিরাপদ। সরকার আপনার বাসায় এসে আপনার ফেসবুক আইডি সনাক্ত করবে না।
আজকের টিউনটি আপনাদের কেমন লেগেছে জানিনা। যে বিষয়টি সম্পর্কে আপনাদের ধারনা দিতে চেয়েছি সেটা আপনাদের বোঝাতে পেরেছি কিনা তাও বুঝতে পারছি না। কিন্তু সংখ্যার বিচারে আজকের টিউনটি আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারন টেকটিউনসে সুপ্রিম টিউনার হিসাবে অফিসিয়াল নিয়োগপত্র হাতে পাবার পর থেকে সুপ্রিম টিউনার হিসাবে এটা আমার ১০০তম টিউন। তাছাড়া এই টিউনটি পাবলিশড হওয়ার পরে টেকটিউনস টপ টিউনার লিস্টে আমার অবস্থান টপ ১০ এর শেষ অবস্থানে এসে পৌছাবে। আমি কখনো সংখ্যার বিচার করে টিউন করিনি। তবুও আজকের টিউনের সংখ্যাটা আমাকে একটু বেশিই আনন্দ দিচ্ছে। আমার জন্য সকলেই দোয়া করবেন যাতে সব সময় টেকটিউনস পরিবারের পাশে থাকতে পারি।
টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারন আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে। আর টিউনটিকে মৌলিক মনে হলে এবং নির্বাচিত টিউন হওয়ার উপযুক্ত মনে হলে নির্বাচিত টিউন মনোনয়ন দিতে ভুলে যাবে না যেন। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো, আশাকরি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।
আপনাদের জন্য » সানিম মাহবীর ফাহাদ
➡ ইমেইলে আমার সকল টিউনের আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুনঃ টেকটিউনস » সানিম মাহবীর ফাহাদ 🙄
আমি সানিম মাহবীর ফাহাদ। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 176 টি টিউন ও 3500 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 159 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আগে যা শিখেছিলাম এখন তা শেখানোর কাজ করছি। পেশায় একজন শিক্ষক, তবে মনে প্রাণে টেকনোলজির ছাত্র। সবার দোয়া প্রত্যাশি।
ভাই, আমি টিউন পড়ে ভয় পাইছি। আমি ফেসবুক বন্ধ করার পরে আর ফেসবুকে ঢুকিনি। যদিও ভিপিএন ব্যবহার করি তারপরেও কেন জানি আমার ফেসবুকের প্রতি খুব বেশি ইন্টারেস্ট নেই। কারন আমি নিজে সব জায়গাতে অ্যানোনিমাস থাকতে গিয়ে কেউ আমাকে চিনে না। তাহলে ফেসবুকের প্রতি এট্র্যাকশন সৃষ্টি হবে কেমনে বলেন? তবে ইউটিউব এর কাছে আমি চিরঋণী। ইউটিউব ছাড়া একটা দিনও ভালো কাটেনা আমার।
সবশেষে অসাধারন এই টিউনটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ 🙂 ভালো থাকবেন আর নতুন নতুন টিউন করে আমাদের ভালো রাখবেন।