"মেয়েদের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার পেতে ক্লিক করুন এখানে"
প্রায়ই এই অ্যাডটা চোখে পড়ে...Flirchi নামের একটা ডেটিং ওয়েবসাইট এই অ্যাডটা দিচ্ছে। এরা বাঙ্গালীর স্বভাব সম্পর্কে বেশ ভালই জানে, নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট এর পাবলিকদের সম্পর্কে দারুনভাবে জানে!! আর না হয় এমন "আজাইরা" অ্যাড দিয়ে পাবলিককে তাদের ওয়েবসাইটে নেওয়ার চেষ্টা করবে কেনো?? যেখানে কিনা Match অথবা Plenty of Fish(POF) এর মতো ওয়েবসাইটগুলো বলতে গেলে অ্যাডভার্টাইজমেন্ট এর পেছনে টাকাই ঢালে নাহ!!
আসলে এরা (Flirchi) জানে যে, উপমহাদেশীয় মানুষগুলোকে কীভাবে আকৃষ্ট করা যাবে!! তারা বেশ ভালই জানে যে, মেয়েদের ফোন নাম্বার,মেয়েদের সাথে একটু "বিশেষ" কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া মানেই হচ্ছে এই মানুষগুলোকে নিজেদের বশে নিয়ে আসা!! তারা খুব ভালই জানে যে, একটা মেয়ের ফোন নাম্বার এখানকার মানুষের জন্য বিশাল কিছু!!!
এমন কৌশলী প্রচারনার ফল হাতে-নাতেই পেয়েছে Flirchi!! বাংলাদেশে এখন এদের অবস্থান ২৯ এ। যার মানে হচ্ছে, টেকটিউনস এবং সামহোয়্যারইন এর মতো ওয়েবসাইটগুলোর থেকে এগিয়ে আছে এই ওয়েবসাইটটা!! Flirchi এর অডিয়েন্স জিওগ্রাফী তে দেখা যায় যে, এই উপমহাদেশই Flirchi এর সবচেয়ে বড় মার্কেট! যার পেছনে রয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারের বিশাল লোভ...ভাবতেই লজ্জা লাগে!!
শুধু এই এক Flirchi না, বাংলাদেশ এর মতো দেশগুলোতে সাফল্যের জন্য প্রায় সব নামি-বেনামী ওয়েবসাইটগুলো এমন অসৎ কৌশলের আশ্রয় নেয়। প্রথম আলোর মতো নামী পত্রিকাগুলো প্রায়ই আবার সময়ের কন্ঠস্বর এর মতো "ছাগল" ওয়েবসাইটগুলো সবসময়ই, অলমোস্ট সবাই খুবই সস্তা টাইপের খবর প্রচার করে থাকে। সেসব খবরের লিঙ্ক শেয়ার করে ফেসবুকে আর তা দেখে আমরা তাদের ওয়েবসাইটে ছোটাছুটি শুরু করে দেই। বাংলাদেশের মূলধারার কাগুজে পত্রিকার অনলাইন সংস্করন গুলো না হয় বাদ দিলাম...কিন্তু সময়ের কন্ঠস্বর,এমটিনিউজ২৪, এইবিডি, সেইবিডি নামের "সো কলড" অনলাইন নিউজ পেপারগুলো যে খবর প্রচার করে তা সত্যিই লজ্জাজনক!! কিন্তু এমন খবরের কল্যানেই এখন এসব আজেবাজে ওয়েবসাইট বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ভিজিট হওয়া ওয়েবসাইট এর তালিকায় নাম লিখিয়েছে!! আজকের যেই প্রিয় ডট কম এতো ভাল অবস্থানে, তার পেছনেও কিন্তু এই থিওরী রয়েছে!! তার মানে হচ্ছে খুব দ্রুত পপুলারিটি পাওয়ার জন্য ব্যবহার করতে হবে, খুবই সস্তা লেভেলের হেডিং আর এমনসব ছবি ইউজ করতে হবে যেখানে কাপড়ের স্বল্পতা থাকবে!!!
"জামাইকে বোকা বানিয়ে বয়ফ্রেন্ডের সাথে প্রতিদিন সহবাস!"
এরকম একটা হেডলাইন কোন একটা অনলাইন "পত্রিকা"র!! ফেসবুকে শেয়ার করেছে লিঙ্কটা, তাও আবার স্পন্সরড!! তাই অযথাই আমার নিউজফীডে ভেসে উঠেছিল!
আমি মনে করি, আলেক্সার করা সবচেয়ে পপুলার ওয়েবসাইটের তালিকা দেখেই একটা দেশের মানুষের ইন্টারনেট রুচি বুঝা যায়...বাংলাদেশের পপুলার ওয়েবসাইট লিস্ট দেখলেই সহজে বুঝা যায় যে, এদেশের মানুষের ইন্টারনেট রুচিটা কোন ধাঁচের!! বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চাশটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের দুটো হচ্ছে পর্নো ওয়েবসাইট, তার মধ্যে আবার একটা আছে সেরা ১৫ এর তালিকায়...আর বাকি অর্ধেকই অকাজের ওয়েবসাইট!!!
শুধু ভার্চূয়াল দুনিয়ায় না...দেশের সবচেয়ে পপুলার পত্রিকা বাংলাদেশ প্রতিদিনও একই পথের অনুসারী!! মুখরোচক বিশাল টাইটেল দিয়ে ভেতরে খবর দেয় অল্প...এই পত্রিকাটা যতোটা না ইনফরমেটিভ খবর প্রচার করে তারচেয়ে বেশি প্রচার করে সেইসব খবর যেগুলোর কাটতি সবচেয়ে বেশি!!
শুধু এসব ক্ষেত্রেই না...এদেশে মেধা ছাড়াই পপুলার হতে পারে যে কেউ, শুধুমাত্র এসবের জোরেই!! যেমনঃ নায়লা নাঈম! এই অখাদ্যটাকে আমরা মাথায় তুলে রেখেছি!! পাশের দেশের সানি লি*নি ঠিক একই কারনে আমাদের দেশে এতো পপুলার।
এক বন্ধু সেদিন সানি লি* প্রথম মুভি দেখে বলল, "দোস্ত, সানি তো গায়ে কাপড়ই রাখতে চায় নাহ!"
ইন্টারনেটের যুগ এখন...অনেকেই এটা ব্যবহার করে ফায়দা লুটে নিতে চায়, নিচ্ছে...আর আমরা তাদের ফায়দা লুটতে দিচ্ছি...অথচ এটা ব্যবহার করেও কিন্তু নিজেরা অনেক ফায়দা লুটে নিতে পারি!!
ব্লগ লিখে অন্যকে সচেতন করা, প্রো ব্লগিং করে আয় করা, ফ্রিলেন্সার হিসেবে কাজ করা কিংবা নিজেকে একটু আপডেটেড রাখার জন্য Mashabal ,Makeuseof, Lifehacker, BusinessInsider এর মতো ওয়েবসাইটগুলোতে ঘোরাঘুরি করা। ইচ্ছে করলে ইউটিউব থেকে নতুন এবং ক্রিয়েটিভ কিছু শিখে নিতে পারি...নিজের পড়ালেখার কাজে ব্যবহার করতে পারি, রিয়েল লাইফে একটু ট্রিকি হওয়ার ট্রাই করতে পারি!!
এতো এতো রিসোর্স ওয়েবে, তবুও অন্যের পেছনে ঘুরে আর আজেবাজে নিউজ পড়ে সময়টা নষ্ট করব কেনো??? না হয় আমাদের শুরুটা হয় "Se*" লিখে গুগলে সার্চ দিয়ে, কিন্তু তার মানে এই না যে শুরুর সেই অভ্যেসটা সবসময় ধরে রাখতে হবে!!!
স্কুল থেকে হাইস্কুলে ওঠার পর স্যারেরা বলতেন, " প্রাইমারি স্কুল আর কিন্ডারগার্টেন এর অভ্যেসগুলোকে সেখানেই হারিয়ে যেতে দাও!!"
ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য সম্ভবত, ইন্টারনেট জীবনের প্রথমদিকের অভ্যেসগুলোকে সেখানেই হারিয়ে যেতে দেওয়াই ব্যাটার!!
যদি ইন্টারনেট জীবনের শুরুর দিকের অভ্যাস সারাজীবন বয়ে বেড়াই, তথা ইন্টারনেট রুচি না পাল্টাই তবে দেখা যাবে যে, এদেশের ৯০% ওয়েবসাইট খুবই সস্তা জিনিষগুলোর প্রতি গুরুত্ব দিবে। যার ফলে একটা সস্তা ইন্টারনেট সংস্কৃতি গড়ে উঠবে...যেখান থেকে বেরিয়ে আসবে হাজার হাজার সস্তা অনলাইন নিউজপেপার, চটি ওয়েবসাইট আর পর্নোগ্রাফির ওয়েবসাইট...বেরিয়ে আসবে নায়লা নাঈমের মতো অসংখ্য মেধাহীন সস্তা সেনসেশন যার কিনা বলতে গেলে একটা শরীরই আছে...গুগল সার্চে রাজত্ব করবে তাদের মতো ইউজলেস "আগাছা"!!! ফলাফল হিসেবে আমরা পাব একটা নিকৃষ্ট এবং সস্তা ইন্টারনেট সংস্কৃতি....কারন একটা জাতির ইন্টারনেট সংস্কৃতি অবশ্যই তাদের ইন্টারনেট রুচির উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠবে!!!
আমি জিএমশুভ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 19 টি টিউন ও 96 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি জিএমশুভ। পড়ালেখার পাশাপাশি লেখা লেখি করছি। ভালবাসি টেকনোলজিকে। নেট ব্রাউজ করা আর বই পড়া আমার প্রধান সখ।আর ভালবাসি নতুন কিছু জানতে এবং অন্যকে জানাতে। ফেসবুকে আমি: http://facebook.com/gms.me
অনেক সুন্দর লিখেছেন আপনাকে ধন্যবাদ।